আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

আমার এইচএসসি পাশের রোমাঞ্চকর/বেদনাবিধুর কাহিনী

........ (এইটা আমার একটি অন্যরকম লড়াইয়ের কাহিনী, সবার কেমন লাগবে জানি না, তবে অনেকের জন্য ইন্সপায়ারিং হতে পারে বলে আমার ধারণা......) যেদিন যেদিন এইচএসসি পরীক্ষা থাকে, সেইদিনগুলোতে শহরের বেশিরভাগ রাস্তাঘাট বেলা সাড়ে ১২টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত প্রচন্ড রকমের ভিড়ভাট্টায় গমগম করতে থাকে । আর ঐসময় রিক্সা ভাড়া করার প্রতিযোগিতায় পরীক্ষারথী ও তাদের অভিভাবকেরা প্রায় অপ্রতিদ্বন্দী, মোট কথায় রিকশা পাওয়া একটু দুরূহ । এদের দেখে আমার নিজের এইচএসসি পরীক্ষার সময়ের দুঃসহ স্মৃতির কথা একটু একটু করে মনে পড়তে থাকে । মাঝে মাঝেই মনে হয়, ঐ বিভীষিকাময় পরীক্ষা কিভাবে শেষ করলাম, কিভাবে পাশই বা করলাম । প্রথম প্রথম সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল ।

২০০৮ সালের ২৬শে জুন জানতে পারি, এসএসসিতে এ+ পেয়েছি । এর তিনদিন পর জানতে পারি আমি গোল্ডেন পেয়েছি । স্বভাবতই খুব আনন্দে ছিলাম । আশেপাশের সব বাসা, আত্নীয়স্বজনকে মিস্টি দিয়ে সয়লাব করে ফেলা হয়েছিল । কিন্তু সুখ কপালে বেশিদিন সইল না ।

ইন্টারমিডিইয়টের বিশাল সিলেবাস ও জটিল সব টপিকের কারণে “বুদ্ধিবৃত্তিক কষা”র প্রারম্ভিক পর্যায় শুরু হয়ে গিয়েছিল । কলেজে ভর্তি হইলাম, কিন্তু কয়েকদিন পর শোনা গেল সরকারি আনন্দ মোহন কলেজে নাকি ১৪ বছর পর ইন্টারমিডিয়েট আবার চালু করা হবে……আমার তেমন একটা ইচ্ছা ছিল না আনন্দ মোহনে ভর্তি হুওয়ার কিন্তু কয়েকজন কলেজ বদল করে আনন্দ মোহনে ভর্তি হতে চাওয়ায় আমি চিন্তাভাবনা পরিবর্তন করি……ভাবলাম, “সরকারী কলেজ, ক্লাস তেমন একটা করতে হবে না, প্রাইভেটের পড়া ভাল করে পড়তে পারব……ইত্যাদি……” কিন্তু বিধি বাম! প্রথম কয়েকদিন কলেজের স্যার ম্যাডামরা অনেক সিরিয়াসনেস দেখালেন……প্রতিদিন ছয়টা করে ক্লাস……এক সপ্তাহে ৩৬টা ক্লাসে এলেন প্রায় ৩০ জনেরও বেশি টিচার……প্রথম প্রথম খারাপ না লাগলেও কিছুদিন পর সমস্যা হতে থাকে……আমাদের ব্যাচের বেশিরভাগই ছিল আগের কলেজে……আনন্দ মোহনে ছিলাম আমরা অল্প কয়েকজন……আর যতদিনে আনন্দ মোহনে ভর্তি আরম্ভ হয়েছিল ততদিনে শহরের ভাল ভাল কলেজে ভর্তি হয়ে গেছে……কাজেই জিপিএর দিক দিয়ে আনন্দ মোহন ছিল অন্যতম গরীব একটা কলেজ………যাই হোক শুরু করলাম ক্লাস(পড়াশোনা নয় যদিও) কলেজ বদল করাতে প্রাইভেট পড়াতেও সমস্যা হওয়া শুরু হল । পদার্থবিজ্ঞান পড়তাম যেই স্যারের কাছে উনি আনন্দ মোহন কলেজ থেকে তৃতীয় শ্রেণি পেয়ে পাশ করলেও উনার পসার অনেক বেশি আর উনার মুখে বুয়েট আর ঢাকা মেডিকেল ছাড়া আর কোন কথা নাই(এমনকি ময়মনসিংহ মেডিকেলও নাকি ওনার কাছে তুচ্ছতাচ্ছিল্যর জিনিস ছিল শুনেছি)……যাই হোক, এই স্যারের ভয় ধরানো কথাবার্তায় আর ব্যাচ নিয়ে সময় না মেলাতে একপর্যায়ে ঐ স্যারের প্রাইভেট ছাইড়া দিলাম । অন্য স্যার ভাল মানুষ হইলেও তিনি ছিলেন অনেক ব্যাস্ত……কাজেই উনি যেই সময় দিলেন সেটা অনেকসময়ই সাংঘর্ষিক হওয়ায় ওখানেও দুই তিনমাসের বেশি টিকতে পারলাম না । শুরু হল হতাশার দিনরাত্রি ।

সারাদিনের কলেজ, প্রাইভেট ইত্যাদি করতে করতে নিজের আসল যেই পড়াশোনাটা সেটা করারই আর সময়, উতসাহ পেতাম না……যেখানে যা পেয়েছিলাম তাই ধরার চেষ্টা করেছি কিন্তু লাভ হয়নাই কিছুতেই………অস্বাভাবিক রকমের কম নাম্বার পেতে পেতে পরীক্ষা পাশ করতে থাকলাম………৭৫ এর ৩৫,৩০,২৭ এই টাইপের নাম্বার পেতে থাকলাম………সব মিলিয়ে বোধশক্তিহীন হয়ে যাচ্ছিলাম । কলেজে যাওয়া ছেড়ে দিলাম, বাসায় প্রতিদিন হই-চই হতে থাকল, আমার পুরো গুষ্টি-বুনিয়াদ জেনে গেল, ছেলেটা ধ্বংস হতে চলেছে! এমনভাবেই ফার্স্ট ইয়ার ফাইনাল দিলাম, পাশ করলাম । মে মাস ছিল সেটা……আবার ফিজিক্স প্রাইভেট শুরু করলাম……ততদিনে জীববিজ্ঞান কোর্স প্রায় শেষ……গণিত আর রসায়ন নিয়ে সংগ্রাম চলছেই……পড়াশোনার অভাব নাই……কিন্তু কোনটা ছেড়ে কোনটায় মন দেই……এই দ্বিধাটা আমাকে দুই বছর অনেক ভোগানি ভুগিয়েছে……দ্বিতীয় বর্ষের শুরুতে নতুনভাবে শুরু করার চেষ্টা থাকলেও পথ হারাই আবার……সবার কটুক্তি, নিজের হতাশা, খাতার নাম্বার ইত্যাদি থেকে রেহাই পেতে জুলাই মাসে ফেসবুক একাউন্ট খুলেছিলাম……প্রথম প্রথম এফবি সেইরকম ভাল লাগত, কিন্তু পরে বুঝতে পারলাম, এই রকম রেজাল্টের ধারা যদি চলতে তাহলে এইসব শখের কোন মূল্যই থাকবে না জীবনে । কিন্তু একেবারে তখন ভালমত পড়াশোনা করে আমার পক্ষে সবকিছু বদলে দেয়া সম্ভব ছিল না……কারণ কয়েকদিন পরেই ছিল টেস্ট পরীক্ষা । যাই হোক, পরীক্ষায় বসলাম……… টেস্টের রেজাল্ট হইল ।

কত জিপিএ পেয়েছিলাম বলতে পারবেন??? জিপিএ-2.6!!! আমি জীবনে কোনদিন কাউকে এইরকম জিপিএ পাইতে শুনিনাই । এপ্রিল মাসে আমার পরীক্ষা আর নভেম্বর মাসে কিনা আমার এই রেজাল্ট! আগেই বলেছিলাম আমার বোধশক্তি দিন দিন কমে আসছিল, কাজেই এই দুর্যোগের পরও তেমন একটা খারাপ লাগেনি । কি করব-তাই ভাবতে লাগলাম । কোচিং সেন্টারে ভর্তি হলাম, তাদের স্টাইল হল চোট ছোট খন্ডে প্রতিটা সাব্জেক্টের সিলেবাসকে ভাগ করে পরীক্ষা নেবে । আমি পরীক্ষা দিতে থাকলাম ।

প্রতিটা পরীক্ষায় নিজের সাধ্যমত চেষ্টা করে প্রস্তুতি নিতাম, কারণ আমি জানতাম এখন না পড়লে ঐ টপিকটা আমি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত ভালভাবে আয়ত্ব করতে পারব না । যাই হোক, অনেক চড়াই-উতড়াই পার হয়ে এপ্রিল মাসে পরীক্ষা দিতে গেলাম । দুই মাসের প্রাণান্তকর চেষ্টাতে ফাইনাল রেজাল্ট হয়েছিল জিপিএ-4.90…..খুবই অল্প দূরত্বে এ+ মিস হয়েছিল………পরীক্ষার সময়ের নানারকম অভিজ্ঞতা নিয়ে ইনশাল্লাহ আরেক পোস্টে লিখব । ভালো থাকবেন সবাই । আর এইবারের পরীক্ষার্থী আমা ছোটভাইয়ের জন্য দোয়া করবেন ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.