আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ক্যু হলে হাসিনাকে ভারত হেলিকপ্টারে নিয়ে যেত : ইন্ডিয়া টুডের প্রতিবেদন

বাংলাদেশে কথিত সেনা অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে শেখ হাসিনাকে ভারতীয় বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টারে সেদেশে নিয়ে যাওয়া হতো। অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উদ্ধার করার জন্য একটি জরুরি পরিকল্পনাও হাতে নেয় ভারত। এক্ষেত্রে সামরিক পরিকল্পনাও ছিল। ওই বিমান অভিযান সফল করার জন্য ভারতের বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করত। বিমান অভিযানের জন্য অবতরণস্থল ও উদ্ধার কাজের স্থানও নির্ধারণ করা হয়।

বাংলাদেশে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থান নিয়ে ‘ঢাকা কন্সপিরেসি’ শিরোনামে এক বিশেষ প্রতিবেদনে এই তথ্য প্রকাশ করেছে ভারতের বহুল প্রচারিত সাময়িকী ইন্ডিয়া টুডে। মুম্বাইভিত্তিক সাময়িকীটির চলতি সংখ্যার এই প্রতিবেদনে জানানো হয়, ডিসেম্বরের শেষদিকে সেনাবাহিনীর অভ্যুত্থানের আশঙ্কার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনাকে চিঠি দেয় নয়াদিল্লি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বিডিআর বিদ্রোহের সময়ও ভারত শেখ হাসিনাকে সহায়তা করেছিল। বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরপরই ভারত তার বিশেষ বাহিনী পঞ্চাশ প্যারাসুট ইন্ডিপেনডেন্ট ব্রিগেডকে প্রস্তুত রাখে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তারা ঢাকায় অভিযান চালাতে পারে। প্রতিবেদনে ইন্ডিয়া টুডে জানায়, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষদিকে দিল্লি থেকে ঢাকায় একটি গোপন চিঠি পাঠানো হয়।

এটা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সরাসরি পৌঁছে দেয়া হয়। এতে তাকে সতর্ক করে দিয়ে বলা হয়, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ধর্মান্ধ ইসলামপন্থী একটি অংশ অভ্যুত্থান ঘটানোর পরিকল্পনা করছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যুত্থানকে ভয় পাওয়ার সঙ্গত কারণ আছে শেখ হাসিনার। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের হাতে তার বাবা বাংলাদেশের প্রথম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান, তার মা ও তিন ভাই নিহত হন। ইউরোপ সফরে দেশের বাইরে না থাকলে শেখ হাসিনা ও তার বোনও নিহত হতে পারত।

ইন্ডিয়া টুডে জানায়, ওই চিঠির সঙ্গেই অভ্যুত্থান সংঘটিত হলে প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদের সদস্য এবং তার দল আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের উদ্ধার করার জন্য একটি জরুরি পরিকল্পনাও হাতে নেয় ভারত। এক্ষেত্রে সামরিক পরিকল্পনাও ছিল। ওই বিমান অভিযান সফল করার জন্য ভারতের বিমানবাহিনীর হেলিকপ্টার পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা থেকে ঢাকায় অভিযান পরিচালনা করবে। বিমান অভিযানের জন্য অবতরণস্থল ও উদ্ধার কাজের স্থানও নির্ধারণ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, ডিসেম্বর মাসজুড়ে বাংলাদেশের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই গোপনে কাজ চালিয়ে যায়।

সংস্থাটি সরাসরি শেখ হাসিনার কাছে রিপোর্ট (জবাবদিহি) করে থাকে। এর প্রধান মেজর জেনারেল শেখ মামুন খালেদকে ব্যক্তিগতভাবে শেখ হাসিনাই নির্বাচন করেছেন। ডিজিএফআই এই যড়যন্ত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সন্দেহজনক টেলিফোন যোগাযোগ রেকর্ড করে, এসএমএস এবং ইমেইল ট্র্যাক করে। সামাজিক যোগাযোগের সাইটগুলোও পর্যবেক্ষণ করা হয়। ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ থেকে শুরু করে জানুয়ারি পর্যন্ত সময়ে অনেককে গ্রেফতারও করা হয়।

ইন্ডিয়া টুডে জানায়, কারও কোনো ক্ষতি ছাড়াই অভ্যুত্থানের চেষ্টা চলে। ‘সোলজারস ফোরাম’ একটি ফেসবুক গ্রুপ সরকারের বিরুদ্ধে কাজ করতে সৈনিকদের উসকানি দেয়। মেজর সৈয়দ মোহাম্মদ জিয়াউল হককে এর প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যুক্তরাজ্যের একটি মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তিনি আরও ১১ সেনা কর্মকর্তার সঙ্গে অভ্যুত্থানের বিস্তারিত শেয়ার করেন। তিনি তার ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দাবি করেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মাঝারি পর্যায়ের কর্মকর্তারা শিগগিরই পরিবর্তন আনতে যাচ্ছেন।

এই পোস্টের ওপর ভিত্তি করে নিষিদ্ধ ঘোষিত হিয্বুত তাহরীর উসকানিমূলক প্রচারপত্র বিলি করে। মেজর জিয়া নিয়মিত তার ফেসবুক অ্যাকাউন্ট আপডেট করতেন। এতে বাংলাদেশের সন্ত্রাসবিরোধী গোয়েন্দা ও ভারতের বৈদেশিক গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইং (আরঅ্যান্ডএডব্লিউ) কতজন সেনা কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করেছে, সেই তথ্য প্রকাশ করা হতো। তার এই বার্তা ব্লগে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিএনপিপন্থী দৈনিক আমার দেশ এ নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশ করে। ডিজিএফআই এবং অন্যান্য নিরাপত্তা সংস্থা সন্দেহভাজন ষড়যন্ত্রকারীদের ওপর নজরদারি করে।

তারা আবিষ্কার করেন যে, সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের তারিখ ঠিক করা হয়েছে ১০ অথবা ১১ জানুয়ারি। এরপর একে একে সব ষড়যন্ত্রকারীকে পাকড়াও করা হয় এবং বর্তমানে তাদের ঢাকায় সেনাবাহিনীর সদর দফতরে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে। ১৯ জানুয়ারি নজিরবিহীন এক সংবাদ সম্মেলনে এ সম্পর্কে অবহিত করে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদফতর (আইএসপিআর)। ১৯৭৫ সাল থেকে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী চারটি বেসামরিক সরকারকে উত্খাত করেছে। সেনাবাহিনী দু’জন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেছে।

সেনাবাহিনী তিনজন রাষ্ট্রপতিকে সেনাসমর্থিত জরুরি অবস্থা জারি করতে বাধ্য করেছে। সর্বশেষ সামরিক অভ্যুত্থান হয় ২০০৭ সালের জানুয়ারি মাসে। এরপর থেকে সেনাবাহিনীকে ব্যারাকে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে। ইন্ডিয়া টুডে জানায়, ২০০৯ সালের প্রথম দিকে শপথ নেয়ার পর থেকেই শেখ হাসিনা আশঙ্কার মধ্যে আছেন। সামরিক বাহিনীর আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বর্তমান নাম বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ -বিজিবি) সহস্রাধিক সদস্য বিদ্রোহ করেন।

এটা ছিল সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ। তখনও ভারত (শেখ হাসিনা সরকারকে) সহায়তা করেছিল। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র জানায়, বিদ্রোহ শুরু হওয়ার পরপরই ভারত তার বিশেষ বাহিনী পঞ্চাশ প্যারাসুট ইন্ডিপেনডেন্ট ব্রিগেডকে প্রস্তুত রাখে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তারা ঢাকায় অভিযান চালাতে পারে। শেখ হাসিনাকে নয়াদিল্লির সমর্থনের কারণ স্পষ্ট। তার দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশ আর ভারতের জঙ্গিগোষ্ঠীর (স্বাধীনতাকামী) নিরাপদ আস্তানা নয়।

আলোচনায় ভারতের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা এমআই : এ সংকান্ত অন্য একটি প্রতিবেদনে ইন্ডিয়া টুডে জানায়, ভারতের সামরিক গোয়েন্দা মিলিটারি ইনটেলিজেন্স ডাইরেক্টরেট (এমআই) শেখ হাসিনাকে অবহিত করে যে, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে একটি অভ্যুত্থানের লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। এরপরই এই সংস্থাটি আলোচনায় চলে আসে। উপমহাদেশের সব দেশেই গোয়েন্দা কার্যক্রম পরিচালনা করে এমআই। বাংলাদেশে এর কার্যক্রম ব্যাপকভিত্তিক। বিশেষ করে, বাংলাদেশ ভারতের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফা, ইউএনএলএফ, কামতাপুর লিবারেশন অরগানাইজেশন অব আসামের নিরাপদ বিচরণ ছিল বলে অভিযোগ ভারতের।

২০০৯ সালে শেখ হাসিনা সরকার ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পরপরই উলফা ও ইউএনএলএফের সব নেতাকে ভারতের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.