আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

"জানিস লাশের গন্ধ আর অনুভুতির সৃষ্টি করে না"

ধুর !! ধুররররররররর!!!!!!!! বিরতিহীন,নির্দয় -নিষ্ঠুর ভাবে ভাইব্রেট করে যাচ্ছে মোবাইলটা আগের মত আর আড্রানালিন স্রোত বয়ে যায় না রক্তে,হৃদয়ে আর কাপন সৃষ্টি হয়না শুধু শীতল রাগের এক চিকন ধারা বয়ে যায় নিউরনে, অতীতের আবেগের স্রোত বর্তমানের বাস্তবতাকে পরাজিত করতে সকরুণভাবে পরাজিত। আজ জয়-পরাজয় কিছুই আর আবেগের সাগরে ঢেউ তোলেনা ,তাই হারিয়ে যাবার প্রশ্ন ও উঠেনা । জীবনের তাগিদে বেঁচে থাকা,রক্ত-মাংসে পরিপক্ক এক আবেগহীন জন্তু কিংবা যন্ত্র কে জানে ?? এইতো সেদিনের কথা ভয়ানক আবেগতারিত এক টগবগে যুবক ,নিজের স্বপ্নে উচ্ছল ,রং-বিরঙ্গের রঙ্গিন দুনিয়া কাপিয়ে এসেছিস ,মাঝে মাঝে আমাকে জিজ্ঞাস করতি “কিরে সারাক্ষন বইয়ে মুখ গুজে থাকিস কেন ?? উত্তরে বলেছিলাম “বলতো ,তুই কেন এত স্পীডে বাইক চালাস ? বলেছিলিঃ আড্রানালিন তপ্ত স্বাদ একবার যে পায় ,সে কি আর আস্তে চালাতে পারেরে বাদর ?? আমি বলেছিলামঃ গল্পের প্রতিটি ক্লাইমেক্সের ভাজে আমিও আড্রানালিন খুজে বেড়াই। বাঁকা হেসে বলেছিলি চল ,টেনে নিয়ে গিয়েছিলি তোর বাইকে ... ফাঁকা,রাস্তা পেয়ে হঠাত করেই গতির ঝড় তুললি তুই ভয়ে তোর পিঠে মুখ লুকিয়ে ছিলাম ,হঠাত শুনলাম তুই বলছিস “তুই যে আতেল তাতো জান্তাম,কিন্তু আমার ভাই যে ভিতুর ডিম তাতো জানতাম না” শুনে রাগে লাল হয়ে তোর কাধে ভর দিয়ে দাঁড়ালাম ,মুখে বাতাসের তীব্র ছটা লাগতেই অন্যরকম ভাল লাগায় আবেশিত হল নিউরনগুলো... তারপর প্রায়ই জোর করে তোর বাইকে উঠতাম আর তুই বকা খেতি আম্মুর কাছে,প্রমিস করতি আর কখন নিবিনা ,রুমে ঢুকেই মাথায় চটি মেরে জিজ্ঞাস করতি আবার কবে যাব... বলতো আজকে কত বছর হল তোর সাথে আর বাইকে চড়িনা?? বছর পাঁচেক তাই না ?? খুব বেঁচে গেছিস না ?? আম্মুর আর বকা খেতে হয় না ? জানিস আম্মু আর আগের মত বকাও দেয়না ,কেমন যেন বদলে গেছে অনেকদিন হল তোর মোবাইল নিয়ে আর গেইম খেলা হয়না তোর পিসির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে আর মুক্তিপণ আদায় করা হয় না । তোর মানিব্যাগ থেকে আর টাকা নিয়ে গেইমের সিডি কেনা হয়না।। জানিস আগের মত আর বোরিং না আমি,কি হাসছিস ?? জিজ্ঞাস করে দেখ ? সবসময় ব্যাস্ত থাকি আশেপাশের মানুষগুলোর সাথে হই-হুল্লো ,গল্প –আড্ডা । কি ভাবছিস তোকে ছাড়া খুব সুখে আছি ? তাই না?? জানি সামনে থাকলে জরিয়ে ধরে বলতি “সবাইকে ফাঁকি দিতে পারলেও আমাকে পারবিনা বাঁদর” জানিস মাঝে মাঝে তোকে খুব স্বার্থপর মনে হয় “যাবার সময় একবার বলতি,দুই ভাই একসাথে যেতাম” তোর কি খুব কষ্ট হয়রে সময় কাটাতে ? আড্ডার মানুষ পেয়েছিস কি? আমার ধারনা জুটিয়ে ফেলেছিস, যেই আড্ডাবাজ ছিলি তুই । জানিস লাশের গন্ধ আর অনুভুতির সৃষ্টি করে না ,আমার ক্লাসরুমে এখন দু-দুটো লাশ পরে থাকে, তারা আর কোন আবেগের তাড়না তাড়িত করেনা । কি ভাবছিস খুব কষ্ট দিয়েছিস আমায় শেষ সময়ে ??পুরো দু-ঘন্টা তোকে পাহারা দিয়েছি আমি একা ,বেঁচে থাকতে আমি ছিলাম তোর জীবনের কেন্দ্র ,সেই তুই আমাকে না বলে চলে গেলি,কেমন করে পারলি বলতো??, জানিস তোর চলে যাবার পর সম্পূর্ণ দু-বছর যখনই একা থাকতাম তোর ঘ্রান পেতাম,তোর নিষ্প্রাণ,আবেগহীন মুখছবি ভেসে উঠত মানসপটে , কাঊকে বলিনি তোকেই শুধু জানালাম, কি ভাবছিস খুব কেদেছি কিনা ?? আমার ভাগের অশ্রুটুকু জীবনের প্রারম্ভেই বোধহয় ফুরিয়ে গেল তুই যেখানেই আছিস ভাল থাকিস ভাই,আবার দেখা হবে হয়তো “হয়ত,চলে যাব একদিন এ ধরণী ছেড়ে স্মৃতি নয় এক বুক ভরা অভিমান নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে অর্বাচীনের মত স্থির জড়তার মত স্থাবরতায় ভর করে”

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।