আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

রাতজাগা, অভ্যাস নাকি বদভ্যাস?

তোমারে বন্দনা করি স্বপ্ন-সহচরী লো আমার অনাগত প্রিয়া, আমার পাওয়ার বুকে না-পাওয়ারতৃষ্ণা-জাগানিয়া! তোমারে বন্দনা করি…. হে আমার মানস-রঙ্গিণী, অনন্ত-যৌবনা বালা, চিরন্তনবাসনা-সঙ্গিনী! একটি বিজ্ঞাপনের বেশ জনপ্রিয় সংলাপ ছিল, ‘এমনি এমনি খাই’। রাতজাগা সম্পর্কে তরুণদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বিজ্ঞাপনটির কথা মনে পড়ে গেল। অধিকাংশ তরুণের বক্তব্যের সারাংশ, ‘এমনি এমনি রাত জাগি’! রাতের নিস্তব্ধতার সৌন্দর্য অন্য রকম, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। পড়ালেখার জন্য কারও কাছে রাতটাই প্রিয়, কেউ হয়তো গভীর রাতে বসে লিখে ফেলছেন গান-গল্প-কবিতা। কোনো এক উঠতি তরুণ বিজ্ঞানী হয়তো রাত জেগে জটিল সমীকরণের সমাধান খুঁজছেন।

তাঁদের কথা ভিন্ন। কিন্তু নিতান্তই ‘অকারণ’ রাতজাগায় অভ্যস্ত, এমন তরুণের সংখ্যাও কম নয়। কথা হচ্ছিল ইনডিপেনডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের শিক্ষার্থী সাফওয়ানের সঙ্গে। বললেন, ‘একটা সময় রাত জেগে পড়ালেখা করতাম। গান শুনতাম।

টিভি দেখতাম। এখন কিছু না করলেও রাতে ঘুম আসে না। চারটা-পাঁচটার আগে জোর করেও ঘুমাতে পারি না। পরদিন সকাল আটটায় ক্লাস থাকলেও না। ’ আরেক শিক্ষার্থী রেদোয়ান রাতজাগার অভ্যাসের পেছনে দায়ী করলেন ফুটবলকে।

‘ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ দেখতে দেখতে রাতজাগার অভ্যাস হয়েছে। এখন খেলা না থাকলেও রাতে ঘুম আসে না। ’ তরুণদের কাছে রাতজাগার আরেক মহৌষধের নাম ফেসবুক। লাইক, কমেন্ট, শেয়ার, চ্যাটিং... চলতেই থাকে। নীল-সাদা স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রাত পেরিয়ে ভোর হয়।

তবু চোখে ঘুম নেই। রাত জেগে মুঠোফোনে কথা বলাও তরুণদের আরেক পছন্দ। মুঠোফোন কোম্পানিগুলোর রাতে কথা বলার নিত্যনতুন বিশেষ ছাড়ই তার প্রমাণ। এ প্রসঙ্গে কথা হলো জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক মেখলা সরকারের সঙ্গে। তিনি বললেন, ‘রাতজাগা মানেই যে খারাপ, আমি তা মনে করি না।

কেউ হয়তো রাতে পড়ালেখা করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে, অনেকে রাত জেগে সৃজনশীল কাজও করে। খারাপ হলো, কোনো কিছুর আসক্তির কারণে রাত জাগা। আসক্তি বলতে শুধু মাদকাসক্তি নয়। টিভি, ইন্টারনেট, মুঠোফোন—এগুলোও একধরনের আসক্তি। কেউ যদি রাত জেগে কাজ করেও পর্যাপ্ত পরিমাণে ঘুমিয়ে তার রুটিনটা ঠিক রাখতে পারে, ক্ষতি কী? লক্ষ করতে হবে, রাত জাগার কারণে তার কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হচ্ছে কি না।

মেজাজ খিটখিটে হয়ে যাওয়া, দুর্বল বোধ করা, স্বাস্থ্যের অবনতি—এসব দেখা দিলে রাতজাগা পরিহার করতে হবে। বাবা-মাকেও জানতে হবে, সন্তান কেন রাতজাগে। পড়ালেখা বা অন্য কোনো কাজে হলে ঠিক আছে। কিন্তু কোনো হতাশা বা মানসিক চাপের কারণে তার ঘুমে ব্যাঘাত ঘটছে কি না, সেটাও খেয়াল করতে হবে। ’ অতিরিক্ত রাতজাগার কারণে শরীরে নানা রকম প্রভাব পড়তে পারে।

এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, সুস্থ থাকার জন্য প্রতিটি মানুষেরই পর্যাপ্ত ঘুম দরকার। কেউ যদি টিভি দেখে বা কম্পিউটারে কাজ করে ঘুমাতে যায়, তার মস্তিষ্ক উত্তেজিত থাকে। ফলে ভালো ঘুম হয় না। এতে করে সে ক্ষুধামান্দ্য, বিষণ্নতা, স্নায়ুবৈকল্য ইত্যাদি সমস্যায় ভুগতে পারে। এক-দুই দিন রাত জাগলে সমস্যা নেই, কিন্তু নিয়মিত রাতজাগাটা ক্ষতিকর।

অনেকে রাতে জাগার জন্য ঘন ঘন চা-কফি খান, এটিও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। অকারণ রাতজাগার ‘বদঅভ্যাস’ পরিহার করতে সবার আগে নিজেকে সচেতন হতে হবে। কারও যদি পাঁচটায় ঘুমানোর অভ্যাস থাকে, চাইলেই সে পরদিন ১২টায় ঘুমাতে পারবে না। ধীরে ধীরে অভ্যাস পরিবর্তন করতে হবে। প্রথম দিন চারটা, তারপর রাত তিনটা, কিছু দিন পর দুইটা...এভাবে আস্তে আস্তে সময়মতো ঘুমানোর অভ্যাস রপ্ত করতে হবে।

সূত্র: Click This Link ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.