আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সাবমেরিন 'কুর্সক' এর দুর্ঘটনার কাহিনী

উপরের ছবিটি রাশিয়ার একটা দুর্ভাগা অসকার ক্লাশ সাবসেরিন 'কুর্সক' যেটা ২০০০ সালের ১২ ই আগস্টে ১১৮ জন অফিসার আর ক্রু সহ ব্যারেন্টস সী তে ডুবে যায়। এটা একটা ১৯৯৪ সালে চালু করা রাশিয়ার তৈরী নিউক্লিয়ার পাওয়ারড সাবমেরিন। এর সম্বন্ধে প্রথমে দুএকটা কথা। লম্বা: ১৫৪ মিটার; ওজন: ১৮০০০ টন; শক্তির উৎস: নিউক্লিয়ার রিএকটর; হর্স পাওয়ার: ৫০০০০ হর্স পাওয়ার; প্রপেলার: ২ টা ৭ ব্লেডের প্রপেলার; সারফেস স্পীড: ঘন্টায় ১৬ নট আর ডুবন্ত অবস্হায়: ঘন্টায় ২৮ নট; মিসাইল: প্রত্যেকটাতে ১ টনের নিউক্লিয়ার ওয়ারহেড সহ মোট ২৪ টা মিসাইল, যাদের প্রত্যেকের রেন্জ ৫৫০ কিলো মিটার; (তবে ঐ নিউক্লিয়ার ওয়ারহেডের ক্ষমতা জানা যায়নি) টর্পেডো টিউব: ৬টা; এর সাহায্যে বিভিন্ন সাইজের টরপেডো ছোড়া যেত। পুরো শরীরে ৮ ইন্চি পুরু রাবারের আবরণ ছিল যা দিয়ে রাডারকে ফাকি দেয়া যেত আর নিঃশব্দে চলতে পারত।

খাবারের অভাব না হলে এটা সারা বছর পানির নীচে ঘুরতে পারে। ২০০০ সালের ১২ আগস্ট এই অসকার ক্লাশ সাবমেরিন 'কুর্সক' এক রহস্যজনক বিষ্ফোরণজনীত কারনে ১১৮ জন সাবমেরিন অফিসার এবং ক্রু, মিসাইল এবং টর্পেডো সহ এন্টার্কটিকা এবং নরওয়ের মাঝামাঝি ব্যারেন্টস সীতে প্রায় ১০০ মিটার নীচে ডুবে যায়। দুর্ঘটনার স্হানটা নীচে দেখুন: দুর্ঘটনার খবর শুনে বৃটেন এবং নরওয়ে উদ্ধারের সাহায্যের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নাক উঁচু রাশিয়া সে প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে। দুর্ঘটনাটা এমন ভাবে ঘটে যে বেরুবার সমস্ত হ্যাচ চিরতরে বন্ধ হয়ে পড়ে এবং ক্রুদের বেরুবার কোন সম্ভাবনাই ছিলনা।

অক্সিজেন তৈরী করার যন্ত্রটাও নস্ট হয়ে গিয়েছিল। ক্রুদের কেউ কেউ ৮-১০ ঘন্টা পর্যন্ত বেঁচে ছিল বলে শোনা যায় বা পরে ডায়েরি পড়ে সেরকমটাই জানা যায়। যদিও মান বাঁচাবার জন্য রাশানরা বলেছিল ক্রুরা সবাই সঙ্গে সঙ্গেই মারা যায়। অনেক চিন্তাভাবনা করে এটার ভিতরের গোপনীয়তা যথা নিউক্লিয়ার সরন্জাম, টর্পেডো, এটা তৈরীর কৌশল ইত্যাদি রক্ষার জন্য রাশিয়া এটাকে উদ্ধারের পরিকল্পনা নেয়। তবে সেরকম কারিগরি দক্ষতা রাশিয়ার না থাকায় তারা হলান্ডের একটা কোম্পানীর সঙ্গে চুক্তি করে।

২০০১ সালের ৭ ই অক্টোবর, দুর্ঘটনার প্রায় ১৪ মাস পরে হলান্ডের কোম্পানী তাদের উদ্ধার অপারেশন শুরু করে। উল্লেখ্য এধরনের কাজে তারাই পৃথিবীর অন্যতম সেরা । দশ হাজার টনের একটা সাবমেরিন পানির নীচ থেকে টেনে তোলা চাট্টিখানি কথা নয়। তার উপর আবার এটাতে প্রচুর টর্পেডো আর নিউক্লিয়ার মিসাইল ছিল। কাদায় জুতা আটকে গেলে ওজন অনেক বেশি হয়ে যায়, এটাও সেরকম হয়েছিল, ওজন হয়ে গেছিল প্রায় ৩৫০০০ টন।

ছবিতে দেখলেন সামনের অংশ ভাংগা, সুতরাং পেচিয়ে টেনে তোলা ছিল বিপদজনক, সামনের অংশ ভেংগে পড়ে গেলে ভারসাম্য হারিয়ে একটা মারাত্মক দুর্ঘটনার সম্ভবনা থেকে যায়। ডাচ কোম্পানী এটার খোলে পানীর জেট দিয়ে ২৬ টা ফুটো করে সেখানে লোহার লকিং পিন ঢুকিয়ে ২৬ টা স্টীলের তারের সাহায্যে উপরে থেকে টেনে উদ্ধার করে। প্রতিটা ফুটো প্রায় ১ মিটার ব্যাসার্ধের ছিল। সাবমেরিনের গায়ে ফুটো করার জেটের পানির চাপ ছিল প্রায় ৯০০০ পিএসআই থেকে ২২৫০০ পিএসআই। ব্যারেন্টস সী এর প্রচন্ড ঢেউ আর স্রোত, ঠান্ডা আবহাওয়া ইত্যাদি এসব অনেক বাধা ছিল।

লকিং পিনের ছবি দেখুন নিচে। এর পর এটাকে পানির নীচে রেখেই বার্জের সাহায্যে টেনে ১১২ মাইল দুরে রাশিয়ার একটা বন্দরে নিয়ে রাখে। সেখানে এটাকে পুরোপুরি খুলে ফেলা হয়। ক্ষতিগ্রস্হ সাবমেরিনের ছবি নীচে দেখুন। 'কুর্সক' সাবমেরিনের হতভাগা ক্রুদের ছবি দেখুন: বিস্ফোরণের একটা কারণ কি ছিল জানেন? গরিব রাশিয়ানরা অনেক জং ধরা পুরাতন টর্পেডো ব্যাবহার করতো, তাদেরই একটার জং ধরা জায়গা থেকে হাইড্রোজেন পেরোক্সাইড লিক করায় বিস্ফোরণ ঘটে!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.