আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হযরত আলী(আ) কখনো ১ম ৩ খলিফার হাতে বাইয়াত হননি

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। আগের লেখাঃ Click This Link প্রখ্যাত শিয়া মনীষী মরহুম সাইয়েদ মুর্তাযা এ ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। যেমন,তিনি হযরত জাফর সাদেক(আঃ) থেকে বর্ননা করেন যে,হযরত আলী(আঃ) বাইয়াত হননি যতক্ষন না গাঢ় ধোঁয়ায় তাঁর ঘর আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে(তালখীছুশ শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৬)। এ পরযায়ে ১ম ৩টি প্রশ্নটি সম্পর্কে আমাদের আলোচনায় ইতি টানবো,আর বিচারের ভার ছেড়ে দেবো সজাগ ও সচেতন জনগনের ওপর। আর বাকী আলোচনা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের দলীল প্রমানের ওপর নির্ভর করে এগিয়ে নেবো।

আলীকে(আঃ) যেভাবে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হয় ইসলামের ইতিহাসের এই অংশটুকুও আগের অংশের ন্যায় বেদনাদায়ক ও তিক্তকর বটে। কেননা এটা কখনোই কল্পনীয় ছিল না যে,হযরত আলীর(আঃ) ন্যায় ব্যক্তিত্বকে এমনভাবে মসজিদে নিয়ে যাওয়া হবে যে,৪০ বছর পর মুয়াবিয়া তা নিয়ে কটাক্ষ করবেন। তিনি আমিরুল মু’মিনিন আলীকে(আঃ) লেখা তার পত্রে কর্তাব্যক্তিদের বিরুদ্বে ইমামের(আঃ) প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করে লিখেনঃ “........এমনকি খেলাফত প্রশাসনের কর্তারা আপনাকে জব্দ করে ফেলে এবং অবাধ্য উটের ন্যায় বাইয়াতের জন্য মসজিদে টেনে নিয়ে যায়”(ইবনে আবিল হাদিদ মুয়াবিয়ার পত্রের পুর্ন বিবরন উদ্বৃত করেছেন,শরহে নাহজুল বালাগাহ,১৫তম খন্ড,পৃঃ১৮৬)। আমীরুল মু’মিনিন হযরত আলী(আঃ) মুয়াবিয়ার পত্রের উত্তরে পরোক্ষভাবে মুল বিষয়টি মেনে নেন এবং এটাকে তাঁর মযলুম অবস্থার প্রমান বলে মনে করেন। তিনি বলেনঃ “তুমি বলেছো যে,আমাকে অবাধ্য উটের ন্যায় চালিত করে বাইয়াতের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়।

আল্লাহর শপথ,তুমি আমাকে কটাক্ষ করতে চেয়েছ। কিন্তু বাস্তবে তুমি আমাকে প্রশংশা করেছো। আর তুমি আমাকে অপদস্ত করতে চেয়েছ,কিন্তু অপদস্ত করেছো নিজেকে। মযলুম হওয়া কোন মুসলমানের জন্য দোষের কিছু নয়(নাহাজুল বালাগাহঃপত্র নং ২৮)। ইবনে হাদীদ একমাত্র ব্যক্তি নন যে, ইমামের(আঃ) প্রতি ধৃষ্টতার এ কাহিনী বর্ননা করেছেন।

বরং তাঁর আগে ইবনে আব্দে রাব্বি ইক্কদুল ফারীদ গ্রন্থে(২য় খন্ড,পৃঃ২৫৮) এবং তাঁর পরে “ছুবহুল আ’শী” গ্রন্থের গ্রন্থকারও(১ম খন্ড,পৃঃ১২৮) এ ঘটনা বর্ননা করেছেন। বিস্ময়ের ব্যাপার হলো এই যে, ইবনে আবিল হাদীদ যখন নাহজুল বালাগায় ইমামের(আঃ) ২৮নং পত্রের ব্যাখ্যায় পৌছান তখন ইমামের(আঃ) পত্র ও মুয়াবিয়ার পত্রের বর্ননা প্রদান করেন এবং ঘটনার সত্যতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেন না। কিন্তু গ্রন্থের শুরুতে যখন ২৬তম পত্রের ব্যাখ্যা শেষ করেন তখন মুল ঘটনা অস্বীকার করে বলেনঃ “ এ ধরনের বিষয়াদি কেবল শিয়ারা বর্ননা করে থাকে। অন্যদের থেকে এরুপ বর্ননা আসেনি(শারহে নাহজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,২য় খন্ড,পৃঃ৬০)। হযরত ফাতিমার(আঃ) প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শন ৩য় প্রশ্নটি ছিল এই যে হযরত আলির(আঃ) কাছ থেকে বাইয়াত গ্রহনের ঘটনায় রাসুলাল্লাহর(সাঃ) প্রিয় কন্যা হযরত ফাতিমার (আঃ) প্রতি কি কোন ধৃষ্টতা প্রদর্শন করা হয় এবং তাঁকে কেন আঘাত করা হয়? শিয়া মনিষীবর্গের দৃষ্টিকোন থেকে এই প্রশ্নের উত্তর আগের ২টি প্রশ্নের উত্তরের চেয়ে বেশী অপ্রীতিকর।

কারন,খলিফার লোকেরা হযরত আলীকে(আঃ) মসজিদে নিয়ে যেতে চাইলে হযরত ফাতিমা(আঃ) বাধা হয়ে দাড়ান। তখন হযরত ফাতিমা(আঃ) তাঁর স্বামীকে নিয়ে যেতে না দেয়ার জন্য শারীরিক ও মানসিক আঘাত প্রাপ্ত হন যা বর্ননা করার ভাষা নেই(কিতাবে সুলাইম বিন ক্কায়েস,পৃঃ৭৪ ও তদ পরবর্তী)। কিন্তু আহলে সুন্নাতের মনীষীগন খলিফাগনের অবস্থান বজায় রাখার স্বার্থে ইতিহাসের এ অংশটি বর্ননা করা থেকে বিরত থেকেছেন। এমন কি ইবনে আবিল হাদীদও এটাকে সেসব বিষয়ভুক্ত করেছেন যা কেবল শিয়ারাই বর্ননা করে থাকে(শারহে নাহাজুল বালাগাহঃইবনে আবিল হাদীদ,২য় খন্ড,পৃঃ৬০)। প্রখ্যাত শিয়া মনীষী মরহুম সাইয়েদ মুর্তাযা বলেনঃ “প্রথম দিকে হাদিসবেত্তাগন ও ইতিহাস লেখকগন নবী দুলালীর প্রতি প্রদর্শিত ধৃষ্টতার কথা বর্ননা করতে অস্বীকৃ্তি জানাতেন না।

তাঁদের মধ্যে এ বিষয়টি প্রসিদ্ব ছিল যে,খলিফার আজ্ঞাবাহী ধাক্কা দিয়ে ঘরের দরযাটি ভেঙ্গে হযরত ফাতিমার(আঃ) উপর ফেলে দেয় এবং তা তাঁর গর্ভস্থিত সন্তানের গর্ভপাতের কারন হয়। আর কুনফুয হযরত ওমরের নির্দেশে ফাতিমা যাহরাকে(আঃ) চাবুকের আঘাত করতে থাকে যাতে তিনি হযরত আলীকে(আঃ) ছেড়ে দেন। কিন্তু তাঁরা পরবর্তীতে দেখলেন যে,এসব কথা বর্ননা করা খলিফাদের পদ ও অবস্থানের পরিপন্থী,সেকারনে তা বর্ননা করা থেকে বিরত থাকলেন”(তালখীশুছ শাফী,৩য় খন্ড,পৃঃ৭৬)। সায়েদ মুর্তাযার বক্তব্যের সাক্ষ্য হলো এই যে, অনেক সতররতা ও নিয়ন্ত্রন আরোপ সত্বেও এসব ঘটনার কথা তাঁদের কিছু কিছু গ্রন্থে চোখে পড়ে। শাহরিস্থানী মু’তাজিলা নেতা ইব্রাহীম ইবনে সাইয়্যার ওরফে গ্বিতাম থেকে বর্ননা করেন যে তিনি বলতেনঃ “হযরত ওমর বাইয়াত গ্রহনের দিনগুলোতে(এর কোন এক দিন) হযরত ফাতিমার(আঃ) পাজরের ওপরে দরযা ফেলে দেন।

ফলে তাঁর গর্ভশ্তিত সন্তানের গর্ভপাত ঘটে। তিনি বাড়ির ভেতরে যারা ছিলেন তাঁদের সমেত ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতেও নির্দেশ দেন,যদিও ঘরে ভেতর হযরত আলী,ফাতিমা,হাসান ও হুসাইন(আঃ) ছাড়া আর কেউ ছিলেন না”(আল-মেলাল ওয়ান-নেহাল,২য় খন্ড,পৃঃ৯৫) । ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.