খুব জানতে ইচ্ছে করে...তুমি কি সেই আগের মতনই আছো নাকি অনেকখানি বদলে গেছো... পার্বত্য অঞ্চলের চারটি এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধান ও সম্ভাব্য মজুদের পরিমান নির্নয়ে অনেকদিন ধরেই বিদেশি বিনিয়োগ খোজা হচ্ছে। এ লক্ষে জানুয়ারীতে আন্তর্জাতিক দরপত্র আহবান করা হয়। দরপত্রে জলদি, পটিয়া, সীতা পাহাড় ও কাসালং স্ট্রাকচারের সমঝোতার ভিত্তিতে বাপেক্স কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করে। এর মুল কারণ হলো পাহাড়ি এলাকায় গ্যাস অনুসন্ধানের মতো প্রযুক্তি ও খরচ বহন করার মতো আর্থিকযোগ এমুহুর্তে বাপেক্সের নেই। অত্যন্ত ব্যয়বহুল হওয়ায় বিদেশী কোন কোম্পানীর সঙ্গে যৌথ প্রক্রিয়ায় গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের আগ্রহ প্রকাশ করা শ্রেয় বলেই বাপেক্স মনে করে।
ফলশ্রুতিতে চাইনিজ কনসোর্টিয়াম সিনোপেক্স ও বাপেক্স‘র মধ্যে ইতোমধ্যে একটি যৌথ মালিকানা চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। যা পেট্রোবাংলা ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ে অনুমোদনের প্রক্রিয়ায় রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় বিভক্ত চারটি অঞ্চলই ¯হলভাগের ২২ নং ব্লকের আওতাধীন। যার বি¯তৃতি ১৩৯০০ বর্গকিমি। সিনোপেক্স তাদের দাখিলকৃত প্রতিবেদনে বলেছে পার্বত্য অঞ্চলে স্পষ্ট প্রমাণিত মজুদ থাকায় তারা নতুন করে অনুসন্ধান করতে আগ্রহী নয়।
সরাসরি ড্রিলিং করে প্রডাকশনে যেতে আগ্রহী প্রতিষ্ঠানটি। বাপেক্স এমন প্রস্তাবে সানন্দে রাজি আর রাজি হওয়াতেই জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রোগ্রামের একটি খসড়া চুড়ান্ত করে মন্ত্রনালয়ে প্রেরন করেছ্ েএবং দিন গুনছে কতো দ্রুত এ অঞ্চলে কাজ করার প্রক্রিয়া শুরু করা যায়। মিডিয়া খুব অল্পই বিষয়টিতে অবগত আছে। আর বাপেক্স‘র অফিসিয়াল ওয়েবসাইটেও এ বিষয়ে কোন তথ্য এখন পর্যন্ত সন্নিবেশিত করা হয়নি। অংশীদারি চুক্তিতে বাপেক্স‘র কোন ক্যাপিটাল ইনভেষ্টম্যান্ট নেই।
যার ফলে বাপেক্স‘র সরাসরি হস্তক্ষেপ করারও সুযোগ কম । শুধু ভূতাত্ত্বিক কাঠামোতে ড্রিলিং চলাকালীন সময়ে ওবজারভারের ভূমিকা পালন করা ছাড়া বাপেক্সের অন্যকোন কর্ম নেই। চুক্তিতে বাপেক্স ৩০% রাষ্ট্রিয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে এবং সিনোপেক্স কনর্সোটিয়াম পাবে বাকি ৭০%। যৌথ মালিকানায় চুক্তিতে সিনোপেক্স তাদের উৎপাদিত গ্যাস তৃতীয় পক্ষের নিকট বিক্রির সুযোগ পাবে। যা প্রডাকশন শেয়ারিং কন্ট্রাক্ট‘রই প্রতিফলন।
সিনোপেক্স‘র সঙ্গে করা চুক্তিতেও নাইকোর জয়েন্ট ভেঞ্চার চুক্তিটিকে অনুসরন করা হয়েছে। নাইকোর চুক্তিতে বাপেক্স‘র প্রাপ্তি ছিল ২০% আর সিনোপেক্স‘ এ বাপেক্স পাচ্ছে ৩০%। কস্ট রিকভারি ফ্যাক্টরে বলা হয়েছে গ্যাস প্রাপ্তির উপর নির্ভর করে কস্ট রিকভার করা হবে। যদি সিনোপেক্স তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ অল্প সময়ের মধ্যে প্রডাকশন থেকে উঠিয়ে নিতে পারে সেক্ষেত্রে বাপেক্সের পরিমান বাড়বে এবং সেটা সর্বোচ্চ ৩৫ থেকে ৫০ ভাগ পর্যন্ত হতে পারে। কোন কূপ দূঘর্টনার কবলে পড়লে বা গ্যাস ক্ষেত্রে র্দূঘটনা সংঘটিত হলে পরি¯িহতি পর্যবেক্ষন করে উভয় পক্ষ সমঝোতার ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে।
যা চুক্তিটির সবচেয়ে দূর্বলতম দিক। কেননা গ্যাস ফিল্ডগুলোতে র্দূঘটনা ঘটে মেশিনারিজ ও অপারেশনাল প্রক্রিয়ার কারণে। যদি রিগে প্রক্রিয়াগত দূর্বলতা থাকে তাহলে ব্লআউটের সম্ভাবনা দেখা দেয়। যা পুরোপুরি বিনিয়োগকারীর দূর্বলতা। আর এ ধরনের চুক্তিতে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানকে সবসময়ই কোনঠাসায় রাখা প্রয়োজন।
কেননা চুক্তি যদি দূর্বল হয় তবে এর প্রায়োগিক দিকও সব সময় দূর্বল থাকে। তাই এক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন বলে প্রতীয়মান। আর বাপেক্সের স্লিপিং পার্টনারশীপের কনসেপ্ট থেকে বের হয়ে আসতে হবে। বাপেক্সকে অবশ্যই পর্যবেক্ষকের ভূমিকা থাকতে হবে। ড্রিলিং ও প্রডাকশনের সময় পুরো পর্যবেক্ষনের দায়িত্ব বাপেক্সকে নিতে হবে।
এবং তা যথাযথভাবে চুক্তিতে সন্নিবেশিত করা বাঞ্জ্যনীয়। যেহেতু বাপেক্স‘র কোন বিনিয়োগ নেই, তাই লাভালাভের বিষয়ে ইনভেষ্টম্যান্ট মাল্টিপলের আওতায় বাপেক্সকে তার শেয়ার নিতে হবে। আর ইনভেষ্টম্যান্ট মাল্টিপল হলো মোট আয়ের ও ব্যয়ের অনুপাত। ইনভেষ্টম্যান্ট মাল্টিপল ইনডেক্স যদি ১ বা তার কম হয় তবে উৎপাদিত গ্যাসের বাপেক্স পাবে ৩০ ভাগ। ইনডেক্স যদি বেড়ে ১ থেকে ৩ এ পৌছায় তবে বাপেক্স‘র অংশ বেড়ে ৫০ভাগে উন্নত হবে বলে চুক্তিতে বলা হয়েছে।
উৎপাদিত গ্যাসের মুল্য নির্ধারণে বলা হয়েছে সিঙ্গাপুরভিত্তিক এশিয়ান পেট্রোলিয়াম ইনডেক্সকে রেফারেন্স হিসেবে ধরে গ্যাসের মূল্য নির্ধারন করা হবে। আর উৎপাদিত গ্যাসের মূল্য নির্ধারনপূর্বক সেলস এ্যান্ড পারচেজ এগ্রিম্যান্ট ১৮০ দিনের মধ্যে সম্পন্ন না হলে সিনোপেক্স বাংলাদেশের অভ্যন্তরে তৃতীয় পক্ষের নিকট গ্যাস বিক্রির সুযোগ পাবে। এ ক্লজটাকে সংশোধিত করে উৎপাদিত গ্যাস বাপেক্স‘র নিকট বিক্রির বাধ্যবাধকতার আওতায় আনা প্রয়োজন। এ কথা বলতে দ্বিধা নেই যে, বাপেক্সের ¯হলভাগে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদনে আন্তর্জাতিকমানের দক্ষতা রয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের ২২ নং ব্লকের খুব নিকটে সেমুতাংয়ে বাপেক্স সফলভাবে কাজ করছে।
তাহলে বাপেক্সকে কেন ¯হলভাগে কাজে লাগানো হচ্ছেনা? এমন প্রশ্ন এদেশের সাধারন মানুষ সরকারকে করতেই পারে। অন্যদিকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কোনরুপ অনুসন্ধান না করে সরাসরি কুপ খনন করতে চায় কেন? তারা তাদের উপ¯হাপিত প্রস্তাবে বলছে ‘তাদের কাছে পর্যাপ্ত রিজিওনাল তথ্য উপাত্ত রয়েছে যার ফলে এ অঞ্চলে নতুন করে অনুসন্ধান চালানোকে সময়ক্ষেপন বলে মন্তব্য করছে কোম্পানিটি। আর কিভাবে একটি কোম্পানী অনুসন্ধান ছাড়া গ্যাসক্ষেত্রের মতো বিশাল ফিল্ডে বিনিয়োগ করতে চায় তাও বোধগম্য নয়। যদি তাই ই হয় তাহলে এ কোম্পানীর কাছে নিশ্চয়ই এমন কোন তথ্য বা উপাত্ত রয়েছে যা তাদেরকে সরাসরি কূপ খননের রসদ জোগাচ্ছে। বাপেক্সকে অবশ্যই এ চুক্তির ট্রু কপি তাদের ওয়েব সাইটে আপলোড করতে হবে।
এবং পুরো প্রক্রিয়া যে স্বচ্ছ তা দেশবাসিকে জানানোর দায়িত্বও বাপেক্সের। একই এলাকায় অন্য কোন কোম্পানী কাজ করতে চেয়েছে কিনা? করে থাকলে কেন সিনোপেক্সকে অগ্রাধিকার দেয়া হলো তাও বলতে হবে। কারণ গ্যাস জনগণের সম্পদ। তাই এ সম্পদের সুষ্ঠ ও সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। আর কোন যুক্তিতে অনুসন্ধানবিহীন সরাসরি কূপ খননের প্রক্রিয়া বেছে নেয়া হচ্ছে বা হবে তারও সঠিক ব্যাখ্যা আসা প্রয়োজন।
দেশের জনগনও চায় নতুন নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কার হোক। এবং সেসব ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত গ্যাস জনকল্যাণে ব্যবহারও সময়ের দাবি। কারণ এমুহুর্তে দেশের জ¦ালানীর চিত্র হতাশাজনক। নিশ্চয়ই নতুন কূপ খনন ও জাতীয় গ্রীডে নতুন নতুন গ্যাস যুক্ত হওয়া আমাদের জন্য শুভ সংবাদ বয়ে আনবে। তাই সরকারকে তার অব¯হান ও কোম্পানী সিলেকশনে যোগ্যতার মাপকাঠি জনসাধারনকে র্নিদ্বিধায় জানতে দেয়া উচিত।
হাসান কামরুল: ভূতত্ত্ববিদ ও কলাম লেখক।
ংধিঢ়হধধ০০৭@ুধযড়ড়.পড়স
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।