আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমাদের রয়েল বেঙ্গল টাইগার, আমাদের গর্ব।

পূর্নিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রূটি গতকালের ঘটনা। আফ্রিকান এক বন্ধুর সাথে শপিং করলাম। বললাম, চল আজকে তোকে বাংলা খাবার খাওয়াব। বেশির ভাগ আফ্রিকান ফ্রেন্ড বাংলাদেশকে চিনে ড: মুহাম্মদ ইউনুসের জন্য। কারো সাথে পরিচিত হলেই বলে, ও ড: মুহাম্মদ ইউনুস, ফ্রম ইওর কান্ট্রি, আই নো হিম, আ গুড গাই।

যাই হোক, থাই বাসমতি চাল আর মুগডাল দিয়া পোলাও পাক করলাম। পোলাওতে ঘি দিছিলাম, সো এইটার ঘ্রানে পেট ভইরা গেল। গরূর মাংস ভুনা করলাম। দেন খাইতে বসলাম, অল্প খাইতেই দেখি পেট কয় আর না। কাহিনি কি? আমার বন্ধু আমারে কয়, আই এম থিংকিং, হোয়াটস গোইং ওন।

আমি কই শোন, পোলাওতে ঘি দিসি, সো এনারজেটিক ফুড, তাই তড় শরীরে কয় আর লাগতো না। বিয়া বাড়িতে পোলাওতে মাওয়া, আর গরূতে ঝাল দিলে কনসাম্পসন কইমা যায়। মনে পইরা হাসতে হাসতে শেষ একটুপরে আরেক বন্ধু কল দিল, কয় রুমে আয়, চাইনিজ ফ্রেন্ড আসছে, পরিচিত হ। গেলাম.... জিগায় কোন দেশ? আমি কই বাংলাদেশ। দেন ট্রান্সলেট কইরা দিলাম মংচিয়ালা।

কয়, ও তোমাগো দেশের টাইগার তো বিশ্ব সেরা। আমি কই কেমনে জানো ? কয়, আমাগো বইয়ে পড়ছি। শুইনা যার পর নাই ভাল লাগল। কিন্তু এই রয়েল বেঙ্গল টাইগারের বর্তমান অবস্থা কি? খুবই শোচনীয়। জনগনে পাইলে পিডাইয়া মারে ।

চিড়িয়াখানায় যে গুলা আছে, ওগো নাই খাবার, নাই চিকিৎসা। গুগলে সার্চ দিলাম "রয়েল বেঙ্গল টাইগার" লেইখা। সুন্দর একটা আর্টিকেল পাইলাম, তাই সামুতে শেয়ার করার ইচ্ছা হইল। লেখাটি নিম্নরূপ: "জনাব কামরুল ইসলাম ব্যতিক্রমধর্মী একটি অনুরোধ জানিয়ে ই-মেইলটি করেছেন। ই-মেইলের ভাষাটাও গতানুগতিকতা থেকে একটু ভিন্ন।

তিনি লিখেছেন, তিনি একজন ডাকটিকেট সংগ্রহকারী এবং আগামী অক্টোবর ২০১০ চারুকলাতে ডাকটিকেটের ওপর একটি প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন। তিনি জেনেছেন জাপান পোস্ট অফিস বাংলাদেশের পাহাড়পুরের ছবি সংবলিত একটি স্মারক ডাকটিকেট (জাপান-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের ৩০ বছর পূর্তিতে ডাকটিকেট যেটি ২০০২ সালে জাপান ডাক বিভাগ কর্তৃক প্রকাশিত) তাকে পাঠানো হলে তিনি কৃতজ্ঞ থাকবেন। সঙ্গে ডাকটিকেটের নমুনা ছবি পাঠিয়েছেন আন্তর্জাল থেকে বের করে এবং এও জানিয়েছেন ৮০ ইয়েন মূল্যধারিত ডাকটিকেটটি জাপানের সব পোস্ট অফিসে পাওয়া যাবে। ঞড়শুড়, ঘধমড়ুধ, ঙংধশধ, কুড়ঃড়, ঐরৎড়ংযরসধ, ঘধমধংধশর, ঝধঢ়ঢ়ড়ৎড় এমন কয়েকটি নামও উল্লেখ করা হয়েছে। আমাদের দেশে যেমন ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট এ জাতীয়।

পাঠানো হলে ক্রয়মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তাও দিয়েছেন। আমার বাসা থেকে স্টেমন পর্যন্ত যেতে ২ কিলোমিটার রাস্তায় চারটি পোস্ট অফিস পড়ে বিধায় পরের দিন ৪টিতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি এটি ৮ বছর আগের, যা বর্তমানে পাওয়া মুশকিল। তবে খোঁজ করলে কিছু কিছু পোস্ট অফিসে থাকতেও পারে। অনেকটা ‘যেখানে দেখিবে পোস্ট অফিস, খুঁজিতে হয় না যেন মিস (গরংং) পাইলেও পাইতে পার কাক্সিক্ষত ডাকটিকেট। ’ এভাবে ২০/২৫টি পোস্ট অফিস ঘোরার পর কামরুল সাহেব থেকে আরেকটু সময় চেয়ে নিই এবং ফোনেও বিস্তারিত জানাই।

পাছে সে হয়ত মনে করতে পারে খরচ হওয়ার ভয়ে আমি পিছপা হয়ে গেছি কিংবা চেপে যাচ্ছি। দুই সপ্তাহ ঘুরে কিছুটা ক্লান্ত হয়ে সব বন্ধুকে ই-মেইল করি তার নিকটস্থ পোস্ট অফিসে খোঁজ করার জন্য। এক জাপানিজ বন্ধু জানায়, ঝযরহলঁশঁ-তে অবস্থিত বড় পোস্ট অফিসে খোঁজ নেয়ার জন্য। যদিও অশধনধহব, ঈযরুড়ফধ, টবহড়, ঝযরনুঁধ, কধহফধ’া মতো বড় পোস্ট অফিসে খোঁজ নিয়েছি ইতোমধ্যেই। বন্ধুর কথামতো একদিন ছুটি নিয়ে ঝযরহলঁশঁ বড় পোস্ট অফিসে যাই ৪৮ নম্বর পোস্ট অফিস হিসেবে।

কম্পিউটারে সার্চ করার পর সেখানেও ব্যর্থ হই। তবে তারা কম্পিউটার থেকে প্রিন্ট আউট করা ম্যাপ সংবলিত একটি কাগজ ধরিয়ে দিয়ে বলে, তুমি ডাকটিকেট জাদুঘরে যাও, সেখানে যদি না পাও তাহলে আর কোথাও পাবে না। এই হলো পথ নির্দেশনা। ডরংয ুড়ঁৎ নবংঃ ড়ভ ষঁপশ. গুড লাক-ই যেন হয়, এই আশাবাদ ব্যক্ত করে এবং তার দেয়া নির্দেশনা মোতাবেক ঝযরহলঁশঁ থেকে গবলরৎড়’র উদ্দেশে ট্রেনে চেপে বসি। নির্দিষ্ট গন্তব্যে পৌঁছে জাদুঘরও পেয়ে যাই।

কিন্তু জাদুঘর খোঁজা এই জাদুর কপালে যদি দুর্গতি থাকে তাহলে জাদুঘর পেয়েও না পাওয়ার বেদনা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়। দিনটি সোমবার থাকায় সাপ্তাহিক ছুটির দিন থাকে। তাই ভেতরে আর প্রবেশ হয়ে ওঠে না। মনে হলো কাছে পেয়েও বহুদূর। কি আর করা, পরের দিন হাফবেলা ছুটি করে আবার সেখানে যাই।

এইবার ভাগ্যদেবী সুপ্রসন্ন হয়। সঙ্গে যেন এতদিনের কষ্টের বোনাসও। শুনেছি ৪৯ নম্বরকে সবাই পাগলের চিহ্ন হিসেবে অগোচরে সাংকেতিক ভাষা হিসেবে ব্যবহার করে। কিন্তু আমার বেলায় ৪৯ অর্থাৎ ৪৯ নম্বর পোস্ট অফিসে (জাদুঘরে) প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে দুই পাশে দুটি রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ছবি সংবলিত ডাকটিকেটের ডাউস আকৃতির প্রতিকৃতি। যার একটিতে লেখা আছে : বাংলাদেশ, বাঘকে বাঁচিয়ে রাখুন, মূল্য লেখা আছে ৫০ পয়সা।

ইংরেজি লেখা আছে ঝধাব ঃযব ঃরমবৎ এবং অপরটিতে লেখা আছে ‘বাঘ শিকার বন্ধ করুন ঝঃড়ঢ় যঁহঃরহম ঃরমবৎ’, মূল্য লেখা আছে ২ টাকা। বাংলায় লেখা এবং বাংলাদেশের শৌর্যবীর্যের প্রতীক বাঘের আকৃতি জাপানের মতো একটি দেশের জাদুঘরের প্রবেশ পথে থাকলে যে কোনো বাংলাদেশিরই বুকের পাটা দ্বিগুণ বড় হওয়ার কথা। আমারও তাই-ই হয়েছে। ২০০ ইয়েন দিয়ে টিকেট কিনে ভেতরে প্রবেশ করে গাইড অনুযায়ী বিভিন্ন বিভাগ পর্যবেক্ষণ করি। ভেতরে দেখার মতো, জানার জন্য এবং শেখার জন্য অনেক কিছু থাকলেও কেন জানি আমার মন পড়ে থাকে প্রবেশ পথের বাঘের ছবিটির ওপর।

কেন রাখা হয়েছে? কারা দিয়েছে? কেন দিয়েছে ইত্যাদি বিষয়ে জানার তীব্র আগ্রহ থেকে। অনুসন্ধানে গিয়ে দরকারি ডাকটিকেটটির কপি দেখালে বলেÑ আছে আমাদের কালেকশনে, এর দাম পড়বে তিনগুণ। অর্থাৎ প্রতি পিসের জন্য ২৪০ ইয়েন করে গুনতে হবে। আমি মনে মনে বলি এটির জন্য এত জায়গা ঘুরলাম, বন্ধ করলাম, আজ হাফ ছুটি করে এলাম আর তুমি বলছ ২৪০ ইয়েন। আগে দেখাও তো।

ভদ্র মেয়েটি ডাকটিকেটটি দেখাল এবং সেই সঙ্গে তাদের কালেকশনে থাকা বাংলাদেশি বিভিন্ন ডাকটিকেটও দেখাল, যেগুলো একজন বাংলাদেশি হিসেবে আমি নিজেও কোনো দিন দেখিনি; যদিও ছাত্রাবস্থায় আমি নিজেও একজন ডাকটিকেট সংগ্রহকারী ছিলাম। মোটামুটি সংগ্রহও ভালো ছিল। মেয়েটি জাপান থেকে প্রকাশিত আরো একটি ডাকটিকেট নিয়ে আসল যেটি বাংলাদেশ সংশ্লিষ্ট। পাহাড়পুরেরটি ১০টি এবং তার দেখানোটির ২টির অর্ডার দিলাম। প্রতিটি ডাকটিকেট এমনভাবে প্যাকেট করল মনে হলো এই জন্যই বেশি দাম নিয়েছে।

ইত্যবসরে নাম, ঠিকানা, কেন কেনা হলো? কোথায় ব্যবহার করব ইত্যাদি বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে হলো তাদের নিয়ম অনুযায়ী। মিউজিয়াম দেখা এবং ডাকটিকেট কিনে এবার ফেরার পালা। ফেরার পথের বাম দিকে চোখ গেলেই দেখি আমার জন্য আরেক চমক অপেক্ষা করছে। বাম দিকটায় কৃত্রিমভাবে একটু বলের (বাঘের অভয়ারণ্য) সৃষ্টি করা হয়েছে। সেখানে শোভা পাচ্ছে ২৫ পয়সা মূল্যমানের একটি ডাকটিকেট (বাঘের ছবি সংবলিত)-এ বাংলায় ‘আমাদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক’ ঙঁৎ হধঃরড়হধষ ঢ়ৎড়বিংং।

তিনটি ছবিই যেন জাদুঘরটিকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে তুলেছে। প্রায় প্রতিটি ভিজিটরই তাদের ক্যামেরায় বন্দি করে নিচ্ছে বাঘের ছবি। তাদের পারিবারিক এ্যালবামেও বন্দি হবে আমাদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক রয়েল বেঙ্গল। পাঠকদের অনেকেই হয়ত মনে করছেন আমাদের সরকার বা করিৎকর্মা কোনো দূতাবাস কর্মকর্তা বোধ হয় দেশের জন্য সম্মানীয় এই কাজটি করেছেন। কিন্তু তা নয়।

জাপানিজ এবং চায়নিজ সংস্কৃতির জ্যোতিষ শাস্ত্রে ব্যবহৃত রাশিচক্রের বিভিন্ন গ্রহের অবস্থানসূচক মানচিত্র ঞযব ঃবিষাব (ধহরসধষ) ঝরমহং ড়ভ ঃযব (পযধরহবংব ধহফ ঔধঢ়ধহবংব) তড়ফরধপ অনুযায়ী বারোটি চক্রের (নে, উশি, তোরা, উ, তাৎসু, মি, উমা, হিৎসুজি, দারু, তরি, ইনু এবং ঈ যা বাংলা ইঁদুর, গরু, বাঘ, খরগোশ, ড্রাগন, সাপ, ঘোড়া, ভেড়া, বানর, মোরগ, কুকুর এবং বন্যশূকর) তৃতীয়টি হচ্ছে ‘তোরা’ বা ‘বাঘ’। উল্লিখিত প্রতিটি প্রাণীর জন্য একটি বছর নির্ধারিত হয়। যেমন এই বছরটিকে জাপানিজ ভাষায় ‘তোরা তোশি’ বা বাঘ বছর। এই ভাবে খরগোশ, ড্রাগন, সাপ বছর হয়ে ১২ বছর পর আবার বাঘ বছর আসবে। এগুলো নির্ধারণেও মজার মজার ঐতিহাসিক ঘটনা এবং রূপকথা চালু আছে এই দুই দেশে।

সুযোগ পেলে অন্য এক সময় পাঠকদের জানানো যাবে। চযরষধঃবষরপ গঁংবঁসটি জনৈক গরুঁযধৎধ গবরংড়ঁ নামক এক শৌখিন ডাকটিকেট সংগ্রহকারী ১৯৮৯ সালে নিজস্ব অর্থায়নে টোকিওর শিনজুকুতে প্রাথমিকভাবে শুরু করেন। চার বছর পরিচালনা করার পর ১৯৯৩ সালে ভদ্রলোক ইহলোক ত্যাগ করেন। এরপর আরো ৩ বছর একইভাবে পরিচালনার পর ১৯৯৬ সালে পরিচালনা পর্ষদ আরো বৃহত্তর পরিসরে টোকিওর তোশিমা-কু মেজিরোতে স্থানান্তর করে। যা আজ হাজার হাজার ভিজিটরের পদচারণায় মুখরিত।

এই বছর বাঘ বছর হিসেবে কর্তৃপক্ষ তাদের সংগ্রহে থাকা বাঘের ছবি সংবলিত ডাকটিকেটের প্রতিকৃতি (বাংলাদেশের গর্ব রয়েল বেঙ্গল টাইগার) প্রবেশ পথের দুই পাশে রাখে। কাকতালীয় হলেও অত্যন্ত সময়োপযোগী এই আবেদন ‘বাঘকে বাঁচিয়ে রাখুন, বাঘ শিকার বন্ধ করুন এবং আমাদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক’ দেখে আমার নিজের শৌর্যবীর্যটাও যেন জ্যান্ত হয়ে প্রতিবাদী হয়ে উঠল নিজের অজান্তেই। সারা বিশ্ব যখন বাঘকে বাঁচানোর জন্য অনেক অর্থ খরচ করে বাঘকে বাঁচিয়ে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তখন আমাদের গর্ব আমাদের জাতীয় পশু, আমাদের শৌর্যবীর্যের প্রতীক বাঘ রক্ষা করা তো দূরের কথা সদর্পে ঘোষণা দেয়া হয় বাঘ ধ্বংস করার জন্য। অথচ বাংলার অহঙ্কার রয়েল বেঙ্গলকে সমীহ করে সারা বিশ্ববাসী এমনকি প্রাণিকুলও। জাপানের সাফারি পার্কগুলোতে দেখেছি অন্যান্য প্রাণিকুলকে যখন নির্বিঘেœ ছেড়ে দিয়ে কেবল মানুষকেই গ্লাসের নিরাপত্তার প্রাচীরে রাখা হয় তখনো কেবলমাত্র রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে কড়া নিরাপত্তায় বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হয়েছে।

জাপানিজরা জাতিগতভাবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত সাবধানতা অবলম্বন করা, কিছু কিছু ক্ষেত্রে মশা মারতে কামান লাগালেও এই ক্ষেত্রে রয়েল বেঙ্গলকে রয়েল সম্মানী দিয়ে যথাযথ ব্যবস্থাই মনে হয়েছে। নিরাপত্তা বেষ্টনীর একটি উদাহরণ দেয়া যাক। জাপানে একটি ছোট ইমরাত বানালেও পুরো এলাকাটাকে কয়েক স্তরের নিরাপত্তার পর চারদিকটা মশারির মতো নেট দিয়ে ঢেকে দেয়া হয়। বাইরে থেকে বোঝার উপায় থাকে না ভেতরে কী হচ্ছে। কেবলমাত্র বিস্তারিত লিখে টানিয়ে দেয়া হয়।

এত কিছুর পরও সাবধানতার জন্য লিখে দেয়া হয় দুর্ঘটনা ঘটবে না এমনটি নয়, যদি হয় তাই সাবধান থেক। আর আমাদের ঢাকার কথা না হয় বাদ-ই দিলাম। বাঘ রক্ষা এবং ধ্বংস : এদিকে বাঘ রক্ষা এবং ধ্বংস নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায় জাতীয় দৈনিকগুলোতে। পত্রিকা থেকে জানা যায় দক্ষিণ এশিয়াসহ সারা পৃথিবীতে বাঘের অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রতি বছরই গাণিতিক হারে কমছে বাঘের সংখ্যা।

বর্তমানে সারা পৃথিবীতে বাঘের সংখ্যা মাত্র ৩২০০ (তিন হাজার দুইশ)। দক্ষিণ এশিয়া উল্লেখ করলাম এই কারণে যে, বাঘের বসতি আছে এমন ১৩টি দেশ, বাংলাদেশ, ভুটান, কম্বোডিয়া, চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, রাশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, লাওস, নেপাল, মিয়ানমার এবং ভিয়েতনামের মন্ত্রী পর্যায়ে আগামী সেপ্টেম্বর মাসে রাশিয়া বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে বাঘ রক্ষায় করণীয় এবং ২০২২ সালের মধ্যে এর সংখ্যা দ্বিগুণ করার কৌশল নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হবে। কিন্তু তার আগেই সার্কভুক্ত দেশগুলো (বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা, ভুটান, আফগানিস্তান)-এর বন ও পরিবেশ মন্ত্রীরা আগামী আগস্ট মাসে নেপালের রাজধানী কাঠমন্ডুতে বৈঠকে বসছেন বাঘ রক্ষায়। এই বৈঠকে থাইল্যান্ড ও মিয়ানমারকেও আমন্ত্রণ জানানোর কথা রয়েছে।

কারণ দক্ষিণ এশিয়ায় এই দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ, ভারত, ভুটান ও নেপালে বর্তমান বিশ্বের মোট বাঘের ৭০% বাস করে। বাঘের অস্তিত্ব সঙ্কটে চিন্তিত বিশ্ব পরিবেশবাদীরা যখন বাঘ রক্ষায় বিভিন্ন উদ্বেগ প্রকাশ করছে, উদ্যোগ নিচ্ছে, নিজ নিজ সরকারকে চাপ প্রয়োগ করছে পদক্ষেপ নিতে, আন্তর্জাতিক সম্মেলন হচ্ছে তখনই ফেনীর সন্ত্রাসীদের বেডফাদার (ইধফ ঋধঃযবৎ) বলে পরিচিত জয়নাল হাজারী বাঘ ধ্বংসের হুঙ্কার দিয়ে বলে, বাঘ রক্ষা নয়, বাঘ নিধনের আন্দোলন গড়ে তোলার। হাজারীর মতে যে বাঘ মানুষ মারে, মানুষের মাংস খায় কিন্তু মানুষ বাঘের মাংস খায় না, বাঘের হাড় কিংবা দাঁত মানুষের কোনো কাজে আসে না সেই বাঘ রক্ষা করার কোনো মানে হয় না। তিনি আরো বলেন, বাঘ সবচেয়ে সুন্দর হরিণ খায়, মানুষের সবচেয়ে প্রয়োজনী প্রাণী গরু, মহিষ, ছাগল সব মেরে খেয়ে ফেলে। তাই এই হিংস্র প্রাণীটিকে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত করে দেয়া উচিত।

হাজারী আক্ষেপ করে বলেন, ডিসকভারি চ্যানেলে যখন দেখা যায় একটি হিংস্র বাঘ একটি সুন্দর নিরীহ হরিণ মেরে ফেলছে, তখন গা শিউরে ওঠে। তাই বাঁচিয়ে নয়, বরং সব বাঘ মেরে ফেলে ওদের চামড়া দিয়ে জুতা তৈরি অথবা ড্রইংরুমে সাজিয়ে রাখা উচিত। হাজারী আরো জানতে চান মশা মানুষের ক্ষতি করে বলে মশা মেরে ফেলা হয়। অথচ বাঘও মানুষের ক্ষতি করার পরও শুধুমাত্র দেখতে সুন্দর এই কারণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করার কোনো যুক্তি আছে কি? আপাদমস্তক সন্ত্রাসী একজন বেডফাদারের মনে নিরীহ হরিণ স্থান করে নিয়েছে ডিসকভারি চ্যানেলের কল্যাণে তাও বা কম কিসে? তবে তার কাছে জানতে ইচ্ছে করে ফেনীতে তার গড়া স্টিয়ারিং কমিটি যখন সন্ত্রাসী কর্মকা- পরিচালনা করেছে তার অঙ্গুলির নির্দেশনায় তখন কি অসহায়দের কান্না তিনি শুনতে পাননি? সাংবাদিক টিপু কি কোনো আহাজারি করেননি? নাকি স্যাটেলাইট টিভির কল্যাণে ডিসকভারি চ্যানেলে প্রদর্শিত হয়নি বলে তিনি দেখতে পাননি। শুধুমাত্র দেখতে সুন্দর বলে অর্থ খরচ করে বাঁচিয়ে রাখার মানে না হলে দেহের সুন্দরের বিচারে আসে মুখম-ল অর্থাৎ মুখম-ল সমৃদ্ধ মাথা।

আর এই মুখম-ল দিয়েই অর্থ খরচ করে যে খাবার তৈরি হয় তা দেহে প্রবেশ করানো। এবং পুরো দেহ সারাজীবন এই মাথাকে বহন করে বেড়াতে হয় কাজেই মাথা রেখে লাভ নেই অর্থ খরচ করে। মাথাটা কি কেটে ফেলতে হবে মি. হাজারির তত্ত্ব অনুসারে। তাহলে তো হাজারীর মাথাটাই সবচেয়ে আগে কাটতে হয়। জাদুঘরের বাঘ : বিগত শতাব্দীর শুরুতে বিশ্বে লক্ষাধিক বাঘের অবস্থান ছিল।

যা বর্তমানে ৩২০০। আর মানুষের সংখ্যা ছিল শতাধিক কোটি, যা বর্তমানে সাত শতাধিক কোটি। অর্থাৎ মানুষ যেমন বেড়েছে বিভিন্ন জন্ম নিয়ন্ত্রণ সামগ্রী ব্যবহার করেও তেমনি গাণিতিক হারে বাঘের সংখ্যা কমেছে কোনো কিছু ব্যবহার না করেও। আর এই কমার পেছনে দায়ী সৃষ্টির সেরা জীব মানুষের কারণেই। এভাবে কমতে কমতে একদিন হয়ত পৃথিবী থেকে বাঘ হারিয়ে যাবে।

স্থান পাবে কেবলই বই-পুস্তকে এবং জাদুঘরে ফসিল হয়ে। আগামী প্রজন্ম জানবে বাঘ নামের এক শ্রেণীর প্রাণী জয়নাল হাজারীদের কাছে হিংস্রতার হার মেনে পৃথিবী থেকে বিলুপ্ত হয়েছে। গবেষণার বিষয় হবে বিজ্ঞানীদের কাছে, যেমনটি একদা ডাইনোসরের বিষয় নিয়ে বর্তমানে হচ্ছে। জাপানের ডাকটিকেট জাদুঘরে আজ যে কারণেই বাঘের ছবি সংবলিত ডাকটিকেট স্থান পাক না কেন ভবিষ্যতে সারা পৃথিবীর নামকরা বিজ্ঞান জাদুঘরে সত্যি সত্যি একদিন স্থান হবে এই হিংস্র প্রাণীটির, যা আমাদেগর শৌর্যবীর্যের প্রতীক। এই আশঙ্কা রোধকল্পে এখন থেকেই ব্যবস্থা নেয়া জরুরি।

" ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.