আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কালরাত্রি ১১ই মার্চ ও খানিক জননিরাপত্তা ............।

ঘড়ির কাটায় তখন ঠিক ৭ টা বেজে ৩৫ মিনিট। ইচ্ছে হল একটু ঘুরে আসা যাক প্রিয় শহর চাটগাঁ। বেড়িয়ে পরলাম মুহূর্তের মধ্যে ঢাকার বাসা থেকে। কিন্তু বেড়িয়ে দেখি হায় এ কোন ঢাকা। রাস্তায় কিছু রিক্সা আর অটোরিক্সা ছাড়া কোন বাহনই যে নেই।

ভাবলাম যা হবার হবে আগে সায়দাবাদ পোঁছান যাক ব্যাবস্থা একটা হবে। সায়দাবাদ গেলাম রিক্সায় চড়ে। কপাল মন্দ। রাত ৮ টায় সায়দাবাদের এই চিত্র কোন চিত্রশিল্পীও আশাকরি তাঁর তুলির আঁচরে আঁকার সাহস করেননি। সুনসান নিরবতা।

কিছু অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকার ছাড়া কোথাও যেন কেও নেই। তবে কি চাটগাঁ যাওয়া আর হল না? মনে শুধু এই এক প্রশ্ন। মনের গহিন কোনে নিভু নিভু আশার প্রদীপ জ্বেলে এক চায়ের দোকানে বসে সদ্য ৮ টাকা হওয়া বেনসন চিগারেটটায় আগুন দিলাম। সময় যেন থেমে গেছে। রাস্তায় একটু পরপর গাড়ির শব্দ,চেয়ে দেখি সেই অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকাররা অস্ত্র উচিয়ে এদিক ওদিক তাক করে গাড়ি থেকে কড়া নজর রাখছে।

যেন পিন পতন শব্দেই গুলি করে বসবে। ঘড়ির কাটায় যখন ঠিক ৮ টা বেজে ২৫ মিনিট তখন এক পথিকের সহায়তায় জানতে পারলাম রাত সাড়ে ১২ টায় পত্রিকার বাসে জায়গা হতে পারে। অপেক্ষা শুরু হল ১২ টা বাজার। ভাগ্য যেন দেবদূত হয়ে এলো একটু পরই। এক লোকাল বাস যাবে চাটগাঁ সরকারি অনুমতি নিয়ে( হয়তো সরকারেরই কোন কাজে)তবে ভাড়া লাগবে ৫০০ টাকা।

দেরি না করে চড়ে বসলাম। ৯ টা ১৫ মিনিট এ যাত্রা শুরু হল। পথে কোথাও কেও নেই। চায়ের দোকানে নিত্যদিনের ভিড় যেন অস্ত্রের নিচে ডাকা। রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেই অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী একই ভঙ্গিতে বন্দুক তাক করে আছে।

কুমিল্লা ক্যান্টনমেন্টে যখন আমাদের বাস তখন ঘড়ির কাটায় রাত ১১ টা। ভাবলাম ২-৩ টার মধ্যেয় পোঁছে যাব প্রাণের শহর চাটগাঁয়। যাত্রাবিরতিও আজ নিবে না বাস এটা সায়দাবাদেয় বলে দেয়া ছিল। আমরা এগিয়ে চললাম প্রবল গতিতে। একটা দুইটা করে গ্রাম পেরিয়ে যাচ্ছে আর চাটগাঁ চোখের কাছে আসছে।

ফেনীর কাছাকাছি কোথাও হটাৎ বাসের ব্রেক। আচমকা সবাই একটু নড়েচড়ে বসলো। কিছু অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী এগিয়ে আসছে আমাদের দিকে। বাসে উঠে এক একজন করে খুঁটেয়ে দেখল আমাদের এবং নিশ্চিত করল আমরা কেও বিরোধীদলের মুক্তিবাহিনী কিনা?নিশ্চিত হওয়ার পর আমাদের ফের অনুমতি মিলল সামনে আগানোর। এভাবে ৫ জায়গায় আমাদের পরিক্ষার পর আমরা যখন মিরেরসরাই অতিক্রম করলাম ঠিক তখনি ৫ অস্ত্রধারী যুবক আমাদের গতিরোধ করে বাসে চেপে বসলো।

আমরা সবাই সতর্ক মনে প্রশ্ন কারা এরা?ডাকাত নয়ত আবার?২ থেকে ৩ মিনিটের মধ্যেয় কয়েক গাড়ি অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী এসে হাজির এবং কোন বাগবিতণ্ডা ছাড়াই তাদের গাড়িতে তুলে হাওয়া হয়ে গেল আমরা কিছু বুঝে উঠার আগেই। কি হচ্ছে এসব?আমি কি ভুল দেখছি?মনে প্রশ্ন স্বপ্ন নয়ত?উত্তর মেলবার সময়টুকুও পেলাম না কয়েক গাড়ি অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী আরও একবার ঘিরে ফেললো আমাদের। চালকের সাথে একজন কি যেন কানাঘুষা করল। এরপর সেই অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনীর গাড়িগুলোই আমাদের বাকি রাস্তা নিরাপদে পৌঁছে দিল। চাটগাঁয় পৌঁছে জানতে পারলাম দেশের নিরাপত্তার জন্যেই নাকি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এমন করতে বাধ্য হয়েছেন।

আমি বোকাসোকা মানুষ সারাটা পথ ভাবতে ভাবতে এলাম দেশজুড়ে বোধহয় যেমন খুশি তেমন সাজো উৎসব চলছে। আমারই বা কি দোষ। গল্পেয় শুধু মুক্তি যুদ্ধ দেখেছি। রাতের পটভূমিতে ভেবেছি সরকার আর তার অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী পাক হানাদার বাহিনী আর বিরোধীদল আর তার সন্ত্রাসবাহিনী মুক্তিবাহিনী সেজে মার্চ মাসের বিজয় উৎযাপন করছে। কিন্তু যখন জানলাম না এটা আমাদের নিরাপত্তা তখন গর্বে বুকটা ভরে উঠল।

আমাদের প্রধানমন্ত্রী আমাদের ব্যাপারে কত যত্নবান। ধন্য হোক আমাদের রাজনীতি। আসলেই আমাদের সরকার আমাদের নিরাপত্তা দিচ্ছে এই ভেবে কিছু অর্ধপাগল চেপে বসলো এক লঞ্চে এবং প্রাণ হারাল ২৫০ জনেরও বেশি অর্ধপাগল। এখন কিছু পূর্ণ পাগল বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নাকি এই জন্য দায়ী। আরে মিছিলে সমাবেশে নিরাপত্তা দিতে ২০০০০ অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী লাগে।

সে জায়গায় এখানে মাত্র ২৫০ লোক মারা গেছে তাতে কি?সমাবেশে কত লোকের জীবন তো বেঁচেছে। আর চাইলেয় কি নৌ পথে নিরাপত্তা দেয়া জায় নাকি?এখনো বেডরুমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বাকি?ওটা নিশ্চিত হলে তবেই নৌ পথ। তবে একটা প্রশ্ন কিন্তু থেকেই যায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই নৌ দুর্ঘটনার জন্য দায়ী নন, মাননীয় বিরোধী দলীয় নেত্রী দায়ী নন, অস্ত্রধারী আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নামক অকর্মণ্য চাটুকারবাহিনী দায়ী নন, লঞ্চ মালিক দায়ী নন, তবে দায়ী কে? পুরো ঘটনা ও চরিত্রগুলো কাল্পনিক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।