আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার- সতর্ক থাকুন, আর্থিক লেনদেন করবেন না

স্টাফ রিপোর্টার: অবৈধ ব্যাংকিং নিয়ে সতর্ক থাকতে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন না করতে সবার প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক সার্কুলার জারি করলো।

এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ডেসটিনিসহ এ ধরনের এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। অপরদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বললে ডেসটিনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধ সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এমএলএম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অধিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এ ব্যাপারে সব পরিদর্শক দলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়।

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন নামে কতিপয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে ব্যাংক ব্যবসার অনুরূপ ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক উচ্চহারে সুদ ও আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কাজ শুরু করেছে। তিনি জানান, অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন যাতে না করা হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে জনসাধারণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে। ‘অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডেসটিনি’- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা দিতেও জানানো হচ্ছে। ডেসটিনি বন্ধ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন পদক্ষেপ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, এটা সরকারের ব্যাপার, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কিছুই করার নেই। কারণ বিষয়টি সরকারের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা করার সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে। মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বললে ডেসটিনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলে ডেসটিনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার।

গতকাল সচিবালয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সফররত মহাপরিচালক পাসকেল লেমির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন। ডেসটিনির সঙ্গে প্রভাবশালী কেউ কেউ জড়িত বলেও তিনি স্বীকার করেন। ডেসটিনি নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এর সঙ্গে জড়িত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক। তারা পদক্ষেপ নিলে আমি ব্যবস্থা নেবো।

প্রভাবশালী লোকেরা জড়িত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, একজন সাবেক জেনারেল তো আছেনই। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ডেসটিনির সঙ্গে যুক্ত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না। ওদিকে আমদানি ব্যয় সংস্থানে সহযোগিতা করতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক পাসকেল লেমি’র প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ডব্লিউটিওর নিজস্ব কোন তহবিল না থাকলেও তারা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর সঙ্গে কাজ করে। তাই তারা (ডব্লিউটিও) যেন তাদের (বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ) সঙ্গে কথা বলে ট্রেড ফাইন্যান্সিংয়ের একটা ব্যবস্থা করে, এজন্য বলা হয়েছে।

বর্তমানে আমদানি ব্যয় সংস্থান ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক করলেও তাতে সুদের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশ চড়া। অর্থমন্ত্রী গতকালও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব নাকচের কথা জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রামীণ ব্যাংকের উন্নয়নে কখনও কোন অর্থ দেয়নি। ডেসটিনিসহ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ সংসদীয় কমিটির মুনাফার লোভ দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে দ্রুত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। একই সঙ্গে ডেসটিনিসহ এ ধরনের এমএলএম কোম্পানির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরকে অনুরোধ জানানো হবে।

গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাসেম। তিনি বলেন, এ ধরনের কোম্পানি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবৈধ ব্যাংকিং ও ব্যবসা বন্ধ করার জন্য চিঠি দেবো। শিগগির ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাবো। এমএলএম-এর অবৈধ ব্যবসার ওপর নজরদারি বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নেয়ারও সুপারিশ করেছে কমিটি।

কমিটির সভাপতি জানান, এমএলএম আইন শিগগির সংসদে উত্থাপনের সুপারিশও করেছেন তারা। সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমএলএম-এর নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপুল মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে দেশের বহু নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করছে বিধায় দেশের ওই নিরীহ লোকদের প্রতিনিয়ত প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা করতে দ্রুত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) আইন প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। গত বছরের ৬ই মার্চ তৎকালীন বাণিজ্যমন্ত্রী ফারুক খান সংসদে জানান, দেশে মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ৬২। এ ব্যবসাকে নীতিমালার আওতায় আনতে আইন প্রণয়ন কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ঝিনাইদহে ডেসটিনি অফিসে তালা ঝিনাইদহ প্রতিনিধি জানান, রাতারাতি লাখপতি হওয়ার আশায় ঝিনাইদহের হাজার হাজার বেকার তরুণ, চাকরিজীবী, আইনজীবী ও শিক্ষকসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ তাদের কাজকর্মের পাশাপাশি ডেসটিনির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন।

তবে ডেসটিনির বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারি তদন্তে নানা অনিয়ম ও অপকর্ম এবং দুর্নীতি উঠে আসায় ঝিনাইদহের অর্ধলক্ষাধিক ডিস্ট্রিবিউটর রয়েছেন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায়। এ নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। তৃণমূল পর্যায়ে আর্থিকভাবে জড়িতরা পুঁজি হারানোর আশঙ্কায় ছোটাছুটি শুরু করেছেন। শহরের শেরেবাংলা সড়কের প্রধান অফিস জিএম টাওয়ারের তৃতীয় তলা থেকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে সাইনবোর্ড। রোববার সকাল ১১টার দিকে অফিস খোলা হলেও আধাঘণ্টা পর আবার তালা লাগিয়ে দেয় কর্তৃপক্ষ।

সকাল থেকে প্রধান অফিসের সামনে উদ্বিগ্ন গ্রাহকদের ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেছে। এ জেলায় ডেসটিনির প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। প্রধান কার্যালয় ছাড়াও রয়েছে ৮টি শাখা অফিস। ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার চাঁদপুর এলাকার আমিনুর রহমান জানান, তিনি ডেসটিনির হয়ে কাজ করে এ পর্যন্ত ২৪ জন গ্রাহক সংগ্রহ করেছেন। প্রত্যেক গ্রাহকের কাছ থেকে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকা করে আমানত সংগ্রহ করা হয়।

কিন্তু বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর গ্রাহকরা এখন আমানতের অর্থ তুলে নেয়ার জন্য তার ওপর চাপ সৃষ্টি করছেন। ডেসটিনি বন্ধ হচ্ছে খবরে ময়মনসিংহে আতঙ্ক স্টাফ রিপোর্টার, ময়মনসিংহ থেকে জানান, ডেসটিনি বন্ধ হচ্ছে এই খবরে ময়মনসিংহ জেলা শহর ও উপজেলা পর্যায়ে ডেসটিনির জড়িত গ্রাহক, এজেন্ট ও চেইনম্যানদের মধ্যে আতঙ্ক চলছে। গতকাল সারাদিন ডেসটিনির ময়মনসিংহের প্রধান কার্যালয় ছোট বাজার নীরব-নিস্তব্ধ। এজেন্টদের অফিসে উপস্থিতি না থাকায় গ্রাহকরাও অফিসে আসেনি। মোবাইল ফোনে খবর আদান প্রদান হচ্ছে বেশি।

কি হচ্ছে কি হবে? এই প্রশ্ন এখন সবার। ময়মনসিংহ শহরে কয়েকটি শাখা অফিস ঘুরে দেখা গেছে তালাবদ্ধ। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা অফিস খুলেননি। গৌরীপুর উপজেলা শাখা অফিসটি বন্ধ রয়েছে বলে একাধিক সূত্র জানায়। দ্রুত বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বিভোর সহজ সরল মানুষগুলো অন্য পেশা ছেড়ে দিয়ে ডেসটিনির এজেন্ট হন অনেকে।

আনন্দ মোহন কলেজের ছাত্র রিয়াজ, বাবলু, ব্যবসায়ী সজল কলেজ ছাত্র শহীদ জানান, তারা ট্রি প্লানটেশন প্রকল্প প্রতি গাছের জন্য ৫ হাজার টাকা প্রদান করেছেন। বিনিময়ে তাদেরকে একটি সনদপত্র প্রদান করেছেন। প্রকল্পগুলো ভুয়া হলে আমরা ক্ষতিগ্রস্ত হবো। বগুড়ায় হতাশ সদস্যরা টাকা ফেরত চাইছে স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া থেকে জানান, বগুড়ায় ডেসটিনি-২০০০ এর শিকার সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, রাজনৈতিক নেতা, সরকারি চাকরিজীবী, ছাত্র-শিক্ষক, সাংবাদিক ও বেকার যুবকসহ নিরীহ মানুষ। ডেসটিনির শিকার উচ্চবিত্ত ও প্রভাবশালীরা চিন্তিত না হলেও মাঠ পর্যায়ের বেকার যুবক ও নিরীহ মানুষ এখন হতাশায় ভুগছে।

তারা টাকা ফেরত চাইছে। তবে ডেসটিনির কর্মকর্তারা তাদের লেখালেখির বিরুদ্ধে আন্দোলন করার পরামর্শ দিয়েছে। জানা যায়, বগুড়ায় ডেসটিনির সদস্য প্রায় দুই লাখের মতো। এই দুই লাখের সিংহভাগ এখন ডেসটিনি অবস্থান নিয়ে চিন্তায় পড়েছে। কেউ কেউ হতাশ হয়ে টাকা উঠানো যাবে কিভাবে এ নিয়ে বিভিন্ন জনের কাছে ধরনা দিচ্ছে।

যশোরে ডেসটিনির ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকদের বিক্ষোভ স্টাফ রিপোর্টার, যশোর থেকে জানান, ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড এর অবৈধ ব্যাংকিং কার্যক্রম নিয়ে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশের জের ধরে গতকাল যশোরের বিভিন্ন এলাকায় অবস্থিত ৪০টিরও বেশি নেট অফিস বন্ধ হয়ে গেছে। রাতারাতি এসব অফিসে তালা ঝুলিয়ে গাঢাকা দিয়েছে এই অবৈধ অর্থ লেনদেনের সঙ্গে জড়িত কথিত পিএসডি, ডায়মন্ড, সিলভার এক্সিকিউটিভরা। বন্ধ রেখেছে তাদের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন সেট। এদিকে অবৈধ হুন্ডি, ভনেক্স, নিউওয়ে, ইউনিপে টু, এমএলএম নিটওয়্যারসহ বিভিন্ন হাইহাই কোম্পানির প্রতারণার ফাঁদে পড়ে হাজার হাজার গ্রাহক যখন দিশাহারা সেই মুহূর্তে জালের মতো শাখা প্রশাখা বিস্তার করা ডেসটিনি কোম্পানির এই প্রতারণার খবর তার গ্রাহকদের মধ্যে এক অজানা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। গতকাল দিনভর খোঁজখবর নিয়ে জানা গেছে, যশোর জেলার বিভিন্ন উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে ডেসটিনি লিমিটেডের প্রায় ৩শ’ নেট অফিস ছিল।

যার অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে। এসব নেট অফিসের মাধ্যমে গত ৪ বছরে প্রায় ৫০ হাজার গ্রাহক সংগ্রহ করেছে ডেসটিনি। প্রতিটি গ্রাহকের কাছ থেকে ৭ হাজার টাকা এন্ট্রি ফি বাবদ তারা আদায় করেছে প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। নেট এজেন্টদের কমিশন বাদে ডেসটিনি কোম্পানির তহবিলে জমা হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। সাটুরিয়ায় ৫০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ সাটুরিয়া (মানিকগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চলের ডেসটিনির গ্রাহকদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে।

ইতিমধ্যে ডেসটিনির বিভিন্ন প্যাকেজে যারা টাকা রেখেছেন তারা টাকা উত্তোলনের চেষ্টা করছেন। মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেডের সাটুরিয়ার প্রায় ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। বিনিয়োগ করা পুঁজি ফেরত পাবে কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। আর সাটুরিয়া ডেসটিনির অফিসের বেশির ভাগ কর্মকর্তা গা-ঢাকা দিয়েছেন। ডেসটিনি-২০০০ লি: মৌলভীবাজার ব্রাঞ্চ অফিস মৌলভীবাজার প্রতিনিধি জানান, ডেসটিনি-২০০০ লি: মৌলভীবাজার ব্রাঞ্চ অফিসের অধীনে গ্রাহক সংখ্যা ৫০ হাজারের কম নয়- জানালেন এই অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক জিয়াউল হক।

তবে অনলাইনে গ্রাহকের অন্তর্ভুক্তি থাকায় সঠিক পরিসংখ্যান তাদের অফিসে নেই। গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টায় মৌলভীবাজার কুসুমভাগ এলাকার সিঙ্গাপুর রেস্টুরেন্ট এর তৃতীয় তলার ডেসটিনি কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় গ্রাহক ও বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অফিসের বিভিন্ন স্থানে বসে গ্রুপ গ্রুপ হয়ে কথা বলছেন। গৃহবধূ, গ্রামের যুবক, যুবতী, অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক এমনকি প্রবাসী বিনিয়োগকারীও আছেন এর মাঝে। সিনিয়র পিএসডি ও নেট কো-অর্ডিনেটর মো: আজিজুর রহমানের গ্লাস ঘেরা অফিস কক্ষে বসে ছিলেন বেশ কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি। আজিজুর রহমানের টেবিলে সব দৈনিক পত্রিকা।

এই প্রতিবেদক কক্ষে প্রবেশ করতেই সবাই কথা বন্ধ করে দেন। অনুমান হয় ডেসটিনির কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ছিল তাদের আলোচনার বিষয়। এখানেই কথা হয় বিনিয়োগকারী তাজুদুর রহমানের সঙ্গে। বিনিয়োগকারী হিসেবে তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, তার বিশ্বাস গ্রাহকের কোন ক্ষতি হবে না। কথা হয় মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বাউরঘড়িয়া গ্রামের আহমদ রেজা খানের সঙ্গে।

জানালেন, ২০০০-এর সেপ্টেম্বর থেকে কাজ করছেন। রাজনগর উপজেলার খলাগাঁও করিমপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ১ লাখ টাকার শেয়ার কিনেছেন ২ বছর আগে। স্কুল শিক্ষক অজয় ঘোষ জানালেন কিছুদিন আগে লাভের কিছু টাকা তারা পেয়েছেন। পত্র-পত্রিকার সংবাদ দেখে তারা পর্যবেক্ষণ করছেন। ডেসটিনিতে কাজ করেন রাজনগর উপজেলার মহলালের রেহাদুল করীম।

তিনি বলেন, গ্রাহকরা কিছু কিছু প্রশ্ন করেন। মৌলভীবাজার ব্রাঞ্চ অফিসের সহকারী ব্যবস্থাপক জিয়াউল হক জানান, ডেসটিনি নিয়ে লেখা-লেখি হলেও মৌলভীবাজারের একজন বিনিয়োগকারীও তাকে একটি বার প্রশ্ন করেননি। তিনি আরও বলেন, একটি ফোনও করেননি কোন গ্রাহক। শুধু ঢাকা অফিস থেকে একটি মেসেজ ছিল বৈশাখী টেলিভিশনে টক-শো দেখার জন্য। বিনিয়োগকারীরা টাকা জমা করে ১২ বছরের জন্য গাছ কিনছেন।

এই গাছগুলো কোথায়, গ্রাহকরা কি এই গাছ দেখেছেন বা আপনাদের প্রতিষ্ঠান এতো গাছ লাগানোর জায়গা কোথায় পেলো এমন প্রশ্ন করলে বলেন, এটি উচ্চপর্যায়ের প্রশ্ন। এই সময় তিনি একটি পত্রিকার বিজ্ঞাপন দেখিয়ে বলেন, এই এপ্রিলেই গ্রাহকরা তার বিনিয়োগের টাকা পেতে যাচ্ছেন এমন ঘোষণা আছে। সুতরাং অন্যান্য কোম্পানির সঙ্গে ডেসটিনির পার্থক্য আছে। খুলনা বিভাগে ডেসটিনির সাত লক্ষাধিক গ্রাহক আতঙ্কে স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা থেকে জানান, খুলনা বিভাগের দশ জেলায় ডেসটিনির সাত লক্ষাধিক গ্রাহকের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আতঙ্ক বিরাজ করছে। ডেসটিনি মাল্টিপারপাস ও ট্রি-প্লান্টেশন প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর এ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।

ডেসটিনির মাঠ পর্যায়ের গ্রাহকরা অভিযোগগুলো নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে ধরনা দিলেও সেখান থেকে সঠিক উত্তর না পাওয়ায় তাদের বিনিয়োগকৃত অর্থ না পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছে। গতকাল দুপুরে নগরীর কেডিএ নিউমার্কেস্থ ডেসটিনির খুলনা বিভাগীয় অফিসে গিয়ে কোন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। ডেসটিনি এই অফিসে ২০০১ সাল থেকে কার্যক্রম শুরু করে। এখানে উপস্থিত ২০০২ সাল থেকে কর্মরত ডেসটিনি’র ডেপুটি ম্যানেজার প্রবীর কুমার রায়কে পেয়ে তার কাছে বিভিন্ন বিষয় জানতে চাইলে তিনি জানান, খুলনা বিভাগে তাদের সাত লক্ষাধিক গ্রাহক রয়েছেন। তারা ট্রি-প্লান্টেশন, মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডে বিনিয়োগ করেছেন।

তিনি বলেন, ইতিপূর্বেও আমাদের কর্মকাণ্ড নিয়ে বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় লেখালেখি হয়েছে। তাতে গ্রাহক কমে নাই বরং বৃদ্ধি পেয়েছে। এদিকে গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও হতাশা এবং অস্থিরতা লক্ষ্য করা গেছে। আজগর হোসেন নামে এক ডিস্ট্রিবিউটর বলেন, আমার প্রায় অর্ধ লাখ টাকা বিনিয়োগ করা। টাকা নিয়ে কোন সমস্যা হবে কিনা এ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছি।

প্রথম সাইকেলে থাকা রহমান আজিজ বলেন, নতুন গ্রাহকরা ফোন দিয়ে পাগল করে দিচ্ছে। সব কাগজে যেভাবে সংবাদ হচ্ছে সবটুকু তো মিথ্যা নয়। সবার মধ্যেই একটা ভয় কাজ করছে। অপরদিকে দুপুর ২টার দিকে খুলনা- যশোর মহাসড়কের পার্শ্ববর্তী মেট্রোপলিটন ফিলিং স্টেশন সংলগ্ন প্রস্তাবিত নির্মাণাধীন ডেসটিনি ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস সেন্টারে গিয়ে দেখা যায়, ২০০৯ সালের ৭ই জানুয়ারি এই সেন্টারের উদ্বোধন হয়। এরপর থেকে মাটি খনন ও পাইলিংয়ের কাজ চললেও কাজের তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহককে এখানে এনে তাদের এ ভবনের মালিকানা দেয়া হবে বলে কর্মকর্তারা প্রতিশ্রুতি দেন। এখানে উপস্থিত উপ-সহকারী প্রকৌশলী রমেশ মিত্র জানান, ৩৮ কাঠা জমির উপর নির্মাণাধীন আন্তর্জাতিক মানের এ বিজনেস সেন্টার হবে ২৫তলা। বহুতল ভবনের কারণে নির্মাণ কাজে বিলম্ব হচ্ছে। এ ব্যাপারে ডেসটিনির খুলনা বিভাগীয় উন্নয়ন কর্মকর্তা জিএম গোলাম রব্বানী সুমন বলেন, জাতীয় দৈনিকগুলোতে একসঙ্গে ডেসটিনি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় গ্রাহকদের বিভ্রান্ত হওয়া অস্বাভাবিক নয়। তবে কিছুটা হলেও সমস্যা দেখা দিয়েছে।

অচিরেই এ সমস্যার সমাধান হবে। কর্মকর্তাদের গা-ঢাকা স্টাফ রিপোর্টার, সাভার থেকে জানান, মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কোম্পানি ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড এর কার্যক্রম নিয়ে গ্রাহকদের মধ্যে বিরাজ করছে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। আতঙ্ক বিরাজ করছে সাভারে ডেসটিনির গ্রাহক ও সদস্যদের মাঝে। ডেসটিনি স্থানীয় অনেক কর্মীই গা-ঢাকা দিয়েছেন বলে জানা গেছে। গতকাল বিকালে ডেসটিনি-২০০০-এর ‘মোসাদ্দেক এসোসিয়েটস’ অফিসে গিয়ে কোন কর্মকর্তার দেখা মিলেনি।

ফাঁকা পড়ে রয়েছে অফিসটি। ক’জন নতুন সদস্য বসে রয়েছেন। এ সম্পর্কে তাদের কাছে জানতে চাইলে তারা নতুন সদস্য দাবি করেন। কিন্তু তাদের চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ লক্ষ্য করা গেছে। জানা গেছে, বেশি মুনাফার লোভ দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে সর্বনিম্ন ৫ হাজার টাকায় (ট্রি-প্ল্যানটেশন) সদস্য করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে ডেসটিনি-২০০০।

বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে তাদের প্রতারণার সংবাদ প্রকাশের পর সারা দেশে ন্যায় সাভারেও ডেসটিনির গ্রাহকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা দেখা দিয়েছে। টাকা ফেরত পাবে কি পাবে না তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন তারা। আশুলিয়ার প্যারাডাইজ এসোসিয়েটস-এর সদস্য জাকির হোসেন বলেন, সাভার-আশুলিয়া মিলে প্রায় ৫টি ডেসটিনির অফিস রয়েছে। এর মধ্যে মোসাদ্দেক এসোসিয়েটস পরিচালিত হয় প্রধান কার্যালয়ের মাধ্যমে। তিনি বলেন, তারা কোন প্রতারণার আশ্রয় নেননি।

তবে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর গ্রাহকদের বুঝাতে তাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। মুখরিত পরিবেশ নেই অফিসগুলোয় স্টাফ রিপোর্টার, ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে জানান, মুখরিত পরিবেশ নেই। দিন কয় আগেও যেখানে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ডেসটিনি অফিসগুলো কিলবিল করতো মানুষে সেখানে এখন বেশ নীরবতা। ডেসটিনি অফিসে নিয়মিত যাওয়া-আসা আছে মাসুক নামের এমন এক যুবক জানান, অফিসের এমন চিত্র আগে দেখিনি। সব সময় ভিড় লেগে থাকতো।

ডেসটিনির কর্মকাণ্ড নিয়ে কথা উঠার ফলেই এমন অবস্থা হয়েছে বলে তার ধারণা। এই অবস্থায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর মিলনায়তনের জন্য ডেসটিনি চেয়ারম্যানের দেয়া ৩০ লাখ টাকার এসি’র কথা এখন খুব করে প্রচার করছেন ডেসটিনি কর্মীরা। অর্থাৎ ডেসটিনির ভাল কাজ করে সেটিই বুঝাতে চাইছেন তারা। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের কোর্ট রোডের একটি বিল্ডিং এ ডেসটিনির জেলা অফিস। দু’টি ফ্লোর নিয়ে এই অফিসের একটি ফ্লোরে গ্রুপ অফিস, আরেকটি ফ্লোরে মূল অফিস।

গতকাল দুপুরে গ্রুপ অফিসে গিয়ে কারো দেখা মিলেনি। ডেস্কগুলো খালি পড়েছিল। ৪র্থ তলার মূল অফিস ছিল সরগরমই। তবে তাদের সবাই পুরনো কর্মী। নতুন গ্রাহক হতে এসেছেন এমন কারো দেখা মিলেনি।

এই অফিসের প্রধান মনিরুজ্জামান মনির বলেন, কোন সমস্যা নেই। সবাই কাজ করছে। তাদের গ্রাহকদের মধ্যে কোন উদ্বেগ-উৎকন্ঠা নেই বলেও জানান মনির। তবে অফিসে সরব কর্মীদের চোখে-মুখে ছিল উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার ছাপ। তারপরও কিছুই হয়নি এমন একটা ভাব তারা চেহারায় ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন।

জেলায় ডেসটিনির গ্রাহক সংখ্যা ৩৫ হাজার। মনির জানান, বর্তমান এই অফিসটির ভাড়া ৩০ হাজার টাকা। মাস দেড়েকের মধ্যে তারা এই অফিস ছেড়ে আরও বড়ো অফিসে উঠবেন। সাড়ে ৬ হাজার স্কয়ার ফিট আয়তনের ওই অফিসটি ভাড়া নেয়া হয়েছে প্রতিমাসে ৮০ হাজার টাকায়। শহরে জেলা অফিসটির বাইরে রয়েছে আরও ৩ টি শাখা অফিস।

এগুলো কাউতলী, হালদারপাড়া ও পীরবাড়ী এলাকায়। পীরবাড়ীর শাখা অফিসটিতে গিয়ে ৪ ডিস্ট্রিবিউটর ছাড়া আর কাউকে পাওয়া যায়নি। তাদের একজন জাহিদুল আলম জানান, সবাই মাঠে আছে। মাঠ কোথায় এর উত্তরে জানান, সারা দেশই আমাদের মাঠ। আরেকজন জুবায়ের মোল্লা জানান, সপ্তাহে একদিন তাদের সেমিনার হয়।

সেদিনই সবাই আসে। কাউতলী অফিসে গিয়েও চোখে পড়ে সব ডেস্ক ফাঁকা। বিশাল অফিস হলেও লোক নেই। একটি কক্ষে কয়েক জনের জটলা। এই অফিসের প্রধান রাকিবুল ইসলাম জানান, তার শাখার অধীনে আছে আড়াই হাজার গ্রাহক।

তিনি জানান, ২ বছর ধরে কাজ করছেন ডেসটিনিতে। এই সময়ে ২০/২৫ বার ডেসটিনির বিরুদ্ধে নানা খবর উঠতে দেখেছেন তিনি পত্রিকায়। এবারও সে রকমই। তার কথা- আমরা কাজ করতে গিয়ে ডেসটিনির কাছ থেকে কোনরকম প্রতারণার শিকার হইনি। এদিকে জেলার সর্বত্র আলোচনা চলছে ডেসটিনির ভবিষ্যৎ নিয়ে।

উদারহস্ত ডেসটিনি চেয়ারম্যানের ডেসটিনি চেয়ারম্যান আলহাজ মোহাম্মদ হোসেন এর বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা উপজেলার বাদৈর গ্রামে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ পৌর মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে এসে জেলা প্রশাসক আর পৌর মেয়রের অনুরোধে তিনি ১৩ টি এসি দিয়েছেন। এই এসি লাগানোর কাজ শেষ হয়েছে কয়েকদিন আগে। ডেসটিনির জেলা প্রধান মনিরুজ্জামান মনির জানান, মোট ৫৯ টন ওজনের এই এসি’র দাম পড়েছে ৩০ লাখ টাকা। ৮ই মার্চ এই এসিগুলো পৌর মেয়রের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

মনির আরও জানান, তারা ৪ লাখ টাকা খরচ করে এখানে নৌকা বাইচও করেছেন। খোঁজ-খবর নিতে যাওয়া সাংবাদিকদের কাছে এগুলোই তুলে ধরা হচ্ছে বড় করে। স্বস্তিতে নেই সিলেটের গ্রাহকরা সিলেট অফিস জানায়, স্বস্তিতে নেই সিলেটের মাল্টিলেভেল কোম্পানি ডেসটিনির গ্রাহকরা। ভয় আর আতঙ্ক বিরাজ করছে তাদের মধ্যে। আশঙ্কা রয়েছে ডেসটিনিতে বিনিয়োগ করার পর তারা কি লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন।

এই আশঙ্কার কারণ হচ্ছে, গত কয়েক দিনে ডেসটিনি নিয়ে একের পর এক খবর আসছে বাজারে। আর এ নিয়ে এক ধরনের আশঙ্কার জন্ম হয়েছে সিলেটে। তবে ডেসটিনির কর্মকর্তারা বলছেন, তাদের মধ্যে কোন আতঙ্ক, আশঙ্কা কিংবা ভয় নেই। পরিপক্ক গ্রাহকদের মধ্যে এ ভয় কাজ করছে না। নতুন সদস্যদের মধ্যে এক ধরনের আশঙ্কা থাকলেও তা কেটে যাচ্ছে।

কিন্তু বাস্তব হচ্ছে ডেসটিনি নিয়ে একের পর এক খবরে সাধারণ গ্রাহকরা স্বস্তিতে নেই। তারা আছেন বিনিয়োগ হারানোর আশঙ্কায়। তারা বলছেন, ডেসটিনি বন্ধ হলে তারা হয়তো টাকা পাবেন না। ডেসটিনির দেয়া তথ্য মতে, সিলেটে রয়েছে ডেসটিনির ২ থেকে আড়াই লাখ ডিস্ট্রিবিউটর। তারা সবাই ডেসটিনির সঙ্গে সম্পৃক্ত।

২০০০ সালে ঢাকা বেইজড ডেসটিনি কার্যক্রম শুরু করার পর সিলেটেও তাদের কাযক্রম শুরু হয়। তবে এই কার্যক্রম গ্রুপভিত্তিক থাকলেও কোন অফিস ছিল না। কিন্তু পরবর্তীতে গ্রাহক সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় সিলেট নগরীর উপশহরে ডেসটিনির অফিস খোলা হয়। এই অফিস পরবর্তীতে ২০০২ সালের জুন মাসে মানরু অফিসে তাদের কার্যক্রম শুরু করে। বর্তমানে ডেসটিনির সিলেটের একটি কার্যালয়ই।

তবে বিভিন্ন গ্রুপ থাকায় একাধিক অফিস রয়েছে। এসব অফিস নিয়ন্ত্রণ করেন গ্রুপের সদস্যরা। এ রকম ৫ টি কার্যালয় রয়েছে সিলেট নগরীতে। তবে উপজেলা ভিত্তিক তাদের কোন কার্যালয় নেই। প্রবাসী শহর সিলেটে ৫ বছরের মধ্যে ডেসটিনি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছে যায়।

যার ফলে এখন ১২ বছরের প্রতিষ্ঠান হিসেবে সিলেটে অনেকটা নির্ভেজালভাবে ডেসটিনি তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সামপ্রতিক সময়ে ডেসটিনি তাদের কার্যক্রমে নতুন মাত্রা যোগ করে। সিলেট নগরীর নবাব রোড এলাকায় ডেসটিনির পক্ষ থেকে ৮১ শতক জমি ক্রয় করা হয়েছে। যে জমি ক্রয় করা হয়েছে তার মূল্য হবে আনুমানিক দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা। স্থানীয় লোকজন জানিয়েছেন, এই জমির মূল্য আরও বেশি হতে পারে।

এছাড়া সিলেটের গোয়াইনঘাট এলাকায় ৯৪ একর জমি ক্রয় করা হয়েছে। এই জমিগুলো ধানী জমি। পাইলট প্রকল্পের নামে এখানে উন্নতজাতের ধান চাষ প্রকল্পের গবেষণা চালাচ্ছে ডেসটিনি এগ্রো। আর বাগবাড়ীর ৮১ শতক ভূমিতে বহুতল ভবনের কাজ শুরু করতে ইতিমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। সিলেটে ডেসটিনির পক্ষ থেকে আপাতত এই দু’টি প্রকল্পের জন্য জমি কেনা হয়েছে।

ডেসটিনির কার্যালয়ে উপস্থিত গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা আতঙ্কে আছেন। উদ্বেগ-আতঙ্ক এবং উৎকণ্ঠার কথা স্বীকার করলেন ডেসটিনির সিলেটের শাহ্‌জালাল এসোসিয়েটস এর গ্রুপ প্রধান মো. আবদুল গনি খান। তিনি মানবজমিনকে জানান, মাঠ পর্যায় থেকে ফোন আসছে। কোন সমস্যা হচ্ছে কি না- এ রকম প্রশ্নও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, নানা অপপ্রচারে ডেসটিনি নিয়ে কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্ব তৈরি হওয়ায় কাজ-কর্মে শ্লথ গতি আসতে পারে।

কিন্তু তাতে ডেসটিনির সামগ্রিক অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে না। স্টাফ রিপোর্টার: অবৈধ ব্যাংকিং নিয়ে সতর্ক থাকতে সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়েছে, এ ধরনের প্রতিষ্ঠান আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোন ধরনের আর্থিক লেনদেন না করতে সবার প্রতি অনুরোধও জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

এমএলএম কোম্পানি ডেসটিনির বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গতকাল এক সার্কুলার জারি করলো। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি ডেসটিনিসহ এ ধরনের এমএলএম কোম্পানির বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করেছে। অপরদিকে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বললে ডেসটিনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুরোধ সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংকের শাখা অফিসকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এমএলএম কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে অধিক তৎপরতার অংশ হিসেবে এ ব্যাপারে সব পরিদর্শক দলকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

গতকাল বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয় থেকে এ তথ্য জানানো হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সচিবালয়ের মহাব্যবস্থাপক এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন নামে কতিপয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না নিয়ে ব্যাংক ব্যবসার অনুরূপ ব্যবসা পরিচালনা করছে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অস্বাভাবিক উচ্চহারে সুদ ও আকর্ষণীয় মুনাফার লোভ দেখিয়ে জনসাধারণের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এ ব্যাপারে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে কাজ শুরু করেছে। তিনি জানান, অনুমোদনহীন এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে লেনদেন যাতে না করা হয়, সেজন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষে জনসাধারণের প্রতি আমাদের অনুরোধ থাকবে।

‘অবৈধভাবে ব্যাংকিং কার্যক্রম পরিচালনা করছে ডেসটিনি’- গণমাধ্যমে প্রকাশিত এমন প্রতিবেদনের সূত্র ধরে এ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ ছাড়া বিভিন্ন জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপারসহ স্থানীয় প্রশাসনকে এ ব্যাপারে আনুষ্ঠানিকভাবে সহযোগিতা দিতেও জানানো হচ্ছে। ডেসটিনি বন্ধ করার ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক কোন পদক্ষেপ নেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে এ এফ এম আসাদুজ্জামান বলেন, এটা সরকারের ব্যাপার, বাংলাদেশ ব্যাংকের কোন কিছুই করার নেই। কারণ বিষয়টি সরকারের মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। যা করার সরকারই সিদ্ধান্ত নেবে।

মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক বললে ডেসটিনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হলে ডেসটিনির বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে সরকার। গতকাল সচিবালয়ে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার সফররত মহাপরিচালক পাসকেল লেমির সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত এ কথা বলেন। ডেসটিনির সঙ্গে প্রভাবশালী কেউ কেউ জড়িত বলেও তিনি স্বীকার করেন। ডেসটিনি নিয়ে পত্রপত্রিকায় অনেক লেখালেখি হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে অর্থমন্ত্রী বলেন, এ ব্যাপারে আমি কিছু জানি না। এর সঙ্গে জড়িত বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ ব্যাংক।

তারা পদক্ষেপ নিলে আমি ব্যবস্থা নেবো। প্রভাবশালী লোকেরা জড়িত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, একজন সাবেক জেনারেল তো আছেনই। প্রধানমন্ত্রীর জনপ্রশাসন বিষয়ক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম ডেসটিনির সঙ্গে যুক্ত কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, আমি জানি না। ওদিকে আমদানি ব্যয় সংস্থানে সহযোগিতা করতে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মহাপরিচালক পাসকেল লেমি’র প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অর্থমন্ত্রী সাংবাদিকদের বলেন, ডব্লিউটিওর নিজস্ব কোন তহবিল না থাকলেও তারা বিশ্বব্যাংক ও আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল আইএমএফ-এর সঙ্গে কাজ করে।

তাই তারা (ডব্লিউটিও) যেন তাদের (বিশ্বব্যাংক-আইএমএফ) সঙ্গে কথা বলে ট্রেড ফাইন্যান্সিংয়ের একটা ব্যবস্থা করে, এজন্য বলা হয়েছে। বর্তমানে আমদানি ব্যয় সংস্থান ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক করলেও তাতে সুদের হার ৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেশ চড়া। অর্থমন্ত্রী গতকালও গ্রামীণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নিয়োগে মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অনুসন্ধান কমিটি গঠনের প্রস্তাব নাকচের কথা জানান। সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র গ্রামীণ ব্যাংকের উন্নয়নে কখনও কোন অর্থ দেয়নি। ডেসটিনিসহ ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ সংসদীয় কমিটির মুনাফার লোভ দেখিয়ে নিরীহ মানুষকে প্রতারণা থেকে রক্ষা করতে দ্রুত মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) আইন প্রণয়নের সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

একই সঙ্গে ডেসটিনিসহ এ ধরনের এমএলএম কোম্পানির বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে অর্থমন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় ব্যাংক গভর্নরকে অনুরোধ জানানো হবে। গতকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এ অনুরোধ জানানোর সিদ্ধান্ত হয় বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন কমিটির সভাপতি এ বি এম আবুল কাসেম। তিনি বলেন, এ ধরনের কোম্পানি জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ব্যাংককে অবৈধ ব্যাংকিং ও ব্যবসা বন্ধ করার জন্য চিঠি দেবো। শিগগির ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ জানাবো।

এমএলএম-এর অবৈধ ব্যবসার ওপর নজরদারি বাড়াতে আরও পদক্ষেপ নেয়ারও সুপারিশ করেছে কমিটি। কমিটির সভাপতি জানান, এমএলএম আইন শিগগির সংসদে উত্থাপনের সুপারিশও করেছেন তারা। সংসদ সচিবালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এমএলএম-এর নামে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বিপুল মুনাফা দেয়ার লোভ দেখিয়ে দেশের বহু নিরীহ মানুষকে প্রতারিত করছে বিধায় দেশের ওই নিরীহ লোকদের প্রতিনিয়ত প্রতারিত হওয়া থেকে রক্ষা ক।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.