আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একজন মেয়ে আর একজন ছেলে। অন্ধ হয়েও যারা ইতিহাসের পাতায় অমর হয়ে আছেন।

বিজ্ঞানের ক্লাসকে ধর্মের ক্লাস বানাবেন না। বিজ্ঞানের ক্লাসে কোন নিউটনের বাণীর প্রতি অন্ধ বিশ্বাস ও ভক্তি নিয়ে বসবেন না। প্রতি ক্ষেত্রে সন্দেহ করুন, প্রশ্ন করুন অবিরত। বিজ্ঞান কারো বাণী দিয়ে চলেনা। বিজ্ঞান চলে যুক্তি ও প্রমাণের উপর।

প্রতি লাইনে লাইনে প্রমাণ চ سم الله الرحمن الرحيم সকল প্রশংসা আল্লাহর। অসংখ্য দরুদ নাযিল হোক তাঁর নবীর উপর বারবার। অন্ধ হয়েও দৃঢ় মনোবলের অনেকে আপন কীর্তিতে ভাস্বর হয়ে আছেন পৃথিবীর ইতিহাসে। অন্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে সবচেয়ে সফল ছিলেন ইংরেজ কবি জন মিল্টন, গ্রীক কবি হোমার, ফার্সী কবি রুদাকী এবং লেখিকা হেলেন কেলার । এরা ছাড়াও আরবী সাহিত্যের খ্যাতনামা কবি বাশ্‌শার বিন বোরদ,সিরিয়ার আবুল আলা আল-মা'আররী এবং মিশরের বিশিষ্ট লেখক তাহা হোসাইনের নাম উল্লেখ্যযোগ্য।

তারা কাব্য-সাহিত্যে এমন অবদান রেখেছেন যে, যতদিন পৃথিবী থাকবে ততদিন তাদের নাম বিশ্ব ইতিহাসে লিপিবদ্ধ থাকবে। তারা যেন অন্ধ হয়েও অন্ধ নন। এদের মাঝে তিন জনের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নীচে তুলে ধরছি। (১) হেলেন কেলার বা হেলেন অ্যাডামস কেলার অন্ধ ব্যক্তিদের মধ্যে একটি পরিচিত ও সফল নাম হচ্ছে হেলেন কেলার। একজন অন্ধ, বোবা আর বধির মেয়ে কেবল সাধনা বলে মাত্র চব্বিশ বছর বয়সে সর্বোচ্চ মার্ক নিয়ে বি,এ পাস করেন এবং পরবর্তীতে ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জন করেন।

হেলেন কেলার ১৮৮০ সালের ২৭ জুন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আলাবামায় জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আর্থার কেলার এবং মায়ের নাম কেইট আডামস। আর দশটা স্বাভাবিক শিশুর মতই হেলেন কিলারের জন্ম হয়েছিলো। বয়স যখন মাত্র ১৯ মাস তখন তিনি গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাবা-মা প্রাণের প্রিয় কন্যার জীবনের আশা-ভরসা ছেড়ে দিলেও ভেঙে পড়েননি; চিকিৎসা করা শুরু করেন।

বহু চিকিৎসার পর হেলেনের জীবন রক্ষা পায়। কিন্তু তার কথা বলা, শোনা এবং দেখার শক্তি চিরদিনের জন্য হারিয়ে যায়। ছয় বছর বয়সে হেলেন কেলার টেলিফোন আবিষ্কারক আলেকজান্ডার গ্রাহামবেলের সহায়তায় বধিরদের জন্য বিশেষ একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পান। এখানেই শিক্ষক অ্যান সুলিভানের সহযোগিতায় তার পাঠ গ্রহণের কঠিন অধ্যবসায়ের সূচনা হয়। সূচনা হয় দীর্ঘ ৪৯ বছরের সম্পর্কের।

এনি নিজেও একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি ছিলেন। এনি প্রথমে আঙুল দিয়ে হেলেনের হাতে বিভিন্ন চিহ্ন এঁকে এবং এরপর বর্ণমালা কার্ড দিয়ে বর্ণমালা শেখান। তারপর ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেন। ১০ বছর বয়সে নরওয়েতে উদ্ভাবিত এক পদ্ধতি অনুসরণ করে কথা বলা শেখেন হেলেন। ১৯০০ সালে রেডক্লিফ কলেজে ভর্তি হন যেখানে বিশ্ববিখ্যাত লেখক মার্ক টোয়েনের সঙ্গে তার পরিচয় ঘটে।

১৯০৪ সালে হেলেন প্রথম দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ডিগ্রি অর্জনের আগেই তার আত্মজীবনী দ্যা স্টোরি অব মাই লাইফ প্রকাশিত হয়। এছাড়া দ্যা ওয়ার্ল্ড আই লিভ ইন, আউট অব ডার্ক, মাই রিলিজিয়ন তার বিখ্যাত বই গুলোর অন্যতম। তার রচিত মোট বইয়ের সংখ্যা ১১ । ১৯৬৮ খ্রিষ্টাব্দের এই দিনে অন্ধ ও বধির এবং বিশ্বখ্যাত লেখিকা হেলেন কেলার ৮৭ বছর বয়সে পরলোকগমন করেন।

(২) রুদাকিঃ রুদাকিকে ফার্সি কবিতার জনক বলে অভিহিত করা হয়। তাঁর পুরো নাম আবু আব্দুল্লা জাফর বিন মুহাম্মাদ রুদাকি। জন্মান্ধ এই মহাকবি নবম শতাব্দীর শেষের দিকে সমরখন্দের রুদাক জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। আরবী সন হিসাবে হিজরী ১৫০ সালে। ইরানের পূর্বাঞ্চলে ইসলামী সংস্কৃতি তখন বিজয়ী সংস্কৃতি এবং স্বাভাবিকভাবেই ধর্ম, রাজনীতি বা প্রশাসন ও জ্ঞানের জগতে তখন আরবী বিশেষ মর্যাদায় আসীন ।

পবিত্র কোরআনের পঠন, মুখস্তকরণ ও চর্চা ছিল শিক্ষার প্রাথমিক ভিত্তি। লুবাবুল আলবাব গ্রন্থে অওফী লিখেছেন, প্রখর মেধাসম্পন্ন ও বুদ্ধিমান রুদাকী মাত্র ৮ বছর বয়সেই পবিত্র কোরআনের হাফেজ ও ক্বারীতে পরিণত হন। তাইতো পবিত্র কোরআনের সাথে গভীর ভালবাসা, জানা-শোনা, একাত্মতা ও আত্মিক বা হৃদ্যিক সম্পর্কের ফুলেল সুরভিগুলো ফুটে উঠেছে তার কবিতার বহু ছত্রে। রুদাকির চিন্তা ও ভাষায় পবিত্র কোরআন ও হাদীস ছাড়াও আরবী বাকধারা বা উপমার প্রভাবও লক্ষ্যনীয় । মহাকবি রুদাকী তার কবিতায় পবিত্র কোরআনের আয়াতসমূহ তুলে ধরতেন পরোক্ষ উপমার মাধ্যমে।

পরোক্ষাভাবে কোনো ঐতিহাসিক ঘটনা, বীরত্ব-গাঁথা, রূপকথা বা পবিত্র কোরআনের ঘটনাকে সংক্ষেপে তুলে ধরার শিল্পরীতি ফার্সীতে "তালমিহ" নামে পরিচিত। এ পদ্ধতিতে খুব সংক্ষেপে ও দ্রুত বিষয়বস্তু সম্পর্কে পাঠকের কাছে তথ্য তুলে ধরা হয়। যেমন, রুদাকি তার কবিতায় হযরত মূসা (আঃ)'র অলৌকিক ক্ষমতার একটি উপমা দিতে গিয়ে লিখেছেনঃ "ওয়ার বে বলুর আন্দুরান বিনি গুয়ি গওহরে সোরখ আস্ত বে কফে মূসায়ে ইমরান" অর্থঃ ভেতরে যদি দাও দৃষ্টি বেলোয়ারি পানপাত্রের রক্তরাগমনি যেন তালুতে ইমরান-তনয়ের এখানে কবি রুদাকি ইমরান তনয় হযরত মূসা (আঃ)'র হাত শ্বেত শুভ্র করার অলৌকিক ক্ষমতার দিকে ইঙ্গিত করেছেন। বগলে হাত রেখে তিনি ঐ হাতকে উজ্জ্বল শ্বেত শুভ্র করতে পারতেন এবং পরে ঐ হাতের রং আবার স্বাভাবিক হয়ে যেত বলে পবিত্র কোরআনে বর্ণনা রয়েছে। জীবন ও মৃত্যু সম্পর্কে রুদাকির দৃষ্টিভঙ্গী ছিল একজন মুমিন মুসলমানের বিশ্বাসের অনুরূপ।

মৃত্যু ও পুনরুত্থান বা বিচার দিবস যে অনিবার্য তা মনে বন্ধমূল রেখে পৃথিবীর প্রতি অন্ধ মোহকে তিনি বুদ্ধিমানের কাজ বলে মনে করতেন না। একজন বিচক্ষণ বা দূরদর্শী মানুষ হিসেবে রুদাকী সব সময়ই পৃথিবীকে ক্ষণিকের আবাসস্থল বলে মনে করতেন। আর এ জন্যই তিনি লিখেছেন, ""মেহতারানে জাহান হামে মোরদান্দ/ মার্গ রো সারে হামে ফুরু কারদান্দ জীরে খক আন্দারুন শোদান্দ অনান/ কে হামে কুশাকহা বর আওয়ারদান্দ জে হেজারান হেজার নে'মাতো নজ/ না বে অখের বে জুয কাফান বোরদান্দ"" বিশ্ব প্রভুরা সব গেছে পরপারে মৃত্যুর আভরণ নেমেছে দেহপরে ছিল কত সুরম্য প্রাসাদ ওদের! আজ তারা বাসিন্দা ভূগর্ভের । শত-সহস্র সম্পদ মাঝে শুধু কাফনই গেছে সাথে। রুদাকি অন্যত্র লিখেছেন, "চেনানকে খক সেরেশ্তি বে জিরে খক শাওয়ি নাবাতে খক ও তু আনদার মিয়ান খক আগিন " মৃন্ময় স্বভাব মাটির মানুষ যাবে মাটির নীচে উদ্ভিদের মত উত্থান তোমার মাটি হতে ভেতর বা স্বভাবটাও আপ্লুত তব মৃত্তিকায় রুদাকির এ বয়েতটি সূরা নূহের ১৭ ও ১৮ নম্বর আয়াত স্মরণ করিয়ে দেয়।

এ দুই আয়াতে বলা হয়েছে, তিনিই আল্লাহ যিনি তোমাদের মাটি হতে সৃষ্টি করেছেন, এরপর তিনি তোমাদের মাটিতে ফিরিয়ে নেবেন এবং পুনরায় তোমাদের মাটি হতে উত্থিত করবেন। এরই আলোকে মহাকবি রুদাকি মনে করতেন প্রত্যেক জ্ঞানী বা বুদ্ধিমান ব্যক্তির উচিত এ পৃথিবীর জীবন-সাগরের উত্তাল তরঙ্গমালা অতিক্রম করার জন্য সৎকর্মের তরণী বা কিশতির আশ্রয় নেয়া। পবিত্র কোরআনের আলোয় রুদাকি স্পষ্টভাবেই দেখেছেন মানুষের জীবনের একমাত্র যে ধনটি অম্লান ও অক্ষয় থেকে যাবে এবং বিচার-দিবসে বিজয় ও গৌরবের পাথেয় হবে তা হল, সৎকর্ম। এ জন্যই তিনি লিখেছেন, ইন জাহান রো নেগার বে চশমে খেরাদ/ নি বেদান চশমে কন্দরু নেগরি হামচুন দারিয়াস্ত ও জেনিকুকরি/ কেশতিসজ, ত বেদান গুজারি ধরার পানে দৃষ্টি ছেড়ে মেধাহীনের, আঁকড়ে ধর দৃষ্টি জ্ঞানের এ জীবন-সাগরে নেই কোনো গতি, যদি না থাকে পুণ্যের তরী। রুদাকী কেবল কবি ছিলেন না।

তিনি একজন ভালমানের গায়কও ছিলেন। নিজের গজল এমন সুন্দর করে গাইতেন যে, সবাই সে গজল শুনে তন্ময় হয়ে যেতেন। তাঁর গজলগুলো কেবল মিষ্টি সুরের স্বাদেই ভরপুর নয়, এক একটি গজল যেন মূল্যবান মুক্তাখণ্ডের মতোই দামী। রুদাকীকে ফার্সী সাহিত্যের জনক বলা হলেও তিনি আরবী ভাষায়ও পণ্ডিত ছিলেন। তিনিই প্রথম বিখ্যাত শিশুতোষ গল্পগ্রন্থ ‘কালিমা ওয়া দিমনা’ আরবী সাহিত্যের অমর গ্রন্থ ‘আলিফ লায়লা’ ফার্সীতে অনুবাদ করেন।

অনেকের মনে প্রশ্ন আসতে পারে একজন অন্ধ কবির পক্ষে এতো কিছু করা কিভাবে সম্ভব হলো ? এ প্রশ্নটি রুদাকীকেও করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি বলেছিলেন, ‘জীবনযুদ্ধে জয়লাভের জন্য যে সব হাতিয়ারের প্রয়োজন , অন্ধত্ব হচ্ছে সে সবের একটি। অন্য সব হাতিয়ার ধারালো থাকলে একটির অভাব আসলে কোনো অভাব নয়। ’ একথার মাধ্যমে রুদাকী বলতে চেয়েছেন অন্ধত্ব আসলে সাফল্যলাভের ক্ষেত্রে কোন বাধা নয়। তাই তো তিনি প্রমাণ করে গেছেন, অন্ধরাও অসাধ্য সাধন করতে ও জীবন-যুদ্ধে জয়ী হতে পারে।

কিছু অতীব জরুরী পোষ্টঃ ইসলামের নবী (সল্লাল্লহু আলাইহিওয়আ সাল্লাম) এর বিরুদ্ধে নাস্তিকদের উত্থাপিত প্রায় সকল প্রশ্নের দাঁতভাঙ্গা জবাব । হুমায়ূন আহমেদের ২য় বিবাহ - পর্ব ৩ আর বিজ্ঞান দিয়ে যারা ইসলামকে মোকাবেলা করতে চায় তাদের জবাব দিতে নীচের পোষ্টগুলো পড়ুন। যারা বিজ্ঞান দিয়ে কোরআনের ভুল ধরেন তারা সবাই একটু দেখুন। সাইন্টিফিক মেথড সম্পর্কে আগে জানুন। দু'টি চুরির মামলা এবং সেই আলোকে বিবর্তনবাদ, পৃথিবীর স্থিরতা, আস্তিকতা- নাস্তিকতা এবং নাসার চাঁদে যাওয়ার প্রমাণ।

কোরআন শিক্ষার জন্য কিছু চমৎকার ভিডিও টিওটরিয়াল পাবেন এই লিংকে ক্লিক করে। এখানে ক্লিক করুন। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ৪৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.