আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রকৃত আহলে সুন্নাত কারা?

আসুন আমরা ২টি ভারী বস্তু আল্লাহর কুরান ও রাসুলের(সাঃ) পরিবারকে(আঃ) অনুসরন করি। View this link আহলে বাইতের মহান ইমামগণকে নবী (সা.) নিয়োগ দিয়েছেন নবী (সা.)-এর সীরাত এবং ইসলামী ইতিহাসের সন্ধানকারীগণ এই কথা নিশ্চিতরূপে জানেন যে, আহলে বাইতের অনুসারীদের বারোজন মহান ইমামকে নবী (সা.) নিয়োগ দিয়েছেন এবং নিজের পরবর্তীতে তাঁদের ইমামত ও খেলাফতের প্রতি ‘নস’ করেছেন (তথা সিদ্ধান্ত দিয়েছেন)। আহলে সুন্নাতের সিহাহ সিত্তাতেও তাঁদের সংখ্যা ‘বারো জন’ বলা হয়েছে এবং তারা সকলেই কোরায়েশ থেকে হবেন। আহলে সুন্নাতের কিছু কিছু বিশ্বস্ত কিতাবাদীতেও উল্লেখ আছে যে, রাসুল (সা.) স্পষ্ট ভাষায় উক্ত ইমামগণের নামও এভাবেই বলেছেন যে, “তাঁদের মধ্যেকার প্রথম জন হবেন আলী তারপর তাঁর পুত্র হাসান এবং তারপর তাঁর ভ্রাতা হুসাইন, অতঃপর হুসাইনের বংশধারা থেকে বাকী নয়জন ইমাম হবেন এবং তাঁদের সকলের শেষ জন হবে মাহ্দী”। “ইয়ানাবিউল মোয়াদ্দাত” কিতাবের সংকলক বলেছেন যে, “আল-আ’তল” নামক ইয়াহুদী রাসুল (সা.)-এর খেদমতে এসে বললো, “হে মুহাম্মদ! এমন কিছু বিষয়াবলী সম্পর্কে আপনার কাছে প্রশ্ন করছি যেগুলি দীর্ঘদিন যাবৎ আমার বুকের মধ্যে তোলপাড় সৃষ্টি করে রেখেছে।

আপনি যদি উত্তর দিয়ে দেন তাহলে আমি মুসলমান হয়ে যাব”। নবী (সা.) বললেন, “হে আবু আম্মারা! প্রশ্ন কর”। সে কয়েকটি বিষয়ে প্রশ্ন করার পর বললো, “আপনি সঠিক উত্তর দিয়েছেন, কিন্তু এখন বলুন যে আপনার ‘ওয়াসী’ কে? কেননা প্রত্যেক নবীর একজন ওয়াসী থাকে, যেমন আমাদের নবী মূসা (আ.)-এর ওয়াসী ছিলেন ইউশা’ বিন নূন”। তিনি (সা.) বললেন, “আমার ওয়াসী হলো আলী বিন আবি তালিব এবং তাঁর পরে আমার সন্তান হাসান ও হুসাইন এবং তার পর হুসাইনের নসল্ থেকে নয়জন ইমাম হবেন”। ইয়াহুদী বললো, “তাঁদের নামগুলোও আমাকে বলে দিন”।

তিনি (সা.) বললেন, “হুসাইনের শাহাদাতের পর তাঁর সন্তান আলী তথা জয়নুল আবেদীন এবং আলীর শাহাদাতের পর তাঁর পুত্র মুহাম্মদ এবং মুহাম্মদের শাহাদাতের পর তাঁর প্রান প্রিয় জাফর এবং জাফরের শাহাদাতের পর তাঁর কলিজার টুকরা মুসা এবং মুসার শাহাদাতের পর তাঁর নয়নমনি আলী এবং আলীর শাহাদাতের পর তাঁর অন্তরের ফল হাসান এবং হাসানের শাহাদাতের পর তাঁর স্মৃতি হবে মাহ্দী”। উক্ত নামসমূহ শোনার পর ইয়াহুদী মুসলমান হয়ে গেল এবং হিদায়েত প্রাপ্ত হয়ে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপন করল। [সূত্র: ইয়ানাবিউল মোয়াদ্দাত, পৃ-৪৪০, ফারায়েদুস্ সিমতাইন হামবীনী] এ বিষয়ে আমরা যদি আহলে বাইতের অনুসারীদের কিতাবসমূহের পৃষ্ঠা উল্টাই এবং অত্র বিষয়ের সাথে সম্পৃক্ত বিশিষ্ট সত্যতাকে একত্রিত করি তাহলে দপ্তরের পর দপ্তর সৃষ্টি হয়ে যাবে। কিন্তু দলিল স্বরূপ আমাদের জন্য এতটুকুই যথেষ্ট যে, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের উলামাগণ ১২ ইমামকে স্বীকার করেছেন, আর তাঁরা হলেন হযরত আলী এবং তাঁর পুতঃপবিত্র সন্তানগণ। আবার যে জিনিষ আমাদের এই বিশ্বাসকে আরো শক্তিশালী করে যে, আহলে বাইতগণের মধ্যেকার ১২জন ইমাম কারো সম্মুখে নতজানু হননি এবং ইতিহাস বেত্তা ও মুহাদ্দেসগণ আর সীরাত লেখকগণ তাঁদের সম্বন্ধে এমন কথা কখনোই লেখেন নি যে, আহলে বাইতের ইমামগণ অমুক সাহাবী অথবা অমুক তাবেয়ীর মধ্যেকার কারোর সম্মুখে নতজানু হয়েছেন।

অথচ উম্মতের অন্যান্য ওলামা ও ইমামগণ এমনটি করেছেন। উদাহরণ স্বরূপ: আবু হানিফা, ইমাম জাফর সাদেকের নিকট জ্ঞান অর্জন করেছেন আর মালিক, আবু হানিফার কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেছেন এবং শাফেয়ী মালিকের নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেছেন আর শাফেয়ী থেকে আহমদ বিন হাম্বল জ্ঞান অর্জন করেছেন। কিন্তু আহলে বাইতের ইমামগণের ‘ইলমে লাদুন্নী’ হল এমন, যে তাঁরা তাঁদের মহান বাপ-দাদার কাছ থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছেন। এঁরাই হলেন সেই সমস্ত ব্যক্তিত্ব যাদের সম্পর্কে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেছেন, “অতঃপর আমি এ কিতাবটির উত্তরাধীকারী করেছি আমার বান্দাদের মধ্যে তাদেরকে, যাদেরকে আমি মনোনীত করেছি। ” [সূরা ফাতির, আয়াত-৩২] একদা ইমাম জাফর সাদিক উক্ত বাস্তবতার প্রতি এভাবে ইঙ্গিত করেছিলেন, “অবাক লাগে! লোকেরা বলে যে তারা সমস্ত জ্ঞান রাসুল (সা.)-এর কাছ থেকে হাসিল করেছে এবং সেগুলির প্রতি আমল করে হিদায়েত পেয়ে গেছে।

আর আমরা যারা আহলে বাইত তারা রাসুল (সা.) থেকে জ্ঞান হাসিল করিনি আর না আমরা হিদায়েত পেয়েছি। অথচ আমরা হলাম সেই রাসুল (সা.)-এর জুররিয়াত (বংশধর)। আমাদের গৃহে অহি নাযিল হয়েছে এবং আমাদের দরজা থেকেই জ্ঞানের স্রোত বেরিয়েছে যার দ্বারা মানুষ তৃষ্ণা নিবারণ করে থাকে। তোমরা কি তাদেরকে হিদায়েতপ্রাপ্ত ও জ্ঞানে স্বয়ং সম্পূর্ণ বলে জ্ঞান কর এবং আমাদেরকে মুর্খ ও পথভ্রষ্টতার মধ্যে জ্ঞান কর”? আবার তাদের প্রতি ইমাম জাফর সাদিক কেন অবাক হতেন না, যারা এমন দাবী করছিল যে, “আমরা রাসুল (সা.) থেকে জ্ঞান অর্জন করেছি, অথচ তারা রাসুল (সা.)-এর উত্তরসূরী আহলে বাইতের সাথে শত্রুতা করছিল”। আর আহলে সুন্নাত যারা নাজায়েজ পন্থায় নিজেদেরকে সুন্নাতের সাথে সম্পৃক্ত করে নিয়েছেন, তাদের প্রতি তো তাজ্জব হওয়াই উচিৎ কেননা তারা সুন্নাতের বিরোধিতা করে থাকেন? আর যেমনটি ইতিহাস স্বাক্ষ্য বহন করছে যে, আহলে বাইতের অনুসারীরা হযরত আলীরর ক্রোড় ধরে রেখেছিল।

সুতরাং তারা হযরত আলীর সাহায্য করতে থাকে এবং তাঁর শত্রুদের মোকাবেলা করতে থাকে এবং যার সাথে তাঁর সন্ধি ছিল তার সাথে তারাও সন্ধি করেছিল এবং তারা প্রতিটি জ্ঞান তাঁর কাছ থেকেই হাসিল করেছে। আহলে সুন্নাতগণ কোন অবস্থাতেই হযরত আলীর আনুগত্য করেন নি আর না তাঁর সাহায্য করেছেন। বরং এর বিপরীত তাঁর সাথে যুদ্ধ করেছেন এবং তাঁর জীবনের বাতি/প্রদীপ নিভিয়ে দেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত থাকতেন। সুতরাং তাঁর পরে তাঁর সন্তানদেরকে বেছে বেছে হত্যা করেছেন, বন্দী করেছেন এবং শহরগুলি থেকে বের করে দিয়েছেন। অধিকতর আহ্কাম সমূহে আহলে সুন্নাতগণ হযরত আলীর বিরোধীতা করেছেন এবং সেই সমস্ত ব্যক্তিবর্গের অনুসরণ করেছেন যারা নিজেদের রায় ও ইজতিহাদ দ্বারা আল্লাহর আহ্কামসমূহকে পরিবর্তন করে ফেলেছিল।

আর আজ সে সমস্ত লোকের প্রতি আমাদের তাজ্জব কেন হবে না, যারা নবী (সা.)-এর সুন্নাতের প্রতি আমল করার দাবী করে থাকে আবার নিজেরাই এই স্বাক্ষও দিয়ে বেড়ায় যে আমরা নবী (সা.)-এর সুন্নাতকে ছেড়ে দিয়েছি, তা এজন্য যে সুন্নাত তো আহলে বাইতের অনুসারীদের চিহ্ন বা রীতিনীতি হয়েগেছে। {সুধী পাঠকম-লী এ বিষয়ে “আমি সত্য পন্থীদের সঙ্গী হয়েগেলাম” বইটি অধ্যয়ন করুন। ইবনে তাইমিয়াহ্ বলেন যে, ‘নবী (সা.)-এর সুন্নাতকে ত্যাগ কর, কেননা এই সুন্নাত এখন আহলে বাইতের অনুসারীদের আলামত (চিহ্ন) হয়েগেছে’। কিন্তু এতদসত্বেও আহলে সুন্নাতগণ ইবনে তাইমিয়াহ্কে “মুজাদ্দেদুস সুন্নাহ্” বলে থাকেন} [সূত্র: ইবনে তাইমিয়াহ্ কর্তৃক রচিত “মিনহাজুস সুন্নাহ্”, খন্ড-২, পৃ-১৪৩; জারক্বানী কর্তৃক রচিত “শারহুল মাওয়াহিব”, খন্ড-৫, পৃ-১৩] ইহা কি আজব কথা নয়? আবার আমাদেরকে সেই সমস্ত লোকের প্রতি তাজ্জব কেন হবে না, যারা অহংকারের সাথে নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ বলে থাকেন, অথচ তারা বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়ে আছেন যথা হানাফি, মালেকী, শাফেয়ী, হাম্বলী। ফিকহ্গত মাসয়ালা-মাসায়েলে একে অপরের বিরোধিতা করে থাকেন।

তার উপর এমন মজাদার কথা বলে থাকেন যে, বিরোধ বা অনৈক্য হচ্ছে রহমত স্বরূপ! সে কারণেই আল্লাহর দ্বীন, তাদের নাফসানী খাহেশ এবং তাদের রায়ের (সিদ্ধান্তের) মুরাব্বা হয়ে গেছে। জ্বী হ্যাঁ, এরা হল কয়েকটি দল যারা আল্লাহ ও রাসুল (সা.)-এর আহ্কামের ক্ষেত্রে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে আছে। কিন্তু সকীফা-এ-বনু সায়েদাতে সৃষ্ট জালিম খেলাফতকে সহীহ-শুদ্ধ বলার ক্ষেত্রে সকলেই ঐক্যবদ্ধ। অনুরূপভাবে পবিত্র ইতরাতকে খেলাফত থেকে দূরে সরিয়ে রাখার ক্ষেত্রেও সকলেই ঐক্যবদ্ধ। এমন লোকগুলির প্রতি আমাদের তাজ্জব কেন হবে না যারা নিজেদেরকে ‘আহলে সুন্নাত’ বলে সম্মানিত বোধ করে, অথচ রাসুল (সা.)-এর সেই হুকুমকে পিছনে ঠেলে দেয় যে, “আল্লাহর কিতাব এবং আমার আহলে বাইত ইতরাতের সাথে সম্পৃক্ত থাক”।

যদিও আহলে সুন্নাতগণ উক্ত হাদীসকে নিজেদের কিতাবসমূহে লিপিবদ্ধ করেছেন এবং সেটিকে সত্য বলে স্বীকারও করেছেন। কিন্তু তারা না কোরআনের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করেন আর না আহলে বাইতের সাথে তাদের কোন সম্পর্ক আছে। অথচ আহলে বাইতকে অস্বীকার করার অর্থ হল কোরআন থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়ার সমতুল্য। যেমনটি হাদীস এই কথা বলে যে, কোরআন ও ইতরাত কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না, যেমন রাসুল (সা.) এই খবরটি দিয়েছেন, “আমাকে লাতীফ ও খাবীর খবর দিয়েছে যে, এই দুটো (কোরআন ও ইতরাত) কখনোই পরস্পর বিচ্ছিন্ন হবে না, যতক্ষণ না তারা হাউজে কাসারে আমার সাথে মিলিত হচ্ছে”। [সূত্র: মুসনাদে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল, খন্ড-৫, পৃ-১৮৯; মুস্তাদরাকে হাকিম, খন্ড-৩, পৃ-১৪৮।

হাকিম বলেন যে, শায়খায়নের (তথা বুখারী ও মুসলিম) শর্তাবলীর দৃষ্টিকোণ থেকে এই হাদীসটি সহীহ। যাহ্বীও শায়খায়নের শর্তানুযায়ী এই হাদীসকে সহীহ বলে স্বীকার করেছেন। ] আর সেই জাতির প্রতি আমরা তাজ্জব কেন হবে না যারা এই দাবী করে যে, আমরা হলাম ‘আহলে সুন্নাত’ অথচ সেই সমস্ত বিষয়াবলীকে অস্বীকার করে যা তাদের কিতাবাদিতে নবী (সা.)-এর হাদীস এবং আমর ও নেহী (ভাল ও মন্দ) হিসাবে মওজুদ আছে। বুখারী তার সহীহতে রেওয়ায়েত করেছেন যে, নবী (সা.) রমজান মাসে তারাবীহ নামাজ জামায়াতের সাথে পড়তে নিষেধ করেছিলেন এবং বলেছিলেন, “হে লোকসকল! নিজেদের গৃহে নামাজ পড়। কেননা সুন্নাত নামাজসমূহ গৃহে পড়াই উত্তম”।

কিন্তু আহলে সুন্নাতগণ সে বিষয়টিকে ঠোকর মেরে উড়িয়ে দিলেন যেটা থেকে রাসুল (সা.) নিষেধ করেছিলেন আর উমর ইবনে খাত্তাবের বিদআতকে গ্রহণ করে নিলেন। আবার আমরা যদি সেই হাদীসকে সঠিক বলে গ্রহণ করে নেই যে, “আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব ও নিজের সুন্নাত রেখে যাচ্ছি, যতক্ষণ তোমরা ইহার সাথে সম্পর্কযুক্ত থাকবে পথভ্রষ্ট হবে না”, যেমনটি আজ অনেক আহলে সুন্নাতগণের আচরণে পরিলক্ষিত হয়, তাহলে তো বিবাদ আরো বৃদ্ধি পাবে এবং তাজ্জবের কোন সীমা থাকবে না। কারণ উমর ইবনে খাত্তাব পরিস্কার ভাষায় বলে ছিলেন, “আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট”। অথচ কথাটি সরাসরি রাসুল (সা.)-এর প্রতি আপত্তি ও সমালোচনা হয়ে যায় আর রাসুল (সা.)-এর প্রতি আপত্তি করা বা তাঁর সমালোচনা করা আল্লাহর প্রতি আপত্তি ও সমালোচনা করার সমান। হযরত উমরের উক্ত কথাটি বুখারী ও মুসলিমসহ আহলে সুন্নাতের সকল সহীহ কিতাবগুলিতে মওজুদ আছে।

সুতরাং নবী (সা.) যখন বলেছিলেন যে “আমি তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব ও নিজের সুন্নাত রেখে যাচ্ছি” তখন সেই মুহুর্তে উমর বলছিলেন যে “আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট, আপনার সুন্নাতের আমাদের প্রয়োজন নেই”। আর যখন হযরত উমর নবী (সা.)-এর সম্মুখে এই কথা বললেন যে, “আমাদের জন্য আল্লাহর কিতাবই যথেষ্ট” তখন হযরত আবু বকর নিজের বন্ধুর কথাকেই নাফিজ (প্রতিষ্ঠা) করার প্রতি জোর দিলেন। তাই তো নিজের খেলাফত আমলে বলেছিলেন, “রাসুল হতে তোমরা কোন হাদীস বয়ান করবে না আর যদি কেউ তোমাদেরকে প্রশ্ন করে তখন তাকে বলে দিও যে, আমাদের ও তোমাদের মাঝে আল্লাহর কিতাব আছে, উহার হালালকে হালাল আর উহার হারামকে হারাম জ্ঞান কর! [সূত্র: যাহবী কর্তৃক লিখিত “তাজকিরাতুল হুফ্ফাজ” নামক গ্রন্থ্য, খন্ড-১, পৃ-৩] উক্ত দলের প্রতি আমরা কেন তাজ্জব করব না, যারা নিজেদের নবীর (সা.) সুন্নাতকে পিঠ পিছনে ঠেলে দিয়েছে আর সেটির জায়গায় সেই সকল বিদআতকে স্থান দিয়েছে যার ব্যাপারে আল্লাহ কোন দলিল নাযিল করেন নি, তার পরও এমন গর্ব যে ‘আমরাই হলাম সুন্নী’!! কিন্তু তাজ্জব তো তখন আরো বেশি হয় যখন হযরত আবু বকর, উমর ও উসমান সম্পর্কে আমরা জানতে পারি, কেননা তারাও আহলে সুন্নাতের নাম সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। তাই তো হযরত আবু বকর বলেছিলেন যে, “তোমরা যদি আমাকে নবীর সুন্নাতের উপর আমল করতে বল, তাহলে আমার মধ্যে এমনটি করার শক্তি নাই”। [সূত্র: মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, খন্ড-১, পৃ-৪ এবং কানযুল উম্মাল, খন্ড-২, পৃ-১২৬)।

হযরত আবু বকরের মধ্যে নবী (সা.)-এর সুন্নাতের শক্তি কেন ছিল না? নবী (সা.)-এর সুন্নাত কি কোন কঠিন বিষয় ছিল যা হযরত আবু বকরের শক্তির বাহিরে ছিল? আবার আহলে সুন্নাত কেমন করে দাবী করেন যে, তারা নবী (সা.)-এর সুন্নাতের সাথে সম্পৃক্ত আছেন যেহেতু তাদের মাযহাবের শ্রষ্টা ও প্রধানের মধ্যে নবী (সা.)-এর সুন্নাতের প্রতি আমল করার শক্তিই ছিল না? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কি এই কথা বলেন নি যে, “আল্লাহর রাসুলের মধ্যেই উত্তম আদর্শ নিহিত আছে”। [সূরা আহযাব, আয়াত-৩১] আরো বলেছেন, “আল্লাহ কোন নফসকে তার ধারণ শক্তির উর্দ্ধে কষ্ট দেন না”। [সূরা তালাক, আয়াত-৭] আরো বলেছেন, “আমি দ্বীনের মধ্যে তোমাদের জন্য কোন কষ্ট রাখি নি”। [সূরা হজ্জ, আয়াত-৭৮] হযরত আবু বকর ও তার বন্ধু হযরত উমর কি এই কথা ভবেছেন যে, রাসুল (সা.) আল্লাহর দ্বীন উপস্থাপন করেন নি বরং উহার স্থলে নিজের পক্ষ থেকে কোন বিষয় উপস্থাপন করেছেন? তারপর মুসলমানদেরকে উহার উপর আমল করার নির্দেশ দিলেন যদিও সেটি পালনের ক্ষেত্রে তাদের মধ্যে কোন শক্তি নাই? না, এমনটি কষ্মিনকালেও নয়। বরং তিনি (সা.) প্রায়শঃই বলতেন যে, “বাশারাত (শুভ সংবাদ) দাও বিষন্ন কর না, সরলতা গ্রহণ কর কষ্ট থেকে বাঁচ, নিঃসন্দেহে আল্লাহ তোমাদেরকে ছাড় দিয়েছেন, সুতরাং তোমরা কোন বিষয়কে নিজেদের উপর জোরপূর্বক চাপিয়ে দিও না”।

হযরত আবু বকর ইহা স্বীকার করেন যে, তার মধ্যে নবী (সা.)-এর সুন্নাতকে সহ্য করার শক্তি ছিল না। সেজন্যই তিনি নিজের নফসের খাহেশ অনুযায়ী এমন বিদআত আবিস্কার করলেন যা তার হুকুমাতের (শাসন ক্ষমতা) রাজনীতির স্বপক্ষে এবং তার ক্ষমতার আওতাভুক্ত ছিল। দ্বিতীয় নম্বরে সম্ভবতঃ হযরত উমরও অনুভব করেছিলেন যে, আমার মধ্যেও কোরআন ও সুন্নাতের প্রতি আমল করার শক্তি নাই, বিধায় তিনি জুনুবের হালতে পানি প্রাপ্ত না হওয়ায় নামাজ ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং নিজের খেলাফত আমলে এমন ফতোয়াটিই দিলেন, যেমনটি মুহাদ্দেসীনগণ হযরত উমরের কথা লিপিবদ্ধ করেছেন। আবার হযরত উমর জমা’র (যৌন-সংসর্গ) ভক্ত ছিলেন। তিনি হলেন সেই ব্যক্তি যার সম্পর্কে আল্লাহ বলেছেন, “আল্লাহ জানে যে তোমরা (চোখ বাঁচিয়ে মহিলাদের নিকটবর্তী হও) গোনাহ কর তারপরও তিনি তোমাদের তাওবাহ্ কবুল করে নিয়েছেন”।

[সূরা বাকারা, আয়াত-১৮৭] (সূত্র !!!) কেননা হযরত উমর রোজা থাকা অবস্থাতেও সহবাস থেকে বিরত থাকতেন না এবং তখনকার যুগে পানিও অল্প প্রাপ্ত হত। সেজন্যই হযরত উমরের নিকট এ পন্থাটাই সহজ বলে মনে হল যেন ‘মুজনাব’ অবস্থায় নামাজ ছেড়ে দেয়া হোক, গোসলের জন্য যখন পানি প্রাপ্ত হবে তখন নামাজ পড়ে নেয়া হবে। হযরত উসমানও নবী (সা.)-এর সুন্নাতের বিরোধিতা করাতে কোন কার্পন্য করেন নি। ঘটনাটি বিখ্যাত আছে যে, হযরত আয়েশা নবী (সা.)-এর কামিজ নিয়ে বের হলেন এবং বললেন, “উসমান তো নবী (সা.)-এর কাফন পুরাতন হবার পূর্বেই তাঁর সুন্নাতকে ভুলিয়ে দিল”। এমনকি সাহাবাগণ তার প্রতি দোষারোপ করলেন যে, তিনি নবী (সা.)-এর সুন্নাত এবং শায়খায়নদের সীরাতের বিরোধিতা করে থাকেন, বিধায় সেই অপরাধেই তাকে হত্যা করে দেয়া হল।

আর মোয়াবিয়া ইবনে আবু সুফিয়ান তো তাদেরকেও হার মানিয়েছে। সে তো প্রকাশ্যে কোরআন ও সুন্নাতের বিরোধিতা করেছে এবং মানুষকে কোরআন ও সুন্নাতের প্রতি রুজু হতে নিষেধ করেছে। নবী (সা.) বলেছেন, “আলী আমা হতে এবং আমি আলী হতে। যে আলীকে গালমন্দ করল সে আমাকে গালমন্দ করল। আর যে আমাকে গালমন্দ করল সে আল্লাহকে গালমন্দ করল”।

[মুস্তাদরাকে হাকিম, খন্ড-৩, পৃ-১২১ ও মুসনাদে আহমদ বিন হাম্বল, খন্ড-৬, পৃ-২২৩ এবং খাসায়েসে নাসায়ী, পৃ-১৭] অথচ মোয়াবিয়া প্রকাশ্যে হযরত আলীর প্রতি লা’নত করত এবং শুধু এতোটুকুতেই ক্ষান্ত হয়নি বরং নিজের কর্মকর্তাদেরকেও হুকুম দিয়েছিল যেন তারা হযরত আলীর প্রতি লা’নত করে। আর যদি কেউ এমনটি করতে অস্বীকার করত তখন তাকে বরখাস্ত করে দিত। আর হকের আনুগত্যকারী ‘আলী প্রমিকদের’ মোকাবেলায় মোয়াবিয়া নিজেকে এবং নিজের ভক্তবৃন্দকে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত’ বলত। কিছু কিছু ইতিহাস বেত্তাগণ তো এমন কথাও লিখেছেন যে, ইমাম হাসানের সাথে সন্ধি করার পর মোয়াবিয়া যে বছর ক্ষমতা গ্রহণ করল সে বছরকে “আ’মুল জামায়াত” বলা শুরু হল। এই তাজ্জবটি তখন দূরীভূত হবে যখন এই কথার উপর থেকে পর্দা সরে যাবে যে, মোয়াবিয়া আর তার দলবল বলতে তাদেরকে বুঝানো হয়েছে যারা জুমআ আর ঈদের দিন ইসলামী মিম্বরের উপর থেকে হযরত আলীর প্রতি লা’নত করত।

আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত যখন মোয়াবিয়া বিন আবু সুফিয়ানেরই আবিস্কার তখন আল্লাহর কাছে আমাদের প্রার্থনা তিনি যেন আমাদেরকে সেই বিদআতের উপর মৃত্যু দেন যার আবিস্কারক হলেন হযরত আলী ইবনে আবি তালিব এবং মহান আহলে বাইতগণের সকল সদস্য!!! সুধী পাঠকমন্ডলী! মনোযোগী হবেন যে, এই দৃষ্টিকোণ থেকে বিদআতী ও পথভ্রষ্ট হলেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের লোকেরা অথচ এর বিপরীত পবিত্র ইমামগণকেই বিদআতী বলা হচ্ছে। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের বিখ্যাত আলিমে দ্বীন আল্লামা ইবনে খাল্দুন গণতন্ত্রের মাযহাবগুলোর গণনা করার পর বলেন যে, “আর আহলে বাইতের আবিস্কৃত মাযহাবের সংখ্যা খুবই নগন্য। ফিকহ্-এর বিষয়ে একক, তাদের মাযহাবগুলির ভিত্তি হচ্ছে কিছু কিছু সাহাবাকে গালমন্দ করা”। [মুকাদ্দামা ইবনে খাল্দুন, পৃ-৪৯৪] সুধী পাঠকমন্ডলী! আমি প্রথমেই আরজ করেছিলাম যে তারা যদি মুদ্রার উল্টা পিঠও দেখতেন তাহলে অবশ্যই হাকীকাত (বাস্তবতা) পর্যন্ত পৌছে যেতেন। যখন চরম ফাসিক ব্যক্তিবর্গ এবং বনী উমাইয়ারা ‘আহলে সুন্নাত’ হতে পারে আর আহলে বাইতের অনুসারীগণকে বিদআতী বলা যেতে পারে, যেমনটি ইবনে খালদুন লিখেছেন তাহলে এমন ইসলামকে দূর থেকেই সালাম এবং দুনিয়ার প্রতি ধুলিস্যাৎ হোক।

চলবে.................... ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ২৪ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।