আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

খালেদা জিয়ার যত ভুল



বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার চার ভুল তাকে ক্ষমতার একবারেই বাইরে নিয়ে গেছে। তার ভুলের মধ্যে ছিল ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রনব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠক বাতিল, হেফাজতের সমাবেশে সমর্থন দিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম, শেখ হাসিনার দাওয়াত প্রত্যাখ্যান, গোপালী বলে একটি জেলাকে কটাক্ষ করা ও পুলিশ বাহিনীর সদস্যকে বেয়াদব বলে ধমকানো। এছাড়াও নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকা। কারো সঙ্গে বুদ্ধি করে সিদ্ধান্ত না নেওয়া, দলের ক্ষতি করছে এমন নেতাদের পরামর্শ নেওয়া। এছাড়া আরো কিছু ভুলের কারণে তার বিরোধী দলের নেতা হওয়ারও সুযোগ হাত ছাড়া হয়েছে।

তার ভুলের কারণে তিনি ২৩ বছর পর এখন কেবল একটি দলের চেয়ারপারসন। তার দল কেবল একটি বড় রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিকভাবে বর্তমান আর কোনো পরিচয় নেই। সাবেক পরিচয় রয়েছে অনেক। এই ভাবে আজকের অবস্থানে দাঁড়ানোর বিষয়টাকে বিএনপির অনেক নেতাই ভুল সিদ্ধান্ত মনে করছেন।

তবে খালেদা জিয়া নিজের মুখে নির্বাচনে অংশ না নেওয়াকে ভুল বলে স্বীকার না করলেও তার যে ভুলগুলো হয়েছে সেগুলো নিয়ে ভেতরে ভেতরে পর্যলোচনা চলছে। নেতারা এনিয়ে নানা আলোচনাও করছেন। কেবল তাদের ব্যর্থতার কারণেই বিএনপি ক্ষমতায় আসতে পারেনি এটা মনে করছেন না। তারা মনে করছেন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ভুলের কারণেই আজ তাদের এই অবস্থা। তাদের ভুলের পর্যালোচনা করে সব ভুলগুলো না করলেই ভালো হতো এমনটাও মনে করছেন।

তারা মনে করছেন, বিএনপির অনেক নেতা পালিয়ে থেকে মাঠে নামতে পারেননি এটা নেতাদের ভুল। কিন্তু কেবল নেতাদের ভুল নয়, নেতৃত্বেরও ভুল আছে। এই প্রথম তারা তাদের নেতৃত্বের ভুল নিয়ে আলোচনা করছেন। তবে তা প্রকাশ্যে নয় ঘনিষ্ঠজনদের সঙ্গে।

ওই সব ভুলের ব্যাপারে সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল ভারতের প্রেসিডেন্ট প্রণব মুখার্জির সঙ্গে বৈঠক না করা।

বিএনপি চেয়ারপারসনের তরফ থেকে ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে যোগাযাগ করেই তার ঢাকা সফরকালে বিএনপি চেয়ারপারসনের সঙ্গে বৈঠকের সিডিউল দেওয়া হয়। ওই সিডিউল অনুযায়ী তিনি প্রনব মুখার্জির সঙ্গে সোনারগাঁও হোটেলে বৈঠকে বসার কথা ছিল। কিন্তু ওই দিন রাজনৈতিক কর্মসূচি ছিল বিএনপির। হরতাল চলছিল। তিনি হরতালের অজুহাত দেখিয়ে ও তার নিরাপত্তার কথা বলেই প্রণবের সঙ্গে বৈঠক বাতিল করেন।

প্রণব শেষ পর্যন্ত আশা করেছিলেন বেগম খালেদা জিয়া তার সঙ্গে দেখা করবেন। কিন্তু তা করেননি। তার তরফ থেকে ভারতীয় হাইকমিশনে সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দেন যে, বিএপি চেয়ারপারসন ভারতের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠক বসতে পারছেন না। এই জন্য দু:খ প্রকাশ করেন। বিএনপি চেয়ারপারসনের তরফ থেকে সিডিউল নিয়ে তা আবার বাতিল করার বিষয়টি ভালোভাবে নেননি।

ভারতের প্রেসিডেন্ট এটাকে রাজনৈতিক ধৃষ্টতা হিসাবেই দেখেছেন। ভারত সরকারও ভালোভাবে নেয়নি। সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া যখন ভারত সফর করেছিলেন প্রণব মুখার্জির তরফ থেকে তাকে যথাযথ সম্মান জানানো ছাড়াও ভারত সরকারের তরফ থেকে বিরল সম্মান দেখানো হয়। ভারতের ভিন্ন আশাও ছিল। কিন্তু সেই সম্মানের মূল্য রাখেননি বেগম খালেদা জিয়া।

সেখান থেকে ফিরে আসার পর আবার ভেতরে ভেতরে ভারতবিরোধিতা করেন। এই কারণেই ভারতে বিএনপিকে কোনো ধরনের সমর্থন না দেওয়ার ও তাদের পাশে না থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। বিএনপিকে বাদ দিয়ে শেখ হাসিনা নির্বাচন করলেও ভারত এনিয়ে কথা বলেনি। ওই নেতা বলেন, ভারতের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্কের অবনতি ঘটনানো ঠিক হয়নি। ভারত পাশের দেশ তাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা গভীর না হলেও সুসম্পর্ক বাজায় রাখতে হবে।

কিন্তু বিএনপি সেটা করতে ব্যর্থ হয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের আরো একটি ভুল ছিল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার দাওয়াত কবুল না করা। তিনি যখন আলোচনার জন্য ফোন করেছিলেন তখন বিএনপি চেয়ারপারসন হরতালের অজুহাতে ওই দাওয়াত কবুল করেননি। তিনি হরতালে বের হন না এই অজুহাতে শেখ হাসিনার দাওয়াত পিছাতে বলেন। সূত্র জানায়, শেখ হাসিনা জানতেন যে, বিএপি চেয়ারপারসনকে ফোন করে দাওয়াত দিলেও আসবেন না।

কারণ তিনি হরতালে বের হন না। এটা জেনেই হাসিনা বেশ কূট কৌশল করেই তাকে দাওয়াত দেন গণভবনে। হাসিনা দাওয়াত দেওয়ার পর বেগম খালেদা জিয়া তা ফিরিয়ে দেন। এতে শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হন। সবাই দেখেন বেগম খালেদা জিয়াকে দাওয়াত করেছেন ডেকেছেন কিন্তু আসেননি।

উল্টো আরো অনেক কথা বলেছেন। বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, আওয়ামী লীগ সভানেত্রী চেয়েছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসনকে উত্তেজিত করতে, যাতে তার ইমেজেরই ক্ষতি হয়। যারা ভাবতেন বিএনপি চেয়ারপারসন কোনো কথা বলতে পারেন না। সব কথা তাকে শিখিয়ে দিতে হয়, লেখা ছাড়া বক্তৃতা করতে পারেন নাÑ ওই ইমেজ ভেঙ্গে ফেলেন।

সূত্র জানায়, বেগম খালেদা জিয়া সেদিন শেখ হাসিনার দাওয়াত কবুল করে হরতাল স্থগিত করে কিংবা একদিন পর হরতাল স্থগিত করে তার সঙ্গে গণভবনে নেতাদের নিয়ে দাওয়াতে যেতে পারতেন।

১৮ দলের নেতাদের সঙ্গে আসার সময় ও নেতাদের নাম দিবেন সেটাও বলতে পারতেন তা বলেননি। এখানে কৌশল করতে ব্যর্থ হন। ফলে দুই নেত্রীর দেখা হলে সেখানে দুই নেত্রীর আলোচনা হতে পারত। আলোচনা হরে এরপর যাই হোক কিছুটা হলেও অগ্রগতি হতো। অন্তত শেখ হাসিনার কাছে বেগম খালেদা জিয়া তার দাবিগুলো বলতে পারতেন।

সূত্র জানায়, সুযোগ পেয়েও তিনি তা হারান। কৌশল করে হলেও সেটাকে কাজে লাগানো দরকরা ছিল। এ অবস্থায় শেখ হাসিনা রাজনৈতিকভাবে লাভবান হন। বারবারই বলেছেন, বিএনপি চেয়ারপারসনকে আমি ডেকেছি বসার জন্য কিন্তু তিনি আসেননি। এই কথা বলার সুযোগ তিনিই করে দিয়েছেন।

আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো দেখেছে যে, বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে আলোচনার চেয়ে হরতালই বেশি বড়। হরতাল করেও তিনি আন্দোলনে সফল হতে পারেননি, নির্বাচন ঠেকাতে পারেননি। সরকার গঠনও ঠেকাতে পারেননি। আলোচনা করলে অন্তত একেবারে ক্ষমতাছাড়া হতে হতো না। সংসদে বিরোধী দলে থাকার সুযোগ থাকতো।



এদিকে বিএনপি চেয়ারপারসনের আরো একটি বড় ভুল ছিল ২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচি পালন করতে না পেরে রেগে গিয়ে অনেক কথা বলা। তিনি ওই দিন মার্চ ফর ডেমোক্রেসি পালন করার জন্য বাড়ির বাইরে বের হতে যান। সরকার পুলিশ বাহিনীকে দিয়ে তাকে বাধা দেয়। তিনি বের হওয়ার চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তিনি এতটাই রেগে যান ও ক্ষোভে ফেটে পড়েন যে, এক পুলিশ কনস্টেবলের ওপর চড়াও হন।

তাকে উদ্দেশ্য করে একবার বলেন, বাড়ি কোথায় গোপালী, আবার এর পর পরই বলেন বেয়াদব কোথাকার, চুপ। এ দুটি কথা তিনি ইচ্ছে করে বলেননি, ওই সময়ে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরেই বলেছেন, এটা সবাই জানলে বা বুঝলেও তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। কারণ তিনি ওই ধরনের কথা বলে তার গোপালগঞ্জ বিদ্বেষ জনগণ দেখেছে। সেই সঙ্গে এটাও দেখেছে যে, কীভাবে কথা বলতে পারেন। সরকারের দায়িত্বশীল একজন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যকে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে ওই ধরনের আচরণ জনগণ আশা করে না।

ওই দিন বেগম খালেদা জিয়াকে সরকার আটকে রাখার কারণে সরকারকে মানুষের নিন্দা জানানোর কথা। কিন্তু তা না করে জনগণের একটি অংশ বেগম খালেদা জিয়ার ওই ধরনের আচরণে অনেকটাই অবাক হয়েছেন।

সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের পরিকল্পনা রয়েছে পাঁচ বছর এই সরকারের মেয়াদ পূর্তি। কিন্তু বিদেশি কোনো চাপের কারণে ও বিএনপির আন্দোলনের কারণে আগাম নির্বাচন দিলেও যে করেই হোক আবারও আওয়ামী লীগ জোট ক্ষমতাসীন হবে সেই ঠিক করেছেন। এই জন্য তারা সব করবে।

এখন থেকেই পরিকল্পনা করছেন কেমন করে বিএনপি জোট ঠেকাবেন। কিন্তু আওয়ামী লীগের এ প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দেওয়ার মতো রাজনৈতিক কৌশল বেগম খালেদা জিয়া, তারেক রহমান বের করতে পারবেন কিনা সেটা নিয়েও দলের সিনিয়র কোনো কোনো নেতার সংশয় রয়েছে। এ রকম এক নেতা তার নাম না প্রকাশ করার অনুরোধ করে বলেন, শেখ হাসিনার সঙ্গে রাজনীতি করতে হলে আরো কৌশলী হতে হবে। শেখ হাসিনা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হয়ে অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন, সেগুলো কাজে লাগাচ্ছেন। নানা কৌশল বের করছেন।

তার একটি বিশেষ গুণ তিনি সবার কথা শোনেন এরপর নিজে সিদ্ধান্ত নেন। আর আমাদের নেত্রীর সামনে কোনো নেতা ওইভাবে সাহস করে কথা বলতে পারেন না। পরামর্শ দিবেন, এনিয়েও ভয় রয়েছে। ফলে ম্যাডাম কি বলবেন, সেই জন্য সবাই অপেক্ষা করেন। যারা পরামর্শ দেন তারা কোন দিকের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন করেন সেটা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

যেই সব নেতার পরামর্শে তিনি ওই সব ভুল করলেন, এখনও তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেননি। এদিকে ১৯ দলীয় জোটের একটি দলের পার্টি প্রধান বলেন, আমরা বিএনপি চেয়ারপারসনকে আন্দোলন সফল করার জন্য দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি সেইভাবে কাজ করেছেন। যে রকম সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সেটাই হয়েছে। কিন্তু সরকার আমাদের আন্দোলন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে, পুলিশ ব্যবহার করছে, সেই সঙ্গে জোটের নেতা কর্মীদের মাঠে নামতে দিচ্ছে না।

এই জন্য কী কৌশল করলে আমরা এগিয়ে যেতে পারবো এখনও উপায় বের করতে পারেননি। সরকার সমাবেশ করতে অনুমতি দিচ্ছে না। মিছিল করতে দিচ্ছে না। কিন্তু সেটা মেনে নিয়েই এগুচ্ছে। তা কি ঠিক হচ্ছে।

বিএনপি সময় নিচ্ছে দল গোছানোর। এখন তারা কবে দল গুছাবে সেই জন্য আন্দোলনের ধারাবাহিকতা না রাখলে কী হবে। বিএনপি চেয়ারপারসনের একজন উপদেষ্টা বলেন, বিএনপি আবার আন্দোলনের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে খুব শিগগিরই মাঠে নামবে। আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসার যতই কৌশল করুক না কেন, সেটা সফল হবে না। আমরা এবার আন্দোলনের মাধ্যমেই রাজপথে দাবি আদায় করবো।


 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.