আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

এপ্রিল ফুল

কিচ কিচ কুচ কুচ কাচ কাচ কোচ কোচ!!! (একই শিরোনামে একই লেখা অনেকদিন আগে পোস্ট করেছিলাম। সেটা মুছে দিয়ে রিপোস্ট করা হল। ) ফার্স্ট ইয়ারের ঘটনা। আমি তখন সবে মেডিকেলে চান্স পেয়ে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করা শুরু করেছি। তারই অংশ হিসেবে রাত আনুমানিক বারোটার দিকে পাশের রুমে গিয়ে আমরা এক ঝাঁক উচ্ছৃঙ্খল তরুণ 29 খেলছিলাম।

যারা জানেন না তাদের জন্য বলছি, 29 এক ধরণের তাসের খেলা এবং এটি তখন আমাদের হলে সর্বাধিক জনপ্রিয় খেলা ছিল। খেলায় ক্রমাগত হারছি আর চূড়ান্ত হারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি, মাথা খুব গরম, এমন সময় হঠাৎ ফোনে একটি কল এল। দেখি আমার এক পরিচিত দোস্তের কল। ও পড়ে বুয়েটে, থাকে তিতুমীর হলে। ও বলল, দোস্ত, আমাদের হলে তো মারামারি হয়েছে, আমি তো তোদের হলে এসেছি।

আমাকে আজ রাতের জন্য একটু জায়গা দিবি? হাতে আমার তখন তিনটা জ্যাক, অপোনেন্টকে ডাবল খাওয়াবই খাওয়াব, খুবই উত্তেজিত, তাই বন্ধুর কথা আমার হৃদয়ে তেমন কোন অনুরণন সৃষ্টি করল না। এক হাতে তাস আর আরেক হাতে মোবাইল কানে ধরে দায়সারা ভাবে বললাম, হ্যাঁ, আমার রুমে চলে আয়। মোবাইল কানে রেখেই আবার খেলায় মন দিলাম আমি। হার্টসের জ্যাকটা খেলে পুরো পাঁচ পয়েন্ট বাগিয়ে অন্যদের দিকে কেমন কেমন করে তাকাচ্ছি, নিজেকে কেমন এক্সপার্ট এক্সপার্ট মনে হচ্ছে, এমন সময় ও ওপাশ থেকে বলল, দোস্ত কিভাবে আসব? দরজা তো বন্ধ। অন্যমনস্ক অবস্থায়ই বললাম, কিসের দরজা বন্ধ? এদিকে তখন পরের হাতের খেলা শুরু হয়েছে।

ও বলল, তোদের মেইন গেটের। হঠাৎ খেলা থেকে আমার মনোযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল। তুই হলে এসে গেছিস? হ্যাঁ। কিন্তু ঢুকতে তো পারছি না। তুই একটু আসবি? হঠাৎ আমার মনে হল, আমাদের হলের মেইন গেটতো কখনো বন্ধ হয় না! তাহলে ও কেন বলছে বন্ধ...? তুই ভালো করে দেখ তো দরজা বন্ধ কি না।

ঐ দরজা তো কখনও বন্ধ হয় না। উত্তরে টের পেলাম ওর গলার স্পষ্ট অসহায়ত্ব। দোস্ত, সত্যি বলছি দরজা বন্ধ। প্লিজ আয় দোস্ত। আমার তো যাবার আর কোন জায়গা নেই।

এই একটা কথা শুনেই যেন আমি হঠাৎ একটা উচ্ছৃঙ্খল তাসাড়ু থেকে একজন দায়িত্ববান বন্ধুতে রুপান্তরিত হলাম। অন্য সবাইকে বললাম, দোস্ত আমি আর খেলতে পারব না, আমার একটা ফ্রেন্ড এসে বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। ওকে বললাম, তুই একটু দাঁড়া, আমি আসছি। সেই অবস্থায়ই উঠে হলে মেইন বিল্ডিং থেকে বের হয়ে মেইন গেটের দিকে হাঁটতে লাগলাম। আহা, ওদের হলে মারামারি হয়েছে, ও হয়তো জীবন হাতে নিয়ে বেরিয়ে এসেছে।

এখন যাবার জায়গা নেই বলে আমার সাথে আজকের রাতটা থাকতে চাইছে। আহা, হঠাৎই নিজেকে অনেক মহৎ মহৎ মনে হতে লাগলো আমার, ফ্রেন্ডকে সাহায্য করার এমন সুযোগ কজনই বা পায়? এসব বড় বড় কথা ভাবতে ভাবতেই মেইন গেটের কাছে পৌঁছে গেলাম। আরে, কি ব্যাপার! মেইন গেট তো খোলা! আমি ওকে ফোন দিলাম। কি রে, কই তুই? ও বলল, দোস্ত এসেছিস? হ্যাঁ। কিন্তু দরজা তো খোলা, তুই কই? তারপর ও বলল, দোস্ত, আজকে কত তারিখ জানিস? আমি মনে করার চেষ্টা করলাম।

কত যেন...? ও-ই উত্তরটা দিয়ে দিল। আজকে পহেলা এপ্রিল। শুভ এপ্রিল ফুল। হা হা। ************* এটুকু যারা ধৈর্য ধরে পড়েছেন, তারা হয়তো এরই মধ্যে আমাকে নিয়ে বিভিন্ন মতবাদে বিভক্ত হয়ে পড়েছেন।

কারো হয়তো মনে হচ্ছে, আমি একটা গাধা, পহেলা এপ্রিলে জেনেশুনে ফাঁদে পড়লাম। কারো হয়তো মনে হচ্ছে, নাহ, ঠিকই আছে, পহেলা এপ্রিল উপলক্ষ্যে সব জায়েজ। আবার কারো হয়তো মনে হচ্ছে, তখন আমার বলা উচিৎ ছিল, দোস্ত, আমি আসলে গেটের কাছে আসিই নাই, তোকেও শুভ এপ্রিল ফুল। কিন্তু আমার কাছে মনে হচ্ছে, সম্ভবত শুধু আমার কাছেই মনে হচ্ছে, এই এপ্রিল ফুলটার বড় দরকার ছিল। কারণ এর মাধ্যমেই আমি প্রমাণ পেলাম, বন্ধুর জন্য নিঃস্বার্থভাবে কিছু করার প্রবৃত্তি আমার থেকে এখনও বিলুপ্ত হয় নি।

এর মাধ্যমেই আমি প্রমাণ পেলাম, এখনও পুরো পশু হয়ে যাই নি, কিছুটা মানুষ এখনও আছি। Thank You, দোস্ত (এই লেখা পড়ে যদি কেউ এপ্রিল ফুলের ইতিহাস নিয়ে কচকচানি শুরু করেন, তাহলে আমি বলব, আপনি আপনার পথ মাপেন। আমি শুধু অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছি। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.