আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

অনুগল্প লিখিবার প্রচেষ্টা: ক্যালেন্ডারের পাতা

মানুষ চাই.....সতিকারের মানুষ খুঁজছি....
নাসিমা প্রতিদিনের মতোই ঘুম থেকে উঠে চোখ ডলতে ডলতে চাপ কলের দিকে হাটা শুরু করল। আজ মাসের এক তারিখ। অন্যদিনের চেয়ে আজ তাকে বেশ উত্ফুল্ল মনে হচ্ছে, আজ পরীক্ষা। মুখ ধুয়ে ফিরে এসে দ্যেখে প্রতিদিনের মতো থালাতে পান্তা ভাত আর মরিচ পোড়া মা বেড়ে রেখে চলে গেছে। সেগুলো সে তাড়াতাড়ি খেয়ে সুজন মাস্টারের বাড়ির দিকে দৌড় দিল, আজ পরীক্ষা।

সুজন মাস্টারের পেশা মাস্টারি নয় তিনি গ্রামের একজন কৃষক। এ গ্রামে কোনো স্কুল নেই। চার মাইল হেঁটে অন্য গ্রামের স্কুলে গিয়ে তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন। তাঁর ব্যাক্তিগত উদ্যোগেই তিনি প্রতিদিন সকালে এই স্কুলটি পরিচালনা করছেন। স্কুল বলতে বাড়ির সামনে আম গাছে টাঙানো একটা বোর্ড আর একটা হোগলা পাতার পাটি।

তার এক খালাতো ভাই শহরের প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষা অফিসে কাজ করে, তাকে বলে গোট কয় বই যোগাড় করেছে, সেগুলো দিয়েই আপাতত চালিয়ে নিচ্ছে স্কুলটি। নাসিমা যেনো আজ আগেই এসে গেছে, সে এসে চারিদিকে তাকাতে লাগলো, না এখনও কেউ আসেনি। সে বই খুলে নামতায় চোখ বুলাতে লাগলো, আজ পরীক্ষা । এর মধ্যে তনু চলে আসলো, এসে জিজ্ঞেস করল, - কি করতাছস? - পড়তাছি, দ্যেখছ না? - কি পড়তাছস? - তরে কমু ক্যা? তনু না শোনার ভান করে আম গাছের ডাল ধরে ঝুলতে থাকে। নাসিমা ও তনু এরা সুজন মাস্টারের দুই চোখের মনি।

এদের জন্যই সুজন মাস্টার এতো দিন অনেক বাধা সত্বেও আগ্রহ হারাননি। এরা পড়ালেখায় যেমন ভালো তেমন দুষ্টমিতেও। নাসিমা তনুকে সব সময় প্রতিদ্বন্দী ভাবে, গত মাসের পাতাটা দিয়ে তনু বইতে মলাট দিয়েছে, কি সুন্দর ছিলো পাতাটা একটা সুন্দর বাড়ির ছবি, বাড়িডা কই? দ্যেশে তো এমন সুন্দর বাড়ি নাই, এইডা কি তাইলে শহরের বাড়ি না-কি বিদেশী বাড়ি? এরকম অনেক প্রশ্ন নাসিমার মনে আসতে থাকে কিন্তু পাতাটি তনু পেয়েছিলো তাই এখনও রাগে তার শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আজ যে পাতাটি সুজন মাস্টার পুরুস্কার হিসেবে দেবে সেটি অন্য একটি বাড়ির ছবি, এই বাড়িটা আরও সুন্দর, যেটির চারপাশে সমূদ্র, মনেহয় সমূদ্রের নীলে বাড়িটা ঢেকে আছে, এই পাতাটি নাসিমার চাই-ই চাই। এই ক্যালেন্ডারটিও সুজন মাস্টারের সেই খালাতো ভাই দিয়ে গেছে, প্রতি মাসের এক তারিখ সুজন মাস্টার পরীক্ষা নেয় আর যে প্রথম হয় তাকে পুরুস্কার হিসেবে গত মাসের পাতাটি দেয়।

সুজন মাস্টার ঘর থেকে বের হয়ে তাদের দুই জনকেই বললেন, আজকে পাতাটা কে নিবি? তনু তখনও গাছে দোল খাচ্ছে, নাসিমা কোনো উত্তর দিলো না কিন্তু মৃদু হাসিতে জানিয়ে দিলো আজ সে পাতাটি নিয়ে যাবেই। কিছুক্ষন পরে রাজু, মতি সহ দশ বারো জন আসার পরে পরীক্ষা শুরু হলো। পরীক্ষা শেষে সুজন মাস্টার তাদের অংক কষতে দিয়ে খাতা দেখতে বসলেন। অংক করার পরে বাংলা পড়া হলো, নাসিমার যেনো তর সইছে না, যদিও সে জানে ক্লাস শেষ না হলে রেজাল্ট জানানো হবে না। ক্লাস শেষ হলো, সুজন মাস্টার একে একে সবার নাম্বার বলতে লাগলেন, তিনি সবার শেষে নাসিমার নাম্বার বললেন, বলে বললেন এমাসেও তনুই পাতাটা পেলো।

নাসিমার চোখ জলে ভরে উঠলো।
 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।