আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গোলাম আযমের গ্রেফতার এবং আ'লীগ পন্থীদের কী-বোর্ড সন্ত্রাস

সামহোয়ারের ব্লগার যারা গোলাম আযমের গ্রেফতারে আনন্দিত হয়েছেন তাদের অধিকাংশই গালাগালি করেছেন। এতে তাদের বুদ্ধিবৃত্তিক দেউলিয়াত্ব প্রমাণিত হয়েছে। সামু এধরনের পোস্ট স্টিকি করে এবং গালাগাল এলাউ করে নিজেদের রুচির পরিচয় রেখেছে। গালিগালাজ প্রমাণ করে গায়ের জোরে তারা নিজের মত চাপিয়ে দিতে চায়; এর মধ্যে যুক্তি-বুদ্ধি বিবেকের কোন সম্বন্ধ নাই। এদের পেছনে নাই কোন আদর্শ ।

আ'লীগ ক্যাডারদেরো চরিত্র আসলে তা-ই। বাইরে তারা সন্ত্রাস করে আগ্নেয়াস্ত্র রামদা-চাপাতি দিয়ে। আর ব্লগে সন্ত্রাস করে কী-বোর্ড দিয়ে কুৎসিত গালিগালাজ টাইপ করে। আদর্শ না থাকলে যুক্তি না থাকলে (মিথ্যার পেছনে অবশ্য কখনোই কোন যুক্তিই থাকে না) এছাড়া তাদের আর কী-ই বা করার আছে। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশতঃ কাউকে denigrate করা যেতেই পারে।

কিন্তু একটি লোক সত্যিই কোন অন্যায় করেছে কী-না সে ব্যপারে সিদ্ধান্তে উপনীত হতে গেলে ঐ দাবীর ব্যপারে তথ্য-যুক্তি-প্রমাণ আছে কী-না তা বিবেচনা করতে হবে। গোলাম আযম মুক্তিযুদ্ধের সময় কোন অন্যায় কাজের সাথে জড়িত ছিলেন না। এ ব্যাপারে কেউ একটি প্রমাণ দেখাতে পারেনি। কেউ যদি যুক্তি-তথ্য এবং প্রমাণ দিতে পারেন তাহলে আমিঅ তাকে ঘৃণা করব। উপমহাদেশ বা দুনিয়ার ইতিহাসে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা নতুন কিছু নয়।

মুজিব এবং জিয়া প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নৃশংসভাবে নিহত হয়েছেন। রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত: ১/১১-এর কুশলীবরা শেখ হাসিনা এবং খালেদাকে দোষী প্রমাণ করতে চেয়েছে, অন্যায়ভাবে গ্রেফতার করে রেখেছে মাসের পর মাস। এখনো খালেদার বিরুদ্ধে মামলা আছে। আবার খালেদা ক্ষমতায় আসলে হাসিনার বিরুদ্ধে মামলা হবে। মালয়েশিয়ার রাজনীতিক আনোয়ার ইব্রাহিমকে সমকামীতার অভিযোগ মাথায় নিয়ে দীর্ঘদিন জেল খাটতে হয়।

বর্তমানে এ অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে। তার মানে তার এত বছরের জেল রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণে হয়েছে। ঠিক একইভাবে আজ গোলাম আযম রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার। গোলাম আযম যদি সত্যিই অপরাধী হত তাহলে যুদ্ধের পরই তার বিরুদ্ধে মামলা হত। কিন্তু কোন মামলা হয়নি।

তিনি যদি সবচেয়ে বড় (mastermind) যুদ্ধাপরাধী হতেন (এখন যেমন অনেকেই বলছে) তাহলে শেখ মুজিবই তার বিরুদ্ধে (মামলা বা অভিযোগ গঠনের) ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিতেন। গোলাম যদি সত্যিই অপরাধী হতো তাহলে স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি আ'লীগ এবং মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা '৯১-এর নির্বাচনের পর জামাতের সমর্থণ কামনা করে স্বয়ং গোলাম আযমের কাছে প্রতিনিধি পাঠাতোনা। গোলাম আযম এবং তার দল যদি সত্যিই যুদ্ধাপরাধী হতো তাহলে তাদের সাথে যুগপৎ আন্দোলন এবং মিটিং মিছিল কিছুই আ'লীগ করতো না। গোলাম আযম যদি যুদ্ধাপরাধী হতো এবং যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটি যদি বস্তুনিষ্ঠভাবে আ'লীগ সত্যিই এতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করতো তাহলে আ'লীগ আগেরবার ক্ষমতায় এসে প্রায়োরিটি বেসিসে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিত, গোলাম আযমকে গ্রেফতার করত। কিন্তু পাচ বছরে আ'লীগ কোন উদ্যোগ পর্যন্ত নেয়নি, নেয়ার প্রয়োজন অনুভব করেনি।

আ'লীগ যুদ্ধাপরাধের বিচারের ব্যপারে সত্যিই যদি আন্তরিক হত ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার স্বার্থে, তাহলে তারা সত্যিকার আন্তর্জাতিক মানের একটি ট্রাইবুনাল গঠন করতো। কিন্তু তারা তা করেনি; তারা একটি ক্যাঙ্গারু কোর্ট গঠন করে নিজেদেরকে ন্যয়বিচারের বিপক্ষে প্রমাণ করেছে। আ'লীগ যদি ন্যায়বিচারের জন্য এতই নিবেদিত প্রাণ হতো তাহলে আ'লীগ, ছাত্রলীগ সন্ত্রাসীদের সারা দেশে হত্যা, গুম, ধর্ষন এবং সন্ত্রাসের রাজত্ব কায়েমের ফ্রি টিকিট দিতনা। ৪০ বছর আগের হত্যা-ধর্ষণ-এর বিচার চাই কিন্তু এখন ডেইলি বেসিসে ফ্রিলি হত্যা-ধর্ষণ চালাই - এটা কী বিবেকবান মানুষের কাছে গ্রহনযোগ্য? এতে প্রমাণ হচ্ছে আসলে তারা কোন অন্যায়ের বিচারই চায়না চায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে। যুদ্ধাপরাধের বিচার ইস্যুটি যদি রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হাতিয়ার না হতো তাহলে মন্ত্রী পর্যায়ের লোকেরা বিচার ছাড়াই ফাসি কার্যকর করার পরামর্শ দিতনা।

পাকিস্তানের অখন্ডতা সমর্থন করাই যদি যুদ্ধাপরাধ হতো তাহলে শামসুর রহমান, সুফিয়া কামালসহ বর্তমান আ'লীগার অনেকের বিরুদ্ধেই যুদ্ধাপরাধী হবার অভিযোগ উঠত। কিন্তু তা না হয়ে সিলেক্টেড ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধী হবার অভিযোগ উঠছে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশতঃ। যুদ্ধাপরাধের ইস্যুটি যদি রাজনৈতিক না হতো তাহলে আ'লীগ নেতারা সবকিছুর মধ্যে যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল হবার গন্ধ পেতনা। জামাত পাকিস্তান আর্মির দ্বারা নির্যাতিত হয়েছে। এমনকি জামাতকে আইয়ুব আমলে নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়।

তার মানে জামাত-গোলাম আযম আর পাকিস্তান আর্মি এক সুতায় গাথা, ব্যাপারটা এরকম নয়। তাই পাকিস্তান আর্মির অপকর্মের দায় জামাতের উপর বর্তানো সঠিক নয়। একটি উদাহরণ দিচ্ছি: ১/১১-এর সময় দেশের অনেক রথী মহারথীই গোপনে/প্রকাশ্যে আর্মিকে সাপোর্ট করেছে। এই আর্মিই কিন্তু আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের উপর নির্যাতন চালিয়েছে। তাই বলে এই ছাত্র নির্যাতনের দায় ঐসব রথী-মহারথীদের উপর চাপানো যায় না।

গোলাম আযম বা জামাত যদি অপকর্মের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকত তবে আমি নিজে তাদেরকে ঘৃনা করতাম। অপরাধী যে-ই হোক সে ঘৃণাহ্য। পরিশেষে: গোলাম আযমের বিরুদ্ধে নাগরিকত্ব মামলার সময় একই রকমম অভিযোগ উত্থাপন করা হয়েছিল। কিন্তু সবই মিথ্যা প্রমাণ হয়েছে, আদালত পরিষ্কারভাবে বলেছে তার বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের সময় "atrocities" যেসব অভিযোগ উঠেছে তার কোনকিছুরই কোন সত্যতা বা ভিত্তি আদালত পায়নি। আদালত বলেছে:Except some news items and one photograph showing that the petitioner met General Tikka Khan of General Yahya Khan. There is nothing to directly implicate the petitioner in any of the atrocities alleged to have been perpetuated by the Pakistani Army or their associates The Rajakars, Al-Badrs or the Al-Shams. Except that the petitioner was hobnobbing with the Military Junta during the war of liberation we don't find anything that the petitioner was in any way directly involved in perpetuating the alleged atrocities during the war of independence. লক্ষ্য করুন, সাইদীর বিরুদ্ধে যারা স্বাক্ষ্য দিচ্ছে, এ পর্যন্ত সবাই যে মিথ্যা স্বাক্ষ্য দিয়েছে তা যে কেউ জেরাগুলো রিডিং পড়লেই বুঝতে পারবে।

এর জন্য আলবার্ট আইনস্টাইন হবার প্রয়োজন নাই। উপরন্তু প্রধান স্বাক্ষী থেকে শুরু করে লাইন ধরে সবগুলো চুরি সহ নানা অপকর্মের সাথে জড়িত এবং ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা। এসব থেকেই তার বিরুদ্ধে করা অভিযোগের মেরিট বোঝা যায়। সাইদী নিজে বলেছে, এটা শতাব্দীর শ্রেষ্ঠ মিথ্যাচার। প্রকৃতপতপক্ষে সাইদী যুদ্ধের সময় জামাত করত না এবং কোন রাজনীতির সাথে জড়িতই ছিলনা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আসিফ নজরুলের মতো লোক বলেই ফেল্ল: সাইদী যুদ্ধাপরাধের সাথে জড়িত না। বোঝাই যাচ্ছে সরকার এসব করছে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা বশত। সাহস থাকলে যুক্তি দিয়ে আমাকে মোকাবেলা করুন। গালাগালি করে অথবা ডিলিট/ব্যান করার মাধ্যমে যুক্তি দ্বারা প্রকাশিত মত প্রকাশের স্বাধীনতা হরন করে নয়। আশা করি বাংলা ব্লগ দিবসে "মত প্রকাশের স্বাধীনতার" পক্ষে নিজের দেয়া শ্লোগান সামু নিজে রক্ষা করবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.