আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কোন মুখে তিনি এত লম্বা লম্বা কথা বলেন?

নিত্য নতুন ছবকে পাবলিকের কান আজ ঝালাপালা। সকাল থেকে রাত অবধি রেডিও টিভিতে শুনতে হয় নানা সাধু কথা। দলীয় কর্মী, নেতা, মন্ত্রী, এমনকি সরকার প্রধান নিজেও চাপাবাজির এ প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে নেই। কেবল গলাবাজি চলছে তো চলছেই, "আমি ভালো। আমার পরিবার শিক্ষিত।

আমি চুরি করি না। আমার লোকজনও ভালো। " দেশের সকল অসুবিধা সমস্যা নিয়েও উনি জবাব দিয়ে থাকেন। দুর্নীতি কে করছে? রাস্তাঘাট খারাপ কেনো? চাউলের দাম ১০ টাকা নয় কেনো? মাছে ফরমালিন কেনো? বিদ্যুতের লোডশেডিং কেনো? লাইনে গ্যাস নাই কেনো? ঢাকায় যানজট কেনো? ড্রাইভাররা মানুষ মারছে কেনো? পিলখানায় সেনা অফিসার হত্যা কেনো? পুলিশ ঘুস ছাড়া কাজ করে না কেনো? শেয়ার মার্কেট লুট হয় কেনো? মন্ত্রী-নেতা-কর্মীরা পয়সা নিয়ে কাজ করে কেনো? মন্ত্রীরা কাজ ছেড়ে কেবল অকাজের কথা বলেন কেনো? কর্মচারীরা কাজ করে না কেনো? সাংবাদিকরা দুর্নীতির খবর লেখে কেনো? এমনকি শিশু কাঁদে কেনো? উনার কাছে সকল প্রশ্নের একটাই জবাব! যা কিছু হচ্ছে- সব করছেন খালেদা জিয়া এবং দোষ কেবল বিএনপির!! ছেলে ও মেয়েকে বিজ্ঞানী দাবী করেন, ভালো কথা। তাহলে তো জানা দরকার বিজ্ঞানী কাকে বলে? কি যোগ্যতা থাকা চাই।

নিউ ক্যাসেল ইউনিভাসির্টির মতে, কম্পিউটার বিজ্ঞানী হতে হলে তাকে কাজ করতে হবে থিওরেটিক্যাল বিষয় নিয়ে- "higher level of theoretical expertise and innovation they apply to complex problems and the creation or application of new technology." কেউ কখনো শুনেছেন কি, কখনো বাবা সজীবের এরূপ কাজ করার খবর বা কোনো জার্নাল? হার্ভার্ড থেকে যে ডিগ্রি, সেটা লোকপ্রশাসনে এসোসিয়েট। হ্যা, কম্পিউটার সাইন্সে আগের একটা মাষ্টার্স আছে, কিন্তু তাতেই কেউ বিজ্ঞানী হয়ে যায় না। পুতুল নাকি কোর্স করেছেন মনোবিজ্ঞানে; এতে করে কি তিনি হয়ে যান মনোবিজ্ঞানী? যদি তাই হয়, তাহলে মেডিকেল এসিস্টেন্টরা তো ওদের বিষয় নিয়ে অনেক কোর্স করা; আজ থেকে তারা হয়ে যাবেন মেডিকেল বিজ্ঞানী! তাই নয় কি? চাপাবাজির একটা সীমা থাকা দরকার!! প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ১৫টি মামলা কিভাবে প্রত্যাহার হয়েছিলো, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক সৈয়দ আশরাফ এবং প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের কয়েকদিন আগে দাবী করে বসেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির যেসব মামলা হয়েছিলো, তা রাজনৈতিক মামলা এবং কোর্টে লড়াই করে খারিজ করেছেন তারা। ওবায়দুল কাদেরের ভাষায়, “নেত্রী শেখ হাসিনার ১৫টি মামলা উচ্চ আদালতের রায়ে প্রত্যাহার হয়েছে। তিনি কারও দয়া বা ক্ষমতার অপব্যবহার করে মামলা প্রত্যাহার করেননি।

” তাহলে বিষয়টা একটু তলিয়ে দেখা যাক। ২০০৮ সালের নির্বাচন অবধি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ১৫টি মামলা হয়েছিলো। এর মধ্যে ১৩ টি মামলায় মোট ১৪ হাজার ৮৬৩ কোটি ৯০ লাখ ৫১ হাজার ১৮৮ টাকার দুর্নীতি/ অনিয়মের অভিযোগ আনা হয়। এ ছাড়া একটি ছিল খুনের মামলা, আরেকটি সেনানিবাসে অবৈধভাবে প্রবেশের চেষ্টার অভিযোগে মামলা। এর মধ্যে ৪টি মামলায় ১৩ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকার ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগ অন্তর্ভুক্ত ছিল।

১৫ টি মামলার মধ্যে ১০টি মামলা দায়ের হয় ৪ দলীয় জোট সরকারের সময়। এ গুলো হলো বেপজায় পরামর্শক নিয়োগে দুর্নীতি, ফ্রিগেট ক্রয়ে দুর্নীতি, মেঘনাঘাট বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানে দুর্নীতি, মিগ-২৯ ক্রয়ে দুর্নীতি, নভোথিয়েটার নির্ম‍ানে দুর্নীতির ৩টি মামলা, বঙ্গবন্ধু স্মৃতিসৌধ নির্মানে দুর্নীতি, পল্টন হত্যায় হুকুমের আসামী, এবং সেনানিবাসে অনুপ্রবেশ চেষ্টা মামলা। আর ৫টি মামলা দায়ের হয় ১/১১র পরবর্তী ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে। এগুলো হলো- আজম জে চৌধুরী থেকে ৩ কোটি টাকা ঘুস নেয়া, নুর আলী থেকে ৫ কোটি টাকা চাঁদা নেয়া, কাজী তাজুল ইসলাম ফারুক থেকে ৩ কোটি টাকা ঘুস নেয়ার মামলা, খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মান বাবদ ৩ কোটি টাকার চাঁদা নেয়ার মামলা, এবং নাইকো দুনীতি মামলা। অনুসন্ধানে পাওয়া গেছে, বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়েরকৃত ১২টি মামলা প্রত্যাহার করার জন্য সরকারী সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

সে মোতাবেক পরে ৬টি মামলা সরাসরি প্রত্যাহার করা হয় এবং ৯ টি মামলা আদালতের মাধ্যমে বাতিল বা কোয়াশ হয়। এদের মধ্যে ৫ টি মামলা বাতিল করে বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ; আর ৪টি মামলা বাতিল করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি বোরহানউদ্দিনের সমন্বয়ে গঠিত কোর্ট। কবে, কোন মামলা, কিভাবে মুক্ত করা হয়, তা নিয়ে এবারে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক। ৩০ মে ২০১০: বেপজায় পরামর্শক নিয়োগে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলা বাতিল করে হাইকোর্ট। বিচারপতি মো: শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চে এই রায় দেয়।

এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মামলামুক্ত করার কার্যক্রম শেষ হয়। নথিপত্র থেকে জানা যায়, নীতিমালা লঙ্ঘন করে এবং বিজিএমইএ'র সঙ্গে আলোচনা না করে বেপজার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরামর্শক নিয়োগের মাধ্যমে রাষ্ট্রের ২ কোটি ১০ লাখ ১ হাজার ৬৮৮ টাকা ক্ষতিসাধনের অভিযোগে ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর দুর্নীতি দমন ব্যুরো এ মামলা দায়ের করে। ২০০২ সালের ২ জুলাই শেখ হাসিনাসহ তিনজনকে অভিযুক্ত করে চার্জশীট দাখিল করা হয়। শেখ হাসিনা এই মামলার কার্যক্রম বাতিলের জন্য আবেদন করেন, যার ভিত্তিতে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে আদালত মামলাটি বাতিল করে। ১৮ মে ২০১০: নৌবাহিনীর জন্য ফ্রিগেট ক্রয়ে দুর্নীতি সংক্রান্ত শেখ হাসিনার মামলা বাতিল করে বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ।

দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে দক্ষিন কোরিয়া থেকে পুরাতন যুদ্ধজাহাজ ক্রয় করার অভিযোগে ৭ আগষ্ট ২০০২ শেখ হাসিনাসহ ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন ব্যুরো- মামলা নম্বর ৩৪(৮)২০০২। মামলার বিবরনে জানা যায়, সর্বনিম্ন দরদাতা জাপান এবং নরওয়েকে কাজ না দিয়ে ৯৯.৯৭ মিলিয়ন ডলারে কোরিয়ান দেইয়ু কর্পোরেশনের কাছ থেকে ১৭ নটিক্যাল মাইল ক্ষমতার ফ্রিগেটটি ক্রয় করে রাষ্ট্রের ৪৪৭ কোটি টাকার ক্ষতি করা হয়। কেননা, যেখানে যুদ্ধকালে একটি ফ্রিগেটকে ৩৫-৪০ নটিক্যাল মাইল স্পীডে চলতে হয়, সেখানে ধীরগতির এই পুরোনো ফ্রিগেট রাষ্ট্রের কোন্ কাজে লাগবে? ২২ এপ্রিল ২০১০: মেঘনাঘাট বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দুর্নীতির মামলাটি খারিজ করে দেয় বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ। অবৈধভাবে কাজ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৭ কোটি ৮৯ লাখ টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী রফিকুল ইসলাম ও সৈয়দ আবুল হোসেন সহ অন্যান্যদের নামে ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর মামলা দায়ের করে দুর্নীতি দমন ব্যুরো। ১৪ অক্টোবর ২০০২ এই মামলায় বিদ্যুৎ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, সাবেক প্রতিমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন, এবং সাকো ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজার কেএম ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন হয়।

১৭ অক্টোবর ২০০২ থেকে বিশেষ জজ আদালতে মামলাটির বিচার চলতে থাকে। এ মামলাটি কোয়াশ করার জন্য একই বছর ২ ডিসেম্বর শেখ হাসিনা হাইকোর্টে আবেদন করেন। দীর্ঘদিন হাইকোর্টে ঝুলে থাকার পরে বর্তমান সময়ে নিস্পত্তি করা হলো। ১৩ এপ্রিল ২০১০: বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টের নামে তিন কোটি টাকা চাঁদা নিয়ে খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের অনুমতিদানের অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা দুর্নীতি মামলাটি বাতিল করে রায় দেয় হাইকোর্ট। বিচারপতি মো. শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।

রায়ে বলা হয়, “দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন অমান্য করে অনুসন্ধান, মামলা দায়ের, তদন্ত, চার্জশিট দেওয়া, বিশেষ জজ আদালতে বিচার করা অবৈধ হয়েছে। ন্যায়বিচারের স্বার্থে মামলাটি বাতিল হওয়া দরকার। তাই মামলাটি বাতিল করা হলো। ” খুলনায় ভাসমান বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনে সর্বনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় দরদাতাকে কাজ দিয়ে তার কাছ থেকে তিন কোটি টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ছয় জনের বিরুদ্ধে ২০০৭ সালের ২ সেপ্টেম্বর তেজগাঁও থানায় মামলা করে দুদক। ৮টি চেক/পে অর্ডারের মাধ্যমে সামিট গ্রুপের মোহাম্মদ আজিজ খান (যিনি বর্তমান বানিজ্য মন্ত্রী ফারুক খানের বড় ভাই) শেখ হাসিনাকে ৩ কোটি টাকা প্রদান করে, যার দ্বারা ধানমন্ডিতে বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাষ্টের জন্য সাড়ে ছয় কোটি টাকায় দোতলা বাড়ি সহ ১৯.১১ কাঠা জমি কেনা হয়।

এ মামলায় শেখ হাসিনার সাথে অন্যান্য অভিযুক্ত ছিলেন সাবেক বিদ্যুৎ সচিব ডঃ তৌফিক এলাহী চৌধুরী, পিডিবির চেয়ারম্যন নুরুদ্দিন মাহমুদ কামাল, এবং আজিজ খান, ফরিদ খান, হাসান মাহমুদ রাজা, এবং আবুল কালাম শেখ। ২০০৮ সালের ১৮ মে অভিযোগ গঠনের পরে বিশেষ জজ আদালতে মামলার সাক্ষগ্রহণ শুরু হয়। পরবর্তীতে দেশে নির্বাচনের আবহ উঠলে সেনা সমর্থিত সরকার আপোষরফা করে মামলার গতি শ্লথ হয়ে যায়। কয়েকদিন আগে ওবায়দুল কাদের দাবী করেন, “জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্টের সঙ্গে বঙ্গবন্ধু ট্রাস্টের তুলনা করা ঠিক না। কারণ বঙ্গবন্ধু ট্রাস্ট গঠিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু কন্যাদের নিজস্ব উদ্যোগে।

এটা কারো দান বা অনুদান নয়। ” কি বোঝাতে চাচ্ছেন ওবায়দুল? দানের টাকায় নয়, তাহলে কি সামিট গ্রুপের ঘুসের টাকায় এ ট্রাস্ট চলে? ১১ মার্চ ২০১০: বিচারপতি মো. শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চ শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে নাইকো দুর্নীতি মামলা বাতিল করে। কানাডিয়ান প্রতিষ্ঠান নাইকোকে ছাতক, কামতা, ও ফেনী গ্যাসকূপ হতে অবৈধভাবে গ্যাস উত্তোলনের সুযোগ করে দিয়ে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার ৬৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর শেখ হাসিনাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৭ মে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, প্রাক্তন মুখ্য সচিব ডঃ এস এ সামাদ, সাবেক জ্বালানী সচিব ডঃ তৌফিক এলাহী চৌধুরী ও আকমল হোসেন, ইআরডি সচিব ডঃ একেএম মশিউর রহমান, পেট্রোবাংলার মোশাররফ হোসেন, সৈয়দ আনোয়ারুল হক, এবং নাইকোর কাশেম শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। এতে বলা হয়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে বিনা টেন্ডারে নাইকো রিসোর্সকে কাজ প্রদান করে এক হাজার ৭৯৪ বিসিএফ গ্যাস অবৈধভাবে উত্তোলনের সুযোগ দিয়ে রাষ্ট্রের ১৩ হাজার ৬৩০ কোটি ৫০ লাখ টাকা আর্থিক ক্ষতিসাধন করে।

অভিযোগ গঠনের পরে বার বার তারিখ পিছিয়ে কালক্ষেপন করা হয়। অবশেষে ১০ জুন সেনা সরকারের সাথে সমঝোতার ভিত্তিতে শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়, যার আওতায় প্যারোলে মুক্তি নিয়ে ১২ জুন বিদেশ চলে যান। পরে মামলাটি বাতিলের জন্য হাইকোর্টে আবেদন করেন। তিন বছর নানা কোর্ট ঘুরে অবশেষে আবেদনটি বিচারপতি মো. শামসুল হুদা ও বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীর কোর্টে নিস্পত্তি করা হয়। মামলার এজাহারে উল্লেখ আছে, ১৯৯৭ সালে গ্যাস উত্তোলনের জন্য আহুত বিডিং প্রতিযোগিতার ২য় পর্যায়ে অযোগ্য ঘোষিত হওয়া কানাডিয়ান কোম্পানী নাইকো (NIKO) জ্বালানী সচিব তৌফিক এলাহীর যোগসাজসে বাংলাদেশের জ্বালানী সেক্টরে পেছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়ে এবং কোনো প্রকার প্রতিযোগিতা মূলক টেন্ডার ছাড়াই ২০০১ সালে নাইকোকে গ্যাস তোল‍ার কাজ দেয় শেখ হাসিনার সরকার।

২০০১ পরবর্তী চার দলীয় জোট সরকার ঐ চুক্তির ধারাবাহিকতা বহাল রাখার কারনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নামে ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে দুদক আরেকটি মামলা করে। অথচ এ মামলাটি এখনও প্রত্যাহার বা বাতিল হয় নি, বরং চলমান। ৯ মার্চ ২০১০: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মিগ-২৯ যুদ্ধ বিমান ক্রয়ে দুর্নীতি মামলাটি বাতিল করে হাইকোর্ট। বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি বোরহান উদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট ডিভিশন বেঞ্চ এই রায় দেন। প্রয়োজন ছাড়াই এবং ডিজিএফআই-এর মতামত না নিয়ে নীতিমালা লঙ্ঘন করে রাশিয়া থেকে ৮টি মিগ-২৯ যুদ্ধবিমান ক্রয় করে রাষ্ট্রের প্রায় ৭০০ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে ২০০১ সালের ১১ ডিসেম্বর এ মামলাটি দায়ের করে দুর্নীতি দমন ব্যুরো এবং পরে ২০ আগষ্ট ২০০৮ শেখ হাসিনাসহ ৬ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে আদালত।

এ মামলার বিরুদ্ধে শেখ হাসিনার দায়ের করা একটি কোয়াশমেন্ট আবেদন ২৫ আগষ্ট ২০০৮ খারিজ করে মামলাটি নিম্ন আদালতে চলতে পারে মর্মে আদেশ দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি এম রুহুল আমিনের নেতৃত্বে ৭ বিচারপতির ফুল আপিলেট ডিভিশন। কোয়াশমেন্ট পিটিশনটি চুড়ান্তভাবে বাতিল হবার পরে বিশেষ জজ আদালতে বিচার শুরু হয়, কিন্তু ২০০৮ সালের নির্বাচনের কিছুদিন আগে এ মামলাটি হঠাৎ গতি হারায়। এ মামলায় অন্যতম সহযোগি আসামী ছিলেন আওয়ামীলীগ নেতা ও ব্যবসায়ী নূর আলী। সেনানিয়ন্ত্রিত সরকারের সময়ে নূর আলী স্বীকার করেছিলেন, এই মিগ কেনা বাবদ তিনি ১২ মিলিয়ন ডলার কমিশন লাভ করেন, যা শেখ হাসিনা সহ অন্যরা ভোগ করে। হাইকোর্ট কতৃক এ মামলাটি বাতিল হওয়ায় একটি বড় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

তা হলো, আপিলেট ডিভিশন যে মামলার কোয়শমেন্ট পিটিশন নাকচ করে নিম্ন আদালতে চলার বৈধতা দেয়, হাইকোর্টের কোনো বেঞ্চ কি আর পরে ঐ মামলাটি কোয়াশ করার এখতিয়ার রাখে? কেননা, সুপ্রীম কোর্টের আপীল বিভাগের আদেশ হাইকোর্ট ও অধস্তন আদালতের জন্য মান্য করা বাধ্যতামূলক। মিগ-২৯ মামলাটি বাতিল করে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি বোরহান উদ্দিন সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্টের বেঞ্চটি আপীল বিভাগের ওপরে অবস্থান নিয়েছে। এ ঘটনাটি ভবিষ্যতের জন্য একটি বাজে দৃষ্টান্ত হয়ে থাকলো। ৪ মার্চ ২০১০: বঙ্গবন্ধু (ভাসানী) নভোথিয়েটার নির্মাণে দুর্নীতির অভিযোগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা তিনটি মামলা অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্ট। নভোথিয়েটার প্রকল্পে ঠিকাদার নিয়োগে দুর্নীতি সংক্রান্ত তেজগাঁও থানার ৯৫(৩)২০০২ নং মামলা এবং অবৈধভাবে ব্যয় বৃদ্ধি করে রাষ্ট্রের ৫২ কোটি টাকা ক্ষতিসাধন করার অভিযোগে তেজগাঁও থানার ৯৬(৩)২০০২ ও ৯৭(৩)২০০২নং মামলাগুলো দুর্নীতি দমন ব্যুরো দায়ের করে ২৭ মার্চ ২০০২।

শেখ হাসিনার রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে সরকার বদলের পরে বিচারপতি এএইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক এবং বিচারপতি বোরহানউদ্দিনের বেঞ্চ এ মামলাগুলো বাতিল করে। ১৮ অক্টোবর ২০০৯: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি প্রকল্প দুর্নীতির মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয় দুদক। টুঙ্গিপাড়ায় স্মৃতি কমপ্লেক্স নির্মানের জন্য বিধি বহির্ভুতভাবে কনসাল্টিং ফার্ম নিয়োগ করে রাষ্ট্রের ৪১ লাখ ৮৪ হাজার টাকা ক্ষতি করার অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৪ জনের বিরুদ্ধে ৩ জুলাই ২০০৪ তারিখে দুর্নীতি দমন ব্যুরো মামলা দায়ের করে। ২০০৯ সালে আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পরে এ মামলাটি প্রত্যাহার করার জন্য দুদককে সরকার চিঠি দেয়। অবশেষে ১৮ অক্টোবর দুদক চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করলে মামলাটির মৃত্যু ঘটে।

১৭ আগষ্ট ২০০৯: লগি-বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে পল্টনে ৬ জন জামায়াতে ইসলামী কর্মীকে হত্যা করার হুকুমের আসামী হিসাবে শেখ হাসিনা ও অন্যানের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয় বর্তমান সরকার। চার দলীয় জোট সরকারের ক্ষমতা হস্তান্তরের আগের দিন ২৮ অক্টোবর ২০০৬ পল্টনে লগি বৈঠা দিয়ে পিটিয়ে ৬ ব্যক্তিকে হত্যা করার অভিযোগে শেখ হাসিনা এবং ৪৫ জনের বিরুদ্ধে ২৯ অক্টোবর ২০০৬ তারিখে মামলা দায়ের হয়। এজাহারে বলা হয় শেখ হাসিনার প্রকাশ্য নির্দেশে আওয়ামীলীগ ও অংগসংগঠনের কর্মীরা লগি-বৈঠা নিয়ে পল্টনে হাজির হয় এবং বিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কর্মীদের উপর প্রকাশ্যে ঝাপিয়ে পড়ে এবং লগি-বৈঠা দিয়ে বেশ কয়েকজনকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। তদন্ত শেষে ১১ এপ্রিল ২০০৭ আদালতে চার্জশীট দাখিল করা হয়। ২০০৯ সালে সরকার বদলের পরে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের অনুরোধে পাবলিক প্রসিকিউটর মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ আবু পল্টন হত্যাকান্ড মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করলে মেট্রোপলিটন ম্যাজিষ্ট্রেট দিলারা আলো মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

১৭ মে ২০০৯: সরকারের আবেদনের প্রেক্ষিতে আজম জে চৌধুরীর দায়ের করা চাঁদাবাজি মামলাটি প্রত্যাহার করার আদেশ দেয় আদালত। ৩ কোটি টাকা চাঁদা নেয়ার অভিযোগে শেখ হাসিনা, শেখ সেলিম, ও শেখ রেহানার বিরুদ্ধে ১৩ জুন ২০০৭ তারিখে ইস্ট কোস্ট ট্রেডিং লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর আজম জে চৌধুরী মামলা দায়ের করেন। পুলিশী তদন্ত শেষে আদালতে চার্জশিট দাখিল করার পরে চার বার তারিখ পিছানের পরে ২৫ অক্টোবর ২০০৭ অভিযোগ গঠন হয় এবং শেখ রেহানাকে পলাতক ঘোষণা করে তার সকল সম্পত্তি এটাচ করা হয়। ২০০৭ সালের ৯ ডিসেম্বর “আমাদের সময়” পত্রিকা সংবাদ পরিবেশন করে, “৮টি চেকে ফেঁসে যাচ্ছেন হাসিনা, রেহানা ও সেলিম: সর্বোচ্চ সাজা হতে পারে ১৪ বছর। ” ২০০৭-২০০৮ সালে এ মামলাটির বিচার চলে বিশেষ জজ আদালতে, সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে মামলাটি রায় ঘোষনার কাছাকাছি পৌছে যায়।

ইতোমধ্যে ২০০৮ সালের নির্বাচনের আগে আগে সরকারের সাথে গোপন সমঝোতার ফলে রহস্যজনক কারনে হঠাৎ মামলাটির বিচার কার্য বন্ধ হয়ে যায়। আওয়ামীলীগ ক্ষমতায় আসছে - এমন আভাস পেয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলার বাদীদের সুর পাল্টাতে থাকে। এরই ধারাবাহিকতায় আজম জে চৌধুরী তার দায়ের করা মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন। এরপরে ২০০৯ সালের ১৪ মে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর মোঃ আবদুল্লাহ আবু মামলাটি প্রত্যাহারের জন্য ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪ ধারা অনুযায়ী বিচারিক আদালতে আবেদন করেন। রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ১৭ মে ঢাকার পাঁচ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোজাম্মেল হোসেন মামলাটি প্রত্যাহারের আদেশ দেন।

মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, সিদ্ধিরগঞ্জ পাওয়ার প্লান্ট নির্মান কাজ দেয়ার বিনিময়ে ব্যবসায়ী আজম জে চৌধুরীর কাছে থেকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা নিয়েছিলেন। ২০০০ সালের ২৪ অক্টোবর থেকে ২০০১ সালের ২৩ মার্চ সময়কালে এই লেনদেন সংঘটিত হয়। ৮টি চেকের মাধ্যমে শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ সেলিমের বাসায় ওই ঘুসের টাকা হস্তান্তর করা হয়। যার প্রমান স্বরূপ চেকের কপি ব্যাংক থেকে তুলে কোর্টে দাখিল করে প্রসিকিউশন। চেক নম্বর ১৮১১৪১৪-৭, ২২৮২৬৩২-৩৪, এবং ২২৮৪০৩৪-৩৫, সর্বমোট ২ কোটি ৯৯ লাখ ৬৫ হাজার ৫০০ টাকা।

শেখ হাসিনার নির্দেশে এ ঘুসের টাকা হতে ১ কোটি টাকা দেয়া হয় ছোট বোন শেখ রেহানাকে। ৪ জানুয়ারী ২০০৯: শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ওয়েস্টমন্ট পাওয়ার কোম্পানীর চেয়ারম্যান কাজী তাজুল ইসলাম ফারুকের দায়ের করা ৩ কোটি টাকার চাঁদাবাজির মামলাটি নিম্ন আদালতের নির্দেশে খারিজ হয়। ৩ কোটি টাকা চাঁদা নেবার অভিযোগে জনাব ফারুক ১০ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে করা মামলার বিবরনে জানা যায়, বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মানের জন্য ১৩ মার্চ ১৯৯৭ তারিখে ওয়েস্টমন্ট পাওয়ার কোম্পানী সরকারের সাথে একটি চুক্তি সম্পাদন করে। এরপরে ১৯৯৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত ষ্টাফ মানু মজুমদার চুক্তি বাতিলের হুমকি দিয়ে শেখ হাসিনার সাথে দেখা করতে বলেন তাজুলকে। ৮ আগষ্ট ১৯৯৮ মানু মজুমদারের সাথে শেখ হাসিনার সরকারী বাসায় দেখা করেন তাজুল ইসলাম।

সাক্ষাৎকালে শেখ হাসিনা তাকে বলেন, “বড় কাজের জন্য সবাই টোল দেয়। আপনি বড় কাজ পেয়েছেন। আপনি টোল দেন নি কেনো? এ কারনে আপনার বাঘাবাড়ি প্লান্ট বাতিল হয়ে যাবে। ” শেখ হাসিনা তাজুল ইসলামকে এই বলে হুশিয়ার করেন, ৩ কোটি টাকা টোল দিতে ব্যর্থ হলে তার কাজ বাতিল ছাড়াও জেলে যাওয়া লাগতে পারে। ৯ ডিসেম্বর ১৯৯৮ তার প্রকল্প বাতিলের জন্য পিডিবি থেকে উদ্যোগ নেয়া হলে তাজুল ইসলাম ১২ ডিসেম্বর মানু মজুমদারের স্মরণাপন্ন হন।

ঐ দিনই ৫০০ টাকা নোটের ৬০০ বান্ডেলে ৩ কোটি টাকা দুটি সুটকেসে ভরে প্রধানমন্ত্রীর সরকারী বাসভবনে গিয়ে ঐ টাকা শেখ হাসিনাকে হস্তান্তর করেন তাজুল। মামলা দায়েরের পরে ২০০৭/৮ সালে এর বিচার চলছিল নিম্ন আদালতে। ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে শেখ হাসিনার জয়লাভের আভাস পেয়ে তাজুল ইসলাম ফারুক মামলা প্রত্যাহরের আবেদন করেন। পিপির সুপারিশের প্রেক্ষিতে ম্যাজিষ্ট্রেট তানিয়া কামাল চুড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করার জন্য তেজগাঁও থানাকে নির্দেশ দেয়। ৬ জানুয়ারী ২০০৯ আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় এলে রহস্যজনক কারনে তাজুল ইসলাম ফারুক তার ওয়েস্টমন্টের পদ হারান এবং তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হয়।

৫ নভেম্বর ২০০৮ : তেজগাঁও থানার চুড়ান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দায়ের করা ৫ কোটি টাকা চাঁদাবাজির মামলাটি খারিজ করে নিম্ন আদালত। ১৩ জুন ২০০৭ আওযামীলীগ নেতা ব্যবসায়ী নূর আলী এ মামলাটি দায়ের করেন। ওই চাঁদাবাজি ঘটনার সমর্থনে জয়েন্ট ইন্টরোগেশন সেলে সাক্ষ্য শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ সেলিম, যার অডিও ক্লিপ অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে। মামলার সূত্রে প্রকাশ, হরিপুরে বার্জ মাউন্টেন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মানের বিষয়ে পিডিবির সাথে তার কোম্পানীর চুক্তি হওয়ার পরে শেখ হাসিনার ফুফাত ভাই শেখ হেলাল নূর আলীর বাসায় গিয়ে শেখ হাসিনাকে ৫ কোটি টাকা ঘুস প্রদান করতে বলেন, অন্যথায় তার কাজ বন্ধ হয়ে যাবে। ৮ জুন ১৯৯৭ থেকে ২০ মে ১৯৯৯ তারিখের মধ্যে ১২টি চেকের মাধ্যমে নুর আলী ৩ কোটি ২০ লাখ টাকা দেন হাসিনাকে।

বাকী ১ কোটি ৮০ লাখ টাকা শেখ হেলালের মাধ্যমে প্রদান করেন। কাজ বাতিল করে দেয়ার হুমকি দিয়ে শেখ হেলাল আরো ১ কোটি টাকা হাতিয়ে নেন এবং বোরাক রিয়েল এস্টেট হতে ২টি ফ্লাট কিনে শেখ হেলালের স্ত্রী রুপা চৌধুরীর নামে রেজিষ্ট্রি করে দিতে বাধ্য হন নূর আলী। এছাড়াও শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদের আইটি অফিসের জন্য পান্থপথের ইউটিসি বিল্ডিংয়ে ৫৩৮৮ বর্গফুটের একটি ফ্লোরের অর্ধেক উপঢৌকন দেন। এ ফ্লাটটি আওয়ামীলীগ নেতা কাজী জাফরুল্লাহর নামে রেজিষ্ট্রি করা হয়। এছাড়াও মিগ-২৯ ক্রয়ের কমিশন বাবদ ৪ মিলিয়ন ডলারও প্রদান করা হয়।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আগে এ মামলাটি প্রত্যাহারের আবেদন করেন নূর আলী। এমনকি প্রেস কন্ফারেন্স করে প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়ে শেখ হাসিনার সাথে একই মঞ্চে বক্তৃতা করতে দেখা যায় নূর আলীকে। সেনানিবাসে অনুপ্রবেশ মামলা: সেনা আইন লঙ্ঘন করে ঢাকা সেনানিবাসে অনুপ্রবেশ সংক্রান্ত মামলাটি প্রত্যাহার করে বর্তমান সরকার। ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে সন্ত্রাসী হামলায় গুরুতর আহত হয়ে ঢাকা সিএমএইচে চিকিৎসাধীন ছিলেন অধ্যাপক হুমায়ুন আজাদ। ২০০৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারী সেনা কতৃপক্ষের অনুমতি না নিয়েই শেখ হাসিনা দলবল নিয়ে হুমায়ুন আজাদকে দেখার উদ্দেশ্যে ঢাকা সেনানিবাসে অনুপ্রবেশ করতে গেলে সেনানিবাসের গেটে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পরে সরকারী সিদ্ধান্তে এ মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। যে পদ্ধতিতে প্রত্যাহার হলো ১২ মামলা: ২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মামলাগুলি প্রত্যাহারের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নেয়া হয়। বিগত সরকারের আমলে দায়ের করা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের জন্য মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত মোতাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামকে প্রধান করে আগেই একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করে দেয়া হয়। এ কমিটি ইতোমধ্যে প্রায় এগার হাজার মামলা প্রত্যাহার করেছে, যা সবই সরকার দলীয় লোকের।

এসকল মামলা প্রত্যাহারের জন্য জেলা প্রশাসক বরাবর অভিযুক্তদের আবেদন করতে বলা হয়, যার উপরে সুপারিশ করবে জেলা/মহানগর পাবলিক কৌসুলি। শেখ হাসিনার ১২ টি মামলা প্রত্যাহারের জন্য তার পক্ষে আইনজীবি ও ভাগিনা ব্যারিষ্টার ফজলে নূর তাপস ২০০৯ সালের বিভিন্ন তারিখে ঢাকার জেলা প্রশাসকের বরাবরে লিখিত আবেদন করেন। পরে মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর আব্দুল্লাহ আবু প্রধানমন্ত্রীর সবগুলি মামলা প্রত্যাহারের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করেন, যার প্রেক্ষিতে আইন প্রতিমন্ত্রী এডভোকেট কামরুল ইসলামের কমিটি ১০ জুন ২০০৯ তারিখে অনুমোদন করে। এসব মামলার মধ্যে রয়েছে মিগ-২৯ দুর্নীতি, ফ্রিগেট ক্রয় দুর্নীতি, নভোথিয়েটার দুর্নীতির ৩টি মামলা, খুলনায় বার্জ মাউন্টেন হতে চাঁদা নেয়ার মামলা, ক্যান্টনমেন্টে অনুপ্রবেশ মামলা, পল্টন হত্যা মামলা, এবং নাইকো দুর্নীতি মামলা। দুর্নীতি দমন কমিশন বা সাবেক ব্যুরো যেসব মামলা দায়ের করেছে সেগুলো প্রত্যাহার করার জন্য সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুদককে চিঠি দেয়া হয়।

আর যে সব মামলার বাদী সরকার, সেগুলি সরাসরি প্রত্যাহার করা হয়। সরকারের অনুরোধে দুদক মামলা তুলে নিলে জনগনের কাছে দুদকের ভাবভুর্তি ক্ষুন্ন হবে অর্থাৎ জনগন ধরে নিবে দুদক সরকারের কথায় চলে - এমন ধারণা রোধ করতে দুদক বাদী মামলাগুলি হাইকোর্টের উপযুক্ত বেঞ্চের মাধ্যমে বাতিল/কোয়াশ করার কৌশল নেয়া হয়। সে মোতাবেক, ৯টি মামলা হাইকোর্টের মাধ্যমে নিস্পত্তি করার উদ্যোগ নেযা হয়, যা শেখ হাসিনার পক্ষে পরিচালনা করেন শেখ হাসিনার ভাগিনা ফজলে নূর তাপস। জানা গেছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৫টি মামলা বাতিল করে রায় প্রদানকারী বিচারপতি মোঃ শামসুল হুদার বাড়ি গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায়। দীর্ঘকাল তিনি গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।

আর ৪টি মামলা বাতিল করে রায় প্রদানকারী বিচারপতি এইচএম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিতর্কিত ও পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকান্ড ইতোমধ্যেই জনমনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এমনকি বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিকের বিতর্কিত আদেশের সূত্র ধরে সম্প্রতি পুলিশী নির্যাতনে সুপ্রীম কোর্টের একজন সিনিয়র আইনজীবি এডভোকেট এম ইউ আহমেদের মৃত্যু ঘটে। নানা মাধ্যমে সংবাদ ছাপা হয়েছে, লন্ডনে গিয়ে সেখানকার আওয়ামীলীগ ও ঘাদানিকের সাথে বিচারপতি মানিকের গুরুত্বপূর্ন বৈঠকের কথা। তিনি সরকারের অত্যন্ত অনুগত লোক হিসাবে সুবিদিত। ১১ জুন ২০০৮ সেনানিয়ন্ত্রিত জরুরী সরকারের সাথে আপোষরফা করে আওয়ামীলীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা প্যারোলে কারামুক্ত হন।

তার বিরুদ্ধে চলমান ১৫টি মামলার মধ্যে মাত্র ৩টি মামলায় তার জামিন ছিল। বিচারাধীন বাকী মামলায় জামিন ছাড়াই সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্তি নিয়ে শেখ হাসিনা আমেরিকা, কানাডা, ব্রিটেনসহ দেশ থেকে দেশান্তরে ঘুরে বেড়ান। শেখ হাসিনাকে মুক্তি দেয়ার আগে জজ আদালতে ঘটে নানা নাটকীয় ঘটনা। ১০ জুন বিভিন্ন আদালত প্রতি আধঘন্টা পর পর একটি করে মামলায় শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দিতে থাকে। সংসদ ভবন এলাকায় অবস্থিত বিশেষ আদালতের বিচারক ফিরোজ আলম বার্জ মাউন্টেন মামলায়, আধঘন্টা পরে অমর কুমার রায় নাইকো দুর্নীতি মামলায়, বিভাগীয় জজ গোলাম মর্তুজা মিগ-২৯ মামলায়, এবং মহানগর হাকিম এম এ মজিদ বেলা ১১টায় নুর আলীর মামলায় ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে শেখ হাসিনাকে অব্যাহতি দেন।

এমনকি এ সময় শেখ হাসিনাকে ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি দেবার পক্ষে সরকার পক্ষের আইনজীবীরাও সুপারিশ করেছিলেন। নির্বাহী আদেশে শেখ হাসিনার এ মুক্তিকে পরবর্তীকালে সুপ্রীম কোর্ট “আইনগত কতৃত্ব বহির্ভূত” বলে মন্তব্য করেন। আদালত প্রশ্ন করেন, “বিশ্বের কোথাও এ ধরনের বিচারাধীন কারাবন্দীকে দেশের বাইরে পাঠানোর নজির আছে কি? সরকার মামলার বাদী। আবার সরকারই আদালতের সিদ্ধান্ত না নিয়ে অভিযুক্তকে মুক্তি দিয়েছে। সরকার কেন এই ঝুঁকি নিয়েছে? অভিযুক্তের পক্ষে কাজ করেছে সরকার।

এ ক্ষেত্রে সরকার হাকিম হয়ে হুকুম করল, আর পুলিশ হয়ে ধরল?” ১১ জুন শেখ হাসিনাকে সরকার সাময়িক মুক্তি দিলে পরদিন তিনি যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সৎ হবেন, সেটাই সকল বাংলাদেশীর কামনা। কিন্তু সরাসরি ঘুষ নেয়ার মামলা; তাও আবার চেকের মাধ্যমে নেওয়া; যদি রাষ্ট্রীয় প্রভাব বিস্তার করে প্রত্যাহার করা হয়, তাহলে দেশে আইনের শাসন আর থাকে কিভাবে? দলের জেলা সভাপতিকে হাইকোর্টে বিচারক নিয়োগ করে তারই কোর্টে ২ মাসের কম সময়ে ৫টি মামলা প্রত্যাহার করা কি নৈতিকতা সমর্থন করে? এর পরে যদি দলের বড় বড় নেতারা সাফাই গান আর চিৎকার করেন, আদালতের মাধ্যমে নিস্পত্তি হয়েছে মামলা, ক্ষমতার অপব্যবহার করে নয়! মামলা বাতিল করার এ পদ্ধতিটি যদি ক্ষমতার অপব্যবহার না হয়, তাহলে আপানারাই বলুন, আর কি কি করলে সেটা ক্ষমতার অপব্যবহার হবে? সব দেখে শুনে মনে হচ্ছে, আজকাল যেন চোরের মায়ের গলাটি বেশ ডাঙ্গর হয়েছে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.