একটি নতুন বছরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙ্গিনায় প্রবেশ করেছিলাম। ঠিক আরেকটি নতুন বছরের আগমনে সমাপ্তি ঘটলো আমার ক্যাম্পাস জীবন। তিন অক্ষরে বিদায় শব্দটি লিখলো যে, বড়ই নিষ্ঠুর পাষাণ হৃদয় সে। সময়ের কালস্রোতে হারিয়ে যায় সবকিছু। কিন্তু আমার ক্যাম্পাস জীবনের চারটি বছরের স্মৃতিমাখা দিনগুলো আমার আজীবন মনে থাকবে।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে ২০০৮ সালে আমি ভর্তি হয়েছিলাম আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম। ২০০৮ সালের সূর্য্যদয়ে যে হিসাবের খাতা খুলেছিলাম, ২০১২ তে এসে বছরের শেষ সূর্যাস্তের সময় ক্যাম্পাস জীবনে পড়ালেখার কতটুকু হিসাব মিলাতে পেরেছি জানিনা।
আমার প্রিয় ক্যাম্পাসে এই ৪বছরের সুখ স্মৃতিগুলো মনে পড়লে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারি না। চোখের পানি টলমল করে আসলে হোস্টেলে লাইফের সবচেয়ে বড় অভিজ্ঞতা হল মানুষকে চেনা, বন্ধুত্বের সম্পর্ককে আরো বেশি উপলব্ধি করা। আবার বন্ধুত্বের সম্পর্কের মাঝেও অনেক ধরনের সম্পর্ক থাকে।
সেই সম্পর্কও মেইনটেইন করা শেখা যায় হোস্টেলে থেকেই।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ক্লাস ছিলো ২৮শে ফেব্রুয়ারি ২০০৮ সালে..ল অফ কন্ট্রাক্ট, ক্লাশ নিয়েছিলেন শ্রদ্ধেয় কাজী এরশাদুল হক স্যার। স্যার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন ও পড়াশুনা নিয়ে অনেক কিছু আদেশ উপদেশ দিয়েছিলেন যা এখনো স্মৃতিতে অম্লান হয়ে আছে। সেসময় ক্যাম্পাসটা এখনকার মতো এতো বিশাল ছিলো না, ছিলো না সেন্ট্রাল মসজিদ, ছিলো না অডিটরিয়াম, নতুন হল, ক্যান্টিন আর ফ্যাকাল্টির ভবনগুলো। সেদিনের সেই ছোট ক্যাম্পাসটি এখন বিশ্বে সুপরিচিত।
এই ক্যাম্পাসে এসে বিভিন্ন সেমিনারে অনেক বড় বড় জ্ঞানী গুনী মানুষের দেখা পেয়েছি এবং তাদের মূল্যবান আলোচনা শুনেছি। যা জীবনে চলার পথে পাথেয় হয়ে থাকবে।
আর বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ ক্লাশটি হয়ে গেলো গত ২৮শে জানুয়ারি ২০১২তে, শ্রদ্ধেয় আবু তাহের স্যারের হিউম্যান রাইটস -এর মাধ্যমে। ভাবতেই পারিনি এই চারটি বছর এভাবে চলে যাবে। কিন্তু গতকাল যখন এক বন্ধু ক্লাশে ক্যামেরা নিয়ে আমাদের ছবি তুলছিলো, জিজ্ঞেস করছিলাম, বন্ধু! তোর হাতে ক্যামেরা কেন? ঐ বন্ধু আমার প্রশ্নের কোনও উত্তর দিতে পারে নাই।
চোখের পানি দেখে বুঝে নিয়েছিলাম, এটাই আমাদের অনার্স জীবনের শেষ ক্লাশ। আরও বুঝতে পারলাম, জুনিয়রদের বিদায় অনুষ্ঠান আয়োজনের তোড়জোড় দেখে। ক্যাম্পাস জীবনে আমি সবচেয়ে বেশী মিস করবো খেলার মাঠটাকে। আমি আরও মিস করবো আমার প্রিয় হযরত উসমান (রা) হলকে। ভুলতে পারবো না আমার ৫০১ নং রুমের কথা।
রুমমেটরা মিলে আমরা যেন একটি পরিবারের মতো ছিলাম। হলে এসে পরিচয় হলো একজন ব্লগারের সাথে, যে বিভিন্ন ব্লগে লেখালিখি করতো। আমার ফেসবুকের স্ট্যাটাসগুলি দেখে সে প্রায়ই আমাকে বলতো, ভাই আপনি তো অনেক ভালো লিখেন, আপনার লেখাগুলো যদি ব্লগে লিখেন তাহলে অনেক ভালো হয়। এর পর থেকে শুরু হলো আমার ব্লগিং। স্মৃতির আয়নায় ভেসে উঠে আমার ১১০ নং রুমের কথা, যে রুমে বসে হলের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করতাম।
সবাই মিলে আড্ডা দিতাম। মনে হতো এটা যেন একটা অষোষিত ছাত্র সংসদ। এমন কোনও ছাত্র নেই যে এই রুমে একবারও হলেও আসে নি।
সন্ধ্যা হলেই আইআইইউসির মেইন গেটে নাশতা করার স্মৃতিগুলো একে একে মনে পড়বে, কানে বেজে উঠবে না সুরুজ পাগলার মনকাড়া গান। ব্লগে আর দেখতে পাবো না আমার প্রিয় বন্ধু আনিক বিন রশিদের আমার পোস্টে দেয়া প্রথম মাইনাস রেটিং-টি।
আর দেয়া হবে না তার পোস্টের বিপরীতে ব্লগে আমার কাউন্টার পোস্ট। কুমিরা বিচে গভীর রাত পর্যন্ত বন্ধুদের নিয়ে আর আড্ডা হবে না। পাহাড়ের উপর সবাই মিলে বনভোজন, রেললাইনের উপর বসে চিৎকার করে গান..আর কখনো গাওয়া হবে না। এতো দিন সমাজ-রাষ্ট্র-রাজনীতি নিয়ে ব্লগে অনেক লিখেছি, কিন্তু আজ নিজেই ব্লগের পোস্ট হয়ে গেলাম। পেছনে পড়ে থাকলো বিশ্ববিদ্যালয়ে কাটানো আমার সোনালী দিনগুলি।
সবাই আমার জন্য দোয়া করবেন, ছাত্রজীবন শেষ করে যেন দেশের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারি। ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।