আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কবিগুরুর ছায়া অবলম্বনে বড়গল্প “ইচ্ছা পূরণ”।

জীবন আসলে চিল্লাপাল্লা ছাড়া কিছুই না। সেটাই করতে চাই, মনের সুখে, ইচ্ছা মতন। আফজাল মাসুদ বয়স : ৩৫ গায়ের রং : আপেল লাল চোখ : কাল শনাক্ত করন চিহ্ন : ঘাড়ের মাঝ বরাবর একটি কাঁটা দাগ। আপেল রঙা মাসুদ সাহেব একদা একটি টেনিস ব্যাটাক্রিতির এক বস্তু লইয়া তাহার বাসার বিভিন্ন চিপায় দৌড় ঝাঁপ পাড়িতেছিলেন। সকলের সমীহের পাত্র নরম চরিত্রের এই মানুষটি এইরকম অশান্ত হইয়া ব্যাট লইয়া দৌড়াইতেছে কেন? কি হইয়াছে উহার? উহাকে কি আবার সানিয়া মীর্জার ভূতে ধরিয়াছে নাকি? পাড়া-প্রতিবেশী সব উৎসুক দৃষ্টিতে তাহার জানালা দিয়া উঁকি পারিতে লাগিল।

সকলের কপালে চিন্তার স্থূল রেখা দেখা দিল এবং পাংশু মুখ নিয়ে একে অপরের মুখ চাওয়া-ছাওই করিতেছিল। বারংবার ভাবিয়াও কি ঘটিতেছে এই মর্মে তাহারা একমত হইতে পারিতেছিল না। মাসুদ সাহেবের স্ত্রী তিন্নি বেগম অনেকক্ষণ ব্যাপীই বিষয়টা পর্যবেক্ষণ করিতেছিলেন। অফিসে যাওয়ার সময় তো সব ঠিকই ছিল, কিন্তু হটাত এমন কি ঘটিল যে উন্মাদ হইয়া যাইবেন। অবশ্য একটা জিনিস তিন্নির নজর এরাল না।

কয়েকদিন যাবত তিনি মাসুদ সাহেবের আপেল রঙা মুখে লাল লাল গুটা দেখিতেছিলেন, এটাও কম আগ্রহের বিষয় না। কারণ তাহার জানামতে মানুষের ব্রণ দেখা দেয় একটা বিশেষ বয়সে। তবে কি তাহার প্রাণ প্রিয় স্বামী, যাহাকে এতদিন একজন সুপুরুষ হিসেবে জানতেন তিনি সবে মাত্র যৌবন প্রাপ্ত হইতেছেন? কি সর্বনাশ! তাহার নিজের গালেও তো লাল লাল দাগ দেখা যাইতেছে কিছু দিন ধরিয়া। অবস্থা বেগতিক দেখিয়া তিন্নি বেগম তাহার বড় ভাই ব্যারিস্টার হেকমত উল্লাহ্কে ফোন করিলেন। বেবাক শুনিয়া ব্যারিস্টার সাহেব বাঘের মতো গর্জন দিয়া উঠিলেন।

তিনি অফিস থেকে ফেরার সময় তাহার বোনের বাসা হইয়া যাইবেন এবং মাসুদের ঘাড় হইতে সানিয়া মীর্জা ভূত মুহূর্তে ঝাঁটাইয়া বিদায় করিবার প্রতিশ্রুতি দিলেন। অপর দিকে মাসুদ সাহেব তাহার লম্প-জম্প অব্যাহত রাখিলেন, সাথে একটা আর্তনাদ যোগ হইল, “মশা, শালার মশা। তদের না ***** ছাড়ছি না। তদের বংশ ****। সরকার বসে বসে কি পু******* দেয়? বে*****র দল সব সরকারে গেছে।

আমি মন্ত্রী হলে ২ দিনের ভিতর দেশের সব মশাদের ধ* কেটে দিতাম। দেখতাম কীভাবে তারা আবার বাচ্চা ফুটায়। “ সন্ধ্যায় এসে ব্যারিস্টার হেকমত উল্লাহ্ সাহেবের ঘটনার কার্যকারণ আবিষ্কার করিতে মাত্র ৫ মিনিট সময় ব্যয় করিলেন, আসলে মশার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মাসুদ সাহেব একটা মশা মাড়ার ইলেকট্রিক ব্যাট কিনিয়া আনিয়াছেন বাসের ক্যনবাসারদের হইতে। সেই ব্যাট লইয়াই তিনি আসলে হুল-স্থূল করিতেছেন, ভূত তুত কিচ্ছু না। মাসুদ সাহেবের বাসার জানালার ঠিক পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন ইচ্ছা ঠাকুরণ।

মাসুদ সাহেবের এহেন অবস্থা দেখিয়া থামিলেন একটু। আস্তে আস্তে তাহার মনে দয়ার উদ্রেক হইয়া গেল। তিনি তাহার ইচ্ছা পূরণ করিয়া দেবেন বলে স্থির করিলেন। ইচ্ছা ঠাকুরণ তাহার আধ্যাত্মিক ক্ষমতা বলে মাসুদ সাহেবকে দুই দিনের জন্য বাংলাদেশের মশক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বানাইয়া দিলেন। সুন্দর অফিস, সুন্দরী পিএস, আরামদায়ক চেয়ার ও ফুর্তির সকল ব্যবস্থা দেখিয়া নব্য মন্ত্রী সাহেবের মন বিগলিত হইয়া গেল।

একটু পড়ে তাহার পিএস একটা দৃষ্টিনন্দন দাওয়াত কার্ড হাতে লইয়া রুমে প্রবেশ করিলেন। পিএস সাহেবান মর্টিন কোম্পানির লাঞ্চ পার্টিতে যাওয়ার শিডিউল চাহিলেন, ভোজন রসিক মন্ত্রী সাহেব সাথে সাথে রাজি হইয়া গেলেন। তিনি ভাবিলেন, যাক এই বেলায় আর কাজে মনোনিবেশ করা যাইল না। খাবারের চিন্তা তাহার মাথা থেকে কাজের চিন্তার স্থান সব দখল করিয়া লইল। লাঞ্চের পর মশার গুষ্ঠি উদ্ধারে লাগিবেন বলে মনঃস্থির করিলেন।

সোনারগাঁ হোটেলে লাঞ্চের সমারোহ দেখিয়া মাসুদ সাহেবের চক্ষু টাঙ্গাইলের মিষ্টির মতো গোল গোল হইয়া গেল। আর সুন্দরী সব ওয়ে-ট্রেসরা যখন তাহার টেবিলের চার পাশে পাছা দুলাইয়া ঘুর ঘুর করিতেছিল মাসুদ সাহেবের জিহ্বা জলে পিচ্ছিল হইয়া যাইতেছিল। লাঞ্চের পর তিনি তাহার ঘুম আর আটকাইয়া রাখিতে পাড়িতেছিলেন না, সম্ভবত অত্যধিক আহারের ফল। উপায় না দেখিয়া তিনি বাসায় ফিরিয়া জম্পেশ একটা ঘুম দেবার মনঃস্থির করিলেন আর ভাবিলেন, সামনে একটা দিন তো পুরু পড়ে রইল মশাদের বংশ নিধনের জন্য। আরামদায়ক বিছানায় শুইয়া সাথে সাথেই মন্ত্রী সাহেব স্বর্গে চলিয়া গেলেন, মশার চিন্তা পড়িয়া থাক।

পরদিন একটু দেরী করিয়া তাহার ঘুম ছাড়িল। যাই হোক, এইটা একজন মন্ত্রীর কাছে মাথায় নেয়ার মতো বিষয় না। বুলেটপ্রুফ পাজারুতে চড়িয়া বেলা ১২টার দিকে অফিসে পৌঁছাইলেন। যাওয়ার সময় সারা শহরের রাস্তা ২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করিয়া তাহার ক্ষমতা পরীক্ষা করিয়া লইলেন। অফিসে যাওয়ার সাথে সাথে সাংবাদিকদের ভিড় বাড়িতে থাকিল।

তিনি তাঁর মন্ত্রী জীবনের প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে প্রেস ব্রিফিং করিবার প্রস্তুতি নিয়ে লইলেন। ১ টার দিকে প্রেসব্রিফিং শুরু করিলেন, দুইটা পর্যন্ত তাঁর বকবক চালাইয়া নিলেন। তিনি বলিলেন “দেশে মশার পরিস্থিতি আগেকার যে কোনও সময়ের চেয়ে ভালো, ইত্যাদি. . . . . . . . ইত্যাদি. . . . . . . .। “ অবশ্য তিনি কীভাবে এই ভালো পরিস্থিতি সৃষ্টি করিলেন তাহা ব্যাখ্যা করিলেন না। ভয়ে কেও প্রশ্নও তুলিল না।

ক্লান্ত শরীর নিয়ে অফিসে ফিরিয়াই এয়ারকন্ডিশনের ফুরফুরে বাতাসে গা এলাইয়া দিলেন, চোখ গুলো বন্ধ হইয়া গেল সাথে সাথেই। বেলা ৩ টা, লাঞ্চ এখনো করা হয় নি। শরীর খুব বেশী ক্লান্ত লাগিতেছে মাসুদ সাহেবের, তাই লাঞ্চটা অন্তত একটা ভালো জায়গায় সারা চাই। বিকালে আবার বস্তিবাসীর সাথে ফটো সেশনের জন্য কিছুটা সময় রাখিতে হইবে, ইহাও তাহার একটি বড় কর্তবের মধ্যে পড়ে। খাওয়া দাওয়া সারিয়া তিনি অফিসে না এসে সরাসরি চলিয়া গেলেন বস্তিতে, ছবি তুলার কাজ সারিয়া কোন কোন পত্রিকায় কার কার কাছে পাঠাতে হবে তাহার নির্দেশনা দিয়া আসিতে আসিতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসিল প্রায়।

তিন্নি আবার বায়না ধরিয়াছিল যে তাহাকে লইয়া মার্কেটে যাইতে হইবে। কারণ মন্ত্রিত্বের এই পড়ন্ত কালে নিজের ভাগটা বুঝিয়া না লইলে পড়ে পস্তাইতে হইবে তাহা তিন্নি বেগমের জানা অক্ষরে অক্ষরে। তাই জানিয়া বুঝিয়া এই ভুলটা তিনি করিতে চান না। মন্ত্রণালয়ে ফিরিয়া মাসুদ সাহেব দেখিলেন সামনে বিশাল হাওকাও চলিতেছে। তাহার মন্ত্রিত্ব প্রাপ্তির খবর পাইয়া এলাকা হইতে অনেক মানুষ বিভিন্ন আবদার লইয়া হাজির হইয়াছেন।

কিন্তু তাহার এত্তসব শুনার সময় কই? সারাদিন কতই না কাজ করিয়াছেন। এখন তাহাকে নিজের আখের গুছাইতে হইবে। পিএস কে দিয়ে তিনি রাষ্ট্রপতি বরাবর ২ টি আবেদন পত্র টাইপ করাইয়া লইলেন, একটি হচ্ছে তাহার বাড়ি, গাড়ী ও সংসারের কেনাকাটা বাবদ মঞ্জুরি। অন্যটি বিদেশে চিকিৎসা করিতে যাওয়ার জন্য সকল ব্যবস্থা করিবার আবেদন। সন্ধ্যা ৬ টা, মাসুদ সাহেব তাহার অফিসের বিশাল চেয়ারে বসে শান্ত মনে বসে আছেন, তাহার ভবিষ্যতের জন্য যাহা গোছানোর ছিল গুছাইয়া লইয়াছেন, কিন্তু তবুও মনে স্বস্তি পাইতেছেন না।

কারণ গত দুই দিনে অনেক কাজ করিয়াছেন শুধু যার জন্য মন্ত্রী হইতে চাহিয়াছিলেন তাই মনে ছিল না একটু ক্ষণের জন্যে। পাঁচ মিনিট পর তিনি গা ঝাড়া দিয়া উঠিয়া পড়িলেন, এখনি তাহাকে স্ত্রী-সন্তান লইয়া মার্কেটে যাইতে হইবে, কারণ একটু পড়ে যে আবার মার্কেট গুলো বন্ধ হয়ে যাইবে। তারাহুরা করিয়া অফিস থেকে বাহির হইবার সময় মনে মনে কহিলেন, “*ালার এই দেশে থাকা যায়! শান্তিতে মার্কেটও করা যায় না, সন্ধ্যা হইতে না হইতেই দোকানী *টলোকের বাচ্চারা মার্কেট বন্ধ করে দেয়। “ ফর্মালিটিঃ উক্ত গল্পের ঘটনা ও প্রতিটি চরিত্রই একজন পাগলের অনুর্বর মস্তিষ্ক থেকে জন্মপ্রাপ্ত। কারো উর্বর চিন্তার সাথে কোনরূপ মিল পাওয়া গেলে পাগলটি দায়ি থাকবে না।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.