আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালেদা জিয়া ৪২তম স্বাধীনতা দিবসেও স্বাধীনতা বিরোধীদের ত্যাগ করতে পারলেন না

দেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী ক্রমশ দায়িত্বহীন উক্তি করে এবং সরকার পতনের একদফা আন্দোলন করেও দু’বছরে সফল না হওয়ায় অনেকটা বেসামাল হয়ে পড়েছেন। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দাবি না করে বিতর্কিত হয়েছেন। জামায়াত-শিবিরের আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ভেঙে দেয়া ও যুদ্ধাপরাধীদের ছেড়ে দেয়ার দাবিতে ডাকা হরতালে সমর্থন দিয়ে বিএনপি ও বেগম খালেদা জিয়া চরমভাবে বিতর্কিত হয়েছে। দুই বছরাধিক সময়জুড়ে সরকার পতনের নামে জনগণের বিরুদ্ধে চালিত ধ্বংসাত্মক বিক্ষোভ, অবরোধ, হরতাল দিয়ে নিজেকে এবং তার দল বিএনপিকে জনবিচ্ছিন্ন করে তুলেছেন। জামায়াত-শিবিরের তা-ব ও পরিকল্পিত সহিংসতামূলক কর্মসূচির পরও জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেননি এবং ১৮ দল থেকে বহিস্কার করেননি বিএনপিনেত্রী খালেদা জিয়া।

দেশবাসীর আহ্বান সত্ত্বেও তিনি তা করেননি। এমনকি তিনি ও তার দলীয় নেতারা আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে বিতর্কিত করার ষড়যন্ত্র ও পরিকল্পনার প্রতি নিন্দা জানাননি। কথায় কথায় কঠোর কর্মসূচি আর সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলেও তিনি তার অবশিষ্ট ভাবমূর্তি ধ্বংস করছেন। বৌদ্ধবিহার ও মন্দিরে সহিংস হামলা ও অগ্নিসংযোগের প্রায় দু’মাস পরে তিনি ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থান পরিদর্শনে গিয়েছেন। সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার পর সংখ্যালঘু, মুক্তিযোদ্ধা, গণজাগরণ মঞ্চের সমর্থক ও সংগঠকের উপর সহিংস আক্রমণ, হত্যা, অগ্নিসংযোগের ঘটনার পরও ১৮ দলীয় জোটের নেত্রী জামায়াত-শিবিরকে ত্যাগ করেননি।

অথবা তাদের অপকর্মের বিরুদ্ধে স্বোচ্চার হননি। গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে প্রথমে তিনি সমর্থন দিলেও পরে তাদের বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। গণজাগরণ মঞ্চের তরুণ ও নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সপক্ষে দাবি জমা দিয়েছেন জাতীয় সংসদের তৎসময়ের স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদের নিকট। তরুণ প্রজন্মের নির্দলীয় ও অহিংস আন্দোলনের লক্ষ্য হলো যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা, জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধ করা। সারাদেশে এ আন্দোলন সাড়া জাগিয়েছে।

গণজাগরণ মঞ্চের আন্দোলনে মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষীয় শক্তি, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দল ও তাদের নেতা, সাংবাদিক, সংস্কৃতিকর্মী, ছাত্র-শিক্ষক এবং সাধারণ জনতা সমর্থন জানিয়েছে। দ্বিতীয় পর্বের মুক্তিযুদ্ধ চলছে দেশে। গণজাগরণ মঞ্চের অহিংস আন্দোলনকে বিতর্কিত ও বিভ্রান্ত করার আয়োজন চলেছে পরিকল্পিত তৎপরতার মাধ্যমে। খালেদা জিয়া জামায়াতে ইসলামীর সুরে সুর মিলিয়েছেন। বিএনপির মুক্তিযোদ্ধারা চুপ করে আছেন।

বিএনপির মুক্তিযোদ্ধাদের নৈতিক আত্মহত্যা হয়েছে। দলীয় পদ হারানোর ভয়ে তারা দেশের সঙ্গে বেঈমানি করছেন। গণজাগরণ মঞ্চকে দলীয়করণ, সরকারিকরণ করার চেষ্টাও বিফলে গেছে। কারণ তাদের দাবি দেশের মানুষের মূল দাবিকে ধারণ করে। এমনকি জামায়াতি প্রচার মাধ্যমগুলোও বিতর্কিত ভূমিকা পালন করেছে।

পুলিশ ও সাংবাদিকদের ওপর আক্রমণ করে এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করে রাজনৈতিক সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছে জামায়াত-শিবির। খালেদা জিয়া সংখ্যালঘুদের আক্রমণের নিন্দা করলেও এ আক্রমণ ভবিষ্যতেও হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তার ভাষ্যমতে, এখন মন্দিরে হামলা হয়েছে; ভবিষ্যতে মসজিদেও হামলা হবে। তার এ বক্তব্যে সাম্প্রদায়িকতার উস্কানি আছে বলে অভিমত প্রকাশ করেছেন অনেকে। রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর বিএনপি এক দিনের হরতাল স্থগিত রেখে প্রশংসিত হয়েছে।

অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি নিযুক্ত হয়েছেন স্পিকার অ্যাডভোকেট আব্দুল হামিদ। স্থায়ী রাষ্ট্রপতি নির্ধারণ করা হবে পাঁচ বছরের জন্য। বিএনপির এ ব্যাপারে কোনো প্রস্তাব থাকলে সংসদে উপস্থিত হয়ে তা পেশ করার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও দপ্তরবিহীন মন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা হাইকোর্টের রায়ে জাতীয় সংসদে বাতিল হওয়ার আগে বিএনপি সংসদে গিয়ে আপত্তি না জানিয়ে ভুল করেছিল। এবারও রাষ্ট্রপতির পদটির গুরুত্ব বিবেচনা করে তাদের প্রস্তাবিত ‘অবিতর্কিত’ ও ‘সবার কাছে গ্রহণযোগ্য’ ব্যক্তিকে রাষ্ট্রপতি করার ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা না রাখলে ভুল করবে বিএনপি।

জনগণের জান-মালের নিরাপত্তা রক্ষার্থে হরতাল-অবরোধ চলাকালে সহিংস ঘটনার বিরুদ্ধে সরকার আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। মামলা খারিজ ও নেতাদের মুক্তি দাবি করেও বিএনপি আল্টিমেটাম দিয়েছে সরকারের প্রতি। এসব অযৌক্তিক দাবি করে বিএনপি অবলুপ্ত মুসলিম লীগের পরিণতি লাভ করতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা। ১৮ দলীয় জোটের নেতৃবৃন্দের অনেকেই হরতালের বিপক্ষে। হরতালে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি ও তা-বের পর ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ হরতালের বিকল্প সন্ধানের তাগিদ দিয়েছেন।

বিএনপি সহিংস হরতাল ভাঙচুর, জ্বালাও-পোড়াও করে এবং মানুষের জানমালের ক্ষতির বিনিময়ে ভবিষ্যতে ক্ষমতায় যেতে চান। এ মনোভাব জনগণ আর গ্রহণ করবে না। এমনকি খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা গ্রহণের সপক্ষে উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন বগুড়া ও জয়পুরহাটে ২৪ মার্চের জনসভায়। সরকার হঠাতে তিনি অসাংবিধানিক আন্দোলনকে আশ্রয় করে আছেন। ২৬ মার্চের পর আরো কঠোর কর্মসূচি উপলক্ষ্যে ২৭ ও ২৮ মার্চ অযৌক্তিক হরতাল করেছে খালেদা জিয়া।

তার এ হরতালের উদ্দেশ্য দেশের অর্থনীতিকে বিপর্যস্ত করা এবং রাজনীতিকে অস্থিতিশীল করা। জামায়াত-শিবিরের সহিংস তৎপরতার ক্ষেত্রে বেগম জিয়ার উস্কানিমূলক বক্তব্যের প্রতি নিন্দা জানিয়েছেন রাজনীতিবিদ ও সুশীল সমাজ। তিনি ক্ষমতায় থেকে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় চালু করলেও ১৬১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে চাকুরিচ্যুত করেছেন। বিএনপি ক্ষমতাসীন অবস্থায় ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত যেসব মানবতাবিরোধী কর্মকা- চালিয়েছেন তার প্রামাণ্য তথ্যচিত্র দেশে-বিদেশে প্রকাশ করা প্রয়োজন। জামায়াত-শিবিরের প্রামাণ্য চিত্রও দেশে-বিদেশে তুলে ধরা দরকার।

বেগম খালেদা জিয়ার উক্তি, উস্কানি ও অপতৎপরতার রেকর্ড সরকারের নিকট থাকা সত্ত্বেও কেন তার বিরুদ্ধে মামলা হচ্ছে না তা নিয়েও উদ্বেগ রয়েছে সুশীল সমাজের। ধ্বংসাত্মক তৎপরতার উস্কানি, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, জনগণকে বিভ্রান্ত করা এবং প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর বিরুদ্ধে তৎপর হওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত হতে পারেন বেগম খালেদা জিয়া। ২৬ মার্চ, ২০১৩ সালে জনগণ যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির আকাঙ্খায় তীব্রভাবে জাগ্রত। অথচ বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোট অকেজো হরতাল দিয়ে জনগণকে স্বাভাবিক জীবন-যাপনে বাধা আরোপ করলেন। ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে বুদ্ধিজীবী নিধনের দিবসে তিনি দু’দিনের হরতাল ডাকলেন।

দুবছরের বেশি কঠোর আন্দোলন করার পরও তার আন্দোলন শেষ হয় না, কঠোরতার কমতি হয় না। যারা জনগণের ক্ষতির মাধ্যমে বিজয়ী হয়ে ক্ষমতাসীন হতে চান জনগণ তাদের অন্যায় আশা পূরণ করবে না। নির্বাচন যতো ঘনিয়ে আসছে বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার বেসামাল আন্দোলন ও জনসমর্থনহীন কর্মকা- ততো বাড়ছে। সরকার ধৈর্য ধরে অবস্থা মোকাবেলা করছে। মুক্তিযুদ্ধে বন্ধুদের সম্মাননা জানালেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৫ মার্চ।

অন্যদিকে খালেদা জিয়া সেনাবাহিনীকে উস্কানি দিলেন, কঠোর কর্মসূচির ঘোষণা দিলেন। অসাংবিধানিক দাবির জন্য তার আন্দোলন সাড়া পায়নি বলে বিএনপি সংলাপে ভীত ও অনীহা প্রকাশ করছে। সংলাপের মাধ্যমে সহিংসতার যুক্তি থাকবে না বলে তারা সংলাপে বিমুখ। বিএনপি তথা ১৮ দলীয় জোটের তৎপরতা হলো রাজনৈতিক অস্থিতি, জরুরি অবস্থার দিকে সরকারকে ঠেলে দেওয়া, নাশকতার মাধ্যমে গণতন্ত্র নস্যাত করা এবং অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় সরকার উৎখাতের আন্দোলন করা। বেগম খালেদা জিয়া ৪২তম স্বাধীনতা দিবসে এসেও ত্যাগ করতে পারলেন না স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে।

জামায়াত-শিবিরের সহিংস তা-বের বিরুদ্ধে সোচ্চার না হয়ে পুলিশকে বলেছেন গুলি না চালাতে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতিতে কর্মীদের উস্কানি দিয়ে তিনি মূলত সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদকে প্রশ্রয় দিচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ করে যারা রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ করলো তিনি তাদের পক্ষ নিয়ে আরেকটি ঐতিহাসিক ভুল করলেন। এভাবেই একের পর এক ভুল সিদ্ধান্ত নেয়া, বিভ্রান্তি ও অপপ্রচারে লিপ্ত হওয়া এবং অসাংবিধানিক তৎপরতায় ব্যস্ত হয়ে খালেদা জিয়া দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছেন, জনগণকে অতীষ্ঠ করছেন এবং স্বাধীনতার বিপক্ষশক্তির সহায়ক হচ্ছেন। তিনি তিনবার প্রধানমন্ত্রী থেকেও ক্ষমতার মোহ ত্যাগ করতে পারলেন না।

তরুণ প্রজন্ম নতুন ধরনের রাজনীতিতে উৎসাহী। প্রজন্মের চেতনার বিরুদ্ধে গিয়ে তিনি তাদের সমর্থন হারিয়েছেন। ভারতের প্রথম বাঙালি রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জির সঙ্গে সাক্ষাতের কর্মসূচি বাতিল করে বিতর্কিত হয়েছেন। তার বিতর্কিত ভূমিকা ও ভুলগুলো আর সংশোধন হবে বলে মনে হয় না। জনগণও তাকে ত্যাগ করবেন।

ভোটের মাধ্যমে তার জবাব দেবে জনগণ। দায়িত্বহীন উস্কানি দিলেও সেনাবাহিনীর মতো দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান তার কথায় গুরুত্ব দেবে না বলেই মনে হয়। লেখক : ॥ রতনতনু ঘোষ ॥প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.