আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হল-মার্ক জালিয়াতিঃ অভিনব তত্ত্বচর্চার জন্য ইউনুসের মতোই নোবেল দেয়া হোক অর্থমন্ত্রীকে

যদি ঠাঁই দিলে তবে কেন আজ হৃদয়ে দিলে না প্রেমের নৈবদ্য হল-মার্ক জালিয়াতির মাধ্যমে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ৪ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করার পর এই কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপ দিয়ে লুটেরা হল-মার্ক এর কর্মকর্তাদের বাঁচানোর তাগিদে যেভাবে একের পর এক অভিনব তত্ত্ব অর্থমন্ত্রীর কাছে থেকে আমরা পাচ্ছি তাকে নিয়ে যতই হাস্যরসাত্মক টুইট চলুক না কেন তা বুর্জোয়াদের রক্ষার জন্য পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে বেশ জোরালো ভূমিকা রাখবে বলে অনেকেই ভাবছেন! তত্ত্বচর্চা-১ ঃ অপরাধ লঘূকরণ সূত্র (Dilution of crime) ঃ এই তত্ত্ব অনুযায়ী কয়েক কোটি টাকা লোপাট হলে তা দুর্নীতি বলে চিহ্নিত হবে তবে এই লুণ্ঠন হাজার কোটি টাকা ক্রস করলেই তাকে দুষ্টামি বলা হবে। এই দুষ্টামি সর্বব্যাপী বলে উল্লেখ করে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যাংকিং খাতে পৃথিবীজুড়ে জালিয়াতি হয়, নানা দুষ্টামিও হয়। বাংলাদেশেও সেটা হয়েছে। তবে এটা ভয়ংকর কিছু না। ’ অর্থনীতির এই নতুন তত্ত্ব হরিলুটকে দুষ্টামি বলে অভিহিত করে অপরাধ লঘূকরণ এর নতুন কৌশল বাতলে দিয়েছে এবং হাজার হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠনে রাষ্ট্রের অর্থনীতি যেন অকস্মাৎ ভয়ে ভেঙ্গে না যায় তাই এটাকে ভয়ংকর কিছু না বলে তিনি অর্থনীতিতে যে আত্মবিশ্বাস সঞ্চার করেছেন তা বিশ্ব অর্থনীতির গবেষণায় মৌলিক আবিষ্কার হিসেবে মর্যাদা পাবে বলে অনেক প্রথিতযশা অর্থনীতিবিদ মত দেন এবং মার্কিন অর্থনীতিতে ব্যাঙ্ক জালিয়াতির কারনে যে ধ্বস নেমেছে ভবিষ্যতে তার তাৎক্ষণিক প্রশমনে এই তত্ত প্রয়োগ করা যাবে বলে আশা করা যায়! ‘হল-মার্ক একটি দুষ্ট প্রতিষ্ঠান” বলে তিনি যেভাবে লুটেরা প্রতিষ্ঠানকে মৃদুভাবে তিরস্কার করলেন তাতে করেই এই বুর্জোয়া প্রতিষ্ঠান আগামীতে আবারও দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক অবদান রাখার মত আত্মশক্তি ফিরে পাবে।

হল-মার্ক এর অপরাধকে এভাবে লঘু করে দিয়ে তার সহজে দায়মুক্তির মধ্য দিয়ে দেশের অন্যতম বুর্জোয়া প্রতিষ্ঠানকে তিনি যেভাবে ব্যাকআপ দিচ্ছেন তাতে অবশ্য নিন্দুকেরা আশংকা প্রকাশ করছেন দেশে লুণ্ঠন আর দুর্নীতিকে রাষ্ট্র এভাবে সরাসরি প্রশ্রয় দিলে দেশে অচিরেই লুটপাটের মহৌৎসব চলবে। তত্ত্বচর্চা-২ঃ ‘রাবিশ ও বোগাস’ থিউরিঃ বুশের জঙ্গি তত্বের বাংলাদেশীয় সংস্করণ ‘রাবিশ ও বোগাস’ তত্ত্ব অত্যন্ত দক্ষতার সাথে অর্থনীতিতে প্রয়োগ করে অর্থমন্ত্রী হল-মার্ক নিয়ে বুদ্ধিজীবী ও ব্যাংকারদের সাম্প্রতিক মতামতকে ‘রাবিশ ও বোগাস’ বলে মন্তব্য করেছেন। এই তত্তের মাধ্যমে পুঁজির (কালো টাকা ) প্রাথমিক উৎস লুণ্ঠনকে আইনি এবং বুদ্ধিবৃত্তিক বৈধতা দানের যে নতুন কৌশল তিনি আবিষ্কার করেছেন তাতে করে বাংলাদেশের মত অনুন্নত দেশে পুঁজিবাদী লুণ্ঠনের কাঠামো আরও শক্ত ভিত্তির উপর দাঁড়াবে বলে বুর্জোয়া অর্থনীতিবিদরা অভিমত প্রকাশ করেছেন। পুঁজির প্রাথমিক উৎস লুণ্ঠনকে বৈধতা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় বাধা হচ্ছে সুশীল বুদ্ধিজীবীদের অহেতুক সমালোচনা, তাই এই সমালোচনাকে ‘রাবিশ ও বোগাস’ বলে উড়িয়ে দিয়ে অর্থমন্ত্রী পুঁজির বিকাশে যে অবদান রাখার চেষ্টা করছেন তা পুঁজিবাদী অর্থনীতিতে আরেকটি মৌলিক আবিষ্কার। তত্ত্বচর্চা-৩ঃ লুণ্ঠিত টাকা উদ্ধারের জন্য সরকারী ঋণ প্রদানঃ এই তত্ত্ব অবশ্য অর্থমন্ত্রীর নিজের আবিষ্কার না, মার্কিন অর্থনীতিতে ২০০৮ এ ধস নামার পর বারাক ওবামার অনুসৃত নীতি তিনি হল-মার্ক এর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করে ৪ হাজার কোটি (জনগণের) টাকা উদ্ধারের জন্য হলমার্ক এর দায়ী কর্তাদের ছেড়ে দিয়ে তাদের সরকারী ব্যাঙ্ক থেকে বৈধ ঋণ দিয়ে ব্যবসা করার সুযোগ দেয়ার প্রস্তাব দেন, এতে করেই সম্ভব জনগণের টাকা উদ্ধার করা! এতে করে হল মার্ক এর মত প্রতিষ্ঠানকে বাঁচানো যাবে বলে তাঁর বিশ্বাস যদিও নিন্দুকেরা যাদের তিনি রাবিশ ভাবেন তাদের মত হচ্ছে এতে করে লুণ্ঠন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা পাবে।

বাংলাদেশের মত প্রান্তিক ভোক্তা সমাজে বুর্জোয়াদের রক্ষার জন্য যে অভিনব তত্ত্ব একের পর এক উৎপাদন করে চলেছেন অর্থমন্ত্রী তাতে আগামীতে তিনিও ইউনুসের মতোই নোবেল পাবনে বলে অনেকেই ভাবতে শুরু করেছেন!! বাংলাদেশের শাসক গোষ্ঠী যে লুটেরা বুর্জোয়াদের পৃষ্ঠপোষকতা করে তা নতুন কোন সংবাদ নয় কিন্তু জালিয়াতির মাধ্যমে হল-মার্ক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ৪ হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন করার পর অর্থমন্ত্রী সমেত রাষ্ট্রযন্ত্রের মোড়লরা যেভাবে এই কেলেঙ্কারিকে ধামাচাপ দিয়ে লুটেরা হল-মার্ক এর কর্মকর্তাদের বাঁচানোর চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে তাতে করে জাতি রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে ধসিয়ে দিতে এটাই যথেষ্ট!  ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১৩ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.