আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রচন্ড অভিমান

আমার ব্যক্তিগত ব্লগ

আমাদের পাশের বাসায় এক বাংগালী ডাক্তার তার স্ত্রী, এক ছেলে (ফয়সল) আর এক মেয়ে (তিনা) নিয়ে থাকতেন। ছেলেটা তখন মাত্র হাঁটতে শিখেছে। আমাদের বাসা আর ওদের বাসার মাঝখানে 10ফুটের মতো একটা করিডোর ছিল। বিকালে আমি শেখাকে কোলে নিয়ে বের হয়েছি (শেখা তখনও হাঁটতে শিখেনি)। এমন সময় ফয়সল বের হয়ে আসল।

আমি এগিয়ে গেলাম, আর ওর সাথে খেলা শুরু করলাম, অনেকটা দাড়িয়া বান্ধার মতো, ওকে একটা রেখা বরাবর আটকে রাখলাম, ওটা আর পার হতে দেইনা, ও পাশ দিয়ে যেতে চাইলে আমি আগেই সামনে এসে দাড়াই। ছোট মানুষ আমার যন্ত্রণা স হ্য করলোনা, একটু একটু কান্নার মতন চিৎকার করলো। ওর বাবা বের হয়ে আসলে। আমার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে মাথা নাড়লেন, মুখ দিয়ে চুক চুক শব্দ করলেন। তারপর ছেলেকে নিয়ে চলে গেলে।

আমি বুঝলাম খেলাটা মোটেও ভাল ছিল না। ভেবেছিলাম ঘটনা এখানেই শেষ। নাহ, ঘটনা এখানে শুরু। রাতে আম্মা বলল, তুমি ফয়সাল কে মেরেছো কেন? আমি অবাক হয়ে গেলাম, এটা কি বলে? কখন? কিভাবে? এতো পর্চন্ড অভিমান হলো, কেন আমাকে সন্দেহ করলো? আমি কি এরকম? আর তখন কিছুতেই মনে করতে পারছিলাম না, এটা কখন হলো? তিনাদের (আমার চেয়ে বয়সে 1 বছরের ছোট) বাসায় যাওয়া বন্ধ হলো (আগে প্রতিদিন, প্রতি বেলায় যেতাম, তিনাও আসত)। তিনা পরের দিন এসে আব্বাকে বলে গেল, ও আর শিমুল (আমার ডাক নাম) আপুর সাথে খেলবে না, কারন শিমুল আপু ফয়সলকে মেরেছে।

আব্বা আমার দিকে তাকালেন, আমি বাক হারা হয়ে রইলাম। একদিন রাতে লং ড্রাইভে যাবার জন্য সবাই গাড়িতে উঠছি। তিনা ওদের বাসার ছাদ থেকে চিৎকার করে আব্বা-আম্মাকে বলছে, শিমুল আপু পঁচা, আমার ভাইকে মেরেছে, পাশে ওর বাবা-মা ছিল আর উৎসাহ দিচ্ছিল। আম্মা শুধু বললেন, তুমি হলে পারতে? এভাবে দিনরাত বলতে? আমার চোখ দিয়ে পানি এসে গেল, কিছু বললাম না, রাতের আঁধারে কেউ দেখলোও না। সারাক্ষন গাড়িতে চুপ করে বসে রইলাম।

আগেই বলেছি আমি আর তিনা প্রতি বেলায় (সকালে, দুপুরে, বিকালে, রাতে) খেলতাম, কখনও ওর বাসায়, কখনও আমাদের বাসায়। একদিন বিকালে আমার ঠিক মনে ছিলোনা, কিভাবে যেন শেখাকে কোলে নিয়ে ওদের বাসায় নক করলাম। দরজা খুলে দাড়ালো তিনা আর ওর বাবা। তিনা বলল, আমি তোমার সাথে খেলবো না, তুমি ফয়সলকে মেরেছো। আমি চুপ করে রইলাম, হয়তো চলে যেতাম।

এরমধ্যে ওর বাবা বলল, শিমুলকে তখন ভুতে ধরেছিল, মাঝে মাঝে এরকম হয়, তোমাকে ভুতে ধরলে, তুমি ফয়সলকে মারবে, এখন ভুত নেই, এখন খেলা যাবে। তিনা আর আমি সাথে সাথে সব ভুলে আবার আগের মতোন খেলতে শুরু করলাম। 5/6 বছর খুব চমৎকার সময়, কতো স হজে সব কিছু ভোলা যায় তখন! তবে কেন যেন আমার অভিমান গেল না, আমি কোনোদিন ওদের কাছে জানতে চাইনি, কিভাবে এই রকম মিথ্যা ধারনা ওদের হয়েছে....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।