আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

উপাচার্য উপাখ্যান

মাঝে মাঝে খুব অবাক হই অতি সম্মানীয় কিছু মানুষের কর্মকাণ্ডে, কখনো কখনো বিশ্বাস করতেও কষ্ট হয় যে ক্ষমতার লোভে মানুষ নিজের মনুষ্যত্বকে কিভাবে ভূলুণ্ঠিত করতে পারে। প্রকৌশলবিদ্যা শিক্ষার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ চট্রগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের(চুয়েট) বেশ কিছুদিনের অচলাবস্থা দেখে আবার বিবেকের কাঠগড়ায় আমার অনুভুতি। কোন যৌক্তিক কারণ ছাড়াই এভাবে দিনের পর দিন দেশের একটা শীর্ষস্থানীয় প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকার ঘটনা মনে হয় পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল! আর এরকম বিরল ইতিহাসের সাক্ষী হওয়াটাই এখন আমাদের নিয়তি। উপাচার্য নিয়োগের বিলম্বের কারণে দীর্ঘদিনের এই অচলাবস্থা!!!!! যদিও ভার্সিটির নিয়মিত ক্লাসকার্যের সাথে উপাচার্য নিয়োগের কোন সম্পর্ক নাই। অধিকাংশ শিক্ষক(২/১ জন ছাড়া প্রায় সবাই) নিয়মিত ক্লাস পরিচালনায় আগ্রহী ছিলেন, বিশেষ কিছু শিক্ষার্থী ছাড়া সব শিক্ষার্থীরাও ক্লাস করার জন্য আকুল ছিল।

কিন্তু এত কিছুর পরও শিক্ষাজীবনের অতি মূল্যবান এক মাসের ও বেশি সময় হারিয়ে গেল ২৫০০+ শিক্ষার্থীর জীবন থেকে, নতুন ব্যাচের(’১১ ব্যাচ ) শিক্ষার্থীরা তো ভার্সিটি কি জিনিস সেটাই চিনতে পারলোনা এখনো। কিন্তু কেন এভাবে মূল্যবান সময় হারিয়ে যাবে দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের?কেন ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার পরেও মাসের পর মাস বসে থাকতে হবে ক্লাস শুরু হওয়ার অপেক্ষায়? পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদে সব জিজ্ঞাসার উত্তর পেয়েছে সবাই, কিন্তু এই উত্তর নতুন নতুন প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে মনে আর নিজের অনুভুতি কে দাড় করাচ্ছে বিবেকের কাঠগড়ায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২/১ জন শিক্ষকের উপাচার্য হওয়ার মোহ আর এসব শিক্ষকদের একান্ত বাধ্যগত!! কিছু ছাত্রের খামখেয়ালির কাছে জিম্মি বিশ্ববিদ্যালয়য়ের সব শিক্ষক- শিক্ষার্থী!!!??? চলে যাচ্ছি আমার লেখার প্রথম লাইনে, শুধুমাত্র নিজের মনঃবাসনা পূর্ণ করার জন্য দেশের অন্যতম প্রধান প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের ২/১ জন শিক্ষক যখন কিছু বিপথগামি ছাত্রদের ব্যাবহার করে নিজের বিশ্ববিদ্যালয়কে অচল করে রাখতে পারেন তখন সেই সম্মানীয় শিক্ষক কে আমি শিক্ষক হিসেবে মানতে পারলেও আমার বিবেক কোনভাবেই সেটা করতে পারতেছে না... আমাদের দেশের সরকার আর মন্ত্রনালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিরোধী দলের মহাসমাবেশ ঠেকাতে কোমর বেধে রাস্তায় নেমে যেতে পারেন কিন্তু দেশের একটা বিশ্ববিদ্যালয় যে মাসের পর মাস উপাচার্যবিহীন অবস্থায় অচল হয়ে আছে সেটা নিয়ে তাদের কোন মাথাব্যাথা নাই। প্রচলিত একটা কথা আছে “যার মাথা নাই তার ব্যথাও নাই”...আমার মনে হয় শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবনের এই মহামূল্যবান সময় নষ্ট হওয়ার ব্যাথা বোঝার মত মাথা আমাদের দেশের মন্ত্রনালয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্তাব্যক্তিদের নাই, থাকবেই বা কিভাবে তাদের কাজ এ হচ্ছে বিরোধী দলের মহাসমাবেশ ব্যর্থ করা, এরা তো ডিজিটাল সরকারের ডিজিটাল মন্ত্রনালয়ের ডিজিটাল কর্তাব্যক্তি!! শুনেছি এদের নিয়োগ দেয়ার প্রক্রিয়াটাও নাকি ডিজিটাল ছিল। ১০০ মিটার দৌড়ে ফার্স্ট হলে যে সরকারের মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রি হওয়া যায়, সেই কর্তাব্যক্তিরা যত পণ্ডিত!!! ই হোক না কেন একটা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এক মাস সময়ের মূল্য বোঝার মত মাথা তাদের থাকার কথা না.........এইসব মহাঅশিক্ষিত কর্তাব্যক্তি আর বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু মহাকুশিক্ষিত শিক্ষকদের কাছেই জিম্মি হয়ে যাচ্ছে একটার পর একটা পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়।

আর নিজেদের অমূল্য সময় হারিয়ে আমাদের দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীরা দিনের পর দিন পিছিয়ে পড়ছে অগ্রসরমান প্রতিযগিতাময় বিশ্বে। গতকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত পাঠদান শুরু হয়েছে, যদিও উপাচার্য নিয়োগের নামগন্ধ এখনো কোথাও পাওয়া যায় নাই। এখন শুধু একটাই প্রার্থনা, ভার্সিটি যেন ফিরে পায় পাহাড়ঘেঁষা সেই প্রাণচাঞ্চল্য, আবার যেন কোন অশুভ ছায়ায় ঢেকে না যায় হাজারো শিক্ষার্থীর আজন্ম লালিত প্রকৌশলী হবার স্বপ্ন। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.