আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সোনালী আশ পাটের মতোই ফসল- ‘কেনাফ’ চাষে বছরে ১৩ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব।সম্ভব ভোজ্যতেল পাওয়া। তাই সরকারের উচিত সমৃদ্ধির এ পথটির সর্বোচ্চ সুফল সংগ্রহ করা।

আমি জাতির আধার রাতের আলো... হুবহু পাটের মতোই, তবে পাট নয়। পাটের চেয়ে গুণে-মানে সামান্য পিছিয়ে। পাটের চেয়ে এর ফলন বেশি। নোনা সহিষ্ণু। সেচের প্রয়োজন হয় না।

যে জমিতে বোরো আবাদ করা সম্ভব নয়, সাধারণত অনাবাদি থাকে; হয়তো কোথাও তিলের চাষ করা যায়, কিন্তু বৃষ্টিতে ফসলহানি হয়, সেই জমিতে এর চাষ করে কৃষক আর্থিকভাবে লাভবান হতে পারে। এর নাম কেনাফ। কেনাফের উৎস আফ্রিকায়। বৈজ্ঞানিক নাম হিবিসকাস মালভেসি। বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিজেআরআই) প্রজনন বিভাগের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো: রফিকুল ইসলাম এ উন্নতমানের উচ্চ ফলনশীল কেনাফ জাত উদ্ভাবন করেছেন।

এটি ২০১০ সালে এইচসি-৩ নামে জাতীয় বীজ বোর্ড থেকে অবমুক্ত করা হয়েছে। এর আরেকটি জনপ্রিয় নাম ‘বট কেনাফ’। এটিকে অনেকে স্থানীয়ভাবে মেছতা পাট বলেও মনে করেন। যদিও কেনাফ ও মেছতা দু’টি ভিন্ন জাতের আঁশযুক্ত ফসল। কেনাফ-৩ জাত পরিবেশবান্ধব, আঁশ স্বাস্থ্যকর ও প্রাকৃতিকভাবে পচনশীল।

এর বহুমুখী ব্যবহার পরিবেশ উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে পারে। গাছ দ্রুত বর্ধনশীল এবং উচ্চ বায়োমাস বিশিষ্ট। এটি অধিক ফলনশীল। গাছের উচ্চতা পাঁচ থেকে ছয় মিটার। সর্বোচ্চ ফলন হেক্টরপ্রতি ৪.৬৩ টন থেকে পাঁচ টন।

ভারত, চীন, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, ইরান, তাইওয়ান ও নাইজেরিয়ায় কেনাফ-এর বিস্তৃতি ঘটেছে। লবণাক্ততা, খরা এবং অনাকাঙ্খিত বৃষ্টিপাত এই তিনটি পরিস্থিতি মোকাবিলা করেই কেনাফ বেড়ে উঠতে পারে। পাটের চেয়ে এর ফলন বেশি। দাম পাওয়া যায় পাটের মতো। আবার পাটের মতো এর কাঠি, এর পাতা এবং ফলও খাওয়া যায়।

ফল দিয়ে আচার তৈরি হয়। বীজ থেকে শতকরা ২০ ভাগ ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। এক কথায় কেনাফের সব অংশই ব্যবহার্য, কোনো কিছুই ফেলা যায় না। কেনাফ থেকে উন্নতমানের অফসেট কাগজও তৈরি হয়। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণাগারেই কেনাফ থেকে নিউজপ্রিন্ট কাগজ তৈরি করা হয়েছে।

পৃথিবীর বহু দেশে কাগজের মন্ড ও উন্নতমানের কাগজ ছাড়াও বহু মূল্যবান দ্রব্যসামগ্রী কেনাফ থেকে উৎপাদিত হয়। কেনাফ আঁশ পৃথিবীর বহু দেশে শিল্পজাত দ্রব্য হিসেবে কাগজের মন্ড-, বোর্ড, জিও টেক্সটাইলস চট, কম্বল, প্লেন পার্টস, মোটর কার পার্টস, কম্পিউটার পার্টস, কুটির শিল্পজাত দ্রব্য শিকা, মাদুর, জায়নামায, টুপি, স্যান্ডেল এবং কাপড়-চোপড় জাতীয় সোফা কভার, পর্দার কাপড়, বেডশিট, কুশন কভার, সাটিং সুটিং, পাঞ্জাবি, সোয়েটার ছাড়াও অনেক পণ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের উঁচু, মধ্যম, নিচু, হাওর এলাকা, পাহাড় এলাকার ঢালু জমি এবং উপকূলীয় ও চরাঞ্চলের ফসল উৎপাদনের উপযোগী নয় বা আউশ ফসলের জন্য লাভজনক নয়Ñ এমন অনুর্বর জমিতেও কেনাফ অল্প পরিচর্যায়ও ভালো ফলন পাওয়া যায়। তাছাড়া দেশের প্রায় সব জেলায়ই উঁচু-নিচু ও মাঝারি জমিতে বপন উপযোগী। দেশে এ ধরনের প্রায় ৯ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমি অনেকটা অনাবাদি পড়ে থাকছে।

পাটের চেয়ে কেনাফ নিড়ানি ও পরিচর্যা কম লাগে। বাংলাদেশে খুব সহজে ও অনায়াসে কেনাফ চাষ করা যায়। কেনাফ-৩ গাছের মূল মাটির ১২ থেকে ১৫ ইঞ্চি বা তার বেশি গভীরে প্রবেশ করে মাটির উপরিস্তরে সৃষ্ট শক্ত প্লাউপ্যান ভেঙে দেয় এবং তলিয়ে যাওয়া বিরল পুষ্টি উপাদান শিকড়ের সাহায্যে মাটির নিচ থেকে সংগ্রহ করে তা পরে গাছের পাতার সাহায্যে জমির উপরিস্তরে ফিরিয়ে দেয়। পাতা পচে জমির উর্বরতা বাড়ায়। কেনাফ গাছের খড়ি জ্বালানি হিসেবেও ব্যবহৃত হওয়ায় জ্বালানি সমস্যার অনেকটাই দূর করতে সাহায্য করে।

কেনাফ জাতের পাতা অধিক পরিমাণ বায়ুম-লের কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণ করে নেয়ার পাশাপাশি বায়ুমন্ডলে প্রচুর অক্সিজেন ছড়ায়। দেশের অনাবাদি অনুর্বর ও লবণাক্ত জমিতে কেনাফ চাষ করে বছরে প্রায় সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। শুধু উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকাসহ দেশে ফসল চাষের অনুপযোগী প্রায় ১০ লাখ হেক্টর জমি প্রতি বছর অনেকটাই পতিত পড়ে থাকছে। অথচ এসব জমিতে অল্প পরিচর্যা ও কম খরচে অধিক ফলনশীল কেনাফ চাষ করে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সম্ভাবনার নতুন দুয়ার খুলে যেতে পারে। পৃথিবীর বহু দেশে এ জাতের আঁশের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।

শুধু তাই-ই নয়, কেনাফের আঁশ থেকে কাগজের ম- ও বীজ থেকে শতকরা ২০ ভাগ ভোজ্যতেলও পাওয়া যাবে। ফলে বিপুল সম্ভাবনাময় এ ফসল চাষ দেশের কৃষি অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, আমাদের সরকার বিদেশী ঋণ পেতে যেভাবে ভিক্ষুকের মতো আচরণ করে। কিন্তু তার বিপরীতে দেশে যে অনেক সমৃদ্ধির পথ আছে সে পথে সরকার আদৌ পা মাড়ায়না। এটা যুগপৎ দুঃখজনক এবং আত্মঘাতীমূলক। বিশ্বব্যাংক অথবা আইএমএফ-এর এক একটা ঋণের পরিবর্তে দেশীয় উৎসগুলোর এক একবার সদ্ব্যবহার অনেক বেশী সুলভ ও লাভজনক।

বিশেষ প্রতিবেদন ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।