আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

কিসসা শোনার আসরঃ পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ

এবার হবেই! লোরকের পাশে এবার আপনিও >> ০১৮৩৬৫৫৫৬৪০ জামাল ও কামাল নামে এক গাঁয়ে দুই ভাই ছিল। জামাল ছিল বড় ভাই এবং কামাল ছিল ছোট ভাই। কামাল তার বড় ভাইয়ের অনেক ভক্ত ছিল এবং ভাইয়ের বিরুদ্ধে কখনো যেত না। তাদের বাবা কিছুদিন হল গত হয়েছে। মৃত্যুকালে তাদের বাবা একটি খেজুর গাছ, একটি গাই গরু ও একটি কাঁথা রেখে গিয়েছিল।

পৈতৃক সম্পত্তি ভাগ করতে হবে কিন্তু এগুলো কিভাবে ভাগ হবে তা নিয়ে সমস্যা বেধে গেল। জামাল চাইছিল সমস্ত সম্পত্তি তার করতে। কিভাবে কামালকে সম্পত্তি থেকে বঞ্ছিত করা যায় তা নিয়ে সে ফন্দি আটলো। অবশেষে সে একটি বুদ্ধি বের করলো যার ফলে কামাল সম্পত্তি পেলেও তার কোন উপকারে আসেনি। যেহেতু কামাল তার বড় ভাইকে খুব মান্যকরে এবং সে খুব সহজ সরল তাই সে কোন প্রতিবাদ করেনি।

তারা সম্পত্তি এভাবে ভাগ করেছিল- খেজুর গাছঃ গাছের উপরের অংশ জামালের এবং গাছের নিচের অংশ কামালের গাই গরুঃ গরুর সামনের অংশ কামালের এবং পিছনের অংশ জামালের কাঁথাঃ দিনেরবেলা কামালের এবং রাতের বেলা জামালের এভাবে চলতে থাকলো। কামাল প্রতিদিন তার খেজুর গাছের নিচের অংশে পানি দিত এবং নিচের আগাছা পরিষ্কার করতো আর জামাল খেজুর গাছের উপরের অংশ খেজুরের রস সংগ্রহ করত। সে কামালকে একটুও রস দিত না। কামাল প্রতিদিন গাই গরুর সামনের অংশ পরিচর্যা করত। যেহেতু গরুর সামনে মুখ থাকে সেহেতু সে ঘাস কেটে প্রতিদিন খাওয়াত।

আর গরুর পিছনে দুধের ওলান থাকে যা জামাল সংগ্রহ করে বিক্রি করত। শীতের রাতে জামাল কাথা ব্যবহার করত আর কামাল কষ্টে ঘুমাত, দিনের বেলাতো আর কাঁথার দরকার নেই। এভাবে কামাল দিন চলতে থাকলো সে বুঝতে পারলেও কোন প্রতিবাদ করতে পারেনি। একদিন মনের দুঃখে সে কাঁদতে কাঁদতে বাসা থেকে চলে গেল। পথে দেখা হল এক লোকের সাথে।

সেই লোক কামালের কাছে এসে জিজ্ঞেস করলো সে কেন কাঁদছে? কামাল তার সব ঘটনা খুলে বললো। পরে সেই লোকটি তাকে একটি বুদ্ধি দিল। সেই লোকটি বললো তুমি খেজুর গাছের নিচের অংশ কেটে ফেল, আর তোমার ভাই যখন গরুর পিছন থেকে দুধ দোহাতে আসবে তখন তুমি সামনে থেকে গরুর মাথায় বাড়ি দিতে থাকবে আর দিনেরবেলা কাথা তুমি পানিতে ভিজিয়ে রাখবে। যদি তোমার বড় ভাই জিজ্ঞেস করে কেন তুমি এইসব করছো? তখন তুমি বলবে আমার ভাগের অংশ আমার যা মনে চায় তা করবো। লোকটির বুদ্ধি কামালের পছন্দ হল।

সে বাড়ি ফিরে গেল। তার বড় ভাই যখন খেজুর গাছে উঠলো তখন সে গাছের গোড়া কেটে ফেলতে লাগলো। তার ভাই বলল, গোড়া কেটে ফেললে গাছ মরে যাবে। সে বলল- আমার ভাগের অংশ আমি যা মনে চায় তা করবো। ভাই এর মুখে এই কথা শুনে সে বললো ঠিক আছে তোমাকে খেজুরের রসের ভাগ দিব তুমি গোড়া কেটো না।

এরপর তার ভাই যখন দুধ দোহাতে আসলো সে তখন গরুর সামনের শিং ধরে নাচাতে লাগলো। ফলে তার ভাই দুধ দোহাতে পারলো না বরং গরুর লাথি খেল। তার ভাই জিজ্ঞেস করলো কেন তুমি এমন করছো? সে বলল গরুর সামনের ভাগ আমার, সামনের ভাগে আমার যা ইচ্ছা তাই করবো। তার ভাই এই কথা শুনে বলল ঠিক আছে তোমাকে দুধের ভাগ দিব তবুও গরুকে দুধ দোহানের সময় বিরক্ত করিস না। আর দিনের বেলা কাথা সে পানিতে ভিজিয়ে রাখত ফলে রাতে তার ভাই ভিজা কাথা গাঁয় দিতে পারত না।

তার ভাই বুঝতে পেরে বলল আচ্ছা রাতের বেলাও তোমায় কাঁথার ভাগ দিব তবুও কাথা ভিজিয়ে রেখো না। এভাবে কামাল তার পৈতৃক সম্পত্তির সুন্দর ভাগ পেল। দুইভাই মিলেমিশে থাকতে লাগলো। “ঐ দেখা যায় ম্যাচ আমার গল্প শেষ। " আমাদের ফেইসবুক পেইজে গিয়েও কিসসা পড়তে পারেন- লোকসংস্কৃতি রক্ষা করি (লোরক) সোসাইটি  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।