আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বার্থপর বানানোর শিক্ষা স্বল্প মেয়াদে ক্ষমতার জন্য সুবিধার হলেও তা’ চিরস্থায়ী নয় ।

লেখক স্বার্থপর বানানোর শিক্ষা স্বল্প মেয়াদে ক্ষমতার জন্য সুবিধার হলেও তা’ চিরস্থায়ী নয় । ফারুক আহমেদ গতির প্রতিটি বিন্দুতে থাকে বৈপরিত্য । যে কোন সৃষ্টিই তা’ সৃষ্টির কারনকে প্রশ্ন না করে অগ্রসর হতে পারে না । অর্থাৎ সৃষ্টিকে বিকশিত হতে হলে তা’ যে অবস্থায় এবং যে শর্তে সৃষ্টি হয় তাকে প্রশ্ন করতে হয় । স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির বৈপরিত্য বিকাশের জন্য অনিবার্য ।

স্বাভাবিকভাবে স্রষ্টা ও সৃষ্টির এই বৈপরিত্য ধ্বংসাত্নক বিরোধ নয় বরং নিরন্তর সৃষ্টির স্রষ্টায় রূপান্তরের বৈপরিত্য । একটি বিন্দুতে যে সৃষ্টি গতির পরবর্তী বিন্দুতে সেই আবার স্রষ্টা । এই রূপান্তর নিরন্তর এবং এর শেষ বিন্দু বলে কিছু নির্দিষ্ট করে দেওয়া কঠিন । মানব সমাজের বিকাশ নিরন্তর এবং বিকাশের শেষ বিন্দু বলেও কিছু নেই । তাই প্রাপ্ত অবস্থাকে নিয়ে প্রশ্নও নিরন্তর এবং অন্তহীন ।

গতির প্রতিটি বিন্দুতে বৈপরিত্যের মধ্য দিয়ে বিরামহীনভাবে ছুটে চলা মানব সমাজের বিকাশধারা স্থায়ীভাবে কাউকে বা কোন শ্রণীকে ক্ষমতায় বসিয়ে রাখে না । বিরামহীন গতি ও বিকাশের জন্য ক্ষমতারও বিরামহীন পরিবর্তন অনিবার্য । এই অনিবার্যতাকে বাধাদান করার অর্থ গতিকে বাধাদান করা । ক্ষমতার আসনে বসে গতি এবং বিকাশধারার অনিবার্যতা বুঝতে অক্ষম শাসকশ্রেণী ক্ষমতাকে চিরস্থায়ী করার জন্য মানব সমাজের বিকাশ এবং গতিকে রূদ্ধ করতে চায় । গতিকে রূদ্ধ করতে গিয়ে তাকে এর বিরূদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করতে হয় ।

শুধু শক্তি প্রয়োগ করে দীর্ঘস্থায়ীভাবে মানবসমাজের সন্মুখ গতিকে আটকে রাখা সম্ভব হয় না । তাই শাসকশ্রেণীকে মানব সমাজের অভ্যন্তরে বহুভাগে বিভাজন ঘটাতে হয় । বিভাজিত বিভিন্ন অংশের মধ্যে বিশৃঙ্খল বৈরী গতি সৃষ্টি করতে হয় । যাতে করে সমাজের অভ্যন্তরীণ এসব বিশৃঙ্খল বৈরী গতিগুলো পরস্পরকে ধ্বংস করে মানব সমাজের সন্মুখ গতিকে বাধাগ্রস্থ করার মধ্যদিয়ে শাসকশ্রেণীর ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে পারে । মানব সমাজের সন্মুখ গতিকে বাধা দেওয়ার জন্য শাসক শ্রণীকে মানুষের জীবন ধারণ এবং বিকাশের জন্য উৎপাদনের সবকিছুকে দখল করতে হয় ।

এজন্য প্রধান দখলের বিষয় হলো শ্রমশক্তি । শ্রমশক্তি দখলের অর্থ হলো শ্রমজীবি মানুষকে দখল করা । এই দখল করার জন্য শাসক শ্রেণীকে আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক , বৈধ-অবৈধ নানা রকম প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হয় । এই প্রতষ্ঠানগুলোর মধ্যে যেমন থাকে বল প্রয়োগের প্রতিষ্ঠান ,তেমনই থাকে বলপ্রয়োগ এবং দখলকে বৈধতাদানে সামাজিক ভিত্তি নির্মাণের প্রতিষ্ঠান । দ্বিতীয় প্রকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে প্রধান হলো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ।

যে সমাজে পুঁজিমালিক অধিপতি শ্রেণী,মুনাফা যার চালিকা শক্তি এবং যার সাথে অনিবার্যরূপে জড়িয়ে থাকে শোষন , লুন্ঠন , দখল; সেখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর প্রধান ভূমিকা থাকে বলপ্রয়োগকারী প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে যোগান এবং বিশাল কর্মী বাহিনীর শ্রম শোষনে চাহিদা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রক এবং পরিচালক সরবরাহ নিশ্চিত করা । এর জন্য যে পরিমাণের এবং যে মানের শিক্ষা প্রয়োজন নীতি প্রণেতারা সেভাবেই শিক্ষানীতি প্রণয়ন করে থাকে । তাই শিক্ষানীতির মধ্যে বিদ্যমান অবস্থা বা ব্যবস্থার প্রতি প্রশ্ন করে অগ্রসর হওয়ার কোন উপাদান থাকে না । এসব উপাদান থাকেনা বলেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মানেই শাসক শ্রণীর প্রয়োজনীয় উপাদানগুলোকে নিয়ে শিক্ষার্থীদের পরস্পরের মধ্যে প্রশ্নহীন প্রতিযোগিতার ময়দান । শিক্ষানীতির মধ্যে তাই শিক্ষার চালিকাশক্তিরূপে প্রতিযোগিতার কথাই বার বার উল্লেখ করা হয় ।

প্রাথমিক স্তর থেকে উচ্চ শিক্ষার স্তর পর্যন্ত সকল স্তরে সামগ্রিক বা সমন্বিতভাবে শিক্ষার মান নির্ণয়ের বা নিশ্চিত করার কোন ব্যবস্থা নেই । শিক্ষার মান বলতে একমাত্র যা’ বুঝায় তা হলো প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ফল । সেজন্য শিক্ষানীতি শেষ পর্যন্ত পরীক্ষানীতিতে পরিণত হয় । তাই শিক্ষানীতির পরিবর্তন বলতে পরীক্ষাকেন্দ্রীক স্তরবিন্যাসের হেরফের,বিভিন্ন স্তরে পরীক্ষা সংখ্যার হেরফের ,প্রশ্ন পত্র প্রণয়নে হেরফের এসবই বুঝায় । যে শিক্ষানীতিতে শিক্ষার সৃজনশীলতাকে সৃজনশীল নামের প্রশ্নপত্রের দ্বারা আড়াল করতে দেখা যায় সেই শিক্ষানীতির প্রতারণার দিকটিও বেশ ষ্পষ্ট ।

শিক্ষা ব্যবস্থার মধ্যে শিক্ষার সামগ্রিক মান নিশ্চিত করার উদ্যোগের পরিবর্তে শুধুমাত্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীকে অযোগ্য প্রমাণ করা হয় এবং কিছু সংখ্যককে ব্যাক্তিগতভাবে মেধাবির তকমা পরিয়ে মহিমান্বিত করা হয় । মেধাবির তকমা পরা ওয়ালাদের জন্য যোগানের এলাকাগুলোতে বৈধ-অবৈধ,প্রকাশ্য-গোপন নানা রকম আকর্ষনীয় অফার ছড়িয়ে রাখা হয় । এসব প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে প্রশ্নহীন প্রতিযোগিতায় দেৌড়িয়ে বের হয়ে আসে বিবেচনাহীন , নির্বোধ , আত্নকেন্দ্রীক , স্বার্থপর ভয়ংকর মেধাবি(!)। যে মেধাবি তার মেধার ভার সকল শোষিতের ওপর চাপিয়ে দেয়াকে বৈধ এবং অধিকার মনে করে । এতসব প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়েও শাসকশ্রেণী নিশ্চিত নিরাপদ থাকতে পারে না।

যতই শিক্ষাক্ষেত্রে প্রশ্নহীন প্রতিযোগিতা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের স্বার্থপর আর আত্নকেন্দ্রীক করে গড়ে তোলা হোক । যতই আকর্ষনীয় অফারের মুলো ঝুলিয়ে রাখা হোক । শাসকশ্রেণীর চালিকাশক্তি মুনাফার বৈশিষ্ট্যের কারণেই অনিবার্যভাবেই শিক্ষিত বঞ্চিতের সংখ্যা বাড়তে থাকে । শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তাদেরকে প্রশ্ন করতে না শেখালেও বঞ্চনার মধ্যদিয়ে তারা প্রশ্ন করতে শিখে । প্রশ্ন করে বিরাজমান অবস্থাকে, বিদ্যমান ব্যবস্থাকে ।

তাদের বঞ্চনার কারণ জানতে চেষ্টা করে । এভাবে মুনাফার গতির মধ্যকার বৈপরিত্য বদ্ধ অবস্থা ভাঙ্গার গতির সন্ধান নিজেই তৈরী করে । এভাবেই সৃষ্টি হয় অকুপাই ওয়ালষ্ট্রীট সহ বহু আন্দোলনের । ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.