আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় নেতৃত্বে ছিল জামায়াত-শিবির?

গাইবান্ধা, বগুড়া, ফটিকছড়ি ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মতো নারায়ণগঞ্জেও সাধারণ মানুষকে উসকানি দিতে ব্যবহার করা হয়েছিল মাদ্রাসা ও মসজিদের মাইক। আগের মতোই শিশু-কিশোর ও সাধারণ মানুষকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে হামলাকারীরা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী, পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন এবং হতাহত মানুষের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে। তাঁরা বলছেন, পুলিশ, র‌্যাব ও বিজিবির ওপর পুরোনো কৌশলে নতুন করে এই হামলার ইন্ধন ও নেতৃত্বে ছিল জামায়াত-শিবির।
গত সোমবারের ওই নৃশংসতায় পুলিশ ও বিজিবির দুজন করে সদস্যসহ ২২ জন নিহত হন।

এ ছাড়া সংঘর্ষ চলাকালে হামলাকারীরা কাঁচপুর হাইওয়ে থানা ও পুলিশ ফাঁড়ি, সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইলের পুলিশ বক্স, তিতাস ও ডেসকোর কার্যালয় এবং কুয়েত প্লাজা মার্কেটে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ ও বিজিবির তিনটি গাড়িসহ ২০টি যানবাহনে আগুন দেওয়া হয়। হামলাকারীরা বিজিবির দুটি রাইফেল ও পুলিশের একটি রিভলবার ছিনিয়ে নেয়।
এসব ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচটি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় ৩১ জনকে সুনির্দিষ্ট করে এবং অজ্ঞাতনামা কয়েক হাজার লোককে আসামি করা হয়েছে।


নারায়ণগঞ্জ জেলা ও সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ এবং ঘটনাস্থল শিমরাইল এলাকার বাসিন্দারা জানান, ফজরের নামাজের পর হেফাজতের কয়েক হাজার কর্মী গাছের গুঁড়ি ফেলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন। পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া শুরু হয়। পুলিশ একপর্যায়ে মাদানীনগর দারুল উলুম মাদ্রাসায় তল্লাশি চালাতে সেখানে ঢোকার চেষ্টা করলে মাদ্রাসা ও সেখানকার মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের সঙ্গে নিয়ে পুলিশ মাদ্রাসায় হামলা চালিয়েছে। যার যা আছে, তাই নিয়ে প্রতিরোধ করুন।
গতকাল ওই মাদ্রাসায় গিয়ে সাধারণ ছাত্রদের পাওয়া যায়নি।

মাদ্রাসা ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শী মাদানীনগরের বাসিন্দা তানভীরুল ইসলাম বলেন, সকাল সাতটার দিকে মাইক থেকে প্রতিরোধের ঘোষণা দেওয়ার পর লোকজন লাঠিসোঁটা ও ধারালো অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মাদ্রাসার পাশেই একটি নার্সারির দোকানদার আলাউদ্দিন বলেন, হামলাকারীদের সামনে অনেক শিশু-কিশোর ছিল। আর অনেক বহিরাগত ছিল শার্ট-প্যান্ট পরিহিত। ওই মাদ্রাসার একজন ছাত্র ইকবাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা দেওয়ার কারণেই সব প্যাঁচ লাগছে।

এখন সবাইরে ছুটি দিয়ে দেওয়া হইছে। ’
পুলিশের ওপর হামলার সময় ঘটনাস্থলে থাকা সহকারী উপপরিদর্শক হাবিবুর রহমান বলেন, ‘মাইকে ঘোষণা দেওয়ার পর চারপাশ থেকে তারা আমাদের ওপর আক্রমণ করে। তারা কনস্টেবল ফিরোজ ও জাকারিয়াকে কোপাতে থাকে। আরও সাত-আটজন পুলিশকে তারা নির্মমভাবে পেটায়। ’
সোমবারের ওই সংঘর্ষে নিহত হয়েছে এসএসসি ফলপ্রার্থী মারজানুল ইসলাম (১৫)।

তার বাবা সরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা এনামুল ইসলাম বলেন, ‘মাদ্রাসার মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়ার পরই তাঁর ছেলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়। এ সময় ওর মা আটকায়। কিন্তু ছেলেটা বলে, “মা, হুজুররা মাইকে ঘোষণা দিছে। তারা বলছে, মরলে শহীদ। ” এরপরই ছেলেটা ছুটে বের হয়ে যায়।

তারপর গুলিতে সব শেষ। ’
সিদ্ধিরগঞ্জের নিমাইকাঁসারী এলাকার এইচএসসি দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র ওসমান গনিও (১৮) এই হামলায় মারা গেছেন। তাঁর বাবা কায়কোবাদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার ছেলেটা বাড়িতে ঘুমাচ্ছিল। মাইক থেকে বারবার ঘোষণা দেওয়া হয়, মাদ্রাসায় আগুন দেওয়া হচ্ছে। মসজিদে আগুন দেওয়া হচ্ছে।

আপনারা বের হয়ে আসেন। এরপরই আমার ছেলেটা বের হয়। ’
মাইকে ঘোষণার বিষয়ে জানতে চাইলে মাদানীনগর দারুল উলুম মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মুফতি মোহাম্মদ ফায়জুল্লাহ বলেন, ‘পাশের মসজিদ থেকে পুলিশকে প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। এর সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। ’ মাদ্রাসার খাদেম আলী আকবর ও সহকারী ইমাম আসাদুজ্জামান স্বীকার করেছেন, এই মাদ্রাসা থেকেই মাইকে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

তবে সেটি কারা করেছে, তা তারা জানেন না।
জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ডিসেম্বর মাসে নারায়ণগঞ্জে কয়েক দফায় পুলিশের ওপর হামলা হয়। ওই ঘটনার পর ইসলামী ছাত্রশিবিরের ৪১ কর্মীকে ধরিয়ে দিতে পোস্টার সাঁটানো হয়। কিন্তু তাঁরা গ্রেপ্তার হননি। তবে পুলিশ খুঁজে না পেলেও তাঁদের অনেককেই সানারপাড়, সাইনবোর্ড ও শিমরাইল মোড় এলাকায় তাণ্ডবে অংশ নিতে দেখা গেছে।


এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও নারায়ণগঞ্জ জেলা জামায়াত-শিবিরের কোনো নেতাকে পাওয়া যায়নি। কয়েক মাস ধরেই গোপনে তাঁরা কার্যক্রম চালাচ্ছেন।
জেলা পুলিশ সুপার সৈয়দ নুরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সোমবারের ওই হামলার নেতৃত্বে জামায়াত-শিবিরের কর্মীরা ছিল বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। ’
চার মামলা: নারায়ণগঞ্জে সংঘর্ষের ঘটনায় সোনারগাঁ থানায় পাঁচটি মামলা হয়েছে। ৩১ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা অনেক মানুষকে আসামি করা হয়েছে।

তবে বিজিবি ও পুলিশ সদস্যসহ নিহতের ঘটনায় এখনো কোনো হত্যা মামলা হয়নি। মামলার প্রক্রিয়া চলছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে সোমবারের হামলায় বিজিবির আহত সদস্য লাবলু গতকাল সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ছাড়া আহত অজ্ঞাতপরিচয় আরেকজন হাসপাতালে মারা গেছেন। এ ঘটনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ২২।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com     দেখা হয়েছে ১৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.