আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শীর্ষেন্দু মুখোপ্যাধ্যায় -আমার প্রিয় লেখক।

শীর্ষেন্দু মুখোপ্যাধ্যায় আমার ব্যাপক প্রিয় একজন লেখক। কারন তার লেখার রসবোধ,গল্পের সুখময় সমাপ্তি সবই আমার বেজায় ভালো লাগে। অদ্ভুত যে,দীর্ঘ লেখোয়াড় জীবনে তিনি কখনো বিতর্কিত,বিকৃত বা সমকামী জাতীয় লেখা তিনি কখনো লেখেননি,ভালো সুলেখা লিখেই তিনি পাঠকের মাঝে আনন্দের খোরাক হয়ে টিকে আছেন। তার গল্প উপন্যাসের চরিত্র গুলো হলো-গ্রাম্য অবহেলিত কবি বা লোক,ঘুষখোর পুলিশ,সিঁদকাটা চোর,পাগল ইত্যাদি আমাদের নির্মল আনন্দ দেয়। একিই সাথে তিনি বেজায় ধার্মিক লোক,ঠাকুর অনুকুলের ভক্ত।

অবশ্য পশ্চিম বঙ্গের এক অনুস্টানে দেখলাম উনাকে এক পাঠক বলেই বসেছে যে,আপনি কেনো আপনার গল্প-উপন্যাসের নায়ক বা নায়িকাকে সবসময় ব্রাক্ষন হিসেবে দেখান,আর যাবতীয় বাগদী,দুলে,বেদে,নস্কর ইত্যাদি চরিত্রকে চোর বা ছোট পদে দেখান। উনি কিঞ্চিত অপ্রস্তুত হোন। আমি মনে করি,এটি উনার অনিচ্ছাকৃত। থাক উনার গল্প "পরপুরষ"এ উনি যেভাবে শুরু করেছেন,এটা শুধু উনার নিজস্ব স্টাইল। আমি উনার অসংখ্য গল্প থেকে এটির কথায় বলবো।

"সাঝের বেলায় করালী বেরোলো তার বাঁজা গরু খুজতে,আর তারক বের হলো তার বউ খুজতে। হাটের রাস্তার মুখে দুজনারই দেখা। করালী শুধায়,তারক নাকি রে?তারক বলে ,আজ্ঞে কাকা। করালি বলে যাচ্ছিস কোথায় এই ভর সন্ধ্যায়?তারক বলে,আমার কি আর শান্তি আছে কাকা। মাগি তো সকাল থেকে হাওয়া।

সকালে দেখলাম বাড়ির পাশে বড় কচুটা তুলছে,ভাবলাম ভালোই বাজারে বেচে আমাকে টাকা দেবে এখন দেখলাম সে গুরে বালি। কাকা আপনি কই যান,নারে তারক সকাল হতেই গরুটা হাওয়া। তোর কি তারক বাধা বউ,যাবে কোথায় ঠিকই ফিরে আসবে। আমার যে তা নয়,চোর ছ্যাচরের হাতে পড়লে গরুটা যে বেচে দিবে। দিনকাল ভালো লয়।

" আবার আরেক গল্পে এক গ্রাম্য কবিকে দেখা যায়,যে পদ্য রচনা করা মাত্রই সবাইকে শোনাতে চায়। সবাই তার থেকে তফাত থাকে। সে একদিন কবিতা ভেজে গ্রামের দুস্ট ছোকরা পল্টুকে শোনাতে গিয়ে বলে,পল্টু আমার কবিতাটা শোন-শত আলোক বর্ষ ধরে আমি তোমার অপেক্ষায় রয়েছি। এটুকু শোনামাত্রই পল্টু বললো,দেখেন আপনার এটা কিছুই হয় নাই। আলোকবর্ষ মানে অপেক্ষা নয়, এটা দূরত্ব বোঝায়।

এতে কবি দারুন ক্ষেপে গিয়ে স্কুলের বিজ্ঞান স্যারকে ধরলো। আপনি ছেলেদের কি শেখান। আলোক বর্ষ নাকি দূরত্ব?শিক্ষক বলে,ঠিকই তো আছে?আলো সেকেন্ডে এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল গতিতে এক বছরে যতটুকু যায়,তাই এক আলোকবর্ষ। কবি ক্ষেপে গিয়ে অত্র গ্রামের একমাত্র মেট্রিক ফেল সিধু জ্যাটার কাছে যায়। উনি শুনে বললো,কি মাস্টার বলেছে এই কথা।

এই তাহলে লেখা পরার দশা। তা না হয় দুরত্বই হলো,তাই বলে পল্টুকে আশকারা দেয়া। আর এক লক্ষ ছিয়াশি হাজার মাইল কথাটাতে ভুল আছে,আমাদের আমলে তো আলোর গতি এক লক্ষ একাশি হাজার মাইল ছিলো। সে কোন আক্কলে এটি বললো। কবি বললো,আহা জ্যাটা সে আপনাদের আমলে ছিলো,এখন জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে,তাই আলোর গতি আর না বেড়ে কি গতি আছ?কিন্তু পল্টুর বেয়াদবি কিছুতেই মানতে পারছি না।

এই হলো শীর্ষেন্দুর মাস্টারপিস। আমি তার দীর্ঘায়ু কামনা করি। তিনি আমাদের আরো অসংখ্য লেখা প্রতিনিয়ত উপহার দিক। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.