আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতীয়দের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন

আধুনিক প্রযুক্তি তথ্যপ্রবাহ এবং বিনোদন ব্যবস্থাকে করেছে দ্রুততর। এতে করে অতি সহজেই ডিশ এন্টিনার মাধ্যমে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো আমাদের দেশে চালাচ্ছে সাংস্কৃতিক আগ্রাসন। ভারত বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার না করলেও বাংলাদেশের তাদের টিভি চ্যানেলগুলো ব্যপক ভাবে প্রচারিত হচ্ছে। আর এ কারণে সংস্কৃতির আদান-প্রদানের বদলে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি, ভাষা ও সাহিত্যের অস্তিত্ব হুমকীর সম্মুখীন। আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি ধ্বংসের জন্য মূলত দায়ী তাদের চাকচিক্যপূর্ণ প্রাণহীন সংস্কৃতি।

প্রযুক্তির দখলদারিত্বের মাধ্যমে ভারতীয়রা সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের যে নীতি গ্রহণ করেছে তাতে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি আর টিকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। বিশেষত ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোতে প্রচারিত খোলামেলা সংস্কৃতি আমাদের সমাজ ও সামাজিক মানুষের জীবন বোধের সাথে বেমানান। ভারতীয়দের সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের ফলে ,আমাদের সমাজের জনগণ বিষেশ করে তরুণ সমাজের মাঝে নৈতিক অবনতি চরম রূপ ধারণ করেছে এবং তা সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। উপনিবেশিক শাসনের অবসানের পর সাম্রাজ্যবাদীরা যে সকল নতুন কৌশল উদ্ভাবণ করেছে তার মধ্যে সাংস্কৃতিক সাম্রাজ্যবাদ অন্যতম। বর্তমানে ভারতীয়রা অর্থনৈতিক প্রক্রিয়ার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক বন্ধ্যাত্ব সৃষ্টির মাধ্যমে আমাদের শাসন করার নীতি গ্রহন করেছে।

তারা এখন ভূমি দখলের পাশাপাশি আকাশ দখলের ব্যাপারেও বেশী আগ্রহী। সংস্কৃতি মানুষের একান্তই নিজস্ব এবং প্রতিটি মানুষই তার নিজের সাহিত্য ও সংস্কৃতির মাঝে নিজের পরিচয় ও অস্তিত্বের সন্ধান পায়। কিন্তু ভারতীয় সংস্কৃতি যা আমাদের দেশে প্রচারিত হচ্ছে তা মানুষিক শান্তি ও আত্নিক প্রশান্তির খোরাক নয় বরং এ সংস্কৃতি এক ধরণের পণ্যে পরিণত হয়েছে। সংস্কৃতির এ পণ্যায়ন আমাদের দেশের সভ্যতার আগামী দিনগুলোর জন্য একটি অশিন সংকেত। বাংলাদেশে বহুল প্রচারিত ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলোর একটি জি বাংলা ।

এই টিভি চ্যানেলের "কেয়া পাতার নৌকো ” নামের সিরিয়ালে যথাক্রমে পূর্ব বাংলা অর্থাৎ বর্তমান বাংলাদেশের মানুষ ও ইসলাম ধর্মকে নিচ্ প্রকৃতির মানুষ ও ধর্ম হিসাবে তুলে ধরার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে। আবার নানা ভারতীয় চ্যানেলে প্রচারিত অনুষ্ঠানে যে সামাজিক কাঠামো তুলে ধরা হয় তা অনুসরণ করে এদেশের সামাজিক কাঠামো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। প্রতিবেশী দেশ হলেও দুই দেশের সামাজিক কাঠামোতে ব্যাপক পার্থক্য বিদ্যমান। এবার চলুন দেখি হিন্দি চ্যানেলগুলোর অবস্থা। মানুষ ইতিহাসের অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে আজকের এ সভ্যতার পর্যায় উপনীত হয়েছে।

আদিম যুগে মানুষ যখন পোশাক আবিষ্কার করে নি তখন তারা উলঙ্গ থাকত। কিন্তু সভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে এসেও উলঙ্গতাকে সভ্যতা বলে চালিয়ে দেয়ার অপপ্রয়াস চলাচ্ছে ভারতীয় কিছু টিভি চ্যানেল। ভারতীয়দের এ পশ্চাদপদতা আজ সভ্যতা বলে আমাদের দেশে প্রচারিত হচ্ছে। ভারতীয়দের এধরণের সাংস্কৃতিক আগ্রাসন আমাদের জন্য ক্ষতিকর। এর ফলে আমাদের সামাজিক কাঠামো ভেঙ্গে পড়ছে।

এটি বুঝা যায় বাবার দ্বারা মেয়ে ধর্ষণ কিংবা চাচিকে পেতে স্ত্রীকে তালাকের মত ঘটনা দ্বারা। আবার সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের কারণে তরুণরা নানা রকম নৈতিকতা বিরোধী কাজে জড়িয়ে পড়ছে। একটু লক্ষ করলে দেখা যায় ,আগের তুলনায় নারী ঘটিত অপরাধ বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের মাধ্যমে বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্যের বিশাল বাজার সৃষ্টি হয়েছে, যা আমাদের অর্থনীতির জন্য হুমকি সরূপ। সব ধরনের বিরোধিতা উপেক্ষা করে ভারতীয় সিনেমা দেখানোর অনুমতি দিয়েছে সেন্সর বোর্ড।

এতে করে আমাদের যেটুকু নিজস্ব সংস্কৃতি রয়েছে তাও শেষ হয়ে যাবে। ২৩ ডিসেম্বর ‘জোর’ সিনেমাটি মুক্তির জন্য ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কয়েকটি সিনেমা হল বুকিং হয়েছে। আপাতত ভারতীয় বাংলা সিনেমা মুক্তি পেলেও অচিরেই হিন্দি সিনেমাও একইভাবে মুক্তির আয়োজন চলছে । চলতি বছরের জুলাই মাসে আইনের ফাঁক দিয়ে দেশের সিনেমা হলে দেখানোর জন্য আমদানি করা হয় তিনটি ভারতীয় সিনেমা- ‘জোর’, ‘সংগ্রাম’ ও ‘বদলা’। আমার কাছে মঝে মঝে মনে হয় এই সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো সহায়তা দিচ্ছে।

কারণ বাংলাদেশের টিভি চ্যানেলগুলো অধিক হারে বিঞ্জাপণ দেয়ায় এবং দিনের প্রায় অর্ধেক সময় সংবাদ প্রচার করায় মানুষ বিরক্ত হয়ে ভারতীয় টিভি চ্যানেলগুলো দেখে। আমাদের সংস্কৃতিকে রক্ষার জন্য, সমাজকে কুলষমুক্ত রাখতে হলে ভারতীয় চ্যানেলগুলোর সাংস্কৃতিক আগ্রাসন রোধে আমাদের এখই সচেতন হওয়া এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। আঃ রব মোঃ রায়হান হোসেন সদস্য সচিব, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১০ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.