আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সংবাদকর্মী ও নিরাপত্তা

খুব সাধারন একজন মানুষ। স্বপ্ন দেখতে ভালবাসি। সবসময় আশায় থাকি। আলোকিত সকালের প্রত্যাশায় চলি নিরবধি। বর্তমান যুগে সাংবাদিকতা পেশা অত্যন্ত আকর্ষণীয় ও সম্মানজনক একটি পেশা।

কিন্তু বাংলাদেশে এই পেশা যেন আস্তে আস্তে ভীতির কারণ হয়ে দাড়াচ্ছে। যে হারে সাংবাদিক নির্যাতন হচ্ছে তাতে করে এই পেশার প্রতি তরুণ প্রজন্মের অনেকেই আশাহত হয়ে পড়ছেন। সম্প্রতি, গত ১১ ফেব্রুয়ারী নিজ বাসায় খুন হলেন এটিএন বাংলার সিনিয়র রিপোর্টার মেহেরেুন রুনি ও সাগর সরওয়ার। খুনীরা এখনও ধরা পড়লনা। প্রতিবছরই কোনও না কোন সাংবাদিকের অপঘাতে মৃত্যু হচ্ছে, কিন্তু সারা জীবন সত্যের পেছনে ছুটে বেড়ানো এসব সাংবাদিকদের হত্যারহস্য হিমশীতল বরফের আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।

গত এক দশকে অপঘাতে মারা গেছেন ২৫ জন সাংবাদিক। একটি ঘটনারও বিচার হয়নি। এমনকি হতাকান্ডের রহস্যও প্রকাশিত হয়নি। এই এক দশকে রাজধানীসহ দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আততায়ীর হাতে নিহত এসব হতভাগ্য সাংবাদিকদের হত্যাকান্ডের বিচার হয়নি আজও। অনেক ক্ষেত্রে হত্যাকারীরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে, যাপন করছেন স্বাভাবিক জীবন।

কেউ কেউ রয়েছেন জামিনে। কেউ আবার মিডিয়াতেই কর্মময় জীবন যাপন করছেন। ২০১১ সালের ২৭ জানুয়ারী নিজ বাসায় খুন হন দৈনিক জনতার সহ-সম্পাদক ফরহাঁদ খাঁ ও তার স্ত্রী রহিমা খাতুন। কয়েক বছর আগে অপঘাতে মৃত্যু হয় সংবাদের রিপোর্টার শান্তার। তার মোহম্মদপুরস্থ ভাড়াবাসায় তাকে ঝুলন্ত অবস্থায় পাওয়ায় যায়।

এর আগে ২০০৪ সালে খুন হন ইংজেী পত্রিকা নিউ এজের বিনোদন রিপোর্টার নাবিল (পাপ্পু) । জানা যায়, এদের মৃত্যুর পেছনে কাজ করেছে পারিবারিক কলহ। অবশ্য অন্যদের মতো আজও কূল কিনারা হয়নি এ দু’জন নবীন সাংবাদিকের হত্যা অথবা অপমৃত্যু রহস্য। তাদের স্বজনদের অভিযোগ, জাতির বিবেক সাংবাদিক হত্যা রহস্যই যদি ঢাকা থাকে আঁধারে, তবে আর সাধারণ মানুষ কিভাবে বিচার পাবে? সাংবাদিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিক হত্যার বিচার না হওয়া প্রসঙ্গে বলেন, গত এক দশকে একজন সাংবাদিক হত্যারও বিচার না হওয়া রাষ্ট্রের অমার্জনীয় ব্যর্থতা। একটি হত্যাকান্ডেরও বিচার হলে এ ধরনের নৃশংস ঘটনা একের পর এক ঘটতো না।

শুধু রাজধানীতেই নয় ঢাকার বাইরেও সাংবাদিকরা হত্যাকান্ডের শিকার হন। ১৯৯৬ সালের ৮ জুন সাতক্ষীরার পত্রদূত সম্পাদক শ.ম আলাউদ্দীন খুন হন। ১৯৯৮ সালের ৩০ আগস্ট যশোরের দৈনিক রানার সম্পাদক সাইফুল আলম মুকুল খুন হন। ২০০০ সালের ১৬ জুলাই দৈনিক জনকন্ঠের যশোর প্রতিনিধি শামছুর রহমান কেবল তার কার্যালয়ে সন্ত্রাসীদের হাতে খুন হন। ২০০৪ সাল ছিল সাংবাদিকদের জন্য মৃত্যুর বছর।

এ বছর সারা দেশে মোট পাঁচ জন সাংবাদিক আততায়ীর হাতে নিহত হন। এ বছরের ২ মার্চ কেরানীগঞ্জে দি নিউ এজের সাংবাদিক আব্দুল লতিফ পাপ্পু নিহত হন। ১৫ জানুয়ারী খুলনা প্রেসক্লাবের সামনে সন্ত্রাসীদের বোমা হামলায় নিহত হন দৈনিক সংবাদের খুলনা ব্যূরো প্রধান এবং প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মানিক সাহা। ঐ বছর ২৭ জুন নিজের অফিসে নিহত হন খুলনার দৈনিক জন্মভূমির সম্পাদক হুমায়ূন কবির বালু। ২০০৪ সালের অক্টোবর বগুড়া থেকে প্রকাশিত দৈনিক দুর্জয় বাংলার নির্বাহী সম্পাদক দীপাংকর চক্রবর্তী নিজ বাসায় নিহত হন।

এ বছর আরো খুন হন খুলনার দৈনিক সংগ্রামের প্রতিনিধি বেলাল হোসেন। ২০০৫ সালেল ২৯ মে কুমিল্লার দৈনিক মুক্তকন্ঠের গোলাম মাহমুদ নিহত হন। ঠিকাদারী চক্রের বিরুদ্ধে লাগাতার রিপোর্ট করে এ বছরের ৫ নভেম্বর দৈনিক সমকালের ফরিদপুর ব্যূরো প্রতিনিধি গৌতম দাস খুন হন। মৃত্যুর আগে সন্ত্রাসীরা গৌতমকে লাগাতার হত্যার হুমকি প্রদান করে। গৌতম প্রশাসনের কাছে নিরাপত্তা চেয়েও পাননি।

২০০০ সালের ১৬ জুলাই যশোরে নিজ অফিসে খুন হন সাংবাদিক শামছুর রহমান কেবল। এরপর তিনি দৈনিক বাংলা ও জনকন্ঠে সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। তার মৃত্যুর পরদিন ১৭ জুলাই তৎকালীন স্বারাষ্ট্রমন্ত্রী মোহম্মদ নাসিম যশোর টাউন হলে এক সমাবেশে বলেন, ‘আমি জানি, কারা সাংবাদিক শামছুর রহমানকে হত্যা করেছে। যারা আত্মসমর্পণকে মেনে নিতে পারেনি। যারা দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে শান্তি চায়নি।

তারাই শামছুর রহমানকে হত্যা করেছে। সাত হাত মাটির নিচ থেকে বের করে তাদের বিচার করবো। ’ কিন্তু মন্ত্রী কথা রাখতে পারেননি। এ হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে তিনজন সাংবাদিককে আসামী করা হয়। নীতি-নৈতিকতা বিবর্জিত কিছু সাংবাদিকও এসব জঘন্য খুন-খারাবীতে জড়িয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি নির্মমভাবে নিহত যুগল সাংবাদিক স্বামী-স্ত্রী। শুণা যাচ্ছে তাদের হত্যার সাথেও কিছু প্রভাবশালী অপসাংবাদিক জড়িত। এখন পর্যন্ত কোনো হত্যাকারী গ্রেফতার হলনা অথচ সরকারের নীতি-নির্ধারকরা শুধু আশ্বাস দিয়েই যাচ্ছেন। কাজের কাজ কিছু করে দেখান। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত করুন।

এ দাবী সকলের। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.