আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সুদীপ্তার আর্তি 'আমি স্কুলে যেতে চাই'

এক বুক আশা নিয়ে প্রায় প্রতিদিনই সকালে স্কুলের আঙিনায় ছুটে যায় সুদীপ্তা। বাসায় ফেরে কাঁদতে কাঁদতে চোখের নোনা জলকে সঙ্গী করে। স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি হওয়া তার দুর্নিবার ইচ্ছা। কিন্তু সেই ইচ্ছায় বাধ সেধেছে একটি মহল। ঘটনাটি মাগুরার মহম্মদপুরের ধুলজোড়া চূড়ারগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের।

জানা গেছে, সুদীপ্তা ভর্তি হলে নাকি ওই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক কাম আওয়ামী লীগ নেতা শ্রীকান্ত বিশ্বাসের বড্ড ক্ষতি হয়ে যাবে! অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে, সুদীপ্তা ওই স্কুলে ভর্তি হলে অভিভাবক হিসেবে তাঁর বাবা দিপুল কুমার বিশ্বাস ম্যানেজিং কমিটির সদস্য হয়ে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে সহকারী প্রধান শিক্ষক শ্রীকান্ত বিশ্বাসের প্রধান শিক্ষক পদে পদোন্নতি আটকে যেতে পারে। কেননা, সুদীপ্তার বাবা দিপুল কুমার বিশ্বাস এর আগেও ওই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। নীতি-নৈতিকতার দিক দিয়ে তিনি আপসহীন। এই ভয়েই সুদীপ্তাকে ভর্তি করা হচ্ছে না মহম্মদপুরের ধুলজোড়া চূড়ারগাতি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে।

সুদীপ্তার বাবা দিপুল বিশ্বাস জানান, সুদীপ্তা এতদিন তার মায়ের সঙ্গে ঢাকায় ছিল। মিরপুর ল্যাবরেটরি স্কুল থেকে সমাপনী পরীক্ষায় সাফল্যের সঙ্গে সে উত্তীর্ণ হয়েছে। তার বাবা এলাকার বিভিন্ন সামাজিক কাজে প্রতিনিধিত্ব করার পাশাপাশি ওই স্কুলটির ম্যানেজিং কমিটিতে দীর্ঘ পাঁচ বছর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এ ছাড়া সুদীপ্তার দাদু সুখময় বিশ্বাস অতীতে ওই স্কুলে ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন। স্কুলটিও নির্মিত সুদীপ্তার দাদার দান করা জমির ওপর।

এ কারণেই স্কুলের বর্তমান প্রধান শিক্ষক শান্তিরাম মিত্র এবং সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবুখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাসসহ ম্যানেজিং কমিটির বেশ কিছু সদস্য তাঁদের পরিবারকে স্কুলের কর্তৃত্ব থেকে সরিয়ে রাখতে চাইছেন। তাই সুদীপ্তাকে ভর্তি করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ। তাঁরা ধারণা করছেন, সুদীপ্তা ভর্তি হলে অভিভাবক হিসেবে তিনি (সুদীপ্তার বাবা) কিংবা তাঁর পরিবারের কেউ স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নেতৃত্বে আসতে পারেন। সেই ভয়ে হিংসাত্মক ষড়যন্ত্র চলছে। দিপুল বিশ্বাস আরো জানান, প্রধান শিক্ষক শান্তিরাম মিত্র আগামী চার মাসের মধ্যেই অবসর নেবেন।

তিনি চাইছেন তাঁর জামাতা একই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক বাবুখালী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শ্রীকান্ত বিশ্বাসকে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ দিতে। যেহেতু বর্তমান ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ আছে মাত্র দুই মাস, সেহেতু নতুন ম্যানেজিং কমিটি গঠন হলে আর সেখানে ওই পরিবারের কেউ প্রতিনিধিত্ব পেলে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে তাঁর জামাতা শ্রীকান্ত বিশ্বাসকে নিয়োগ দেওয়া সহজ হবে না_এই আশঙ্কায় তাঁরা কুচক্রে মেতেছেন। সুদীপ্তার মা বাবুখালী ইউনিয়ন পরিষদের মহিলা সদস্য অঞ্জলি রানী আকুলি বলেন, 'আগে জানলে আমি ঢাকা থেকে আসতাম না। আমি মেয়ের মুখের দিকে তাকাতে পারছি না। ধারেকাছে আর কোনো স্কুল নেই যে, সেখানে তাঁকে ভর্তি করব।

প্রতিদিনই সুদীপ্তা স্কুলে যাচ্ছে আর কাঁদতে কাঁদতে বাড়ি ফিরছে। ইতিমধ্যে আমার স্বামী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে এ ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা, ইউপি চেয়ারম্যান এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিসহ অনেকেই প্রধান শিক্ষককে সুদীপ্তার ভর্তির ব্যাপারে অনুরোধ করেছেন। কিন্তু তিনি কারো কথাই শুনছেন না। উল্টো অনিয়মতান্ত্রিকভাবে আমার স্বামীর বিরুদ্ধে মনগড়া অভিযোগ তৈরি করে সুদীপ্তাকে যেন ভর্তি করা না হয়, সেই ব্যাপারে রেজুলেশন করা হয়েছে।

স্কুলে ভর্তি সুদীপ্তার মৌলিক অধিকার। এটা থেকে যেন তাকে বঞ্চিত করা না হয়, এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে আমি শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি আবেদন জানাচ্ছি। ' এ ব্যাপারে সুদীপ্তা তেমন কিছুই বলতে পারেনি। শুধুই কেঁদেছে। কাঁদতে কাঁদতে সে একসময় বলে, 'আমি স্কুলে যেতে চাই।

পাড়ার সবাই যখন স্কুলে যায়, আমি কেন পারব না। ' এ ব্যাপারে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার রুহুল আমিন খান বলেন, 'আমি ওই স্কুল থেকে পাঠানো এ সংক্রান্ত একটি রেজুলেশন পেয়েছি, যেখানে সুদীপ্তার ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আছে। এটা স্কুল কর্তৃপক্ষ কিভাবে করল, আমি বুঝতে পারছি না। বিষয়টি সম্পর্কে দ্রুত তদন্ত করে জানানোর জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। ' এ ব্যাপারে বাবুখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান বাকি মিয়া বলেন, 'আমি ৩৫ বছর ধরে এই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান।

এ ধরনের অনৈতিক ও নিষ্ঠুর কর্মকাণ্ড অতীতে দেখিনি। স্কুলের প্রধান শিক্ষক এবং ম্যানেজিং কমিটি একটি অবুঝ শিশুর ভর্তি নিয়ে কিভাবে এ ধরনের ষড়যন্ত্র করতে পারে, তা কিছুতেই বুঝতে পারছি না। এ ব্যাপারে স্কুলের প্রধান শিক্ষক শান্তিরাম মিত্র বলেন, 'স্কুলে ভর্তি হতে চাইলেই তো আর ভর্তি হওয়া যায় না। ওর বাবা খুবই ভয়ঙ্কর প্রকৃতির। মেয়েকে স্কুলে ভর্তি করলেই তিনি কমিটিতে ঢুকবেন।

তাই স্কুলের ম্যানেজিং কমিটিই সভা করে সুদীপ্তার ভর্তির ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। এ ব্যাপারে আমার কিছুই করার নেই। ' সুত্র : কালের কন্ঠ ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.