আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জঙ্গি সন্দেহভাজন পারভেজ এখন ভারতীয় দলে

মাত্র চার বছর আগে বেঙ্গালুরুতে জঙ্গি সন্দেহে আটক হয়েছিলেন জম্মু ও কাশ্মীরের ক্রিকেটার পারভেজ রসুল। অপ্রত্যাশিত ধাক্কা আর অপবাদ সামলে অটল ছিলেন নিজের অধ্যবসায়ে। পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর পারফরম্যান্সের মিশেল তাঁকে এমন এক জায়গায় নিয়ে এসেছে, যেখানে তিনি আজ কাশ্মীরবাসীর গর্ব। কাশ্মীরের ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ রক্তাক্ত প্রান্তর থেকে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে পারভেজ সুযোগ করে নিয়েছেন ভারতীয় দলে। শুক্রবার জিম্বাবুয়ে সফরের জন্য ঘোষিত ভারতীয় দলে ঠাঁই হয়েছে এই অলরাউন্ডারের।

যুদ্ধবিগ্রহ যে অঞ্চলের নিত্যসঙ্গী, ক্রিকেটীয় সুযোগ-সুবিধা যেখানে অপ্রতুল, সেখান থেকে একজন ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছানো কেবল চমকপ্রদই নয়, যেকোনো বিচারেই ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক ঘটনা।
পারভেজ রসুলের এই উত্থানটা অনুমিতই ছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে বিসিসিআই সভাপতি একাদশের হয়ে পারভেজ দারুণ খেলেছিলেন সফরকারী অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তাঁর অফস্পিনে ভূপাতিত হয়েছিলেন সাত-সাতজন অস্ট্রেলীয় ব্যাটসম্যান। ঘরোয়া ক্রিকেটেও ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে তিনি মনোযোগ কেড়েছিলেন সবার।

ব্যাট হাতে ৫৯৪ রান ও হাত ঘুরিয়ে ৩৩টি উইকেট নিয়ে তিনি যেন কড়া নাড়ছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট দলে। শুক্রবার কড়া নাড়া অবস্থাতেই দেশকে প্রতিনিধিত্ব করার দুয়ারটি খুলে গেল পারভেজ রসুলের সামনে।
পারভেজ রসুল অবশ্য আহামরি বিস্মিত নন নিজের উত্থানে। ভালো পারফরম্যান্স তিনি করে আসছিলেন ধারাবাহিকভাবে। মনের গহিনে প্রত্যাশা পুষে রেখেছিলেন জাতীয় দলে ডাক পাওয়ার।

স্বপ্নপূরণের মতো ব্যাপার হলেও পরিশ্রম, নিষ্ঠা আর পারফরম্যান্সই যে এর মূল অনুষঙ্গ সেটা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন তিনি, ‘আমি ধারাবাহিকভাবেই পারফর্ম করে আসছিলাম। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষেও একটি ট্যুর ম্যাচে ভালো করেছি। ডাক পাওয়ার ব্যাপারটি প্রত্যাশিতই ছিল। তবে পরিশ্রম আর নিষ্ঠাই আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে, এটা বলতে আমার কোনো দ্বিধা নেই। ’
জম্মু ও কাশ্মীরের ক্রিকেটকে খুব কাছ থেকে দেখার অভিজ্ঞতা আছে সাবেক ভারতীয় স্পিনার বিষেণ সিং বেদীর।

সেই অভিজ্ঞতা থেকেই পারভেজ রসুলের উত্থান বিস্মিত করে তাঁকে, ‘যে অঞ্চলে আঞ্চলিক ক্রিকেটের কোনো অবকাঠামো নেই, যেখানে কোনো টুর্নামেন্ট হয় না, সেখান থেকে একেবারে নিজের চেষ্টায় উঠে এসেছে পারভেজ রসুল। ব্যাপারটা বিস্ময়করই বটে। ’
মূলত বাবার উৎসাহেই পারভেজ রসুলের ক্রিকেটে আসা। বাবা গোলাম রসুল জারগার ক্রিকেটকে দারুণ ভালোবাসতেন। ভাই আসিফ অবশ্য টি-টোয়েন্টি সার্কিটে জম্মু ও কাশ্মীরকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

তবে জারগারের দ্বিতীয় সন্তান পারভেজ রসুল নিজের ক্রিকেটীয় আগ্রহকে নিয়ে গেছেন অন্য পর্যায়ে। ১৯৮৯ সালে পারভেজ যখন এই পৃথিবীর আলো দেখলেন, তখন থেকে কাশ্মীরের সময়টা নিদারুণ ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ। জঙ্গিবাদ আর উগ্রবাদ তখন মাথা চাড়া দিয়েছে গোটা অঞ্চলে। কিন্তু ছোটবেলা থেকেই একমাত্র ক্রিকেটকে আগ্রহের কেন্দ্রে নিয়ে পথচলা পারভেজ পুরস্কারটা পেয়ে গেলেন হাতে হাতেই।
প্রাথমিক লক্ষ্য তাঁর পূরণ হয়েছে।

ভারতীয় ক্রিকেট দলের জার্সি গায়ে চাপানোর সুযোগ পেয়েছেন। এখন লক্ষ্য টিকে থাকা। সেই লক্ষ্যে কত দূর কী করতে পারবেন, সেটা সময়ই বলে দেবে। তবে, পরিশ্রম যাঁর জীবনের অলংকার, নিষ্ঠা যার ব্রত, তিনি এই লক্ষ্যে যে সফলকাম হবেন, সেটা বলে দেওয়াই যায়। সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া, আনন্দবাজার পত্রিকা।

সোর্স: http://www.prothom-alo.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.