আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

মননে পীড়ন ..........

সামুর কাছে চির কৃতজ্ঞ ...আমি অবাক নির্বাক হতবাক শতভাগ ... সুমিতা দেবীর মন আজ ভাল না খারাপ সেটা ঠিক আন্দাজ করা যাচ্ছেনা । ভাদ্রের সোনা ঝরা ঝরঝরে সকালে স্নান সেরে সুমিতা দেবী সিঁথির মাঝে সিঁদুর আর কপালে বড় একটা মখমলের লাল টিপ পরেছে । মেঘ কাল ঘন চুল পিঠের উপর ছেড়ে আলতা রাঙ্গা খালি পায়ে সারা বাড়িময় ঘুরে বেড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে গুন গুন করে গানও গাচ্ছে । আড় চোখে এগুলো বাড়ির অন্যান্য মানুষ দেখলেও সেটা নিয়ে মুখ ফুটে কেউ কিছু বলছেনা না ।

নতুন বউ হলে বিষয়টা মানিয়ে যেত কিন্তু সুমিতা দেবীর বিয়ে হয়েছে পাঁচ বছর পার হয়ে গেল । কোল জুড়ে এসেছে ২ টা ফুটফুটে পুত্র সন্তান । দুই দুইটা সন্তানের জননী সাত সকালে এমন করে ঘুরে বেড়ালে সেটা সবার চোখে পড়ার মতোই ব্যাপার । আর তাছাড়া সুমিতা দেবী খুব বেশী সাজগোজ করে না । মার্জিত সাজেই থাকতে পছন্দ করে ।

সুখেন বাবু, সুমিতা দেবীর স্বামী । লম্বা চওড়া হাসি খুশী মানুষ। বংশীয় লোক আর খুবি সৌখিন প্রকৃতির । সব সময় হৈ চৈ গান বাজনা নিয়েই আছেন । বৈঠক খানায় সব সময় হট্টগোল ।

আর এই হৈ চৈ হট্টগোল সব কিছুই বাহিরের মানুষ নিয়ে । হবেই না বা কেন !! কিসের অভাব তার । বাবার রেখে যাওয়া অঢেল সম্পত্তি এখন সুখেন বাবু আরাম আয়েশে ইচ্ছা মত ভোগ করছেন । নিজে কিছু না করলেও দিব্যি দিন চলে যাচ্ছে । অভাব জিনিসটার ছোঁয়া এখনো সংসারে লাগে নাই ।

সুমিতা দেবীও চাওয়া মাত্র সবি পাচ্ছে । কোন কিছুর অভাব নাই । বাড়ি ভর্তি চাকর বাকর । বলতে গেলে কোন কাজই সুমিতা দেবীকে করতে হয় না । নিজের সন্তানের টুকিটাকি কাজ গুলোও বাড়ির কাজের মানুষ করে দেয় ।

সুমিতা যেন কোন কাজ খুঁজেই পায় না । মাঝে মাঝে নিজেকে অথর্ব মনে করে । যেন সংসারে তার কোন প্রয়োজন নাই । সেজন্য ভিতরে ভিতরে তার একটা কষ্টবোধ কাজ করে । তবে বাহ্যিক চোখে দেখলে সুমিতা দেবীর সুখের শেষ নাই ।

এমন ভাগ্য কয় জনের হয় । সাদা লাল পেড়ে শাড়িতে আজ সত্যি সত্যি সুমিতা দেবীকে অপরূপা লাগছে । খোলা চুলে লাল সাদা শাড়িতে তাকে দেবীর মতোই লাগছে । যেন সাক্ষাৎ দেবী এসে তার রুপ ধারন করেছে । নিজে যেমন পরিপাটি করে সেজেছে তেমন সাজিয়েছে ছোট ছেলে রাজন কে ।

রাজন , যার বয়স মাত্র পাঁচ মাস । শুধু নিজে সেজেই ক্ষান্ত থাকেনি , মনের মাধুরি মিশিয়ে নিজের ঘর টাকেও গুছিয়েছে । কাঠের আলমারি ভরা কাপড় গুলী তরে তরে ভাঁজ করেছে আর প্রতিটি কাপড়ের ভাঁজে ভাঁজে নেপথলিন রাখতেও ভুল করেনি যেন কাপড়ে কোন পোকা না লাগে । নিজের হাতে সেলাই করা বিছানার চাদর খানি বিছানায় মেলেছে । ঘরের দেয়ালে ঝুলানো তাদের বিয়ের দিনের তোলা ছবি গুলো সযত্নে পরিষ্কার করেছে ।

ভাদ্র মাসের অসহ্য ভ্যাপসা গরমে সবার জীবন অতিষ্ঠ । দুপুরে খাওয়ার পর আলস্য দূর করার জন্য যে যার মত বিশ্রাম নিতে ব্যস্ত । আলসেমিতে বাড়ির অনেকে ঘুমিয়েও পড়েছে । আবার কেউবা কাঠ ফাটা রোদ্দুরে গাছের ছায়ায় বসে ঝিমুচ্ছে । কিন্ত ঘুম বা ঝিমানো কারো বেশীক্ষণ স্থায়ী হল না ।

কারন টা হল রাজনের কান্না । খাড়া দুপুরে রাজন কান্নায় সারা বাড়ি মাথায় তুলেছে । অনর্গল কেঁদেই চলেছে । এ কান্না বুঝি আর থাম্বে না । এতে বাড়ির বৃদ্ধরা একটু বিরক্তই হল ।

এতো কাঁদছে তবু মায়ের ঘুম ভাঙ্গেনা , এ কি মরার ঘুম রে বাবা ... অনেকে বিরক্ত হয়ে কথাটা বলেই ফেললো । না, আর সহ্য করা যায় না । রাজনের কান্নায় কেউ আর স্থির থাকতে পারলো না । আস্তে আস্তে সবাই কান্নার দিকে এগুতে লাগল । এসেও গেল সবাই কিন্তু সুমিতা দেবী , রাজনের মা কই ? তাকে তো আশে পাশে কোথায় দেখা যাচ্ছেনা ।

বিছানার মাঝ খানে শুয়ে শুয়ে অসহায়ের মতো রাজন কেঁদেই চলেছে । এখন তো মনে হচ্ছে গোটা বাড়িতে সুমিতা দেবী নাই । থাকলে নিশ্চয় রাজনের কান্নার আওয়াজে এতক্ষণ ছুটে চলে আসত । বৌটার আক্কেল দেখ । এই ভর দুপুরে ছোট বাচ্চা টাকে একলা ফেলে পাড়া বেড়াতে বের হয়েছে, খিনখিনে গলায় সুমিতার বৃদ্ধ শাশুড়ি বলল ।

পাড়াতে খোঁজার জন্য লোক পাঠানো হল। কিন্তু পাড়ার কোন বাড়িতেই যায় নাই । এমন কি গোটা গ্রামের কোথাও সুমিতা দেবী কে পাওয়া গেল না । এদিকে রাজনের কান্নার গতি বেড়েই চলেছে । মা কাছে না আসলে এ কান্না বুঝি আর বন্ধ হবেনা ।

অবশেষে দুপুর গড়িয়ে বিকেল,এলো বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা । সন্ধ্যা শেষে রাত আসলো , কাঁদতে কাঁদতে ক্লান্ত রাজন ঘুমিয়ে পড়ল । তবু ফিরলো না সুমিতা দেবী। এদিকে বাড়ির আনাচে কানাচে ফিস ফিসানি , এক নাগাড়ে বৃদ্ধ শাশুড়ির বোধহীন প্রলাপ আর দূরে শিয়ালের আর্ত চিৎকারে ভারি হয়ে উঠছে রাতের গুমোট অন্ধকার । মনে হচ্ছে গোটা বাড়িকে ঘিরে একটা অশুভ বাতাস প্রবাহিত হচ্ছে ।

। হয়তো সবার জন্য অপেক্ষা করছে ভয়াবহ একটা দুঃসংবাদ ......... চলবে ......  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.