আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মিডিয়া ও সাম্প্রতিক বিশ্ব

সত্য বিচরণ আধুনিক বিশ্বে মিডিয়া সংবাদপত্র, ইন্টারনেট, রেডিও, টেলিভিশন ইত্যাদির সমন্বিত রুপকে বুঝায়। পঞ্চাশের দশক থেকে যেসব দেশে ব্যাপক শিল্পায়ন ঘটেছে সেসব দেশে রাজনৈতিক ক্ষমতা মিডিয়া দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছে। বর্তমান বিশ্বে সাধারণ মানুষের চিন্তাভাবনা অস্বচ্ছ ধ্যান-ধারণার উপর ভিত্তি করে গড়ে উ্টছে এই মিডিয়ার অপব্যবহারের কারণে। আমরা যা চিন্তায় লালন করি তার সাথে বাস্তবতার বিশাল ফারাক বিদ্যমান। যদিও বলা হয়ে থাকে একবিংশ শতাব্দীতে তথ্যের অবাধ প্রবাহ বিদ্যমান, বিকৃত তথ্যের সমাগমও কম নয়।

একটি প্রবাদ আছে একটি মিথ্যা দশবার বললে সেটি সত্যে পরিণত হয়। বর্তমান সময়ে এটির সফল প্রয়োগ মিডিয়া জগতে দেখতে পাওয়া যায়। সভ্যতার মূল চালিকাশক্তি হয়ে উঠেছে নৈতিকতা বিবর্জিত মিডিয়াজগত। সমাজ় ও জাতির সমষ্টিক চিন্তা-চেতনার উৎস হাতেগোনা কয়েকটি সংবাদপত্র এবং স্যাটেলাইট চ্যানেল। কেবল জাতীয় পর্যায়েয় নয় আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রেও আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক অনুশীলন বিবিসি, সিএনএন, রয়্টার্স, এপি, এএফপি ইত্যাদি মিডিয়া জায়ান্টদের শিকলে বন্দী।

বিশ্বের কোটি কোটি মানুষের চিন্তাজগতের উপর মুষ্টিমেয় কয়েকটি মিডিয়াকে একছত্র অধিকার দিয়ে আমারা কি নির্ভার থাকতে পারি? মুক্তচিন্তার বিকাশ তখনি সম্ভব যখন চিন্তার স্বাধীনতা নিশ্চিত হবে। তরুণ সমাজ যদিও মুক্তচিন্তার ধারক হিসেবে পরিচিত কিন্তু আদৌ কি তার ভিত্তি স্বাধীন? সমষ্টিক ক্ষেত্রে চিন্তার কৃত্রিমতা জাতিকে যেভাবে পিছিয়ে নিবে পারিবারিক বা সমাজ় জীবনেও যদি এমনটি ঘটে তবে তার বিরুপ প্রতিক্রিয়া থেকে জাতি মুক্তি পাবে না। হলিউডের আকর্ষণীয় মুভি তরুণ সমাজে যৌনতার যে বীজ রোপণ করছে কিংবা সুপারম্যান বা ব্যাটম্যান ইত্যাদি কার্টুন শিশুদের কোমল মনকে সহিংস করে তুলছে তা নিয়ে কম গবেষণা হয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে আমরা কেন এ বৃত্ত থেকে বেরিয়ে আস্তে পারছি না? এটা কি কেবল জাতি হিসেবে আমাদের আত্মমর্যাদার অভাব নাকি চিন্তার দীনতা? বিগত দশকগুলোতে আমরা কেবল বর্জ়নের নীতিই গ্রহণ করে এসেছি এবং এখনো তা করছি। নেতৃত্বস্থানীয় পর্যায়ে কিংবা রাজনৈতিক শ্লোগান হিসেবে বর্জন নীতি খুবই জনপ্রিয় এবং কার্যকর।

কিন্তু আপামর জনসাধারণকে কেবল শ্লোগানের বুলি দিয়ে দীর্ঘমেয়াদে সন্তুষ্ট রাখা যায় না। বাস্তব সত্য হচ্ছে আমরা চিন্তার স্বাধীন বিকাশের জন্য কোন বিকল্প উপস্থাপন করতে পারিনি। সাহিত্য ও প্রবন্ধের প্রতি সাধারণ মানুষের আকর্ষণ সৃষ্টি করতে পারিনি। একুশে বইমেলায় মানুষের ঢল দেখা গেলেও তা কেবল সস্তা সাহিত্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণের প্রতীক। বাস্তব সত্য হচ্ছে এদেশে সমসাময়িক বিষয়াদির উপর রচিত প্রবন্ধ সংখ্যা ও মানের দিক থেকে যথেষ্ট নয়।

আবার অনেক ক্ষেত্রে সাহিত্য জগতেও মিডিয়া কতৃক প্রচারিত মুখ জনমনকে প্রভাবিত করছে। জাতিকে বইবিমুখ করে অডিও-ভিজুয়াল জগতের মোহবন্ধনে আবদ্ধ করাটা পরিণামে কতটুকু মঙ্গলজনক হবে তা ভেবে দেখার বিষয়। তথ্যের অবাধ প্রবাহের ক্ষেত্রেও বিকল্প কোন ব্যবস্থা আমরা দাঁড় করাতে পারিনি। গণতান্ত্রিক পরি্বেশে সরকারই শেষ কথা নয় কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে অবাধ তথ্য প্রবাহ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে তথ্য বিভ্রাট রোধ করে জনকল্যাণ নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।

আধুনিক সময়ে রাষ্ট্র ও মিডিয়া জগতের দ্বন্দ্বও একটি আলোচিত বিষয়। আবার রাষ্ট্রযন্ত্রের মিডিয়া জগতে হস্তক্ষেপও কাম্য নয়। তবে পরিকল্পিতভাবে তথ্যের বিকৃতি ঘটিয়ে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা রোধ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। বুদ্ধি্বৃত্তিক অনুশীলনের ভিত্তি যদি প্রকৃত তথ্যের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সেক্ষেত্রে চিন্তার স্বাধীনতার প্রতিফলন আমরা সমাজের সর্বস্তরে লক্ষ্য করব। পরাধীনতা আধুনিক বিশ্বে ভিন্ন রাষ্ট্রের ক্ষমতা দখলের মধ্যে আর সীমাবদ্ধ নেই।

এখন পরাধীনতা আমাদের মননে, চিন্তায়, অর্থনৈতিক সক্ষমতায়, প্রযুক্তিগত উৎকর্ষতায় ইত্যাদি বিভিন্ন উপাদানে ছড়িয়ে আছে। মিডিয়া এখন পরাধীনতা বিস্তারের একটি আধুনিক ও সফল মাধ্যম। তবে এর শৃঙ্খলিত রুপকে যদি মুক্তি দেওয়া যায় তবে তা সভ্যতা বিকাশের উৎকৃষ্ট মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত হবে। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.