আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রচন্ড গরমে রিকশায়...

শ্বাস-প্রশ্বাসে আছে স্বাধীনতা, চিন্তায় মানবতা... আজ প্রথমবারের মত বিনা প্রস্তুতিতে বোর্ড স্ট্যান্ডার্ড পরীক্ষা দিলাম। ভালোই হয়েছে...তো বন্ধুরা বলল, "কোপাইয়া পরীক্ষা দিছ এখন একটা ঘন্টা ক্যাম্পাসে থাক"। কি আর করার জোরাজুরি করাতে থাকলাম। ক্যন্টিনে হালকা কিছু সমুচা-সিঙ্গারা খেয়ে ক্যান্টিনের বাইরে টিনের ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছিলাম আমরা তিনজন। আমি, আমার ভ্রমনসঙ্গী শেখ ফয়সাল আর আমাদের সি আর মোরশেদ।

ওরা দুজন যখন প্রায় মিনিট দশেক যাবত আলাপ করছিল তখন বার বার আমি বলতে লাগলাম, “দোস্ত, বাসায় যাই গা, ভাল্লাগতেছে নাহ্‌। অনেক গরম”। আরও মিনিট কয়েক পর আমার প্রাণপ্রিয় সহচরদ্বয় আমার সাথে একমত প্রকাশ করলো!! এরপর আরকি যে যার মত দিন কয়েকের জন্য ভার্চুয়াল বিদায় নিয়ে আমি আর ফয়সাল পানিপথ পার হলাম। ভিআইপি এন্ট্রেন্স দিয়ে বের হওয়ার কিছুদূর যেতেই ফয়সাল বিদায় নিয়ে চলে গেল ভিন্ন রাস্তায় ভিন্ন পথে...! আমি অনেক্ষন দাঁড়িয়ে অনেক রিকশাওয়ালা ভাই/চাচাকে জিজ্ঞেস করলাম! কেউ যেতে রাজি না...হয়তো অন্য কোন গন্তব্যের যাত্রীর খোজে অপেক্ষায় আছে...! হাটতে হাটতে আরও সামনে এগোচ্ছিলাম...প্রচন্ড গরমে আমার মনে হচ্ছিল রাস্তায় পরে যাবো। খুব অস্বস্তি লাগছিলো আমার দুর্বল ক্লান্ত দেহে... অনেকখানি পথ এগিয়ে এক চাচাকে পেলাম যিনি যেতে রাজী হলেন।

খানিক স্বস্তি নিয়ে রিকশায় উঠলাম...তিনি যখন রিকশা চালাচ্ছিলেন তার অবস্থা খেয়াল করলাম...বয়স পঞ্চাশোর্ধ হবে, হয়তো সকালের মত এখন আর শরীরে তেমন শক্তি নেই, যা উনার ধীর গতিতেই আন্দাজ করতে পারছিলাম। পরনে জীর্ণ শার্টের পিছন দিকটা সম্পূর্ণ ঘামে ভেজা। হঠাৎ, পেছনে এক রিকশা সজোরে ধাক্কা দেয়াতে পিছনের কিসের একটা নাট খুলে গেল...!! আমি অবাক হলাম, উনি কোন প্রতিবাদ করলেন নাহ্‌। চুপচাপ উনার আমার চেয়ে কয়েকগুল বেশী ক্লান্ত দেহটি নিয়ে রিকশা থেকে নেমে কোনমতে কিছু একটা ঠিক করে আবার ধীরে ধীরে চালানো শুরু করলেন......আমি আবার আমার চিন্তায় মগ্ন হচ্ছিলাম...হঠাৎ, রাস্তার পাশের একটি সাইকেল রিপিয়ারিং এর দোকানে থামালেন...দোকানের লোকের কাছ থেকে কিছু একটা যন্ত্র এনে রিকশার পিছনের অসঙ্গতিটা হয়তো ঠিক করলেন...পূর্বের মত এবারও আমি ঠায় রিকশায় বসেই ছিলাম। প্রায় পাচ মিনিট অতিবাহিত হওয়ার পর উনি আবার রওনা দিলেন...! যেই রোদের তাপ আমি মিনিট সহ্য করতে পারি না সেই রোদে দুই দফায় প্রায় সাত থেকে আট মিনিট বসে ছিলাম।

উনাকে কিছুই বললাম না, কোনো তাড়াও দিলাম নাহ্‌। রিকশা ধীর গতিতে চলছে......আমি চিন্তা করতে লাগলাম আসলে কিছু মানুষের জীবন কতটা কঠিন, তাদের প্রতিদিনের জীবনেই এরকম কষ্ট এখন স্বাভাবিক বিষয়। মহান আল্লাহ্‌ আমাকে নিঃসন্দেহে এদের চেয়ে ভালো অবস্থায় রেখেছেন। নিয়মানুযায়ী তীব্র ইচ্ছা জাগলো এরকম খেটে খাওয়া মানুষদের জন্য কিছু করার....কিছু বলতে আসলে অনেক কিছু!! কিন্তু, বর্তমানে ফিরে আসলাম, আমার সেই সামর্থ্য আছে কি??! এসব মানুষের জন্য কিছু করার তৌফিক যাতে আল্লাহ্‌ তা'আলা আমাকে দান করেন সেই আশা করতে করতে উনার ধীর গতির রিকশা আমার বাসার সামনে হাজির হল...আমি জানি উনাকে সাহায্য করার মত সামর্থ্য এখন আমার নেই...আমি উঠতি বয়সের ছাত্র, বাচ্চা বয়সের নেটওয়ার্কার। আমি নেমে উনার দাবীকৃত ভাড়ার চেয়ে মাত্র পাচ টাকা বেশী দিয়ে বাড়ির ভিতরে ঢুকে গেলাম।

খনিকের জন্য লক্ষ্য করলাম, সে মূল ভাড়ার সাথে অতিরিক্ত পাচ টাকার নোটটি দেখে বিচলিত হলো...!! এরপর আমি আর কিছু খেয়াল করিনি...! কোনমতে বাসায় এসে ক্লান্ত দেহটাকে একটু স্বস্তি দিতে ব্যস্ত হয়ে গেলাম............... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১১ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।