আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমেরিকায় ২য় দিন: দেখ-দেখ দেখরে ফকিরের বাহার (একটি ছবি ব্লগ)

এত দিন জেনে এসেছি বাংলাদেশের টোকাইরা ডাস্টবিন থেকে খবার কুড়িয়ে খায় কিন্তু পৃথিবীর শতকরা ৬০ ভাগ সম্পদের অধিকারী আমেরিকার মানুষও যে ডাস্টবিন থেকে খবার কুড়িয়ে খায় তা আমেরিকা এসে চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কষ্টকর হতো। আজকে ছিল সম্মেলন এর ১ম দিন তাই বিকেল ৫টার মধ্যে সম্মেলন শেষ হলো। হোটেলে ফিরলাম বিকাল ৫ টায় ৩০ মিনিটের মধ্যে। হোটেলে ফিরে চটজলদি ফ্রেস হয়ে রিসিপশনে ডেস্কে গিয়ে ললনারে জিগাইলাম আমার হাতে চার ঘণ্টা আছে; এই সময়ের মধ্যে কোথায় ঘুরতে যেতে পারি। সে বলল এই শহরের সবচেয়ে জনপ্রিয় জায়গা হলো ডাউন টাউন বোল্ডর এর পার্ল স্ট্রিট মল।

যেখানে যেতে পায়ে হেটে ২০ মিনিট লাগবে আর বাসে ৫ মিনিট। আমি হলাম কুড়ের বাদশা তাই দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিলাম। ৫ মিনিটের জন্য বাসে চরলাম ১৭০ টাকা ভাড়া দিয়ে। বাস থেকে নামলাম পার্ল স্ট্রিট মলে। না এটি বাংলাদেশের বসুন্ধরা সিটি বা ইস্টার্ন প্লাজা সিটি মার্কেটের মত না।

এটি দেখতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এর মত। ঢাকার মানুষ বিকেল হলে যেমন টিএসচিতে আড্ডা মারতে যায় এখানকার মানুষও যায় পার্ল স্ট্রিট মলে। তবে একটা পার্থক্য আছে: টিএসসি এর রাস্তার দুই পাশে কোন দোকান নাই কিন্তু পার্ল স্ট্রিট মল হলো ২ কিলোমিটার এর অধিক লম্বা একটি পার্ক যার দুই পার্শ্বে বিভিন্ন প্রকার দোকান ও বার এর পরিপূর্ণ। এই পার্কের ভিতরে রয়েছে বাচ্চাদের জন্য খেলা-ধুলার বিভিন্ন সরন্জাম। অনেকই এসেছে ছোট-ছোট বাচ্চা নিয়ে সেখানে খেলা-ধুলা করার জন্য।

তবে পার্ল স্ট্রিট মলের সাথে মিল আছে আমাদের ফার্মগেট বা গুলিস্তান একটা ক্ষেত্রে। আমাদের দেশের ফার্মগেট বা গুলিস্তান যেমন ফকিরদের প্রধান কর্ম ক্ষেত্র ঠিক এটিও হলো এই শহরের ফকিরদের প্রধান উপার্জনক্ষম এলাকা। পার্ল স্ট্রিট মলে এসে আমার চক্ষু কপালে ওঠায় উপক্রম। প্রতি ১০ মিটার পর-পর একজন করে ভিক্ষুক। তবে আমাদের দেশের ভিক্ষুকদের সাথে একটা পার্থক্য আছে যেটা হলো চক্ষু লজ্জা।

আমাদের দেশের ভিক্ষুকরা আল্লা-নবিজীর নাম এর দোহাই দিয়ে ভিক্ষা চাইলেও এদেশের ভিক্ষুকরা সেটা করে না। এরা যেটা করে তাহলো রাস্তায় দাড়িয়ে কোন বাদ্য যন্ত্র নিয়ে গান গায় আর তার সামনে থাকে সেই বাদ্য যন্ত্রের খোলা বক্স। ভিক্ষুকরা এক মনে গান গাইতে থাকে। অন্য একটা পার্থক্য হলো বাংলাদেশের ভিক্ষুকদের মত এরা ময়লা কাপড় না পড়ে বরং পরিষ্কার কাপড় পড়ে। আর একটা পার্থক্য চোখে পড়ল সেটা হলো বাংলাদেশের ফকিরদের মত এরা বিকলাঙ্গ না।

আর বয়সেও খুবই তরুণ। এই রকম এক তরুণ ভিক্ষুক গ্রুপের ছবি তুলতে গেলে তারা আমারে বলে ছবি কিন্তু ফেসবুকে দিতে হবে ; তাদের কথা শুনে তো আমি মাননীয় স্পিকার হয়ে গেলাম। একটা ঘটনা দেখে নিজের ছোটবেলায় ফিরে গেলম কিছু ক্ষনের জন্য: পার্ল স্ট্রিট মল ঘুরে যখন হোটেলে ফেরার জন্য বাসের জন্য অপেক্ষা করতেছি এমন সময় এক ফকিরে ভিক্ষা শেষে হার্লে-ডেভিডসন মটর সাইকেলে চড়ে সেই স্থান ত্যাগ করল। এই ঘটনা দেখে আমিতো পুরাই *** হইয়া গেলাম পার্ল স্ট্রিট মল থেকে ফিরে রাতের খাবার খেতে গেলাম দাদাবাবুদের রেস্টুরেন্ট জয় হো বোল্ডার এ। এই হোটেলের খোজ পেয়েছিলাম প্রথম দিনেই আমার ভুটানি ট্রক্সি ড্রাইভারের কাছ থেক।

মেনু লিস্টে দেখলাম লিখা আছে খসির মাংস, ডিম, সবজি ও পরোটা। তাই ভাবলাম খাওয়াটা মন্দ হবে না। কিন্তু খাবার সখন সার্ভ করা হলো সেটা দেখে আমার অবস্থা ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি। খেয়ে যেটা মনে হলো আটা খাসির মাংসের কিমা, ডিম ও সবজি এক সাথে মিশিয়ে চুলায় দিয়ে পরিবেশন করেছে। কোন মতে অর্ধেক খয়ে ক্ষান্ত দিতে হলো।

ডিনার শেষে যখন হোটেলে থেকে বের হলাম সামনে একজন এক টাকার চার ভাগের এক ভাগ চেয়ে বসল তার কথা শুনে আমিতো লজ্জায় মরি-মরি। এই ব্যাটারে সামনে পাইলে তো ঢাকার ফকির লাথি মারতো পাছায়। আমেরিকান ভিক্ষুকের রেট চার আনা যেখানে ঢাকার ভিক্ষুক ২ টাকার নিচে দিলে আমেরিকানদের ভিক্ষা দেবার এই চান্স আমিও লুফে নিলাম। পকেট হাতিয়ে ২টা ১০ পয়সা পেলাম। ব্যাটারে তাই দিয়া মনের আনন্দে হোটেলে ফিরলাম।

 ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.