আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

গল্পটি শুধু প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য!

আমি যদি আরব হতাম মদিনারই পথ এই পথে মোর হেটেঁ যেথেন নূরনবী হজরত আমার গল্পের পটভূমি বাংলাদেশের কোন এক ছন্নহীন গ্রাম। যার অধিবাসিরা সবাই খেতে খামারে কাজ করে। কেউ সারাদিন মজুরি খাটে। অল্প দুয়েকজন ছাড়া বাকিরা সবাই অশিক্ষত। মূর্খ।

বোকা। তবে এরা সাহসী। আর তিন বেলা খেতে পারাটাই যাদের কাছে বিলাসিতা তাদের আবার ভয় কিসের। তারা সাহসী হবেই। কিন্তু এই বোকাদের গ্রামে কিছু অসাধারণ চালাক লোক ও আছে।

এরা খেত খামারে কাজ করেনা। মজুরি ও করেনা। এদের আবার ভূ-সম্পত্তি ও বেশী নেই। কিন্তু এরা রাজার হালে জীবন যাপন করে। জমিদারী না থাকলে ও এরা জমিদার।

রাজত্ব না থাকলে ও এরা রাজা। কারণ এরা ধূর্ত বুদ্ধির অধিকারী। এরা হলো গ্রামের মোড়ল। টাকার বিনিময়ে কিংবা বিভিন্ন সুযোগ সুবিদার বিনিময়ে এরা গ্রামের বোকা লোকগুলোর বিচার ফায়সালা করে দেয়। এটাই এদের পেশা।

এরা গ্রামের বোকা লোকগুলোর উকিল এবং একই সাথে বিচারক ও বটে। নিজের খেয়াল খুশিমতো অভিযোগ সাজিয়ে সাক্ষী বানাতে এরা উস্তাদ। আমাদের গল্পের গ্রামের নাম নীলকন্ঠ। গ্রামের বোকা লোকগুলো আবার কঠিন নাম পছন্দ। তাই নীলকন্ঠ।

অন্য কোন কারণ থাকলে ও থাকতে পারে। কে জানে। সেই নীলকন্ঠ গ্রামের অন্যতম প্রভাবশালী মোড়ল হলো মজিদ ব্যপারী। নামে ব্যপারী হলে ও আজ পর্যন্ত কেউ জানেনা সে কি ব্যবসা করে। মজিদ এর চরিত্র ও তেমন একটা সুবিদার না।

ঘরে দু-দুটো বউ থাকলে ও সে এসবে তৃপ্ত নয়। আরো কোথায় কোথায় সে নিয়মিত যাতায়াত করে তা সবার জানা থাকলে ও কেউ কিছু বলেনা। কার এতো সাহস এসব নিয়ে বলার। মজিদ এতো পিশাচ। কোন প্যাচে ফেলে যে গ্রাম ছাড়া করবেনা তা কে জানে।

গ্রামের পতিত জমিতে একটি অসহায় হিন্দু পরিবারকে মজিদ আশ্রয় দিয়েছে। এ পরিবারের কার ও স্হায়ী কোনো পেশা নেই। মাঝে মাঝে ফুট ফরমাস খাটে। হাটের ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে। ঐ পরিবারের এক মহিলা সুলতা রাণী।

বয়স অনুমান তিরিশের উপরে হবে। কোথায় যেন বিয়ে হয়েছিলো। স্বামী মরে যাওয়ার বাপের বাড়ী ফেরত চলে এসেছে। এরপর থেকে ঐ বাড়িতে মজিদের ঘনঘন যাতায়াত। লোকজন আড়ালে হাসাহাসি করলে ও প্রকাশ্য কেউ কিছু বলেনা।

গ্রামের একটি ছেলে জামাল কিভাবে কিভাবে যেন কিছু লেখা পড়া করেছে। ছোটবেলায় বাপের সাথে রাগ করে বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছিলো। এখন বাড়ি ফিরেছে। কিন্তু এখন সে হাটের পাশের প্রাইমারী স্কুলটাতে মাস্টারী করে। বাপের ভাংগা বাঁশ-বেতের ঘর ছিলো।

এখন টিনের দু-চালা ঘর। গ্রামের বোকা লোকগুলোকে বুঝিয়ে অনেক বাচ্চাকে সে হাটের পাশের স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে। বাকি যারা স্কুলে যায়নি তাদের সে নিয়মিত বুঝায়। তাছাড়া বিনা কারণে ঝগড়া মারামারি বন্ধের জন্য সে আপ্রাণ চেষ্ঠা করে। গ্রামে এখন একটা বিশাল পরিবর্তন কারো দৃষ্ঠি এড়ায় না।

বোকা লোকগুলো এখন আর মজিদের কাছে বিচার ফায়সালার জন্য যায়না। ফলে মজিদ ব্যপারীর আয় রোজগার এখন কমে গেছে। মজিদ প্রমাদ গুণে। চোখে অন্ধকার দেখে। মজিদ প্রকাশ্য কিছু না বললে ও ভেতরে ভেতরে তার পরিকল্পনা চলতে থাকে কিভাবে সে জামাল কে টোপে ফেলবে।

গ্রাম ছাড়া করবে। কিন্তু কিছুতেই কিছু করতে পারেনা। শেষে তার ধূর্ত বুদ্ধিতে সুলতা রাণীকে দিয়ে ভূয়া অভিযোগ তৈরি করে। মিথ্যা সাক্ষী বানায়। মজিদ ভালোমতো শিখিয়ে দেয় সুলতাকে।

অন্য সাক্ষীদের ও শিখিয়ে পড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর শালিশ বসে মজিদের বাড়িতে। মজিদের কথামতো সুলতা তার অভিযোগে বলে যে সে অসহায় হিন্দু বিধবা রমনী। ফুট ফরমায়েস খেটে কোনোমতে তার দিন কাটে। কিন্তু সেদিন শিক্ষিত ছেলে জামাল তার সর্বনাশ করেছে।

সে এর উপযোক্ত বিচার চায়। সাক্ষীরা ও একে একে বলে দেয় যে তারা ও জামালকে সুলতার বাড়িতে যেতে দেখেছে। সবার কথা শুনার পর মজিদ ব্যপারি গলা খাকারি দিয়ে রায় ঘোষনার প্রস্তুতি নেয়। কিন্তু তখন জামাল বলে তার কিছু কথা আছে। গ্রামের বোকা লোকগুলোও জামালের সাথে হৈ হৈ করে ওটে।

ফলে অনিচ্ছা সত্বে ও মজিদ ব্যপারি জামালকে তার বক্তব্য বলার সুযোগ দিয়ে দেয়। মজিদ প্রথমেই এ বিচার ব্যবস্তায় তার অনাস্থার কথা বলে দেয়। তখন মজিদ তাকে থামিয়ে দিতে চায়। কিন্তু জামাল দৃঢ়ভাবে বলে যে তার কথা শেষ করতে দিতে হবে। সমর্থনের পাল্লা জামালের দিকে ভারী দেখে মজিদ রাগে গজগজ করে।

অগত্যা জামালকে কথা শেষ করার অনুমতি দিতে হয়। এবার জামাল ঐ দিন তারিখে তার দূরের উপজোলা সদরে ট্রেনিংয়ে অবস্থানের কথা জানায়। তার প্রমাণ স্বরুপ তার কাছে কাগজপত্র থাকার কথা জানায়। তারপর বলে যে যদি সুলতা অভিযোগ করতেই চায় তবে যেনো সে হাটের পাশের ইউনিয়ন পরিষদে গিয়ে নালিশ দেয়। প্রয়োজন মনে করলে থানায় ও জানাতে পারে।

আরো কিছু কথা বলে জামাল বসে পড়ে। এবার মজিদ গলা খাকারি দিয়ে বলে যে জামালকে এ গ্রামে থাকতে হলে গ্রামের বিচার ফায়সালা মানতে হবে। তাছাড়া সুলতা এবং সাক্ষীদের হয়তো দিন তারিখে ভুল হতে পারে। তাই বলে কি অসহায় সুলতা তার বিচার পাবেনা? সে বাতাসে তার এ বায়বীয় প্রশ্নটি ছুড়ে দেয় এবং বিচার আরেকদিন প্রলম্বিত করার ঘোষনা দেয়। সুলতা রাণী এবং তার সাক্ষীদেরকে সঠিক দিন মনে রাখতে না পারার জন্য ও ভৎসনা করে।

নীলকন্ঠ গ্রামে এভাবে দিনের পর দিন মিথ্যা অভিযোগে স্কুল শিক্ষক জামালের বিচার বসে। কিন্তু ধূর্ত মজিদ ব্যপারী জামালের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমান করতে পারেনা। পরে একদিন প্রমান ছাড়াই জামালের বিরুদ্ধে রায় হয়। রায়ে জামালের গ্রাম ছাড়ার আদেশ হয়। রাগে ক্ষোভে জামাল শিক্ষকতার চাকরি ছেড়ে বুড়ো মা-বাপকে নিয়ে শহরে চলে যায়।

নীলকন্ঠ গ্রামে আবারও ধূর্ত মোড়লের রাজত্ব ফিরে আসে। ঝগড়া মারামারি লেগেই থাকে। মজিদ বিচার বসায়। রায় দেয়। আর হাটের বড় মাছটা তরকারীটা তার বাড়িতে আসে।

হাজার বছর ধরে এ চক্র চলতে থাকবে বাংলার প্রতিটি নীলকন্ঠ গ্রামে। আমার গল্পের ধূর্ত মুড়োল মজিদ ব্যপারী কে ভিন্ন ভিন্ন নামে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থানে প্রায়ই দেখা যায়। কখনো বা নিজামুল হক নাসিম নাম ধারণ করে আরো দুই সংগী নিয়ে ক্যাংগারু কোর্ট বসায়। আসামীর বিরূদ্ধে অভিযোগ মনের মতো না হওয়ায় ফেরত পাঠায়। বলে দেয় কিভাবে অভিযোগ সাজালে ফাঁসির আদেশ দেয়াটা সহজ হবে।

কেননা সে জানে যে সবার বিরুদ্ধে একই রকম ৩৬০ পৃষ্ঠার শুধু শুধু কপি পেস্ট অভিযোগ দিয়ে বিচার শুর করাটা হাস্যস্পদ। চক্ষু-লজ্জা বলতে একটা ব্যপার তো আছে। তবে সাঈদীর বিরুদ্ধে সাক্ষীদের জেরা করার সময় তাও খুইয়ে বসে ছিলেন ১৯৯২ সালে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে গঠিত গণআদালতের একজন সাক্ষী ও ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির গন-তদন্ত কমিশনের সদস্য জনাব নিজামুল হক নাসিম। যাইহোক, আন্তর্জাতিক নামীয় গৃহপালিত এই কাংগারু কোর্টের তামাশা দেখে আমি যথেষ্ঠ আমোদিত। তবে পুরো তামাশাটা টিভিতে লাইভ দেখতে পারলে চিত্ত-বিনোদনটা আরো ভালো হতো।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।