আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে ক্ষতবিক্ষত রাজনীতি : ‘সম্ভবত’র রাজত্বে ছায়াকেও ভয় হয়

একমাত্র সত্য ও সুন্দরের জন্য ভয়ঙ্কর অতিভয়ঙ্কর সব দুঃসংবাদের ভিড়ে একটি সুখবর হচ্ছে—শনিবার রাতে ঝড়বৃষ্টির সময় রাজধানীর খিলগাঁওয়ে নিজের বাসা থেকে ডাকাতদের হাতে অপহৃত ৮ মাসের শিশু মাইশাকে গতকাল মীরপুরের পাইকপাড়ায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পওয়া গেছে। এর কয়েক দিন আগে গুলশানে এক শিল্পপতির স্ত্রীকে হত্যাকারী ড্রাইভার পলাতক অবস্থায় র্যাবের হাতে ধরা পড়েছে। এ দুটি ঘটনা অপরাধ মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাফল্য অর্জনে সক্ষমতা প্রমাণ করে। পাশাপাশি নিখোঁজ হওয়া বিএনপি নেতা সাবেক এমপি ইলিয়াস আলী ও তার ড্রাইভার আনসার এবং পিলখানা বিজিবি গেট থেকে ‘ছেড়ে দেয়া’ রেল মন্ত্রণালয়ের ড্রাইভার আলী আজমের কোনো হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। দেখা যাচ্ছে, শেষ পর্যন্ত অপরাধীদের উপযুক্ত সাজা হোক বা না হোক, অধিকাংশ ক্ষেত্রে হত্যাকাণ্ড বা অপহরণের রহস্য উন্মোচিত হয়েছে।

কিন্তু গুম অথবা গুপ্তহত্যার একটি ঘটনারও কিনারা হয়নি। তাহলে রাষ্ট্রযন্ত্র কি এই হওয়া এবং না হওয়ার ব্যাপারে নিয়ামক ভূমিকা পালন করছে? যদি তা-ই হয় তবে সবার জন্য, এমনকি ক্ষমতাসীন সরকারের জন্যও মহাবিপদের কথা। রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়কযন্ত্রে রূপান্তরিত হলে এই প্রক্রিয়াকে আবার বিপরীতমুখী করতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। রাষ্ট্রযন্ত্র পরিচালনার হাতবদল ইতিহাসের অবধারিত ঘটনা। যার অথবা যাদের হস্তক্ষেপে রাষ্ট্রযন্ত্র নিপীড়নকারী যন্ত্র হয়ে ওঠে তার বা তাদের হাত থেকে রাষ্ট্রযন্ত্রের নিয়ন্ত্রণ ফসকে গেলে ফসকে যাওয়া হাতের মালিকরা যে নিপীড়নের শিকার হবেন না, তেমন নিশ্চয়তার নজির ইতিহাসে নেই।

ইলিয়াস আলীর গুম হওয়া নিয়ে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ চলছে। বিরোধীদলীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া সরাসরি অভিযোগ করেছেন, ইলিয়াস আলীকে এজেন্সির লোকেরা ধরে নিয়ে গেছে। অপরদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কাতার যাওয়ার আগে পাল্টা অভিযোগ করেছেন, ইস্যু তৈরির জন্য বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে ইলিয়াস আলী লুকিয়ে আছেন। ইলিয়াস আলীর লুকিয়ে থাকার গল্প সাধারণ মানুষ বিশ্বাস করেছে বলে মনে হয় না। ইলিয়াস আলীর সন্ধান দেয়ার দাবিতে বিএনপি গতকাল (রোববার) সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডেকেছিল।

হরতাল ‘সফল’ হওয়ায় বিএনপি এবং হরতাল ‘ব্যর্থ’ হওয়ায় আওয়ামী লীগ দেশবাসীকে ধন্যবাদ ও অভিনন্দন জানিয়েছে। আসলে হরতাল কেমন হয়েছে, তা সাধারণ মানুষ দেখেছে। তবে আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী হরতাল ব্যর্থ হলে বিএনপি আজ আবার দেশব্যাপী সকাল-সন্ধ্যা হরতাল ডাকার ভরসা পেত না। ইলিয়াস আলী যে এখনও নিখোঁজ, এটা রূঢ় বাস্তবতা। এই নিখোঁজ হওয়ার দায় যে সরকারের ঘাড়ে ক্রমেই বেশি করে চেপে বসছে, সেটা সাদা চোখে দৃশ্যমান।

ইলিয়াস আলীসহ গুম হওয়ার ঘটনাগুলো রাজনীতির প্রতি সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের ঘৃণামিশ্রিত বিতৃষ্ণার ভাব সৃষ্টি করেছে। দেশকে রাজনীতিবিবর্জিত করতে উন্মুখ গোষ্ঠী যদি এটাকে ‘অনুকূল হাওয়া’ মনে করে থাবা বিস্তারে প্রলুব্ধ হয়, তবে সর্বনাশের ষোলোকলা পূর্ণ হবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের অনাকাঙ্ক্ষিত ভূমিকার কারণে যে নেতিবাচক আবহ সৃষ্টি হয়েছে তাতে সাধারণ মানুষের ভাবনা এলোমেলো হতে বাধ্য। এমন ভাবনাগুলো অবয়ব নেয়ার বেলায় ‘সম্ভবত’ অব্যয় পদের অনিবার্য উপস্থিতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, আস্থার সঙ্কট কোন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে। ‘সম্ভবত ইলিয়াস আলীকে মেরে ফেলা হয়েছে।

সম্ভবত ইলিয়াস আলী এখনও বেঁচে আছেন। সম্ভবত ইলিয়াস আলীকে ছেড়ে দেয়া হবে। সম্ভবত ইলিয়াস আলীকে জীবন্ত পাওয়া যাবে না। সম্ভবত রেলের ঘুষ কেলেঙ্কারি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরানোর জন্য ইলিয়াস আলীকে গুম করা হয়েছে। সম্ভবত ইলিয়াস আলী গুম হওয়ার ব্যাপারে বিদেশি শক্তির হাত রয়েছে।

সম্ভবত সরকারের ভেতরের সরকার এ কাণ্ড ঘটিয়েছে। সম্ভবত..., সম্ভবত..., সম্ভবত...!’ এ ধরনের ভাবনা এখন ফুটপাত থেকে শুরু করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ড্রইংরুম পর্যন্ত সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। ‘সম্ভবত’ অব্যয়যুক্ত এসব ভাবনার অবাধ বিচরণ জাতির জন্য শুভ নয়। এমন পরিস্থিতিতে মানুষ এতটা ভীত থাকে যে নিজের ছায়াকেও ভয় পায়। রেগে যাওয়া আর ভয় পাওয়া মানুষ একের পর এক ভুল করতে থাকে।

সমবেত ভুলের এই মিছিল শেষপর্যন্ত জাতিকে কোথায় নিয়ে যায়, আমরা জানি না। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.