আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ঢাকার কারখানায় তৈরি হচ্ছে নকল পাজেরো ( দেশের রত্ন এদের কে জাপানে পাঠানো দরকার

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ঢাকায় তৈরি হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক মডেলের পাজেরো জিপ। এসব পাজেরো তৈরিতে খরচ পড়ছে প্রায় ২৮ লাখ টাকা। বিক্রি হচ্ছে অন্তত ৭০ লাখ টাকায়। তবে সবই হচ্ছে সরকারের চোখের আড়ালে, অবৈধভাবে। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এসব গাড়ির ক্রেতা।

গাড়িগুলোতে ব্যবহৃত হচ্ছে ভুয়া রেজিস্টেশন নম্বর। এসব গাড়ি যে অনুমোদনহীন তা কল্পনাতীত। বৃহস্পতিবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর পল্লবী থানা এলাকায় অভিযান চালায় র্যাব-৪ এর একটি দল। পল্লবীর ১১ নম্বর সেকশনের বি ব্লকের ১৭ নম্বর রোডের নিউ এসএস অটোমোবাইলস নামে একটি ওয়ার্কশপে অভিযান চালিয়ে মাহফুজুর রহমান নামে এক ব্যক্তিকে (৩১) গ্রেফতার করা হয়। র্যাব-৪ এর সিপিসি-২ এর কোম্পানি অধিনায়ক মেজর সাখাওয়াত আলী জনকণ্ঠকে জানান, মাহফুজ প্রায় ১০ বছর যাবত গাড়ির যন্ত্রাংশ কিনে অত্যাধুনিক পাজেরো জিপ তৈরি করে আসছেন।

চট্টগ্রামের অটো স্ট্রাট নামের একটি গাড়ির ইঞ্জিন বিক্রির প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে মাহফুজ এসব যন্ত্রাংশ কিনে থাকেন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মাহফুজের আধুনিক পাজেরো জিপ তৈরি করে তা বিক্রি করার সঙ্গে জড়িত থাকার বিষয়টি জানেন। পুরো প্রক্রিয়ার সঙ্গে কোম্পানির মালিক জড়িত। মাহফুজের তথ্য মতে, চট্টগ্রাম থেকে গ্রেফতার করা হয় কোম্পানির মালিক মোহাম্মদ আজমকে (৬৫)। গ্রেফতার পর বেরিয়ে আসতে থাকে আধুনিক পাজেরো জিপ তৈরির আসল রহস্য।

মাহফুজ আজম যৌথভাবে পাজেরো তৈরির ব্যবসা করে আসছেন। আজমের দায়িত্ব জাপান থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ ক্রয় করা। আজম প্রায় ৩ যুগ (৩৬ বছর) ধরে গাড়ির যন্ত্রাংশ আমদানি করে তা বিক্রি করে আসছেন। জাপান থেকে গাড়ির যন্ত্রাংশ কিনে আনার পর তা মাহফুজের কাছে সরবরাহ করা হয়। মাহফুজ এসব যন্ত্রাংশ দামী গাড়িযোগে ঢাকায় নিয়ে আসেন।

একটি সম্পূর্ণ স্বয়ংক্রিয় পাজেরো জিপের পুরো যন্ত্রাংশ কিনতে খরচ হয় ১৮ থেকে ২০ লাখ টাকা। এসব যন্ত্রাংশ দিয়ে একটি পাজেরো জিপ তৈরি করে রাসত্মায় ছাড়তে খরচ পড়ে প্রায় ২৮ লাখ টাকা। ২৮ লাখ টাকায় তৈরি পাজেরো জিপের সব কিছুই অটোমেটিক। এমনকি পাজেরোর ওপরের ছাদ খোলা যায় অটোমেটিকভাবে। গাড়ির সমস্ত কাজ হয় স্বয়ংক্রিয়ভাবে।

কোন কিছুই ম্যানুয়াল নয়। প্রতিটি পাজেরো দেখতে এতই সুন্দর যা ভাবাই যায় না। কেউ দেখে সন্দেহ করতে পারবেন না এসব ঢাকার কারখানায় তৈরি চোরাই পাজেরো। দেখে মনে হবে সদ্য জাপান থেকে আমদানি করা হয়েছে। এরপর গাড়ি বিক্রির জন্য তাদের নিজস্ব এজেন্ট রয়েছে।

এসব এজেন্টের মাধ্যমে এসব গাড়ি বিক্রি হয়ে থাকে। যারা নিজ দায়িত্বে এসব পাজেরো কিনেন তাদের কাছে প্রতিটি গাড়ি ৫০ থেকে ৫৫ লাখ টাকায় বিক্রি হয়। আর যারা রেজিস্ট্রেশনসহ কিনেন তাদের কাছ থেকে একেকটি গাড়ি প্রায় ৭০ লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়। রেজিস্ট্রেশনের ৰেত্রেও রয়েছে তাদের নিজস্ব সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গাড়ির ভুয়া রেজিস্ট্রেশন করা হয়।

ভুয়া রেজিস্ট্রেশন তৈরির সঙ্গে বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা জড়িত। তাদের সহায়তায় আধুনিক পাজেরো জিপের রেজিস্ট্রেশন নম্বর হয়ে যায়। এরপর নকল নম্বর পেস্নট লাগানো হয় গাড়িতে। র্যাব কর্মকর্তা মাহফুজের বরাত দিয়ে আরও জানান, সাধারণত সমাজের বিত্তশালী ও সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তারা এ ধরনের পাজেরো ব্যবহার করে থাকেন। এ ধরনের দামী গাড়ি সাধারণত রাসত্মায় চেকিংয়ের সম্ভাবনা কম থাকে।

কারণ এসব দামী গাড়িতে যারা যাতায়াত করেন তারা নিঃসন্দেহে সমাজের উচু সত্মরের মানুষ। তাদের ৰমতা ও প্রভাব প্রতিপত্তি নিয়ে কোন প্রশ্ন থাকার কথা নয়। এ জন্য এসব গাড়িকে সাধারণত রাস্তায় চেকিংয়ের কবলে পড়তে হয় না। আইনশৃঙ্খলা রৰাকারী বাহিনীর সদস্যরাও এসব দামী গাড়ি সাধারণত চেক করার প্রয়োজন মনে করেন না। কারণ একদিকে এসব গাড়ি চোরাই গাড়ি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না বললেই চলে।

অন্যদিকে গাড়ির মালিক নিশ্চয়ই সরকারের বড় কোন আমলা। অহেতুক বাড়তি ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই। এমন ভাবনা থেকেই সাধারণত এসব গাড়ি চেকিংয়ের কবলে পড়ে না। আর এ সুযোগটিকেই কাজে লাগিয়ে মাহফুজ সরকারের চোখ ফাঁকি দিয়ে বেআইনীভাবে আধুনিক পাজেরো জিপ তৈরি করে বিক্রি করে আসছিলেন। তবে মাহফুজ এ পর্যন্ত কতটি পাজেরো জিপ তৈরি করে বিক্রি করেছে সে সমর্পকে বিস্তারিত তথ্য দেননি।

মাহফুজের সহযোগীদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত আছে। সুত্র:দৈনিক জনকন্ঠ ১০ ই ডিসেম্বর ২০১১। ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।