আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

[কথোপকথন] আমরা সবাই ভন্ড আমাদের এই ভন্ড রাজত্বে!

হা হা হা পায় যে হাসি!!! (১) - হ্যালো, শামসুল। কেমন আছ? কি খবরটবর? = হ্যালো, হাবিব নাকি? আরে কতদিন পর! আমেরিকার মানুষজন আর আমাদের গরিব বাংলাদেশির খোঁজখবর নেয় কই? হা হা হা। আমি ভালই। তোমার কি খবর? - ভাল, ভাল। ভাবি আর ছেলেমেয়েদের কি অবস্থা? . . . . - আচ্ছা, শোনো।

তোমার সাথে একটা জরুরী কথা। তোমার ভাতিজার তো বিয়ের জন্য কন্যা খুঁজছি। তোমার কাছে আছে নাকি কোন ভাল কন্যা? = একদম চোখের সামনে তো নাই। তবে দেখতে পারি আর কি? কেন, তোমাদের ওইখানেও তো প্রচুর বাংলাদেশি। সিলেটেরও অনেক লোক।

ওইখানেও দেখো না কেন? - আরে, এইখানকার মেয়েদের কথা বোলো না। এরা তো অন্যরকম। সম্বন্ধ তো অনেক আসে। অনেক চৌধুরী, সৈয়দ পরিবারের লোকও আসে। কিন্তু কন্যার কাপড়চোপড় দেখলে আর কথাবার্তা শুনলে ঘেন্না হয়।

কতজনের সাথে পার্টিতে যায়, সম্পর্ক করে। বেড়াছেঁড়া অবস্থা। এইসব মেয়ে আমাদের বুড়াবুড়িকে জীবনে রান্নাবান্না করে খাওয়াবে নাকি? আমাদের তো অন্য কোন দাবি নাই। শুধু কন্যা সংসারি হলেই আমরা খুশি। = হাঁ, তা তো ঠিকই।

- দেখো, তোমার আশেপাশে কোন কন্যা পাও নাকি! এখানে এসে তো রানীর মত থাকবে। যে বাড়িটা কিনেছি, তার দাম তো এখন চার/সাড়ে চার লাখ ডলার। গাড়ি আছে। ছেলে ভাল কাজ করে। মেয়ে এসে সারাদিন ঘরসংসার করবে।

আর নামাজ, রোজা। আর আমাদের বুড়াবুড়ির সেবাযত্ন। এই তো। মোটামুটি বিএ-টিএ পাস হলেই হবে। বেশি শিক্ষিত দরকার নাই।

বেশি শিক্ষিতরা এখানে আসার পর চোখকান খুলে যায় বেশি। এরকম কিছু কাহিনী হয়েছে পরিচিতদের মধ্যে। একদম ঘরোয়া মেয়ে দরকার। = ঠিক আছে, আমি চোখ কান খোলা রাখব আর পাওয়ামাত্রই জানাব। . . . ফোন রাখার পর পাশে বসা মিসেস শামসুল এগিয়ে এলেন।

- হাবিব ভাই ছেলের জন্য কন্যা খুঁজছেন নাকি? = আরে ধুর। প্যাঁচাল। তার ছেলের গল্প তো আমাদের অন্য ফ্রেন্ডদের কাছে শুনি। সারাবছর ক্লাব আর পার্টি নিয়ে থাকে। কয়েকবার ড্রিংকিং ড্রাইভিং এর জন্য বেশ অনেক বছর ড্রাইভিং লাইসেন্সও শুনেছি সাসপেন্ড ছিল।

দুই বাচ্চার মা এক সাদা মহিলার সাথে থাকতও নাকি কিছুদিন একসাথে। টাল হয়ে কাজে যাবার অপরাধে প্রায়ই নাকি কাজ চলে যায়, বেকার থাকে। এখন বোধহয় কোন এক ফ্যাক্টরিতে কাজ করে। এমন সুপুত্রের জন্য উনি মেয়ে খুঁজছেন সংসারি, ঘরোয়া! আবার সাড়ে চার লাখ টাকা দামের বাড়ির ফুটানি! বাড়ির মর্টগেজের টাকা শোধ হতে হয়ত আরও ২০-২৫ বছর লাগবে। ছেলের যে অবস্থা, তাতে ২০-২৫ বছর ধরে মর্টগেজের টাকা দিতে পারবে কিনা, কে জানে! - আরে আল্লাহ! এই অবস্থা! = আর বলি কি! এই ভাদাইম্যা ছেলের জন্য এখন সংসারি মেয়ে খুঁজছে এই আশায় যে সংসার শুরু করলে, বাচ্চাকাচ্চার মুখ দেখে হয়ত ছেলেটা একটু পথে আসবে।

আমার ফ্রেন্ড শাহিন তো তার বাড়ির কাছে থাকে। তার কাছে শুনেছি আগেই এসব কথা। খামাখা ছুটির দিনে আমার ঘুমটা নষ্ট করল। (২) - না দোস্ত। এই ম্যাকডোনাল্ডসে খাব না।

এখানে হালাল বার্গার পাওয়া যায় না। = ধুর। এখন আবার হালাল ম্যাক খুঁজব কোথায়? - এখান থেকে ৮-১০ মাইল দূরে একটা ম্যাক আছে। সেখানে চল। = খালি ভেজাল।

ওই ম্যাকে তো হালাল/নন-হালাল দুটোই পাওয়া যায়। - আচ্ছা, তো? = তো মানে কি? একই তেলে, একই জায়গায়, একই স্পুন ইত্যাদি ব্যবহার করে পাশাপাশি জায়গায় নন-হালাল চিকেন এমনকি পর্কও বানানো হচ্ছে। কিছু টুকরাটাকরা কি তোর হালাল বার্গারে এসে লাগছে না? তাহলে সেটা আর হালাল থাকে কিভাবে? - থাকে। যতটুকু পারা যায়। আর ওই ম্যাকের মালিক আরবের লোক।

নিশ্চয়ই আলাদা চামচ-টামচ ব্যবহার করেন। = হুম, আর কোন ফালতু কথা আছে? - আরে চল তো। আর শোন, আসার সময় মনে করিয়ে দিস একটু। আমার রেস্টুরেন্টের জন্য কয়েক বোতল ওয়াইন নিতে হবে। ফ্রাইডে নাইটে আমার প্রচুর ওয়াইন বিক্রি হয়।

রেস্টুরেন্টের খাবারের চেয়ে বেশি পয়সা এইদিন আমি ওয়াইন থেকে বানাই। (৩) - এই অনিক, আমি তো ড্রিংকসের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম। তাড়াতাড়ি দোকানে যাও। দুই লিটারের তিন বোতল মক্কা কোলা নিয়ে এস। = আব্বু, বাসায় কোক আর পেপসি ভর্তি।

কয়েকদিন আগে sale দিয়েছিল, তুমি আর আমি গিয়ে গাড়ি ভর্তি করে নিয়ে আসলাম। এখনও অনেক পড়ে আছে। আর মক্কা কোলা কে খায়। যা বিশ্রি স্বাদ। - না, না।

পাগল নাকি! ইমাম সাহেব আর মাওলানাদের সামনে কোক/পেপসি দেয়াই যাবে না। এগুলো ইহুদি কোম্পানি। প্রতিটা বোতলের লাভের একটা অংশ ইসরায়েলে যায়। এগুলো দেখলে মাওলানা সাহেবরা আমার বাসায় আর কখনো আসবেনই না। তাদের জন্য মক্কা কোলা লাগবেই।

স্বাদ খারাপ হলে সমস্যা কি? তুমি তাদের সামনে অল্প একটু নিবে। উনারা চলে গেলে বাকিটা ফেলে দিব। কি আর এমন দাম! = উফ। এই জিনিস আশেপাশের কোন দোকানে পাওয়াও যায় না। সেই কতদূরের পাকিস্তানি দোকানে যেতে হবে।

পাকি দোকানেই এই বস্তু র‍্যাক ভর্তি থাকে। আসতে যেতে কম করে হলেও আধা ঘন্টা। - হোক, তাও যাও। মাওলানা সাহেবদের কোক দিলে মসজিদে মানসম্মান থাকবে না। আর শোনো, মিশু তোমাকে বলি।

অনিকের মা, তুমি শোনো। তোমাদের ভাইবোনদের মাওলানাদের সামনে আমরা আসল নাম ফয়সাল আর তাহমিনা বলে ডাকব। তোমরাও নিজেদের মধ্যে আসল নামগুলো ব্যবহার করবে। এসব বাংলা নাম-টাম মাওলানা সাহেবরা পছন্দ করেন না। তারা সবাইকে ইসলামি নামে ডাকতে বলেন।

(৪) - আরে ভাবি, দেখেছ নাকি? আজকে দাওয়াতে তো শিমুলের হিন্দু বউকে গরু খাওয়ায় দিলাম। হি হি হি। = দেখি নাই আবার! আমি তো দূর থেকে বসে সারাক্ষন তার খাওয়ার দিকে নজর রাখছিলাম। খেয়াল করেছ, সে নিজে যখন মাংস নিয়েছিল, তখন কিন্তু গরু নেয় নাই। শুধু মুরগীর কয়েক টুকরা নিয়েছে।

এখনও একদম কাজেকর্মে পুরো মুসলমান হয় নাই। - হাঁ। এর একটু পরেই তো আমি গরুর মাংসের বাটি নিয়ে সবাইকে বিলি করতে গেলাম। তার প্লেটেও তিন টুকরা দিয়ে দিয়েছি। না খেয়ে যাবে কই? হা হা হা।

= কি, আগ্রহ নিয়ে খেয়েছিল নাকি একদম নাকমুখ কুঁচকিয়ে? আমি একটু দূরে বসেছিলাম, সেজন্য মুখের এক্সপ্রেশনটা ঠিক বুঝতে পারি নাই। - আমি অন্যদিকে চলে গেলেও চোখের কোনা দিয়ে ঠিকই খেয়াল করেছিলাম। হাতে নিয়ে অনেকক্ষন হাতাহাতি করছিলেন। বেশ অনেকক্ষন পরে খেয়েছেন। মাথা খুব নিচু করে রেখেছিলেন, সেজন্য মুখের এক্সপ্রেশনটা বুঝতে পারি নাই।

= ভালই তো। একজনকে আজকে ১০০% মুসলমান বানিয়ে দিলে তুমি। হে হে হে। --------------------------------------------------------------------- এগুলো কোন গল্প না। আমি গল্প লিখতেও পারি না।

প্রতিটা ঘটনা এবং কথোপকথনই জীবনের কোন না কোন সময় চোখের সামনে দেখা। প্রথম তিনটি ঘটনা প্রবাসজীবনের আর শেষেরটা বাংলাদেশকালের। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।