আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ডক্টর কিম (সায়েন্স ফিকশান)

বড় ধরনের স্বপ্নবাজ এক নিঃসঙ্গ পথচারী! ডক্টর কিম --তৌফির হাসান উর রাকিব কোন স্বাভাবিক মস্তিষ্ক থেকে নতুন কিছু সৃষ্টি হয় না, এমনটাই ধারনা ডক্টর কিম এর! তাই সবাই যখন আড়ালে বলে যে, ডক্টর কিম স্বাভাবিক নন, বিষয়টা তাকে কষ্ট দেয় না। উল্টো মনে মনে কিছুটা গর্বই বোধ করেন! স্বাভাবিক মানুষ জগতের সকল ঘটনা মেনে নিতে অভ্যস্ত। তারা ভাবে, যেভাবে জীবন চলছে সেটাই সর্বোত্তম, একে আর পরিবর্তন করার দরকার নেই। নতুন কিছু সৃষ্টির কথা তারা ভাবতেও পারে না। এমনকি অন্য কেউ নতুন কিছু সামনে আনলে রীতিমত আঁতকে ওঠে! কোন সমস্যা হবে নাতো আবার? আরে বেটা, সমস্যা হলে হবে, তার সমাধানও হবে।

তাই বলে কি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকব নাকি? যতসব উজবুকের দল! এমনিতেই তার নতুন প্রোজেক্টটাকে অনুমোদন দিতে তাকে যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হয়েছে। একগাদা বেকুব রাজনীতিবিদকে বোঝাতে হয়েছে প্রোজেক্ট এর ফলাফল দেশকে কি দিতে পারে। নাহয় তারা কিছুতেই এই টপসিক্রেট প্রোজেক্টটাকে অনুমোদন দিতে চাইছিল না। শেষমেশ প্রতিরক্ষা-মন্ত্রীর সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগিয়েই অনুমোদনটা বাগানো গেল। যাহোক, সবকিছু ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে এটাই বড় কথা।

সামনের সপ্তাহ নাগাত কাজ শুরু করবেন তিনি। এর মধ্যেই তার চাহিদা মত সবকিছু তার পার্বত্য এলাকার গবেষণাগারে পৌঁছে যাবার কথা। এক সপ্তাহ পর থেকেই কাজ শুরু করতে পারলেন ডক্টর কিম। সরকার কথা রেখেছে, সবচেয়ে সেরা জিনিশই তাকে সরবরাহ করা হয়েছে। কোনটাতেই কোন খুত পাননি তিনি।

কিভাবে যে জোগাড় করা হয়েছে, কে জানে! অবশ্য এটা নিয়ে তিনি মাথাও ঘামান না। তার জিনিশ দরকার ছিল, তিনি পেয়েছেন। কিভাবে এগুলো জোগাড় হয়েছে, এটা তার ব্যাপার না, যাদের জোগাড় করে দেয়ার কথা ছিল তাদের ব্যাপার। নিবিষ্ট মনে কাজ শুরু করলেন তিনি ও তার বিশ্বস্ত সহকারীরা। দিন-রাত কাজ আর কাজ।

নাওয়া-খাওয়া প্রায় ভুলতে বসেছেন। এতটুকু ভুল করার জো নেই। এটার জায়গায় ওটা, ওটার জায়গায় এটা... চলছে প্রতিনিয়ত পরিবর্তন। হতে হবে যতটা সম্ভব নিখুঁত। কাজের ব্যাপারে খুবই খুঁতখুঁতে ডক্টর কিম।

যতক্ষণ না তিনি পুরোপুরি নিশ্চিত হচ্ছেন কোন ব্যাপারে, ততক্ষণই চলতে থাকে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা। এতে করে নষ্ট হচ্ছে কিছু নমুনা। তাতে আফসোস নেই ডক্টরের। কিছু নষ্ট হবে, এটা ভেবেই প্রয়োজনের চেয়ে বাড়তি চেয়েছিলেন। ছয় মাস আগে পরিকল্পনাটা মাথায় আসে ডক্টরের।

যখন পাশের শক্তিশালী দেশটি সীমান্তের কাছের হীরার খনিগুলো দখল করে নেয়ার হুমকি দেয়। সামরিক দিক থেকে দুর্বল হওয়ায় পাল্টা হুমকি দিতে পারেনি তার নিজের দেশ। পাশের দেশটি যে অনেক বেশি শক্তিশালী। কিন্তু কতটা বেশি শক্তি ওদের? কি তাদের ক্ষমতার উৎস? সীমান্তের পাশের ১০ টা পারমানবিক বোমার কারখানা? ওগুলো যদি না থাকে? কিন্তু কোন মানুষের পক্ষে ওদের কড়া পাহারা ভেদ করে ওখানে যাওয়া অসম্ভব। কারন হিউম্যান ফাইনডার টেকনোলজিতে ওরা অনেক এগিয়ে।

কিন্তু যদি মানুষ বা রোবট না গিয়ে অন্য কিছু যায়? ভাবতে ভাবতেই ক্রুর হাসি ফুটে উঠেছিল ডক্টরের মুখে। শুরু করেছিলেন দেনদরবার। আদায় করে নিয়েছিলেন অদ্ভুত এক পরীক্ষার সরকারী অনুমোদন এবং সাহায্য। তার পরিকল্পনাটা ছিল খুবই সহজ!!! পারমানবিক কারখানা গুলোতে মানুষের পরিবর্তে ২০ টা বানর যাবে আত্মঘাতী বোমা হামলা করতে। এতে ওরা শক্তিশালী হিউম্যান এন্ড রোবট ফাইনডার গুলোকে সহজেই এড়িয়ে যেতে পারবে।

বাকি যেসব মানুষ গার্ডরা থাকবে, বানরগুলো সহজেই ওদের ফাকি দিতে পারবে। কারন বানরগুলো হবে মানুষের মতই বুদ্ধিমান! কিন্তু চাইলেই তো আর বানরকে মানুষের মত বুদ্ধিমান করা যায় না। যত প্রশিক্ষণই দেয়া হোক না কেন, বানর তো বানর ই। তাই আরও একটি সহজ সমাধান করলেন ডক্টর! বানরগুলোর মাথায়-ই লাগিয়ে দিবেন মানুষের মস্তিষ্ক! শরীর বানরের কিন্তু বুদ্ধিমত্তা মানুষের! যে কোন প্রতিকূল পরিস্থিতি সামলে নেবার মত। তাছাড়া বানরগুলোর শরীরে মানুষের আরও নানা অঙ্গাদি লাগাবেন।

কৃত্রিম কিছু অস্ত্রও লাগাবেন। মোটকথা বানরগুলোকে গড়ে তুলবেন হামলার উপযোগী করে। প্রতিটি পারমানবিক স্থাপনায় পাঠাবেন দুটি করে বানর, যাতে করে একটি ব্যর্থ হলেও অন্যটি কাজ সামলে নিতে পারে। মানুষের মস্তিষ্কের সবই ঠিক রাখবেন, শুধু ফেলে দেবেন স্মৃতির অংশটুকু। যেদিন থেকে বানরের মাথায় পুরোপুরি একটিভ করা হবে মস্তিষ্কটাকে, সেদিন থেকেই নতুন করে চালু হবে তার অই স্মৃতির অংশটা।

অনেক আগেই বিজ্ঞানীরা বের করে ফেলেছেন মস্তিষ্কের ঠিক কোন অংশটা মানুষের স্মৃতি সংরক্ষণ করে। তাই এতে কোন সমস্যাই হবে না। নতুন মস্তিষ্ক সহজেই মানিয়ে নেবে নতুন দেহের সাথে। ফিরে পাবে নতুন দেহের পূর্ণ কর্তৃত্ব। নিয়ন্ত্রন করতে পারবে কিছু জৈবিক এবং কিছু কৃত্রিম অঙ্গ।

মজার ব্যাপার হল। বানরগুলো কথাও বলতে পারবে! মদ্দাকথা হল, ওরা আসলে বানরের দেহে পরিপূর্ণ মানুষ! তাই সরকারের কাছে কিছু মানুষ আর কিছু বানর চেয়েছিলেন ডক্টর। বানর পর্যন্ত ঠিক আছে, কিন্তু মানুষের কথা শুনেই চোখ কপালে উঠেছিল মিটিং এ উপস্থিত লোকগুলোর। অবশেষে অনেক বাক-বিতণ্ডার পর তার প্রজেক্টের জাদুকরী ফলাফল সবাইকে বোঝাতে পেরেছিলেন ডক্টর। একবার সফল হলে, কোন দেশই আর হুমকি নয়।

বরং সব দেশের মাথার উপরই ছড়ি ঘুরান যাবে। তারপরের ঘটনা তো আপনারা জানেনই। তার চাহিদা মত সবই পেয়েছেন ডক্টর। নিশ্চিত করেই বলা যায় মানুষগুলোকে নিম্নবিত্ত অঞ্চল থেকে তুলে আনা হয়েছে। প্রত্যেক জনকেই যথাসম্ভব আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লোকজন, বিভিন্ন অজুহাতে জিজ্ঞাসাবাদের নাম করে আলাদা আলাদা এলাকা থেকে ধরে এনেছে।

আর কোনদিনও তাদের স্বজনরা এদের দেখা পাবে না। সময় গড়িয়ে গেলে তাজা স্মৃতির উপর পরবে ধুলোর আস্তরন। আস্তে আস্তে সবাই সব ভুলে যাবে। আজ ডক্টর কিম বেশ প্রশান্ত মেজাজে আছেন। উফফ... শ্বাস ফেলারও যেন সময় পাননি এতদিন! সীমাহীন ব্যস্ততা থেকে বুঝি কিছুটা দম নেবার ফুরসত মিলল।

কারন বানরগুলোর সব অপারেশন শেষ হয়েছে। তবে আগামী কিছুদিন তাদেরকে ঘুম পাড়িয়েই রাখা হবে। শরীরের ক্ষতগুলো শুকালে জাগিয়ে তোলা হবে। তারপর যাচাই করা যাবে কেমন হল তার সৃষ্টি। অবশেষে এল সেই ক্ষণ।

বানরগুলোকে জাগিয়ে তোলা হয়েছে। একটু পরই ডক্টর তাদের সাথে দেখা করতে যাবেন। ভিতরে ভিতরে চরম উত্তেজিত হয়ে আছেন তিনি। আজ তার পরীক্ষার ফল পাওয়ার দিন। SSC এর রেজাল্টের দিনের মতই লাগছে তার কাছে।

অতীতের কোন আবিষ্কারের সময়ই এতটা উত্তেজনা কখনও বোধ করেননি তিনি। কিন্তু কি এর কারন? মানব সভ্যতা পাল্টে দিলেন, এটাই কি কারন? নাকি অনেকগুলো মানুষের প্রাণ অকালে কেড়ে নিলেন, সেটাই এই অস্থিরতার মূল? জানেন না তিনি, জানতে চানও না। এখন তিনি স্রষ্টা, যে তার সৃষ্টিকে দেখতে আকুল। সহকারীদের নিয়ে তালা খুলে বিশেষ রুমটায় প্রবেশ করলেন ডক্টর কিম। যা আশা করেছিলেন তা-ই দেখলেন।

অনেকগুলো বানর চুপচাপ চেয়ারে বসে আছে। সবার মধ্যেই একধরনের ভদ্রতার ছাপ স্পষ্ট। বাদরের বাঁদরামির কোন লক্ষণ নেই। আসলে ওদের মধ্যে আর একজন নবজাতকের মধ্যে খুব একটা তফাত নেই। তফাত শুধু এটুকুই যে, ওরা সবাই কথা বলতে পারে, যা একজন নবজাতক পারে না।

ঃ কেমন আছ তোমরা? ঃ ভাল... সবাই একযোগে জবাব দিল। হেসে সহকারীদের দিকে তাকালেন ডক্টর। তাদের মুখেও ছড়িয়ে পরেছে বাঁধভাঙ্গা হাসি। তাদের পরীক্ষা সফল হয়েছে। আজ থেকে নতুন করে রচিত হবে মানব সভ্যতার ইতিহাস।

হয়তো সৃষ্টি হতে পারে নতুন কোন প্রজাতির। বর্তমান মানুষ আর তাদের পূর্বপুরুষ মিলে হয়তো সূচনা করবে নতুন কোন জাতির.... আর তারাই যে একদিন বিশ্বজগত শাসন করবে না, তা কে বলতে পারে? ডক্টর আর তার সহকর্মীরা মিলে অনেক ভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলো ওদের। তারপর যখন পুরোপুরি সন্তুষ্ট হলেন, সহকারীদেরকে উপরমহলে ফোন করতে যেতে বললেন। সরকারের লোকেরাও অনেক টেনশনে ছিল এতদিন। তাই তাদের টেনশন কমানো উচিত।

সবাই চলে যাওয়ার পরও আরও কিছুটা সময় তার সৃষ্টিদের মাঝেই কাটালেন ডক্টর। খুব ভাল লাগছে তার, খুব...। এই প্রথম ঈশ্বরে কিছুটা বিশ্বাস এসেছে তার! ভাবছিলেন, ওই ঈশ্বরও নিশ্চয়ই তার সৃষ্টিকে এতটাই ভালবাসেন! কে জানে, হয়তো এরচেয়েও বেশি বাসেন! তারপর একসময় চলে যাওয়ার জন্য ঘুরলেন ডক্টর কিম। দরজার হাতলে হাত রাখতেই, পিছন থেকে কে যেন বলে উঠল... ঃ কেন এমন করলেন ডক্টর? বিস্মিত ডক্টর ফিরে তাকালেন। দুই পা এগিয়ে এলেন।

বুঝতে পারছেননা ঠিক কোন বানরটি কথাটা বলল! ঃ মানে? ঃ কেন এমন করলেন? ঃ কি করেছি? ঃ আমাদের এতগুলো মানুষকে এভাবে হত্যা করলেন...! ঃ তোমরা কিভাবে জান সেটা!!! ঃ কেন জানবনা ডক্টর? আমাদের মস্তিষ্কই তো আপনি এই বানরের শরীরের ঢুকিয়েছেন! ঃ কিন্তু তোমাদের স্মৃতির অংশটুকুতো ফেলে দেয়া হয়েছে... সবগুলো বানর একসাথে হা হা করে হেসে উঠল। চমকে উঠলেন ডক্টর কিম। ঃ ফেলেছেন তো শুধু সেন্ট্রাল অংশটুকু। কিন্তু মস্তিষ্কের প্রতিটা কোষই তো কিছু না কিছু স্মৃতি সংরক্ষণ করে। সেটা কি আপনাদের জানা নেই ডক্টর? ঃ ওহ গড! ঃ খুনের সাজা তো ফাঁসি, তাই না? আর এতগুলো খুনের সাজা হিসেবে একবার ফাঁসি কি যথেষ্ট ডক্টর? ঃ তো... তো .... তোমরা এগুলো কি বলছ! কি করতে চাও তোমরা? ঃ আমরা এখান থেকে বেরিয়ে এই পৃথিবীর সব পারমানবিক অস্ত্র কারখানা ধ্বংস করে দিব।

পৃথিবীকে করব পারমানবিক অস্ত্রমুক্ত। সৎ এবং যোগ্য লোকদের সরকারে বসাব। আমাদের পরিকল্পনা আপনার কেমন লাগছে ডক্টর? ঃ ভা... ভাল... ঃ তবে তার আগে আমরা আপনাকে মেরে ফেলব ডক্টর! তারপর মারব আপনার সহকারীদের। তারপর সরকারের যারা আমাদের মারার অনুমতি দিয়েছে, তাদের! আপনাদেরকে কিছুতেই আমরা ক্ষমা করতে পারি না। ডক্টর কিম হঠাৎ-ই খেয়াল করলেন যে, বানরগুলো তাকে ঘিরে রেখেছে।

বের হবার দরজাটাও ভিতর থেকে লক করা। তিনি কি ঠিক দেখছেন? ওরা... ওরা বৃত্তটাকে ছোট করে আনছে! একসময় টুকরো টুকরো মাংসের দলায় পরিনত হল তার দেহ। যারা বৃত্তের বাইরের দিকে ছিল, সেই বানরগুলো অবশ্য হাত লাগানোর সুযোগও পেল না! তার আগেই সব শেষ! -----------------------------০----------------------------- ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।