আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

“অনাহূত”

আত্মহত্যা গাধারা করে । আমি গাধার চেয়েও নিচু প্রজাতির । তাই আত্মহত্যা করার চিন্তা বা সাহস কোনোটাই আসবে না আমার মধ্যে । যার কারণে আত্মহত্যা করা হবে না আমার..... # ছাই রঙ এর কাপড়টার নিচ থেকে অনেক আস্তে আস্তে একটা হাত বের হয়ে এল । অনেক ছোট হাতটা ।

হাতের মালিকের গায়ে শক্তি নেই বোঝা যাচ্ছে । কারণ তার হাতটা খুবই আস্তে আস্তে নড়ছে । হাতের নড়াচড়ায় বেশ কিছুক্ষণ পর তার চোখের উপর থেকে কাপড়টা সরে গেল । সাথে সাথেই সূর্যের তীব্র আলোয় সে সাময়িক অন্ধ হয়ে গেল । এত আলো তার চোখে সয়না ।

তাই সবকিছু স্বাভাবিক হতে অনেক সময় লাগলো । সে তেমন একটা নড়তে পারছে না । তার পুরো শরীর একটা ছাই রঙ এর কাপড় দিয়ে মোড়া । কোনমতে হাতটা নড়াতে পারছে । আর এখন দেখতেও পাচ্ছে সব ।

তার অনেক ক্ষিদে পেয়েছে । কাঁদতে শুরু করল । তবে অত জোরে আওয়াজ হচ্ছে না । শক্তি নেই গায়ে । গতকাল থেকে এই জায়গায় এই অবস্থায় পড়ে আছে ও ।

আশপাশটা বেশ নির্জন । মানুষজনের তেমন আসা-যাওয়া হয়না এইদিক দিয়ে । # আম্মু, ও আম্মু কোথায় তুমি? আমার অনেক ক্ষিদে লাগছে তো । আম্মু… চারিদিকে এত আলো কেন আম্মু? চোখগুলা কোনমতে খুলে রাখতে পারছি না । একটু অন্ধকার করে দাওনা আম্মু… উফ হাতটা নড়াতেও কষ্ট হচ্ছে অনেক ।

এভাবে পেঁচিয়ে রেখেছে কেন আমাকে? একটু খুলে দাও তো কাপড়টা । পাটা নাড়াতে ইচ্ছা করতেছে । আম্মু পা নাড়লে কি তুমি রাগ করবা? হুম? না করলে একটু খুলে দাও না কাপড়টা । পাটা নাড়াই একটু । আম্মু কই তুমি? আসছো না কেন? খুলে দাও না একটু ।

এরকম করছ কেন? আচ্ছা ঠিকাছে, কিছুক্ষণের জন্য খুলে দাও । আম্মু আমি কি কোন গর্তে আছি? চারপাশে মাটির মত লাগছে । আর গর্তে এগুলো কি? এত গন্ধ কেন আম্মু? নিয়ে যাও না আমাকে এখান থেকে । গন্ধটা একটুও ভালো লাগছে না । অনেক বেশী গন্ধ ।

আলোটা একটু কমেছে আগের চেয়ে । ভালো লাগছে এখন । (কিছুক্ষণ চুপচাপ আকাশের দিকে তাকিয়ে রইল । আকাশের রংটা বুঝতে পারছে না ও । মুখ থেকে অনেক নিচু হালকা গোঁ গোঁ আওয়াজ হচ্ছে ওর ।

মাথাটা ঘুরিয়ে একটু আশে-পাশে তাকাতে চেষ্টা করল । অনেক জিনিস পড়ে আছে । বুঝতে পারছে না ওগুলো কি । শুধু এটুকু বুঝতে পারছে ওগুলো থেকে অনেক গন্ধ বের হচ্ছে । হঠাত একটা কুকুর ডেকে উঠল পাশেই…) আম্মু, আম্মু এটা কি? এভাবে ডাকছে কেন? আমার ভয় লাগছে অনেক ।

আমাকে মারবে না তো ওটা? হুম? বলনা? তুমি কোথায় আম্মু? আম্মু তুমি এখন এরকম করছ কেন? আমি যখন তোমার মধ্যে ছিলাম, তখন তোমাকে দেখেছি । তুমি তো অনেক ভালো । তো এখন আমাকে কোলে নিচ্ছ না কেন? আমার ভয় করছে তো । আচ্ছা আম্মু আমার আব্বু কে? তুমি সেদিন যে মানুষটার সাথে ঝগড়া করেছিলে, সেটা? জানো, ওটাকে একদম পছন্দ হয়নি । আমার খুব রাগ হয়েছে ।

যেভাবে তোমাকে বকছিলো লোকটা । আমি তখন থাকলে ওটাকে বকে দিতাম । এতক্ষণ যেটা ডাকছিলো ওটা মনে হয় চলে গেছে । আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি না । আম্মু আমি একটা কাজ করে ফেলেছি ।

রাগ করবা? কি করেছি শুনবা? রাগ কোরো না হ্যাঁ? আমি… মানে… আমি ইয়ে করে দিছি কাপড়ের মধ্যে । রাগ করলে? আমার কিন্তু কোন দোষ ছিল না । আমি তোমাকে আগেই বলেছিলাম কাপড়টা খুলে দিতে, দাওনাই । আমার কোন দোষ নাই । (কিছুক্ষণ নড়াচড়া করার চেষ্টা করল ও ।

পারলো না । দেয়ালের উপর একটা কাক এসে বসেছে । ওর দিকে তাকিয়ে আছে । হয়ত অবাক হয়ে ভাবছে, এটা এখানে কোথেকে এল?) আম্মু জানো, কি একটা জানি এসে বসেছে গর্তের উপরে । কালো রঙের ।

আম্মু আমি কি ওটাকে ভয় পাবো? কিন্তু আমার তো ভয় লাগছে না ওটাকে । ওটাকে কি বলে আম্মু? দেখ দেখ, ওটা কা কা আওয়াজ করছে । আমাকেও কি ওভাবে আওয়াজ করতে হবে? আমিও করি? হুম? কা কা কা… আম্মু আমার এবার ভয় করছে । ওটা এসে আমার উপর বসেছে । কি করব আমি? ওটাকে তাড়াই দাও না আম্মু… এই যা যা ।

আম্মু যাচ্ছে না তো । যা বলছি যা । চলে গেছে, চলে গেছে । আম্মু আকাশটা কালো হয়ে যাচ্ছে । এটা কেনো হয়? বাতাস হচ্ছে অনেক ।

আমার মুখের উপর থেকে কাপড়টা সরে গেছে । যাক সরেছে । তোমাকে আর লাগবে না হুহ । আমার গায়ে এটা কি পড়েছে আম্মু? উপর থেকে কে আবার ইয়ে করছে? নাইলে ভিজে যাচ্ছি কেন আমি? পিপ পিপ আওয়াজ হচ্ছে কেন? পাশ দিয়ে কি যাচ্ছে এভাবে আওয়াজ করে? এত জোরে হচ্ছে কেন? কান ব্যথা করছে আমার । আমাকে নিয়ে যাওনা আম্মু ।

আমার ক্ষিদে পেয়েছে অনেক । আমি তোমার কাছে যাবো । কই তুমি? আমাকে নিতে আসছ না কেন তুমি? আমি ভিজে যাচ্ছি তো । ওটা আবার এসেছে । ওই যে ওটা, যেটা কা কা করে ।

আমি কা কা করেছিলাম যেটার সাথে, ওটা । আমার দিকে তাকিয়ে কা কা করছে এখনো । তুমি আসবে না আম্মু? আমার কষ্ট হচ্ছে অনেক । আসবে না? যাও, তোমার সাথে আর কথা বলব না । তুমি অনেক পঁচা ।

তোমার সাথে আড়ি । তুমিও ওই মানুষটার মত । আসিও না তুমি । আম্মু, ও আম্মু কই তুমি? আমার কষ্ট হচ্ছে । আমি ভিজে যাচ্ছি… # পরদিন একটা খবর ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে ।

একটা বাচ্চা পাওয়া গেছে ডাস্টবিনে, মৃত । বড়জোর দুই তিন দিন হবে বাচ্চাটার বয়স । আগেরদিন যখন মুষলধারে বৃষ্টি হচ্ছিলো, তখন বাচ্চাটা ওই ডাস্টবিনে ছিল । ভিজে পুরো শরীর বরফের মত ঠান্ডা হয়ে গিয়েছিল ওটার । ওটাকে যখন প্রথম পাওয়া গিয়েছিলো তখন একটা কাককে বসে থাকতে দেখা গেছে ওটার উপর ।

কাকটা বিরতিহীনভাবে ডেকে যাচ্ছে । কা কা কা…। The enD (কিছু কথা – আমরা কেউ জানিনা ওরকম একটা বাচ্চার ওই সময়ে কেমন চিন্তা ভাবনা হয় । জানিনা ও তখন কি করে । ওর মনের খবর জানার কোন উপায়ও নাই ।

আমি যা কিছু বলেছি তার সবটাই কল্পনা । অনেক কিছুই হয়ত অস্বাভাবিক, যদিও আমার কাছে অতটা অস্বাভাবিক লাগে না । আর ওরকম একটা বাচ্চা অমন চিন্তা করতে পারে বলে মনে নাও হতে পারে । কিন্তু ও আসলেই কি চিন্তা করে তাতো আমরা কেউ জানি না । হয়ত এইসবই করে ।

কল্পনা করে নিতে তো দোষ নেই কোন । আমরা তো সবকিছু চাইলেই কল্পনা করতে পারি । এটাও না হয় করলাম…। ) ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।