আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মুভি রিভিউ: The Kid with a Bike (2011)

© এই ব্লগের কোন লেখা আংশিক বা সম্পূর্ণ আকারে লেখকের অনুমতি ব্যতীত অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবে না। অনেক অনেক দিন পর কোনো রিভিউ পোস্ট লিখতে বসছি। মাঝখানে বেশ কয়েকটা মুভি দেখা হয়েছে বৈকি তবে সেগুলো নিয়ে সামুতে লিখতে মন চাচ্ছিলো না, একটু আগে একটা মুভি দেখা শেষ করলাম, মুভিটা অতি সাধারন লেভেলের, কিন্তু এই সাদামাটা ভাবটা যে মুভিটাকে এতোটা স্পেশাল করে তুলবে---ভাবতে পারিনি, মুভিটি শেষ করার পর ভীষন অন্যরকম ভালো লাগার অনুভূতি বোধ হচ্ছে। তাই বসে পড়লাম সামুতে লিখবার জন্য। মুভিটার নাম, The Kid with a Bike, রিলিজটাইম ২০১১ সালের ১৮ই মে।

এটি বেলজিয়ামের সিনেমা,ভাষা ফ্রেন্চ, যার অরিজিনাল টাইটেল Le gamin au vélo। এটি মূলত একটি ড্রামা নির্ভর মুভি, রানিংটাইম ৮৭ মিনিট, মানে দেড় ঘন্টারও কিছুটা কম। আসছে ৬৯ তম গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ডসে Best Foreign Language Film ক্যাটাগরীতে এটি নমিনেশান পেয়েছে, আর সেইখান থেকেই মুভিটার নাম জানতে পারি। হাতের কাছেই ছিলো ব্লু-রে-রিপ ভার্সন,তাই আজকেই দেখে ফেললাম। মুভিটি কেমন লাগলো সেই বিষয়ে পরে বলছি।

আগে মুভিটির কাহিনী সম্পর্কে একটু বলে নেই। মুভিটির নাম যেহেতু দ্যা কিড উইথ এ বাইক, সুতরাং এইটা সহজেই অনুমেয় মুভিটির কেন্দ্রীয় চরিত্রে একটি বাচ্চা ছেলে থাকবে। ঠিক তাই। এইখানে আমরা দেখতে পাবো Cyril Catoul নামক একটি বাচ্চা ছেলেকে (বয়স আনুমানিক ১০), যে একটি children's home এ থাকে। তার বাবা তাকে এইখানে রেখে গিয়েছিলো।

বেশ কিছুদিন ধরে Cyril তার বাবাকে খুঁজে পাচ্ছিলো না, যখনই বাবার বাসায় ফোন করে অপারেটর বলে এই নাম্বারটি এই মুহূর্তে খালি আছে। বাবাকে না পেয়ে সে দিশেহারা হয়ে উঠে। বাবাকে খুঁজতে গিয়ে বেশ কয়েকবার সেই children's home থেকে সে পালাতে চায়। কড়া পাহারা সত্ত্বেও একবার সেখান থেকে পালিয়ে তার বাবার ঠিকানায় যায়, গিয়ে দেখে তার বাবা একমাস আগেই সেই বাসা থেকে চলে গেছেন। পুরা বাসা খালি, কোনো ফার্নিচার নাই,এমনকি তার জন্য রাখা সাইকেলটিও উধাও।

সেসময় Cyril বুঝতে পারে তাকে কিছু না বলে তার বাবা বাসা বদল করেছে এবং সকল রকমের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। সে কিছুতেই বিশ্বাস করতে চায় না যে তাকে না জানিয়ে তার বাবা এমন করতে পারে। ঐসময় Cyril এর সাথে এক মধ্যবয়সী মহিলার ধাক্কা লাগে। মহিলার নাম Samantha, পেশায় একজন হেয়ারড্রেসার। ভীষন মন খারাপ করে বাড়ি ফিরে Cyril ।

এরপর সেই হেয়ারড্রেসার একদিন children's home এ আসে এবং Cyril কে ঠিক তারই বাইকটি এনে দেয়। সে জানায় বাইকটি তার বাবা একজনের কাছে বিক্রি করেছিলো, সামান্থা তার কাছ থেকে বাইকটি কিনে এনেছে। ভীষন খুশি হয় Cyril। সে সারাক্ষন তার সাধের বাইকে করে গোটা এলাকা ঘুরে বেড়াতো। উইকএন্ডে Cyril সেই হেয়ারড্রেসারের বাসায় থাকা শুরু করে।

একদিন Samantha আর Cyril বের হয় Cyril এর বাবাকে খুঁজতে। একপর্যায়ে তাকে খুঁজেও পায়। কিন্তু তার বাবা সাফ জানিয়ে দেয়, সে আর তার ছেলের দেখভাল করতে পারবে না। দুঃখ-কষ্ট আর তীব্র অভিমান নিয়ে Cyril ফিরে আসে। আর এভাবেই এগুতে থাকে কাহিনী।

এরপরের বাকি সময়টুকু আমরা Cyril এর সেই অভিমানী মুহূর্তগুলোকেই দেখবো বিভিন্ন ঘটনার মাধ্যমে। পুরা মুভিটি খুবই সাদামাটা। কাহিনীতে তেমন কোনো চমক নাই, প্রায় সরলরৈখিক বলা চলে। পুরা মুভিটিতে আমরা দেখবো, ভীষন অভিমানী Cyril কে, সে যখন সেই children's home থেকে তার বাবার কাছে যেতে চায় তখনই সে বুঝতে বুঝতে পারে তার বাবা তাকে ছেড়ে চলে গেছে,এই অনুভূতিটা ভীষন কষ্টের। Cyril এর চরিত্রায়নটা দুর্দান্ত।

সে একটা বিপ্লবী টাইপ কিশোর। তার সাইকেল চুরি করে নিয়ে যাওয়ার সময় তাকে দেখি মারামারি করতে, তার বাবাকে দেখতে যাওয়ার জন্য সে অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে পালায়, এমনকি একটি কাজে সে সামান্থাকেও আক্রমন করতে পিছপা হয় না। এই নিষ্ঠুর পৃথিবী যেন তাকে বড়োই পরিণত করে ফেলেছে। এমনকি হাইজ্যাকের ঘটনার পর সে যখন তার বাবার কাছে যায় টাকাগুলো দিতে যায় সেখানেও ম্যাচিউরড সে। সামান্থার চরিত্রটাও দারুন।

সামান্থা আর সিরিলের সম্পর্কটা যেন পৃথিবীর সবচেয়ে মমতার সম্পর্ক। সিরিলের জন্য সামান্থা তার প্রেমকেও বিসর্জন দেয়। এ যেনো মা-ছেলের অপূর্ব বন্ধনের খেল। তাইতো সামান্থার স্নেহ আর ভালোবাসায় বাবাকে হারানোর অভিমানটাও হাওয়ায় মিলিয়ে যায় সিরিলের। ভালোবাসা সিরিলের ছন্নছাড়া-একরোখা অভিমানী সেই জীবনটাকে কতোই না বদলে দিয়েছে।

সিনেমাটা শেষ করার পর মনে হলো, সিরিল তো এমনটাই চেয়েছিলো,এমনকেই চেয়েছিলো যে কিনা তার পাশে দাঁড়াবে,সাইকেলের গিয়ার বাড়িয়ে তার সাথে রেস খেলবে, দূরে কোথাও ঘুরতে যাবে, ঘাসের উপর বসে তার সাথে স্যান্ডউইচ খাবে। আমাদের জীবনটাও কি এমন নয়? আমাদের অগোছালো জীবনটার একমাত্র সমাধান কি ভালোবাসা নয়?? আর এই জায়গাটা থেকেই বুঝতে পারলাম, মুভিটি কতোটা অসাধারন লেভেলের। মুভিটির স্টোরিটেলিংটি ব্রিলিয়ান্ট। বিশেষ করে শুরুর দিকে গোটা ভাবটি এতো চমৎকার করে ফোটানো হয়েছে-- কি বলবো !!! মুভির ডিরেক্টর এবং রাইটার ছিলেন যথাক্রমে Jean-Pierre Dardenne আর Luc Dardenne, এরা সম্পর্কে আবার ভাই হন। তাদের আইএমডিবি প্রোফাইল ঘেঁটে দেখলাম এযেনো ইউরোপের কোয়েন ব্রাদারস।

যাই মুভি বানান দুইভাই মিলেই বানান। ধন্যি !!!! মুভিটির কিছু কিছু দৃশ্যের চমৎকার রিপ্রেজেন্টেশান দেখতে পাওয়া যায়। আলাদা করে বলতে হয়, গাড়ীর ভিতর সিরিলের সেই গাল খামচানো ও মাথা ঠুকা আর সিরিল যখন সামান্থার বাসা থেকে পালায় তখন সামান্থা ফোঁপানির দৃশ্য। সত্যিই আউটস্ট্যান্ডিং লেভেলের। এইবার আসি কাস্টিং প্রসংগে।

সিরিলের চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করা Thomas Doret আর সামান্থার চরিত্রে Cécile De France কে স্যালুট জানাতেই হবে। বিশেষ করে Thomas Doret কে। এতো কম বয়সে এইরকম পারফরম্যান্স, ব্লাডি ব্রিলিয়ান্ট। মুভিটির শুধু একটি জিনিস নিয়ে আমার হালকা নেগেটিভ ভিউ রয়েছে আর তাহলো শেষের এন্ডিংয়ে। কেমন জানি অসম্পূর্ণ কিংবা হঠাৎ করে শেষ হয়ে গেলো বলে মনে হয়েছে।

আর তাছাড়া শেষার্ধ প্রথমার্ধের তুলনায় একটু কমজোরি মনে হয়েছে। তবে গোটা মুভিটি এতোটাই প্লেইন এন্ড সিম্পল যে সেই সিম্পলিসিটিই যেনো মুভিটিতে অসাধারনের ছোঁয়া এনে দিলো। মুভিটি ২০১১ সালের কান চলচ্চিত্র উৎসবে বেষ্ট ফিল্ম ক্যাটাগরীতে Grand Prize of the Jury পুরষ্কার জিতে নেয়। এছাড়া European Film Awards, Independent Spirit Awards, London Film Festival সহ বিভিন্ন অ্যাওয়ার্ড সিরেমানিতে এটি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে নমিনেশান পেয়েছে। মুভিটির আইএমডিবি রেটিং ৭.৬, আমার পার্সোনাল রেটিং ৭.৫/১০।

মুভিটির ডাউনলোড লিংক: Mediafire: http://adf.ly/4O9s1 http://adf.ly/4O9sV http://adf.ly/4O9sa অথবা, সিংগেল লিংক: Click This Link অথবা Click This Link সাবটাইটেল: Click This Link  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.