আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রূপকথা নয়

কান পাতলে এখনো শুনতে পাই নড়াচড়া ফিসফাস খসখস কলকল সনসন লুকোচুরি টু--কি --

অনেক অনেক বছর আগে একটা ছোট্ট মেয়ে ছিল। সাধারন মেয়ে, রাজকুমারি নয় কিন্ত। খুব অদ্ভুত লাগবে শুনতে কিন্তু সে থাকত একটা কেল্লার ভেতরে। এক্কেবারে সাত সমুদ্র তেরো নদী পারে। সমুদ্দুর ঘেরা সেই কেল্লা।

উঁচু তার পাঁচিল। কেল্লার চার দিকে তো সমুদ্দুর। তার গায় এসে ঢেউ ভাঙ্গে। সামুদ্রিক পাখিদের ডাক শোনা যায়। দেখাও যায়।

এছাড়া চারিদিকে শুধু জল। কেল্লার কোন দরজা নেই। অনেক উঁচুতে আছে শুধু একটা জানলা। তাই দিয়ে মেয়ে সমুদ্রের ঢেউ দেখে। পাখি দেখে।

তবে কেল্লাটা ভারি আরামের। সেখানে কত খাবার। কি সুন্দর করা সাজানো। খাওয়া পরার কোন অভাব নেই। কিন্তু সেই আরামের কেল্লাতে আমাদের মেয়ের মনে কন সুখ নেই।

তার খালি দেখতে ইচ্ছে করে নিচে পৃথিবীতে কি আছে। আর খালি ভাবে যদি তার একজন বন্ধু থাকত যার সঙ্গে সে খেলতে পারে কথা কইতে পারে। ও হ্যাঁ, মেয়ের নামটাই তো বলা হয়নি। ছোট্ট মেয়ে নাম ফুটকি। যেমন ফুটফুটে মেয়ে তার তেমনি নাম।

কিন্তু ওই যে বললাম। আমাদের ছোট্ট ফুটকির মনে ভারি কষ্ট। সে জানালার ধারে বসে থাকে আর ভাবে কবে সে নিচে পৃথিবীতে নেমে দেখবে, কথা বলবে। ভীষণ মনের দুঃখে সে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছিল সেদিন। রাত তখন অনেক।

হঠাত ঘুম ভেঙ্গে গেল তার। মনে হল কে যেন তাকে ডাকছে। গালে কার একটা হাত এসে লাগল কি? কিন্তু তা কি করে হবে?! কেল্লার কোন দরজাই তো নেই। ঘুম ভেঙ্গে উঠে বসল ফুটকি। কি আশ্চর্য! সে দেখল একটা ছোট মেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে।

কোথা দিয়ে এল এই মেয়েটা? সেসব ভেবে পেল না ফুটকি। তবু এতো খুশি হল। এত কাছ থেকে সে তো এর আগে কখন কোন মানুষ দেখেনি। মেয়েটি ফুটকির হাত ধরল। কত কথা বলল।

আদর করল। তারপর তাকে নিয়ে জানলা দিয়ে বেরিয়ে এল। ভয় পাওয়ার আগেই বুঝি এসব ঘটে গেল। ফুটকি দেখল তারা মেঘের রাজ্যে এসে পরেছে। আর মেঘের ওপর খেলা করছে আরো অনেক ছেলে মেয়ে।

তারা খেলছে। কথা বলছে। গান গাইছে। তাদের সঙ্গে কথা বলতে ভীষণ ইচ্ছে গেল ফুটকির। কিন্তু এত ভয় করল! এদিকে দেখে সেই অন্য মেয়েটা কোথায় উধাও হয়ে গেছে।

এবার আর পারল না ফুটকি। কেঁদে ফেলল। হঠাত মনে হল যেন মেঘগুলো এসে তার চোখের জল মুছিয়ে দিচ্ছে। ভারি অবাক হল। মেঘ তার সঙ্গে কথাও বলল।

সে ভারি মজার কথা। ফুটকি হেসে ফেলল। আর অমনি মেঘের ফাঁক দিয়ে এক চিলতে রোদ্দুর দেখা দিল। আর সেই আশ্চর্য দেশে রোদ্দুরও এসে কথা বলল ফুটকির সঙ্গে। আর এল রাত্রি।

তারা বসান তার জামা। সেও ত কত কথা বলল। সবাই মিলে কত খেলা। কত কথা। প্রজাপতির কথা।

ঘাস ফরিঙ্গের কথা। শিশিরের কথা। শেষে ফুটকি ক্লান্ত হয়ে পরল। তখন সে মেঘের ওপর শুয়ে পরল। ঘুমিইয়ে পরল ফুটকি।

পরের দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে সে তার পুরোন কেল্লার ভেতরে। ভারি কষ্ট হল তার। আগের রাতের সবই কি তবে সপ্ন ছিল?! এমন সময় দেখল তার কাছেই পড়ে আছে রোদ্দুরের দেওয়া একটা আংটি আর রাত্রির একটা তারা। ভীষণ আনন্দে নেচে গেয়ে সারাটা দিন কাটাল ফুটকি। এরপর থেকে রোজই তার কাটতে লাগ্ল এক ভাবে।

সারাদিন সে অপেক্ষা করে কখন রাত হবে আর তার বন্ধুদের সঙ্গে তার দেখা হবে। তার ইচ্ছে করে যেন দিনটা আর না আসে। সারা সময় ঘুমিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। কিন্তু তাই কি আর হয়। দিনের আলো ফোটে।

ঘুম থেকে উঠতে হয়। বন্ধুরা সব মিলিয়ে যায়। আবার সে একা হয়ে যায়। একদিন জানলার ধারে বসে এসবই ভাবছিল সে। এমন সময় দেখল একটা লোক জানলা দিয়ে ঢুকে আসছে।

ভীষণ ভয় পেল সে। অবাকও হল। ভাবল সপ্ন দেখছে না তো? তারপর ভাবল হয়ত কোন রাজকুমার। পক্ষিরাজ এ চড়ে তাকে এখান থেকে নিয়ে যাবে। কিন্তু কই পক্ষিরাজ তো দেখতে পাচ্ছে না।

লোকটা তার পাশে এসে বসল। কথা বলে ভয় ভাঙ্গাল। সে কত ভাল ভাল কথা। বলল তার সঙ্গে যেতে। নিচে পৃথিবীতে।

বলল লোকটা সঙ্গে থাকবে। ভয়ের কিচ্ছু নেই। এর মধ্যে জানাল যে রাজকুমার নয়। সাধারণ লোক। পক্ষিরাজ ঘোড়া নেই তার।

তবে কি ভাবে নিচে যাবে? জিজ্ঞেস করল ফুটকি। লোকটা কি বলল জানো? বলল ওই জানালা দিয়ে নিচে নেবে যাবে। ফুটকি ভাবল লোকটা নিশ্চয়ই পাগল। কিন্তু লোকটাও সহজে হার মানল না। অনেক অনেক করে বোঝাতে ফুটকি রাজি হল।

ভয়ে ভাবনায় তার হাত ধরে জানলার ধারে এসে দাঁড়াল। কি আশ্চর্য্য ! জানলাটা এত নিচে এল কি করে। সমুদ্দুর সরে গেল নাকি?! নিচে নেমে এল ফুটকি। সুখ দুঃখের মাঝে। যেখানে ঘৃণা ভালোবাসা দুই থাকে।

আমাদের সাদা কালো পৃথিবীতে। লোকটার সঙ্গে। এরপর কি হল? হয়ত ওরা একসঙ্গে অনেক অনেক দিন সুখে ছিল। হয়ত ছিল না। ওদেরই জিজ্ঞেস কর না কেন?


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।