আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপকথা থেকে হারিয়ে যাওয়া এক ছোট্ট রাজকন্যার গল্প

ভাবনা আমার শিমুল ডালে লালচে আগুন জ্বালে আমি জানতাম আমি রাজকন্যা। যদিও আমার বাবা রাজা না। তাও আমি রাজকন্যা। তখনও আমার ছোট বোন লিয়া পৃথিবীতে আসেনি। আমার নাম লিসা।

আমি ক্লাস টু তে পড়ি। খুউব ছোটবেলার কথা আমি ঠিক মনে করতে পারি না। যখন থেকে মনে পড়ে তখন শুধু বাবা মার আদর, ভালোবাসা আর আহ্লাদের কথাই মনে করতে পারি। রাজকন্যারা যা চায় তাই পায়। আমিও তাই ছিলাম।

যত খেলনা, জামাকাপড় চাইতাম, সব পেতাম তা যত দামীই হোক না কেন। চাওয়ার আগেই অনেককিছু পেয়ে যেতাম। কিন্তু আগেই বলেছি আমার বাবা রাজা না। তাও আমি চাইলে যেভাবে হোক সেটা এনে দেওয়া হতই। কখনও কিছু আবদার করে ব্যর্থ হইনি।

আস্তে আস্তে বড় হলাম একটু। পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন আমাকে খুব জেদী বলত। আমার রাগটা একটু বেশি। কোনকিছু ভালো না লাগলে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করে দিই। রাজকন্যারা এইসব একটু করতেই পারে।

কিন্তু অবুঝ প্রতিবেশিরা তা বুঝবে কেন। তবুও বাবা মার লিসামণির আদর একটুও কম হত না। আমার ছোটবোন লিয়া এল এরপর। ওকে নিয়ে মা বাবার খুশির শেষ নেই। ওর ছোট্ট ছোট্ট হাত পা নাড়ানোর কত ছবি তোলা হল।

আমার তখন মনে হল, আমার অত ছোট বয়সের কোন ছবি নেই কেন। মা কে জিজ্ঞেস করলাম, বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, কেউ ঠিকমত জবাব দিল না। আমি অভিমানে মুখ ভার করলাম। আমি গাল ফুলালে মা বাবার যেখানে নাওয়া খাওয়া বন্ধ হয়ে সেখানে তারা কেমন যেন একটু নির্বিকার রইল। সেই থেকে ছোটোখাটো নানান অবহেলায় আমার রাগ অনেক বেড়ে গেল।

স্কুল থেকে কমপ্লেইন আসল। বাবা খুব করে আমাকে বকে দিলেন। ওইদিকে লিয়াকে সবাই খুব ভালো বলত। বলত, ও মায়ের মত শান্ত আর লক্ষ্মী। বাবার মত বুদ্ধি, সহজেই সব শিখে ফেলে।

আর অন্যদিকে আমাকে প্রতি পদে পদে কথা শুনতে হত। একদিন হল কি, লিয়ার বার্থডের আয়োজন হতে লাগল। আমার নিজের বার্থডের হিসাব রাখতে পারিনা, তবে গতবছর আমার বার্থডের কয়েকদিন পরে ওর বার্থডে পালন করেছিলাম খেয়াল আছে। এইবার আমার বার্থডে কই গেল? মা বলল, কাছাকাছি দিন বলে এখন থেকে লিয়ার জন্মদিনেই দুইজনেরটা একসাথে পালন করা হবে। লিয়ার জন্য নতুন জামা কেনা হল, আর আমাকে বলা হল গতবারেরটাই পরার জন্য।

কেকের উপর আমাদের দুইজনেরই নাম লেখা ছিল। দুইজন একসাথে কেক কাটলাম। তবে লিয়া অনেক গিফট পেল। অতিথিরা কি আমার কথা ভুলে গেল? ছোট খালামনি, জিমি চাচ্চু আর দিদান শুধু আমার কথা মনে করে আমার জন্যও গিফট এনেছিল। আমি আস্তে আস্তে বুঝতে পারছিলাম, আমি আর রাজকন্যা নই।

সবচেয়ে স্পষ্টভাবে বুঝলাম যেদিন সেদিনের ঘটনা বলি। আমার সেকেন্ড টার্ম পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে। parents meeting এ টিচাররা মনে হয় আমার নামে অনেক কমপ্লেইন দিয়েছে। বাবা বাসায় এসে খুব বকল। এত বেশি আমাকে এর আগে কোনদিন বকেনি।

রাতের বেলা শুনতে পেলাম বাবা মা কে বলছে, "লিসাকে শুধু শুধু এত ভালো স্কুলে পড়িয়ে লাভ কি। টাকা নষ্ট ছাড়া কিছুই না। তাছাড়া লিয়ার কথাটাও তো ভাবতে হবে। " কিছুদিন পর আমি এলাকার একটা নতুন স্কুলে ভর্তি হলাম। এই স্কুলের টিচাররা কঠিন শাস্তি দেয় আর কথায় কথায় মারে।

রাজকন্যারা কখনও মার খায় না। আমি প্রায় প্রতিদিনই মার খাই এখন। দিদানের কাছে শোনা রূপকথার সাথে আমার গল্পটা এখন আর মিলছে না। কিছু কথাঃ গল্পের এই রাজকন্যা এক নিঃসন্তান দম্পতির পালক কন্যা। ছেলেমেয়ে হবেনা ভেবে যখন তারা এই মেয়েটিকে এনে সুখের আশ্রয় খুঁজেছিল, তার কিছুদিন পরেই তাদের নিজেদের সন্তান লাভ কর।

দত্তক নেওয়া মেয়েটি আস্তে আস্তে অবহেলিত হয়ে পড়ে। সঙ্গত কারণেই রাজকন্যার আসল নাম দিলাম না। প্রথমে অতি আদর এরপর অবহেলায় দূরে সরিয়ে দেওয়ায় তার মানসিকতা কতটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জানিনা। তবে এই দুঃখী রাজকন্যার প্রতি রইল অনেক অনেক শুভকামনা যেন সে প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠে নিজের ভবিষ্যত গড়ে রূপকথাকেও হার মানিয়ে দিতে পারে। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।