আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটা মেয়েকে কি ধর্ষন করতে দেড় ঘন্টা লাগে আহাম্মকের দল?

ব-দ্বীপ মানে বদ্‌ দের দ্বীপ না কিন্তু। দয়া করে কেউ ভুল বুঝবেন না। যদিও বাংলাদেশের অবস্থা দেখে ভুল বোঝা স্বাভাবিক। ঘটনা ১: কলেজে সবে ভর্তি হয়েছি। দুপুরে বাসায় ফেরার পথে একলোক ডাক দিল ভাইয়া এদিকে একটু এস, কয়টা বাজে।

সরল মনে তার দিকে এগিয়ে টাইম বলেই বুঝতে পারলাম ছিন্তাইকারির কবলে পরেছি। কোন অস্ত্র দেখানো নয় শুধু মুখের হুমকিতেই টাকা, হাতের ঘড়ি সব দিয়ে বাসার দিকে ভো দৌড়। সেই দিনের আতঙ্ক কাটতে আমার অনেক দিন লেগেছিল। ঘটনা ২: বাসায় হঠাৎ করে জোরে জোরে নক ও অনেকগুলো কলিংবেল। দরজা খুলতে প্রায় ঝাপিয়ে বাসায় ঢুকে পরলেন আমার ছোট চাচী।

চাচাকেও দেখলাম ফ্যাকাশে মুখে বিধ্বস্ত অবস্থায়। এবারো ছিন্তাইয়ের ঘটনা। চাচা চাচিকে ছুরির ভয় দেখিয়ে সব লুট করা হয়েছে। কোন ধরনের ফিজিক্যাল আক্রমন বা ভয়ঙ্কর কোন কিছুর সম্মুখিন হতে হয়নি। তারপরো সেইদিনের পর থেকে আজো চাচীর ছিন্তাইকারির আতঙ্ক কাটেনি।

৪ জানুয়ারি রাতের ঘটনাঃ প্রায় সমস্ত পত্রিকা ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার খবর থেকে জানা যায়, ছাত্রলীগের ৬৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে অংশ নিতে এসে জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি জুয়েল হাসান ও সাধারণ সম্পাদক নাজমূল হুদা পলাশের ধর্ষণের শিকার হয়েছেন খুলনার এক নৃত্যশিল্পী। পুলিশ জানায়, রাত ১২টার সময় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর অনুষ্ঠান শেষে ওই নৃত্যুশিল্পী ও সঙ্গে থাকা তার স্বামীকে শহরের আব্দুর রাজ্জাক পার্কের অনুষ্ঠান থেকে টাকা দেওয়ার কথা বলে নিয়ে যান ওই ছাত্রলীগ নেতা। পথে স্বামীর কাছ থেকে নৃত্যশিল্পীকে ছিনিয়ে নিয়ে ছাত্রলীগ নেতা পলাশ ও জুয়েল হাসান তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। ধর্ষণের শিকার ওই শিল্পীকে বুধবার রাত দেড়টার সময় নাজমূল হুদা পলাশের শহরের মধ্য কাটিয়ার বাসা থেকে প্রায় বিবস্ত্র ও বিধ্বস্ত অবস্থায় উদ্ধার করে পুলিশ। (বাংলা নিউজ ২৪) ঘটনার বাস্তব দিক একবার চিন্তা করুনঃ প্রথমে একজন পুরুষ হিসেবে চিন্তা করুন।

আপনার সামনে আপনার স্ত্রীকে অপহরন করা হল। সে চিৎকার করছে, আপনিও চেস্টা করছেন তাকে বাচাতে, নিজের চোখে শুধু অসহায় হয়ে সব দেখলেন কিন্তু কিছুই করতে পারলেন না। অথচ আপনি বুঝতে পারছেন আপনার প্রান প্রিয় স্ত্রীকে অপহরনের মুল কারন। কেমন লাগবে আপনার? অপহরনের পর আপনি ছুটে বেড়াচ্ছেন কি করবেন এই আশায়। আপনি কি জানেন এখন কি করা লাগবে? কোথায় যাবেন কার কাছে যাবেন? থানা? সেওতো আপনাকে খুজে বের করতে হবে, কতটুকু সত্যিকারের সাহয্য পাবেন তাও অজানা।

কিন্তু এর মধ্যেইতো যা হওয়ার তা হয়ে যাবে। কেমন লাগছে আপনার এখন? একা, বিধ্বস্ত অসহায় আপনি কি করবেন এখন? টহল পুলিশকে খবর দিলেন, তারা শুনলো, বুঝলো আক্রমন কারিরা ক্ষমতাধর। তাই তারা নিজেরা না যেয়ে ওসিকে খবর দিল। এরি মধ্যে কেটে যাচ্ছে সময়। আর নিভে যাচ্ছে আপনার আশা।

আপনি হয়তো ধারনা করতে পারছেন কি ধরনের অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে সময়গুলো কাটছে আপনার স্ত্রীর। হয়তো যদি পারতেন আপনার সমস্ত কিছুর বিনিময়ে এই কস্ট থেকে আপনি আপনার স্ত্রীকে রক্ষা করতেন। কিন্তু আপনি এখন অসহায়। কেমন লাগছে এখন? এবার নারী হিসেবে চিন্তা করার পালাঃ আজীবন আপামর বাঙালি নারি হিসেবে রক্ষা করে এসেছেন নিজের সতিত্ত্ব। কখনো কোন পুরুষকে নিজের দিকে কুদৃস্টিতেও তাকাতে দেননি, আন মেরাইটাল সেক্সকে সারাজীবন ভয়ঙ্কর হিসেবে জেনে এসেছেন, বিয়ের পর নিজের প্রান প্রিয় স্বামিকে নিজের সেই সৌন্দর্য যখন উদারহাতে দিয়েছেন তখন হয়তো প্রতিজ্ঞা করেছেন এই সোন্দর্য শুধু এই মানুষটার জন্যই।

সেই আপনাকেই আজকে টেনে হিচড়ে নিয়ে যাচ্চে কতিপয় হিংস্র, মদ্যপ লোলুপ বদমাস। আপনার স্বামীকে তারা তাড়িয়ে দিল। অসহায় আপনাকে নিয়ে বাড়ির দরজা বন্ধ করে বুঝিয়ে দিল আপনি কতটা অসহায়। এরপর শুরু হল আপনাকে নিয়ে ইদুর বিড়াল খেলা, তাড়িয়ে উপভোগ করা আপনার অসহায়ত্ব। এরই মধ্যে ডেকে আনা হল আরো কিছু হায়েনাকে।

তারা ঝাপিয়ে পরল একসাথে। চারিদিক থেকে শুরু হল তাদের নোংরা আক্রমন। আপনার এমন যায়গায় তারা চলে গেল, এমন অবস্থায় আপনাকে তারা নিয়ে গেল যা কখনো হয়তো আপনার স্বামিকে দিতেও লজ্জিত হতেন। এমন রসালো মজা তারা আপনাকে নিয়ে করতে লাগল পারলে হয়তো আপনি মাটির নিচে চলে যেতেন। কিন্তু এতেই শেষ নয়।

একসময় বুঝতে পারলেন লজ্জা শরম সতিত্ত্ব সব কিছুর চাইতেও এখন মুল হয়ে দাড়িয়েছে ভয়ানক পৈশাচিক শারিরিক নির্যাতন। কি করে সইবে আপনার শরির এতগুলো পশুর আক্রমন। এরই মধ্যে পার হয়ে গেল দেড়টি ঘন্টা। আপনার কাছে সহস্র বছর। বিধ্বস্ত অবস্থায় পুলিশ আপনাকে উদ্ধের করলো।

কিন্তু তাতে কি? আপনার সব কিছুকি স্বাভাবিক হয়ে গেল? প্রথম আলো পড়ে জানতে পারলাম কলেজছাত্রী এক নৃত্যশিল্পীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণ চেষ্টা মামলায় সাতক্ষীরা জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হুদা ওরফে পলাশকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। (প্রথম আলো ) অর্থাৎ একদিনের মধ্যেই ধর্ষন হয়ে গেল ধর্ষন চেস্টা। একথা কিভাবে বিশ্বাস করি কিছু মদ্যপ লোলুপ বদমাশ হায়েনা দেড় ঘন্টা একটি মেয়েকে আটকে রেখে শুধু চেস্টা করেই ক্ষান্ত ছিল? নিশ্চই না। পুলিশ স্বীকার করেছে তারা ধর্ষিতাকে বিবস্ত্র ও বিদ্ধস্ত অবস্থায় উদ্ধার করেছে। এদিকে আসামিদের প্রথম দিন গ্রেপ্তারের পরেই ছেরে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।

এতেই বোঝা যাচ্ছে ডাল মে কুচ কালা হ্যায়। দৈনিক যুগান্তরের অনুযায়ী কিছুটা আচ করা যায়। তারা বলছে লোকলজ্জা ও মানহানির ভয়ে (যদিও বিশ্বাস করি প্রভাবশালিদের হুমকিতে) ধর্ষনচেস্টার মামলা করা হয়েছে। একই সাথে মামলাটিও নানা টালবাহানার পরে ধর্ষনচেস্টা হিসেবে রেকর্ড করা হয়। ওই রিপোর্ট লেখার সময় অপরাধিরা থানার কাছেই এক প্রভাবশালির আশ্রয়ে ছিল।

(যুগান্তর ) আমি মনে করি বাকি টুকু আমাদের নিজস্ব অভিজ্ঞতা দিয়ে সহজেই আচ করা যায়। কিন্তু এ ঘটনার পর অনেকেই ছাত্রলীগকে দুষছে। কিন্তু আসলেই কি তাই? এর পেছনে কি ছাত্রলীগের কোন এজেন্ডা বা আদর্শ কাজ করেছিল? অবশ্যই না। তাহলে তা কি বিচ্ছিন্ন ঘটনা? এবারো উত্তর না। এটি আসলে আমাদের সমাজের টোটাল অবক্ষয়ের বাস্তব রুপ।

এখানে কাজ করছে সবার অবৈধ অন্যায় কাজের প্রতি নিশ্চুপ সমর্থনের প্রভাব। এমন একটি ঘটনাতো আপনার আমার জীবনেও ঘটতে পারতো? কিন্তু আমরা কি করছি? যে পুলিশ এই ঘটনা ভিন্ন ভাবে প্রবাহিত করার চেস্টা করছে, যে প্রভাবশালি সারাদিন ধর্ষকদের আশ্রয় দিয়েছে, যে মানুষটি ঘটনাটি ধর্ষন জেনেও চুপ থাকছে তারা সবাই কি ধর্ষক না? তার পরিবার আত্নিয়স্বজন যারা এই ঘটনাকে পুর্ব পরিকল্পিত শত্রুতা বলছে তারা আসলে কি? এই আমরাই যারা এই নিয়ে একদমই কথা বলব না ( নিজ দলের কারো অপকর্ম বলে) , অথবা কয়েকদিন আফসোস করে আবার ভুলে যাবো আমরাও কি ধর্ষক নই? এই আমাদের কারনেই একদিনের ব্যাবধানে ধর্ষন মামলা হয়ে যায় ধর্ষন চেস্টার মামলা। ধর্ষনের মামলা না করে ধর্ষন চেস্টার মামলা কিভাবে একজন ধর্ষিতার মান বাচায় তা আমি জানি না তবে এটুকু বুঝি আর কয়েকদিন পর জানতে পারবো এই ঘটনা নিছক ভুল বোঝাবুঝি ছিল। তখন আমাদের ধর্ষনের ষোল কলা পুর্ন হবে। এখন মেয়েটির কি হবে?বাকি জীবনটি তারর কেমন কাটবে?তার জীবনের সমস্ত হাসি আনন্দ আলো এক নিমিষে নিভে গেল, এই যন্ত্রনা তাকে সারাজীবন বহন করতে হবে।

হয়তো সে সাহসী হয়ে সব ভুলে যাবে, আবার শুরু করবে নতুন জীবন। বাস্তবে তা কতটুকু সম্ভব। আমরা যারা এই পোস্ট পড়ছি তারা কি বুঝতে পারছি আজ এই সময়ে মেয়েটির সত্যিকারের মানষিক অবস্থা কেমন? না বুঝতে পারছি না, আর বুঝতে পারছিনা, পারিনা বলে আমরাই আসল ধর্ষক। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.