আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার মৃত্যু ভাবনা

( এক মায়া-নারী তার হৃদয়ে বসে থাকা পুরুষটিকে বলেছিলো, ‘আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি, তোমার হৃদয়ে প্রলয়ংকরী ঝড়-তুফান বইছে ! ঝড়ের তান্ডবে ভেঙ্গে খান খান হয়ে যাচ্ছে মনের অঙ্গন। ’ পুরুষটি নির্বাক থেকেছে । বলতে পারে নি এরই নাম প্রেম । এরই নাম দহন । এরই নাম বিরহের আর্তনাদ ।

এরই নাম দুঃখের সুখ । এরই নাম মানুষ প্রতীকের প্রেম চর্চা । একেই বলা হয় সমর্পিত আত্মার আহাজারির পথের সোপান । ) আমরা মুসলমানরা পরকালে বিশ্বাসী । তার মানে আমাদেরকে আবার জীবিত করা হবে ।

তারপর ? আমাদের সব কাজের হিসাব নেওয়া হবে । এর মানে কি ? শুধু জিজ্ঞেস করেই ছেড়ে দিবে ? নিশ্চয় নয় । আমরা কি মৃত্যুর পরের জীবনটা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি ? এখন আমি আমার জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে একটা গাড়ি যে আমাকে চাপা দিবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিবে ? মাটির মানুষ মাটিতে মিশে যাবো অনন্তকালের জন্য। সেখান থেকে ফিরে আসে না কেউ । কেউ ফিরে এসে তার বর্ণনাও দিতে পারেনি ।

মৃত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত । ভালবাসা, হিংসা, ঘৃণা সবই চলে গেছে । সূর্যের নিচে যা কিছু ঘটে তাতে কি মৃতেরা আবার অংশ নিতে পারবে ? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর- অবশ্যই পারবে না । শেক্সপিয়র লিখেছিলেন- “No traveller returns, puzzles the will And makes us rather bear those ills we have Than fly to others that we know not of ? Thus conscience does make cowards of us all.” “হে আল্লাহ, তোমার অস্তিত্বের উপর চরম সন্দিহান হয়ে কতবার যে তোমাকে অস্বীকার করেছি তার হিসেব নাই ." এই নশ্বর পৃথিবীতে কেউ বেচে থাকবে না । সবাই চলে যাব অজানার পথে ।

কিন্তু এই অবধারিত সত্য নিয়ে এক সেকেন্ড চিন্তা করার সময় আমাদের নেই । চোখের সামনে মানুষ চলে যায় কিন্তু আমরা কি এক মুহূর্তের জন্যেও ভাবি যে আমি বা আপনিও একদিন মৃত ব্যক্তিটির মত লাশ হয়ে যাব । কখনো কি কবরস্থানে গিয়ে নিজের স্থায়ী ঠিকানার কথা চিন্তা করি । মৃত্যু এমন একটি পর্যায় সেখানে সবাই সমান হয়ে যাই যেমনটি দেখা যায় দিগন্তে আসমান জমিনের সাথে মিশে গেছে । বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের (১৮৬১-১৯৪১) মৃত্যু ভাবনা জেগে ওঠে তার প্রায় তেইশ বছর বয়সে লোকান্তরিতা বড় ঠাকুররাণী কাদম্বরী দেবীর মৃত্যু (১৮৮৪) থেকে ।

রবীন্দ্রনাথ তার জীবনস্মৃতির ‘মৃত্যুশোক’ অধ্যায়ে লিখেছেন, ‘আমার চব্বিশ বছর (প্রকৃত বাইশ বছর এগারো মাস তেরো দিন) বয়সের সময় মৃত্যুর সঙ্গে যে পরিচয় হইল তাহা স্থায়ী পরিচয় । তাহা তাহার পরবর্তী প্রত্যেক বিচ্ছেদ শোকের সঙ্গে মিলিয়া অশ্রুর মালা দীর্ঘ করিয়া গাঁথিয়া চলিয়াছে । কিন্তু বয়সের লঘু জীবন বড়ো বড়ো মৃত্যুকেও অনায়াসেই পাশ কাটাইয়া ছুটিয়া যায় কিন্তু অধিক বয়সে মৃত্যুকে অত সহজে ফাঁকি দিয়া এড়াইয়া চলিবার পথ নাই’ (রবীন্দ্র রচনাবলী, খ-১৭, পৃষ্ঠা-৪২) মানুষের বার্ধক্যই জানান দেয় যে সে মৃত্যুর কাছাকাছি। তখন থেকে আত্মীয়-স্বজন মায় প্রতিবেশীরা ও কোন বৃদ্ধকে তার যৌবন বা মধ্যাহ্নে যে খাতির ছিল তা দেয় না । মৃত্যু বেশ মজার জিনিষ ।

যেখানে যেকোনো সময় মারা গেলাম তো বেশ, সব দায়-দায়িত্ব শেষ, আর কোন জাগতিক জবাবদিহিতা নাই । মা-বউ রে ফোন করে বলতে হয় না আমি মারা গেছি তাই বাসায় আসতে পারতেছি না । বস রে বলতে হয় না অনিবার্য কারণে আমার মৃত্যু হওয়ায় আমি আর অফিসে আসতে পারবো না । মইরা গেছি তো এক্কেবারে ফুলস্টপ, এখন আশে পাশে তোমরা যারা আছো তারা ঠেলা সামলাও । একটু পরে আমার দেহ থেকে দুর্গন্ধ বের হবে, মাছি রোগ-জীবাণু ছড়াবে, তাই আশে পাশের মানুষ নিজ দায়িত্বে হয় মাটি চাপা দিবে, না হয় পোড়াবে ।

আমরা মুসলমানরা পরকালে বিশ্বাসী । তারমানে আমাদেরকে আবার জীবিত করা হবে । তারপর ? আমাদের সব কাজের হিসাব নেওয়া হবে। এর মানে কি ? শুধু জিজ্ঞেস করেই ছেড়ে দিবে ? নিশ্চয় নয় । আমরা কি মৃত্যুর পরের জীবনটা মোকাবেলা করার জন্য প্রস্তুত আছি ? এখন আমি আমার জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যেতে একটা গাড়ি যে আমাকে চাপা দিবে না, তার নিশ্চয়তা কে দিবে ? মাটির মানুষ মাটিতে মিশে যাবো অনন্তকালের জন্য।

সেখান থেকে ফিরে আসে না কেউ । কেউ ফিরে এসে তার বর্ণনাও দিতে পারেনি । মৃত ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি বিলুপ্ত । ভালবাসা, হিংসা, ঘৃণা সবই চলে গেছে । সূর্যের নিচে যা কিছু ঘটে তাতে কি মৃতেরা আবার অংশ নিতে পারবে ? এ প্রশ্নের সহজ উত্তর- অবশ্যই পারবে না ।

মানুষ মৃত্যুবরণ করে । ব্যাপারটা ‘নবীন বরণ’ অনুষ্ঠানের মতো না । অন্যরকম বরণ । মৃত্যু দেখে মানুষ বলে- ‘চিরকালের জন্যে নিরব হয়ে গেলো’ ! কই গেলো ? এসেছিলো ? কোথাও গিয়েছে ! কেউ জানে না । বিজ্ঞানী জানালেন- প্রাণের ক্ষুদতর একক প্রোটোপ্লাজম (ইনক্লুডিং সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস)।

প্রোটোপ্লাজমকে ভাঙ্গলে এর মধ্যে আর প্রাণ থাকে না । প্রাণ শনাক্তকরণে আর এগিয়ে যাওয়া যাচ্ছে না ! ‘Just what makes protoplasm alive is still unknown.’ মানুষটা কোথায় গেলেন কেউ বলতে পারেন না !মানুষটি কোথা হতে এসেছিলেন তিনি নিজেও জানতেন না হয়তো । অন্য কেউ বলতেও পারেন না কোথা হতে এসেছিলেন ! মাতৃগর্ভে ভ্রুণের মধ্যে মানুষটির প্রাণের সঞ্চার হয়েছিলো । দেহ পিঞ্জর পূর্ণতাপ্রাপ্ত হওয়ার পর পৃথিবীতে জন্ম লাভ করেছিলেন । ছিলেন কোথায় জানা নেই ।

আলমে আরওয়াহ-রুহের জগত ? সেটার বাস্তবতা কী রকম ? কেউ জানেন না । দেহ পিঞ্জর ছেড়ে কোথায় গেলেন জানা নেই ! আসা আর যাওয়া। পরিব্রাজক ! "Death be not proud, though some have called thee/ Mighty and dreadful, for thou art not so." মহাত্মা রুমী দেখেছেন মৃত্যু মানে Dawn of eternity. কবি জন মিলটন’র কাছে Death is the golden key that opens the palace of Eternity. বাইবেলে আছে- Whosoever liveth and believeth in me shall never die. কোরআন মোতাবেক worldly life- দুনিয়ার জীবন, আর আখেরাতের জীবন eternal life after death আছে । কোরআন জানায়, প্রত্যেক প্রাণকে মৃত্যুর স্বাদ নিতে হবে । (Every Soul Will Taste Death)।

তো, মৃত্যুর স্বাদ, ব্যাপারটাতে এক ধরণের মজা আছে । মজা না-থাকলে ‘স্বাদ’ কেন ! তার মানে মৃত্যু কোনো দুঃখের বিষয় নয় ! প্রিয়জনের মৃত্যু সংবাদের সাথে বেদনা আচ্ছাদিত হওয়ার কারণ কিছুকালের মায়ার প্রভাব ! মায়াতে জীবন, মায়াতে মৃত্যু । কারো কারো নাকি সুইসাইড করারও তীব্র ইচ্ছা ভর করে, অনেক এটেম্পট ও নাকি নিয়ে থাকেন । মরার আগেই মরতে সাধ জাগে নাই একবারও এমন মানুষ পাওয়া দুষ্কর !! চিকিৎসক ও নার্সের জীবনে একটি অভিজ্ঞতা হয় । তাঁদের সামনে অনেক সময় মানুষের মৃত্যু ঘটে যায় ।

অনিচ্ছা সত্ত্বেও এ করুণ পরিণতি দেখতে হয়। অনিবার্য হলেও করুণ । এমন হয় যে মৃত্যুর সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই চলে—আধুনিক চিকিৎসায় যা সম্ভব, করা হয়, তবু অনেকের জীবন বাঁচানো সম্ভব হয় না । মুখের ওপর রোদের আলো পড়লে ঘরে যাবেন না । হাসুন, খুব জোরে, যতদূর সম্ভব কখনো কখনো নিজের প্রতিও হাসুন ।

কারণ মৃত্যুর প্রতিষেধক তো কবিতা নয়, নাটকও নয়, জাদু ওষুধও নয়, ঘরভর্তি প্রযুক্তিও নয় । সদিচ্ছাও নয় । মৃত্যুর প্রতিষেধক হলো জীবন । কেবলই জীবন । ‘চোখের আলোয় দেখেছিলেম চোখের বাহিরে’—জীবনের কি এই নাম ! ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.