আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ব্লগাররা সাংবাদিক নন, মোটেও নন

ব্লগাররা কি সাংবাদিক? হ্যাঁ নাকি না। একজনের ব্লগিং কি সাংবাদিকের চেয়েও ভালো হতে পারে না? তবে, কেনো একজন ব্লগার সাংবাদিক নন। উত্তর একটাই হতে পারে..আরে পেছনে যদি রক্ষাকবচ হিসেবে মিডিয়া হাউস না থকে, তবে ব্লগারের পিঠ বাঁচবে কেমনে। পিঠ বাঁচানোর তাগিদেই আমরা ব্লগারদের সাংবাদিক মানতে চাই না। আর তথাকথিত কিছু সাংবাদিকের রুটি-রুজি বাঁচাতেই ব্লগাররা সাংবাদিক নন, মোটেও নন।

সাংবাদপত্রের মতো কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্লগারদের কোনো যোগ থাকে না। যদি কোনো মিডিয়ার ব্লগ হয়, সে ব্লগেও কি ব্লগারদের জন্য কোনো নিরাপত্তা থাকে? বিশেষ করে কোনো অনুসন্ধানমূলক পোস্ট করা হলে। দেখা যায়, মিডিয়া তো দূরের কথা পাশে কেউ থাকে না। আর আমাদের দেশে তো...নয়ই। একটু অন্য দেশের ব্লগারদের দিকে চোখ মেলে দেখি, আরে হায় হায়..সবখানেই দেখি একই নিয়ম।

সবাই শক্তের ভক্ত নরমের জম। নিজের স্বার্থে মিডিয়া হাউজগুলো আর লাভের আশায় ব্লগার ভাড়া করার নীতি। আর নিজ স্বার্থের বাইরে গেলেই ব্লগ হয় পর্নোগ্রাফি! সম্প্রতি সিয়াটল উইকলিতে প্রকাশিত একটি নিউজে দৃষ্টি গিয়েছিলো। সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, একজন ব্লগারকে যুক্তরাষ্ট্রের আদালত ২.৫ মিলিয়ন ডলার জরিমানা করেছে। কারণ সে কোনো সাংবাদিক নয়, সে ব্লগার।

তার নিজস্ব ব্লগে সে একটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে লেখায় প্রতিষ্ঠান তার বিরুদ্ধে মামলা করে। সে মামলায় তাকে ফেঁসে যেতে হয়েছে। কারণ আদালতের যুক্তি, সাংবাদিক না হয়ে কেবল ব্লগার হয়ে একাজ করা যাবে না। সাংবাদিকদের ক্ষেত্রে যা যুক্তিযুক্ত তা কখনও ব্লগারদের ক্ষেত্রে নয়। এ ব্লগারের নাম ক্রিস্টাল কক্স।

কোনো সংবাদপত্র বা মিডিয়া হাউজের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতা না থাকায় তার এ ফল। দ্য অবসিডিয়ান ফাইনান্স গ্রুপ তাদের বিরুদ্ধে ব্লগিং করায় ১০ মিলিয়ন ডলারের ক্ষতিপূরণ মামলা করে। তাদের যুক্তি ছিলো ব্লগে লেখা কোম্পানি এবং কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতার সম্মানহানি ঘটেছে। কক্স তার যুক্তিতে যদিও বলেছে, সে ভিতরের থেকে তথ্যসূত্র বের করে সঠিক তথ্যই ব্লগে লিখেছে। কিন্তু তথ্যসূত্র উল্লেখ করতে সে চায় না।

কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়া শিল্ড ল’ অনুসারে সে সাংবাদিক না হওয়ায় তাকে জরিমানা গুনতে হবে। ব্লগার এবং সাংবাদিক এ বিতর্ক চলছে কয়েক বছর ধরেই। কিন্তু একজন সাংবাদিক শুধু মিডিয়ার অধীনে থাকায় বা মিডিয়ার ক্ষমতাবলে যা করতে পারেন একজন ব্লগার মোটেও তা করতে পারেন না। (একটি মিডিয়ার দেশের বৃহত্তর ¯^ার্থে তথ্যসূত্র গোপন করার ক্ষমতা আছে..কিন্তু ব্যক্তির ক্ষেত্রে সেটা নিয়মবর্হিভ‚ত। সম্ভবত এমন কোনো মারপ্যাঁচে পড়ে গেছেন কক্স)।

কোনো হাই-প্রোফাইল কেসের ক্ষেত্রে, একটি উদাহরণ দেয়া যাক, গিজমোডো নামের একটি সাইটের এডিটর কিন্তু অ্যাপলের আইফোনের তথ্য ফাঁস করে এমন আইনের মারপ্যাচে পড়েননি। ২০১০ সালে একটি বারে অ্যাপলের আইফোন পাওয়া গেছে এমন তথ্য প্রযুক্তির ও ব্লগ সাইটে তিনি লিখেছিলেন। পুলিশ অবশ্য তার বাড়িতে হানা দিয়েছিলো। কিন্তু তার বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। অ্যাপল প্রধান স্টিভ জবস অবশ্য, সে সময় বেঁচে ছিলেন।

এ বিষয়টি নিয়ে দ্য ওয়াল স্টিট জার্নাল-এর প্রযুক্তি সম্পাদক ওয়াল্ট মোসবার্গ স্টিভকে প্রশ্ন করেছিলেন- গিজমোডোর প্রযুক্তি বিষয়ক ব্লগারকে তিনি কি হিসেবে দেখছেন? সাংবাদিক নাকি ব্লগার। স্টিভ বলেছিলেন- এরা সাংবাদিক নন। এদিকে, ওয়াল্ট মসবার্গ অবশ্য বলেছিলেন- তিনি নিজেও কিন্তু একজন ব্লগার। এবং তিনি ব্লগারকে সাংবাদিক হিসেবেই দেখেন। জবস এবং মসবার্গ-এর ভিডিওটি দেখা যাবে এ লিংকে Click This Link একজন ব্লগার একজন সাংবাদিক কিনা তা তার লেখার মানদন্ডেই বিচার করা সম্ভব।

মিডিয়ার মানদন্ডে যদি তার লেখায় প্রতিবেদনের সব গুন থাকে তবে সে অবশ্যই একজন সাংবাদিক সে যেকোনো প্লাটফর্মেই হতে পারে। তবে, আমাদের দেশের ব্লগার এবং সাংবাদিকদের মধ্যে পার্থক্য বিস্তর। একজন সাংবাদিক যা লিখতে পারে একজন ব্লগার সে মানের লিখলেও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের চেয়েও বাংলাদেশের আইন বা আইনের বাইরের মারপ্যাঁচে ত্রাহি অবস্থা দাড়িয়ে যায়। ব্লগে কিছু লিখলেই মন্ত্রীরা বলেন সেখানে পর্নোগ্রাফি লেখা হচ্ছে। আর মিডিয়ায় তাদের ধুয়ে ফেললেও মন্ত্রীত্ব বাঁচানোর তাগিদে তাদের পা চাঁটতেও পারে।

সব দোষ তখন ব্লগারদের। তাই বাংলাদেশের ব্লগাররা কোনোদিনও সাংবাদিক নন, মোটেও নন!  ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.