আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রহর

স্বপ্নবাজ। একটা রাতের রংধনুর স্বপ্ন দেখি...। -কিঙ্কর আহ্সান প্রহর কিঙ্কর আহ্সান ক.. ঘুটঘুটে অন্ধকার চারপাশে। বাতি নেভানো পথের পাশে ঠায় দাড়িয়ে থাকা বাড়িগুলোর। রাত একটু গভীর হতে না হতেই ঘুমিয়ে পড়ে এখানকার লোকজন।

ভরপেট খাওয়া আর ঘুম ছাড়া যেন কাজ নেই তাদের। আমি আর মেজদা হাটছি শহরের কালীবাড়ি রোড ধরে। বাড়ির কাজের ছেলেটা পালিয়েছে। তাকে খুজতেই বের হয়েছে পরিবারের সবাই। এক এক জন গিয়েছে শহরের এক এক দিকে।

আঁধারের ভীড় ঠেলে কালীবাড়ি রোড থেকে যাচ্ছি লঞ্চঘাটে। ছেলেটা লঞ্চে পালানোরও চেষ্টা করতে পারে। তন্ন তন্ন করে খুজছি দু ভাই। যেভাবেই হোক খুজে পেতে হবে। চোরকে তো এত সহজে ছেড়ে দেয়া যায়না! ছেলেটা আসলে ভালই।

আমাদের বাড়িতে কাজ করার জন্যে গ্রাম থেকে পাঠিয়েছেন ওকে নানাজান। নাম মিঠু। বয়সে আমার চেয়ে বড়। গরীব তাই খাবারের অভাবে হতভাগাটার গায়ে গতরে বেড়ে ওঠা হয়নি। ছোটখাট বলে ছেলেটাকে বাটুল বলে ডাকে সবাই।

এই বাটুলই আজ পালিয়েছে চুরি করে। বাবার পকেট থেকে খোয়া গেছে হাজার দুয়েক টাকা। দোষ পড়েছে বাটুলের ওপর। অনেক জেরার পরেও কিচ্ছু স্বীকার করেনি ছেলেটা। মারের ভয়ে ছেড়েছে বাড়ি।

শহরের সব অলিগলিতে হেটে হেটে খোজা হচ্ছে ছেলেটাকে। এ শহরটা বড্ড বিতকিচ্ছিরি। বাড়ি ঘরগুলো পুরনো,ধূসর রঙা। গর্ব করার মতন নেই কিছুই। মানুষগুলোও কেমন জানি অলস আর হাবাগোবা।

বেশী বেশী কাজ আর বেশী বেশী রোজগার করে যে একটু বড়লোক হবে তার কোন ইচ্ছাই নেই কারও। আমাকে বড়লোক হতে হবে। বাবাকে আমি সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েছি এ শহরে থাকাটা পোষাবে না আমার। আমি বড়লোক হতে চাই। এতই বড় যে কেউ আর পাবেনা নাগাল।

মেজদা কান টেনে কিংবা সেজদা মাথায় চাটি দিয়ে অথবা বড় বুবু আমার মাথার ময়লা কোকড়ানো চুলগুলো ছিড়ে আর বকতে যেন না পারে একটুও। খলনায়কদের মতন চাবুক চালিয়ে পুরো পৃথিবীটা শাসন করতে চাই আমি। চাই বত্রিশ খানা দাত বের করে নিজের ক্ষমতা দেখানোর জন্যে জোর করে হলেও সবাইকে শুনিয়ে একটু পর পর হা হা হা করে হেসে উঠতে। বুবু তো প্রায়ই বলে,‘ঠিক ঠিক খলনায়ক তুই একটা। চেহারাটা মাগুর মাছের মতন।

কোনদিন বিয়ে হবেনা তোর। কোনদিন কোনো ভালো কাজও হবেনা তোকে দিয়ে। ’ আমি কিন্তু একদমই চটিনা। বাবাকে দেখে বিয়ে করার শখ উবে গেছে আমার আর মাগুর মাছের মতন চেহারা হলে যে কনে জুটবেনা বুবুর এ কথাটা একদমই মিছে। আমিতো দেখি দুনিয়ার সব উটকো টেকো আর মাকুন্দরাই বিয়ে করে সবচেয়ে সুখী হয়।

সবাই চেনে টাকা। বয়স,চেহারা,দৈর্ঘ্য,প্রস্থ এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়। এসব দেখে আমার তাই খলনায়ক হওয়ারই স্বপ্ন। প্রতি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া,ভদ্র-সুবোধ বালক হয়ে থাকা চলবেনা একদমই। সিনেমায় যখন খলনায়কেরা বসে বসে রান চিবোয় আর মুঠো ভর্তি টাকা ছুড়ে দেয় আকাশে তখন আমার বড্ড ভালো লাগে।

বড্ড ভালো। ইচ্ছে হয় ছুটে যাই কোনো খলনায়কের কাছে। নেই দীক্ষা। কিন্তু এ শহরে এমনটি হবার জো নেই। আলিফ লায়লার ডাকাত কেহেরমান আর সিরাজউদ্দ্যোলার মীরজাফরকে খুজে পাওয়া যাবেনা এখানে।

এখানকার সবাই খুব ভালো। বিচ্ছিরি রকমের ভালো। টাকার দরকার ছিলো কিছু। চাইলে কখনও দেননা বাবা। অবাক হইনা এতে।

বাবাগুলো এমনই হয়। কেপ্পন। অগ্যতা তাই চুরিই করতে হল। কৃপনদের টাকা চুরিতে দোষ নেই। তবুও দোষ হল।

আমি নই,দোষী হল বাটুল। আহারে গরীব ছেলে! কত সহজেই না দোষী হতে পারিস তোরা। আর দোষী হলেই কি পালাতে হবে। দু চার ঘা যদি সহ্যই করতে না পারিস তবে গরিব হলি কেন শুনি। ভালই হয়েছে।

না খেয়ে নিশ্চয়ই পড়ে আছে এখন কোন আস্তাকুড়ে। খারাপ কাজ করেছি ভেবে কষ্ট হয়না আমার। ভালো লাগে খলনায়ক হওয়ার পথে পা বাড়ালাম দেখে। চিন্তিত মেজদা। চিন্তিত বাবা,মা,বুবু,বড়দা,বড় কাকা রাসু আর প্রতিবেশীরা।

সবাই খুজছে বাটুলকে। খুজুক। আমার কি তাতে? রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। আকাশের চাঁদ,তারা কাজ গুটিয়ে উধাও হওয়ার জন্যে তোড়জোর শুরু করে। হাটা শেষ হয়না আমাদের।

মেজদা থেকে থেকে বলে,‘কই গেল রে ছেলেটা। রাত বিরাতে বিপদে না পড়ে। ’ বাটুলের বিপদের কথা ভেবে অন্যরকম এক ভালোলাগা ছুয়ে যায়। জানি ওকে আর কখনও যাবেনা পাওয়া খুজে। যাবেনা।

মানুষকে কষ্ট দিয়ে খলনায়ক কি তবে হচ্ছি আমি। হচ্ছি কি অনেক অনেক বড়লোক? খ.. ঘুমোলেই আজকাল কে যেন আসে আমার স্বপ্নে। ভুত নয়,খলনায়ক নয় বড্ড ভালো কেউ একজন। তার কাছে আমি বড়লোক হবার দাওয়াই চাই। সে হাসে।

খলনায়কদের মতন অট্টহাসি নয়। ভালোবাসা,ভালোলাগা আর স্নেহের হাসি। হেসে হেসে বলে,বড়লোক হতে হলে তোর কাকা রাসুর মতন হতে হবে। মানুষের দুর্দশায় ছুটে যেতে হবে তোর কাকারই মতন। আমি বলি,সেতো গরিব।

চাকরি বাকরি নেই,সংসার নেই তাই আমাদের বাড়িতেই পড়ে থাকে। জবাব আসে,গায়ে গতরে আর অর্থের বিচারে কেউ বড় হয়না। মানুষ বড়লোক হয় তার উদার মন আর ভালো কাজের দ্বারা। আমার ভালো লাগেনা এমন কথা। আমি আবার বলি খলনায়ক হতে চাই।

অন্যের টাকা ছিনিয়ে নিয়ে চৈাপর দিন চিবুতে চাই মুরগীর রান আর আকাশে ছুড়ে দিতে চাই বেশুমার টাকা। কষ্ট দিতে চাই মানুষকে। বাটুলকে যেমন দিলাম। স্বপ্নের ভালো লোকটা বলে,কোরোনা এমন কাজ । নিজের পরিশ্রমের টাকায় কেনা তুচ্ছ খাবারও অমন শ খানেক মুরগীর রানের চেয়ে ঢের সুস্বাদু।

কি বলে এই ব্যাটা! ভালো ভালো সব কথা। এই ভালো মানুষে ভরা শহরটার স্বপ্নগুলোও কি তবে ভালো। দরকার নেই আমার এমন স্বপ্নের। দুর হ-দুর হ ভালো মানুষ। কিন্তু আমার স্বপ্ন হারাম করে দিয়ে সে শুধু বলেই যায় নিজের ভালো কাজ দিয়ে,নিজের উদার মন দিয়ে সবাইকে ভালোবেসে যাও তবেই তোমার বড়লোক হওয়া হবে।

মস্ত বড়লোক...। ।

সোর্স: http://www.somewhereinblog.net     দেখা হয়েছে ১২ বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।