আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মননে পীড়ন .......... শেষপর্ব

সামুর কাছে চির কৃতজ্ঞ ...আমি অবাক নির্বাক হতবাক শতভাগ ... আগের পর্ব Click This Link সন্ধ্যার পর থেকে সুখেন বাবু কেমন চুপচাপ আর নির্জীব হয়ে গেছেন । বুকের বাম পাশটায় একটা চাপা ব্যথা অনুভব করছেন । কাউকে কিছু না বলে কোথায় গেছে সুমিতা । এমন তো কখনো করেনা । সন্তানদের রেখে এক মিনিটের জন্যও কোথাও একা থাকে না ।

কি হল আজ সুমিতার ? কোন বিপদ হল কি ? বসে বসে সুখেন বাবু এসব সাত পাঁচ ভাবছিলেন । হঠাৎ ঝপাত একটা শব্দে সুখেন বাবুর ভাবনায় একটু ছেদ পড়ে । মনোযোগ টা তখন ঐ দিকে যায় । উঠোনের এক পাশে মস্ত একটা তাল গাছ । তাল গাছের নিচেই বহু পুরাতন একটা কুয়ো ।

কুয়োর পানি সব কাজে ব্যবহার না করলেও প্রয়োজনে কাজে লাগে । এখন ভাদ্র মাস, তাল গাছ টায় থোকায় থোকায় তাল পেকে আছে । যখন তখন পাকা তাল গাছ থেকে খসে কুয়োর মধ্যে পড়ছে । সেই তাল পড়া ঝপাত শব্দটায় সুখেন বাবুর মনোযোগ কাড়ল । শব্দটা আস্তে আস্তে দূরে কোথাও বাতাসে মিলে গেল ।

মিশে গেল রাতের নিস্তব্ধতার সাথে । সুমিতা খুব চাপা স্বভাবের মেয়ে । কোন দিন কোন ব্যাপারে তার মুখে কোন অভিযোগ শোনা যায়নি । মুখ ফুটে কোন আবদার অধিকারের কথা বলেনি । নিরবে সব মেনে নিয়েছে , সহ্য করেছে ।

শিক্ষিত রুচিশীল মেয়ে হওয়া সত্ত্বেও বাড়ির আবদ্ধতাকে এমনকি গোঁড়ামি রক্ষণশীলতাকেও মেনে নিয়েছে । আর দশটা সাধারন বাঙালি মেয়ের মতোই তার জীবন । সুখেন বাবু মনে মনে এগুলোই ভাবছিলেন । খুব সুক্ষ্মভাবে কোন দিনই সুমিতার দিকে তার মনোযোগ দেওয়া হয়নি । সব সময় বাহিরের হৈ চৈ নিয়ে বেশী মেতে থেকেছে ।

দিনের পর দিন অনায়াসে অবলীলায় বাহিরে রাত কাটিয়েছে । দিনের কতটুকুন সময়ই বা সুমিতা কে দেওয়া হয়েছে । তার ভাল মন্দের খোঁজ খবরও ঠিক মতো নেওয়া হয়নি । কখনো নিজ থেকে পরম মমতায় তার প্রয়োজনের কথা জানা হয়নি । আমাকে নিয়েও নেই তার কোন অভিযোগ ।

আমার কোন কাজে কখনো বাধা হয়ে দাঁড়ায় নাই । কারনে অকারনে কত অন্যায় করেছি , জানতে চায়নাই কিছু । এমন কি কল্পনাকে নিয়ে মানুষের নানা রসালো সমালোচনা নিয়েও কিছু বলেনি । জানতেও আসেনি কি আসল ঘটনা । রাগ নেই ,অভিমান নেই ,জেরা নেই ।

যেন কিছুই হয়নি সবি ঠিক আছে । এটা নিয়ে আমিও কথা বাড়াই নি । সুমিতার মনটাকে কখনো বোঝার চেষ্টা করিনি । মাত্র কয়েক ঘণ্টা সুমিতা বাড়িতে নেই তাতেই আমার এতো কথা মনে হচ্ছে কেন ?? আগে তো কখনো এমন করে ভাবা হয়নি । বড় একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে সুখেন বাবু কথা গুলো বলে উঠলেন ।

তাহলে কি মনের ভেতর অশুভ কোন সংকেত বেজে যাচ্ছে ?? সুমিতা কি খারাপ কিছু করেছে ?? সে কি মেনে নিতে পারেনি আমাকে বা আমার জীবন যাপন কে ? আবার পারেনি বিরুদ্ধচারন করতে , তেমনি পারেনি মুখ ফুটে কিছু বলতে ?? তাহলে কি দূরে কথাও চলে গেছে ?? দূরে বহুদূরে । যেখান থেকে মানুষ কখনো ফিরে না !! ইচ্ছা করলেও ফিরতে পারে না , ফেরানো যায় না । সুখেন বাবু অস্থির হয়ে উঠেন । সুমিতা কি আর কখনো ফিরবেনা ?? এসব অশুভ অলক্ষনে কথা কেন সে ভাবছে ?? সুখেন বাবুর মনের ভেতর বার বার কি যেন ডেকে উঠছে । আবার কুয়োর মধ্যে তাল পড়ার ঝপাত শব্দ হল ।

চমকে উঠলেন সুখেন বাবু । শব্দের সাথে মন টেনে চলে যাচ্ছে কুয়োর গভীরে । সারাদিন কত তাল পড়ে কুয়োই । এই শব্দকে কেউ গুরুত্ব দেয়না । সুখেন বাবুর মন মানে না ,কিছুতেই মন মানে না ।

দৌড়ে কুয়োর কাছে চলে যান । মনকে সান্ত্বনা দিতে ডুবুরি নামান । অস্থিরতায় ছটফট করেন । সুমিতাকে যখন মাটিতে শুইয়ে দেওয়া হল নিথর দেহ ,এলোমেলো ভেজা চুল গুলো কপাল ঢেকে রেখেছে । সিঁথির সিঁদুর নেই, মুখ মণ্ডল ফ্যাঁকাসে ।

পায়ের আলতা ধুয়ে গেছে কুয়োর জলে । মনের যত অভিমান ধুয়ে ফেলেছে , ছুঁড়ে ফেলেছে কুয়োর অতলে । মুক্তি দিয়েছে নিজেকে,মুক্তি দিয়েছে সবাইকে । পূর্ব আকাশ কণে ঊষার আলো ছড়িয়ে পড়ে কিন্তু সুখেন বাবু ?? সুখেন বাবুর মননে পীড়া শুরু হয় । দুমড়ে মুচড়ে যায় আত্মগ্লানিতে ।

অন্ধকারে ছেয়ে যায় তার চারপাশ । এ গ্লানি তাড়া করে বেড়াবে সারা জীবনভর।  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.